somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকায় রাত-বিরাতে যারা বাড়ি ফেরেন, তারা প্রায় প্রতিদিন-ই একবার করে ছিনতাইয়ের আশঙ্কায় ভুগেন।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকায় রাত-বিরাতে যারা বাড়ি ফেরেন, তারা প্রায় প্রতিদিন-ই একবার করে ছিনতাইয়ের আশঙ্কায় ভুগেন। আশঙ্কার যথাযথ কারণও আছে। এমনকি জানা কিছু স্পটও আছে যেখানে ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিরাতে অহরহ ঘটছে। হরেক রকমের "ঠ্যাকের" কাহিনী শুনেছি। কিছু আছে পাইনসা টাইপের - চাকু ধরে টাকা দে ধরনের, অন্য কিছু আছে মজার। সিটিসেল মোবাইল ব্যবহার করার কারণে ছিনতাইকারীর কাছে কানমলার ঘটনাও শুনেছি।

কথা বলতে বলতে মোবাইল চিনিয়ে দৌড় দেওয়া ঠিক ছিনতাই না চুরি পর্যায়ে পড়ে তা নিয়ে ব্যাপক গড়বড় আছে। আমার এক কাজিন এরকম চানখারপুলে রাস্তায় দাড়িয়ে তার প্রেমিকার সাথে কথা বলছিলো - কিছুক্ষণ পরে প্রেমিকা আবিস্কার করলো যে সে আসলে অনেকক্ষণ যাবত-ই অন্য কারো সাথে কথা বলছে - কখন যে মোবাইল হাতবদল হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। আরেকটা একই ধাঁচের ঘটনা শুনেছি যেখানে ছিনতাইকারী নাকি মোবাইল ছিনতাই করে ওপর পাশে বলেছে - "অনেক বকর বকর করছেন - এলা থোন"। রাস্তার সিগনালে গু-ওয়ালার খপ্পরে পরার কাহিনী না হয় বাদই দিলাম।

ভয়াবহ কিছু ঘটনাও আছে - একবার আমার দুই বন্ধু রাত হয়ে যাওয়ায় ট্যাক্সি নিল না - কারণ ট্যাক্সি-ওয়ালাদের সাথে নাকি ছিনতাইকারীদের যোগ-সাজশ আছে। বাস-টেম্পুতে অনেক বেশি নাকি নিরাপদ। কথাটা মিথ্যে নয়। রাতে বেশি টাকা সাথে থাকলে আমিও কয়েকবার তা করেছি। সমস্যা হলো এই যে - আমার দুই বন্ধু যেই টেম্পুতে উঠেছে তাতে তারা বাদে আর সবাই ছিনতাই দলের সদস্য - স্বম্ভবত ছিনতাইয়ের বিভিন্ন স্পটে তাদের লিফট দিচ্ছিল। বেশি টাকা না থাকার কারণে আমার সেই দুই বন্ধুর লাঞ্চনার কাহিনী না হয় এতো লোকের সামনে আর না বললাম। তার বদলে আমার নিজের কাহিনী বরং শেয়ার করি।

ঘটনার পুরা ঝাঁজ পেতে হলে আগে হালকা কিছু প্রেক্ষাপট জানতে হবে। যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত আঁতেল গ্রুপ আর নন-আঁতেল গ্রুপ আলাদা চলে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ব্যাচে এক মজার সমবায় ছিলো। আমাদের জানি-দেস্তদের গ্রুপে সব ধরনের ছাত্র ছিলো। এতো জাতীয় চরিত্রের ব্যতিক্রম, অনার্সের রেসাল্ট যখন বের হলো - তখন দেখা গেলো যে আমাদের গ্রুপেই তিনজন ফার্স্ট - ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, সেকেন্ড ক্লাস ফার্স্ট আর থার্ড ক্লাস ফার্স্ট। কারনটা মজার - ধরা যাক আমি সারা বছর ক্লাস করে, পড়াশুনা করে যে নোট বা চোথা বানাতাম, তা বছর শেষে দিতাম আরিফকে - সে আবার মাস খানিক পড়ে নিজের শর্ট-কাট চোথা বানাত। পরীক্ষার দুই-এক সপ্তাহ আগে সেই শর্ট চোথা যেত আসাদের কাছে।

