somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যালেনটাইন'স ডে : কিছু অপ্রিয় কথা

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১ম পর্ব)

ভ্যালেনটাইন'স ডে এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
খ্রিস্ট সমাজে কোনো ভালো মানুষের সন্তান কিন্তু ভালো মানুষ হয় না। কিংবা অন্যভাবে বলা যায় কোনো ভালো মানুষেরই সন্তান হয় না। কারণ ভালো মানুষদের তো বিয়ে করাই নিষেধ। তাই খ্রিস্ট সমাজে যতো ভালো মানুষ আছে তারা সবাই খারাপ মানুষের সন্তান।
এমনি একজন খারাপ মানুষের সন্তান - ভালো মানুষ ছিলেন সেইন্ট ভ্যালেনটাইন। কিন্তু সেইন্ট ভ্যালেনটাইন শেষ পর্যন্ত নিজেকে ভালো রাখতে পারলেন না। এক প্রেমময়ী নারীকে ভালোবেসে ফেললেন এবং গোপন অবৈধ একটা সম্পর্কও গড়ে তুললেন (যেহেতু বিয়ে করার কোন উপায় ছিল না)। এই অপরাধে তাকে কঠিন শাস্তি দেয় তৎকালীন গীর্জার নিষ্ঠুর অধিপতিরা। যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যদন্ডে দন্ডিত করা হয় হতভাগ্য সেইন্ট ভ্যালেনটাইনকে।
খ্রিস্ট সমাজের তথাথিত ভালো মানুষেরা (ধর্মযাজকেরা) আজো ভ্যালেনটাইনকে নিকৃষ্ট অপরাধী মনে করে। তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতেই দেখে।
পাশ্চাত্যের সাধারণ মানুষেরা, যারা সেইন্ট কিঙবা যাজক নয় তারা সেইন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছে। মানবিক কারণেই তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে দন্ডদাতাদের উপর এবং দীর্ঘদিন থেকে দিনটিকে স্মরণে রেখেছে। তবে আমাদের দেশের মতো অত হৈ চৈ মাতামাতি করে না।

বিবাহ প্রতিষ্ঠা দিবস
নির্ভরযোগ্য ইতিহাস থেকে জানা যায় - ভ্যালেনটাইন মেয়েটিকে বিবাহ করেছিলেন। এই অপরাধেই (?) তাকে হত্যা করা হয়। গোপন প্রেম কিংবা সম্পর্ক থাকলে তো কেউ জানতো না। অপরাধও হতো না। সেই হিসেবে এই দিনটিকে বরং "বিশ্ব বিবাহ দিবস" বলা যেতে পারে।
পাশ্চাত্য এদিনকে ভালোবাসা দিবস বলে না- বলে ভ্যালেনটাইন'স ডে। কারণ এই দিনে সেইন্ট ভ্যালেনটাইনকে হত্যা করা হয়েছে। অতএব এদিনের নাম ভালোবাসা দিবস হওয়ার কোনো যুক্তিই থাকতে পারে না।

বিয়ে করা কেন অপরাধ
সেইন্ট কিংবা পাদ্রীদের বিয়ে না করার কারণ হলো তারা নিজেদেরকে তাদের নবীর উত্তরসূরী মনে করে। এদিকে তাদের নবী ঈসা(আ) অবিবাহিত ছিলেন। ঈসা (আ) এর মাতা মরিয়মও অবিবাহিত ছিলেন। অর্থাৎ বিয়ে না করা তাদের নবীর সুন্নত। তাই বিয়ে না করাকে তারা সওয়াবের কাজ এবং যারা ধর্মীয় প্রধান বা যাজক হয় তাদের জন্য বিয়ে করা গর্হিত পাপের কাজ মনে করা হয়।
এই তত্ব এবং তথ্য ভালোভাবে জানার পরও কেউ সেইন্ট ভ্যালেনটাইন বিয়ে করেছে। অতএব ধর্মীয় প্রধানরা তো শাস্তি দিবেই। খ্রিস্টধর্মের সাথ মানব প্রকৃতির সম্পর্ক কমই আছে। আর এই জন্যই সাধারণ খ্রিস্টানরা ধর্মের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। বিবাহ করা কোনো মানুষের (ফিতরাত) স্বভাবজাত বিষয়। এই বিষয়টিকে কোনো অজুহাতে বন্ধ করা যায় না। আর এই বিধান কিছু্তেই ধর্মীয় বিধান হতে পারে না। কারণ বিয়ে না করা যদি ধর্মীয় বিধান হয় তাহলে মানুষ বেশী ধার্মিক হলে তো পৃথিবী অচল হয়ে যাবে। দ্বীনদারী ও দুনিয়াদারী আলাদা হয়ে গেছে। ধর্ম আর রাষ্ট্র আলাদা হয়ে গেছে। এখন ধার্মিকেরা বন্দী হয়ে আছে গীর্জায় আর অধার্মিকদের হাতে সব ক্ষমতা।