তবে সবাইকে অল্প সময়ে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য পরীক্ষার কয়েক দিন আগে আগে কিছু বৈঠক হতো। বেশিভাগ সময়ই বিভিন্ন বন্ধুদের বাসায় বাসায় অথবা মাঝে মাঝে আবাসিক হলের বন্ধুদের রুমে বা লায়ব্রেরিতেও কয়েকবার হয়েছে। অনেক আগে টাকার মেশিন নামে এক গল্প পড়েছিলাম। এক লোকের এতো টাকা যে সে সারাদিন খায়। সকালে-দুপুরে-বিকালে মজার মজার খাবার খায়। খাবার চাবাতে চাবাতে শেষে এতো ক্লান্ত হয়ে যায় যে শেষে চাকর চিবিয়ে দেয় - আর সেই বড়লোক শুধু গিলে। সেই-সব বৈঠকে আমার ভুমিকা ছিলো সেই চাকরের মতন - আমি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করতাম কোনটার মানে কি - বাকিরা তা না বুঝে মুখস্ত করার চিন্তা করতো। শেষ সময়ে আর বুঝাবুঝির আগ্রহ কারই থাকতো না। যার যা ধান্দা। আসলে আড্ডাবাজি আর খাওয়া দাওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ হতো কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

এই জাতীয় বৈঠক আবার শুরু হতো বেশ সকালে - কারণ আরিফের বিকাল হওয়া মাত্র প্রেমিকার কাছে যেতে হবে। ঝড়-বৃষ্টি-বন্যা-কারফিউ-কায়ামত যাই থাকুক না কেন তাকে বিকেলবেলা তার প্রেমিকাকে গুলশান অফিস থেকে তুলে মিরপুরে পৌছে দিতেই হবে। আরিফের নিজের বাসা হলো আবার মোহাম্মদপুরে, শেখের-টেকের কাছাকাছি, জাপান গার্ডেন সিটির বেশ পেছনে!

যে দিনকার কথা বলছি - সেদিন আরিফের বাসাতেই আমরা সকাল থেকে পড়াশুনার নামে বুজরুকি চালানোর কথা। সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা, হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। তার আগের রাতে কিছু ঝড়-ঝাড়িও গেছে। কিন্তু কারই পৌছতে দেরী হলো না। সকালটা ভালো ভাবেই কাজে লাগলাম। দুপুরে আন্টির হাতে পটল-ভাজি, লাউ-চিংড়ি, গরুর কোর্মা, আর হরেক রকমের ভর্তা-আঁচার দিয়ে খিচুরী খেলাম। পরীক্ষা বলে কথা - তার উপর এতগুলো ছেলে-মেয়ে পড়াশুনার মতন নেক উদ্দেশ্যে এসেছে, খাওয়া দাওয়ার কমতির কোনো প্রশ্নই উঠে না।

বিকেল হওয়া মাত্র আরিফের মাথা খারাপ - তোরা আজকে যা - আমাকে বেরুতে হবে। সে যাবে যথারীতি ডেটিং মারতে। আমরা একটু গাই-গুই করছিলাম, পরে যা, বেলাতো অনেক বাকি। আরিফ ভয় দেখালো সন্ধার পরে এইদিককার রাস্তায় বেরোনো নিরাপদ না। কয়েকদিন আগেই পাশের রাস্তায় এক ছিনতাইকারী এক লোককে গুলি করে মেরেই ফেলেছে। এইজাতীয় ঘটনা মোহাম্মদপুরে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার বলে ছমছমে আবহাওয়া সৃষ্টি করলো। আমরা ছেলেরা এক চোট হাসলাম, চাপা মারস? কে শোনে কার কথা - মেয়েরাতো ভয়ে সাথে সাথে তাদের ব্যাগ গুছিয়ে ফেললো। বাড়ি গিয়ে ঢেড় পড়াশুনা হবে - রাত-বিরাতে এই এলাকায় থাকার অর্থ হয় না। আমরাও নিমরাজি হয়ে উঠে পরলাম।

ততক্ষণে বৃষ্টি শেষ - ঘরে ভ্যাপসা গরম - বাহিরে রোদ উঠেছে। আমি যাবো ইব্রাহিমপুর, আসাদ যাবে আদাবর, মনসুরাবাদ প্রকল্পের কাছে ওর বাসা - রিক্সা ঠিক করলাম ইব্রাহিমপুর পর্যন্তই, পথে আসাদকে শ্যামলীর কাছাকাছি নামিয়ে দেব। পথে একসাথে গল্প করতে করতে যাওয়া হবে। কোন প্রফেসর কত ফাঁকি মেরে পড়িয়েছে, কোন ছাত্রকে নাজেহাল করেছে, কার দিকে নজর দিয়েছে - ক্লাসে নতুন কার সাথে কে ডেটিং-এ যাচ্ছে - নতুন ব্যাচে মাল-মশলা কয়টা এসেছে - এইসব আবঝাপ আর কি। পরীক্ষার আগে পড়াশুনার চাপে অনেক ঘটনাই মিস করেছি।

রিক্সা-ওয়ালা চেংরা টাইপের, অস্বাভাবিক বেশি ভাড়া দাবি করলো - বৃষ্টি হইছে না? বৃষ্টি সকালে হয়েছে - এখন আর নেই বটে - কিন্তু কর্দমাক্ত রাস্তায় রিক্সা চালানো অনেক পরিশ্রমের কাজ - সন্দেহ নাই। বেশি দামাদামি না করে উঠে পরলাম, পরে এতদুরের খ্যেপ আর কেউ দেয় কিনা - কে জানে। এইদিকের রাস্তাগুলো পিচ ঢালা হলেও - বেশির ভাগ-ই অলি গলি। কাঁদা পানির ভয়ে বড় রাস্তায় লোক থাকলেও, চিপা রাস্তায় তেমন কেউ নেই। সাদা প্যান্ট পড়া এক ভদ্রলোক রাস্তায় প্যান্ট উঁচিয়ে হাটছে দেখে এক চোট হাসলাম। দরকার কি বাবা এমন কাদাময় দিনে সাদা প্যান্ট পরা? আমাদের রিক্সা তাকে ক্রস করতেই সে চেঁচিয়ে উঠলো - ওই রিক্সা-ওয়ালা দাঁড়া! রিক্সার চাকা থেকে বোধয় কাঁদার ছাট খেয়েছে - এখন যত চেঁচামেচি।

মনে আছে কাজীপাড়ায় একবার আমার রিক্সা এক মুরগি চাপা দিয়ে ভস্কাইয়া ফেললো - এই নিযে রিক্সা থামিয়ে বিশাল হট্টগোল। আশেপাশের সব দোকান থেকে সবাই উঠে এসেছে। মুরগির মালিক মুরগির শোকে মাতম শুরু করেছে। পাবলিক তো রিক্সাওয়ালাকে সেদিন পারলে ফাঁসি দিয়ে মারে অবস্থা। আমি তো রিক্সায় বসে নাটক দেখছি। এতো দ্রুত কি ঘটে যাচ্ছে তা বুঝতে আমার সমস্যা হচ্ছে। শেষে মুরগির মালিককে বলেছিলাম,
- "মুরগি আপনি রাস্তায় ছেড়ে রেখেছেন কেন?"
: "ভাই মুরগি তো মাছ না যে ঘরের ভিতর পানির টাংকিতে থাকবো - রাস্তায় তো আইবোই - তাই বইল্লা কল্লাডা এমনে ভাংবো? আপনেই বিচার করেন।"
আমার গেলো মেজাজ খারাপ হয়ে। আগেও দেখেছি - অন্য দশজন যে বিষয়ে একমত - আমি সবসময়ে তার বিপরীতে চিন্তা করি। তবে সেদিনকার পরিস্থিতি অন্য - পাবলিক সেন্টিমেন্ট অন্য জিনিস - বেশি তেরি-বেড়ি করলে রিক্সা-ওয়ালার সাথে পাবলিক আমাকেও মাইর দিতে পারে। তাও আমি সাহস করে তেজের সাথে বললাম,
- "রিক্সা তো আর আপনের বেড়া ভেঙ্গে আর মুরগি মারে নাই। মুরগি বরং লাফ দিয়ে এসে রিক্সার উপর পরেছে। রাস্তায় তো গাড়ি-ঘোড়া চলবেই। রাস্তাতো মুরগি চলার জন্য না - মরলে এখন আপনের দোষ। সময় থাকতে এখনি মুরগি জবাই দিলে হালাল ভাবে খাইতে পারবেন, ঘাড় ভাংছে - পুরা মরে নাই - মুরগি নিয়া বাড়ি গিয়া তাই করেন।"
গন্তব্যে এসে সেই বুড়া রিক্সা-ওয়ালা আমারে পারলে পায়ে ধরে সালাম করে - "আফনে আমার জীবন বাচাইছেন - ট্যাকা তো লমুই না"। বুঝিয়ে-সুজিয়ে টাকা দিতে সেদিন আমার অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।