একটি প্রতিবাদ
ভ্যালেনটাইন'স ডে প্রকৃতপক্ষে একটি প্রতিবাদ দিবস। একটি কঠিন অন্যায়ের প্রতিবাদ। বিবাহ করা প্রত্যেক মানব সন্তানের মৌলিক অধিকার। সেই বিবাহ করার অপরাধে যদি কাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় তাহলে এর চেয়ে বড় অবিচার আর কি হতে পারে? আবার সেই অবিচার করা হয় যদি স্বয়ং ঈশ্বরের নামে তবে সেই দুঃখ রাখার আর জায়গা কোথায়?
তারচেয়ে বড় দুঃখ হলো আজ যারা ভ্যালেনটাইন'স ডে পালন করছে তাদের বিকৃত মন-মানসিকতা দেখে। এরা ভ্যালেনটাইন'স ডে-র অনুবাদ করেছে "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস"। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামে ছেলে-মেয়েরা যা করছে তা দেখে তো মনে হয় এটা হচ্ছে-"বিশ্ব বেহায়া দিবস" । এই দিনটিতে বিভিন্ন বিনোদন স্পটে নির্লজ্জতার প্রতিযোগীতা চলে।
যারা এই দিনটি প্রথম উদযাপন করে তারা আজকের ভ্যালেনটাইন'স ডে-র চেহারা দেখলে, কষ্টে-দুঃখে বোবা হয়ে যেতেন। ভ্যালেনটাইন'স ডে-র প্রকৃত স্পিরিট এমনভাবে হারিয়ে গেছে তা সত্তর হাত মাটি খুড়লেও বুঝি আর খুজে পাওয়া যাবে না।

ভালোবাসা দিবস-
ভালোবাসার জন্য কি একটা দিবস ঠিক করা দরকার? দিন ঠিক করে কি ভালোবাসতে হবে?
ভালোবাসা তো প্রাণের সম্পদ। যার অন্তরে যতো বেশী ভালোবাসা আল্লাহর ততো বেশী নিকটবর্তী।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত -"রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন-মুমিন ব্যাক্তি ভালোবাসার প্রতীক। ঐ ব্যাক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই যে কাউকে ভালোবাসে না এবং পরিণামে তাকেও কেউ ভালোবাসে না।"(মুসনাদে আহনাদ)
ভালোবাসা আর বিনয় পাশ্চাত্যের ভাষায় আছে, চরিত্রে নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ নির্বিচারে হত্যা করতে ওদের একটুও প্রাণ কাদে না। বছরে যতো লক্ষ কোটি ডলার ওরা মানুষ মারার অস্ত্র তৈরী খাতে ব্যয় করে তার অর্ধেকও যদি ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধা দূর করার জন্য ব্যয় করতো তাহলে বিশ্বে কেউ না খেয়ে থাকতো না।
ওরা কুকুরের প্রতি যে প্রেম দেখায় যে খরচ করে - সেইটুকু প্রেম কিংবা খরচ যদি মানুষের জন্য করতো!
আমাদের দেশের একশ্রেণীর অনুকরণ প্রিয় হীনমণ্য মানুষ সব কিছুতেই পাশ্চাত্যের অনুকরণ করতে চায়। দীর্ঘদিন ওদের গোলামীল জিঞ্জির থেকে আপাত দৃষ্টিতে স্বাধীন হলেও মন-মস্তিষ্কে ওরা গোলামই রয়ে গেছে। পাশ্চাত্যবাসীর কিছু ভালো গুণ আছে তা কিন্তু এইসব গোলামেরা আয়ত্ব করতে পারে না। ওদের মধ্যে যা কিছু খারাবি, নোংরামী, অশ্লীল শুধু সেইটুকু আয়ত্ব করতে পেরে এইসব রেহমানেরা মহাখুশী।

৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×