আজকে আবার কাদা ছিটানোর জন্য কি হুজ্জত হয় কে জানে। সাদা প্যান্ট পরা লোকটা এগিয়ে আসলো যখন, তখন খেয়াল করে দেখলাম প্যান্টে কোনো কাদার ছিটা নাই। আমরা তো অবাক। তাহলে থামালো কি জন্য? লোকটা আসাদের পাশে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলো আমাদের বাড়ি কৈ। আমরা বুঝে উঠতে পারলাম না কি ব্যাপার - বললাম। এই এলাকায় কি কাজ। বললাম বন্ধুর বাড়িতে এসেছিলাম। কথা-বার্তার মাথা মন্ডু বোঝা যাছে না। সমস্যাটা কি? লোকটা বললো তার এক বন্ধু গুলি খেয়ে হাসপাতালে, কিছু সাহায্য চায়। সে আরো বললো যে তার পায়েও গুলি লেগেছে - গুলির দাগ আবার প্যান্ট গুটিয়ে দেখালো। আমরা ছাত্র মানুষ - কি বলবো ঠিক বুঝলাম না। আসাদ মানি ব্যাগ বের করে দশ টাকা দিলো। টাকাটা লোকটা নিলো কিন্তু আসাদের হাত ছাড়ল না - হার ধরে তার কোমরের কাছে ধাতব কিছু একটা জিনিস স্পর্শ করিয়ে বললো,
: "ভাই ভদ্র ভাবে বলছি বলে পাত্তা দিচ্ছেন না?"

আসাদের কাছে ছিলোই দশ টাকার একটা নোট, আর ৫০০ টাকার একটা নোট। আসাদ বললো -
- "ছাত্র মানুষ - কি দেবো বলেন? ৫০০ টাকার নোট আছে, ভাংতি তো নাই।"
: "মাল বের করবো?"
আমি বসে আছি পাশে - আমার কাছে ১০০ টাকার কয়েকটা নোট আছে, কিন্তু আমরা কেবল উপলব্ধি করলাম যে আমরা একটা সেমি-ছিনতাই-ঘটনার মধ্যে আছি। আমি বের করবো কিছু বললে - আগ বাড়িয়ে টাকা বের করে খোয়ানোর মানে হয় না।

বেশি ঝামেলা করতে চাচ্ছিলাম না আরেকটি কারণে। আমার সাথে একটা মোবাইল, আসাদের সাথে দুইটা। আসাদ ৫০০ টাকার নোট দিয়ে দিলো। লোকটা ধন্যবাদ জানিয়ে ছেড়ে দিলো। রিক্সা চলা শুরু করতেই দেখি সামনে বেশ দশাশই এক ভদ্রলোক সিগারেট খাচ্ছেন। সাহায্যের জন্য বলবো কিনা চিন্তা করছি - দেখি সে আবার সাদা প্যান্ট পরা লোকটার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝুকালো। বুঝলাম, সাহায্য চেয়ে লাভ হবে না।

গলি ছেড়ে রিং রোডে উঠে রিক্সা-ওয়ালা রিক্সার গতি বাড়িয়ে দিলো। আকাশের মেঘ কেটে যাচ্ছে - বিকেলেও সুর্য্যের আঁচ গায়ে বেশ লাগছে। আসাদ আর আমি কথা না বলে বেশ কিছুটা পথ পার করে দিলাম। আরো অনেকদুর যাবার পর আমাদের মুখে কথা ফুটল। বাঁশডলা পুরা আসাদের উপর দিয়ে গিয়েছে - আমার দিকে ছিনতাইকারী তাকালই না - এর কারণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু করে দিলাম। সবগুলো মোবাইল আস্ত আনা গেছে দেখে আমরা বেজায় খুশি। অল্পের উপর দিয়ে ফাঁড়া কেটে গেছে।




কয়েক মাস পরের ঘটনা - আবার আরিফের বাসায় এসেছিলাম আড্ডায়। যথারীতি বিকেলের মধ্যে আড্ডা ভেঙ্গে গেলো - তার ডেটিং-এ যেতে হবে। একা একা রিক্সা করে শ্যামলী ছিনেমা হলের রাস্তা দিয়ে বাসায় ফিরছি। কয়েক মাস আগের চোখের সামনে আসাদের টাকা খোয়ানোর ঘটনা হালকা মনে পড়ছে। ন্যাড়া আর কতবার বেল তলায় যায়? আমি মোবাইল ব্যাগে ঢুকিয়েছি, সাথে বড় নোটগুলোও মানি ব্যাগ থেকে সরিয়ে ব্যাগের সাইড পকেটে ঢুকিয়েছি - খালি পঞ্চাশ টাকা রেখেছি মানি ব্যাগে - রিক্সা ভাড়া দেবার জন্য।

বিকেলের ফুরফুরা বাতাসে ভালই লাগছে। অন্যান্য গাড়ি-ঘোড়ায় রাস্তা জমজমাট। ছেলেবেলায় নাইট-রাইডার নামে এক টিভি সিরিয়াল দেখাতো বুধবার করে। মাগরিবের নামাজের পর থেকেই চিত্কার করে জোরে জোরে পড়তে বসতাম, যাতে ৯টার সময় আম্মা নাইট-রাইডার দেখতে দেয়। ঠিক সেই নাইট-রাইডার স্টাইলে আরেক রিক্সা আমার রিক্সাকে সাইড করতে করতে রাস্তার এক পাশে সাইড করিয়ে ফেললো। ঘটনার দ্রুততায় আমি মুগ্ধ! রিক্সা থেকে এক লোক নামলো। দেখি সেই সাদা প্যান্ট পরা লোকটা- তবে আজ আর সাদা প্যান্ট নেই - খয়েরি কালারের এক প্যান্ট পরেছে সে আজকে। চোখে হালকা রঙের চশমা - মনে হয় ফটো-সান-গ্লাস। আমি বুঝলাম আজকে খবর আছে। মোবাইলটা যাতে ব্যাগ থেকে বেজে না ওঠে - সেই ভয় পেলাম।

লোকটা এগিয়ে এসে বললো - তার এক বন্ধু গুলি খেয়ে হাসপাতালে - সে নিজেও পায়ে গুলি খেয়েছে, কিছু সাহায্য চায়। পায়ের গুলির দাগ দেখাতে প্যান্ট গুটাতে শুরু করতেই আমি বললাম আমি আগে দেখেছি - কয়েকদিন আগেই আমাকে ধরেছিলেন। ছিনতাইকারী চিনতে পারলে নাকি বলতে হয় না। আমি নিজের বেকুবিতে নিজেই অবাক। লোকটা ব্যাজার মুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো - কি বলবে চিন্তা করছিলো বোধহয়।

আর কথা না বাড়িয়ে আমি মানি ব্যাগ বের করে পঞ্চাশ টাকা বের করে তাকে দিয়ে দিলাম। সে বললো আর নাই? আমি আবার মানি ব্যাগ খুলে দেখালাম। সে বিরস বদনে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলো। রিক্সা-ওয়ালা একবার আমার দিকে তাকায়, একবার লোকটাকে দেখে - সে পুরা টাসকি। হচ্ছেটা কি? আমি রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম। এই দেখে ছিনতাইকারী ভড়কে গেলো, আমি তার পিছু নিলাম নাকি? কোমরে হাত দিয়ে বললো,
: "কি ব্যাপার?"
- "টাকা নাই - রিক্সা করে যাবো কিভাবে?"

ছিনতাইকারী পড়লো বিপদে - কথা তো ঠিকই। রিক্সা-ওয়ালা টাকা নেই জেনে আমাকে নেবে কেন?
: "কত ভাড়া?"
- "বিশ টাকা।"
: "হালার রিক্সা ভাড়া এতো বেশি কেমনে? কই যাইবা?"
ছিনতাইকারী বেশ মেজাজ খারাপ করে নিজের মানিব্যাগ ঘেটে আমার রিক্সা-ওয়ালার হাতে বিশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে নিজের রিক্সায় উঠে চলে গেলো। আমি আমার রিক্সা-ওয়ালার দিকে চেয়ে মুচকি হাসলাম, তার ঘোর তখনও কাটেনি। আমি রিক্সায় উঠে বসলাম। প্রিপেইড রিক্সায় এক প্রথম উঠলাম।

আমার ওয়েব সাইট দেখুন http://www.mamunbigbos.co.cc
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×