somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মস্তিস্কের আকুতি, নতুন জীবন নিয়ে ফিরে আসার আকুতি

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি একটি ব্রেইন, কাচের জারের মধ্যে বন্দী, বহুদিন যাবত বন্দি, জানিনা কতোদিন ধরে বন্দি। শুধু বুঝতে পারছি দিনের পর দিন আমি এই কাচের জারে বন্দি। অক্সিজেনের বুদ বুদ ,তরল বায়ো-কেমিক্যাল আর আর সুচের ভিতর দিয়ে বাইরে থেকে রক্ত প্রবাহ আমাকে বাচিয়ে রেখেছে। আমার কোনো দেহ নেই আমার ক্ষুধার অনুভুতি আছে কিন্তু খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি নিঃস্বাস নেই না। অতিসুক্ষ্ণ পাইপের ভিতর দিয়ে ধমনিতে অক্সিজেন আমাকে বাচিয়ে রেখেছে। সাথে আছে সামান্য বৈদ্যুতিক প্রবাহ, আমার নিউরন গুলোকে সচল রাখার জন্য। সেই জন্যই আমি চিন্তা করতে পারছি ।জানি না এই ভাবে কতো দিন ধরে আবদ্ধ থাকবো। আমার হাত, পা নাড়াতে খুব ইচ্ছা করে। আমি এই জারের ভিতরে অস্থির হয়ে উঠেছি । কিন্তু আমার কোনো হাত পা নেই। আমি কাদতেও পারি না। আমি জীবিত নেই, আবার মৃত ও নেই। আমি জীবিত আর মৃত এই দুইয়ের মাঝা মাঝি। কিন্তু আমি দেখতে পাই, কারন এই ব্রেইনটার সাথে চোখটাও লাগানো আছে।

কাচের জারের ভিতর থেকে রুমটাকে দেখা যায়। এই রুমটা টা একটা অত্যাধুনিক ল্যাব। না জানি কতো কতো জিনিস পত্র আছে নামও জানি না। আজকে সকালে এই ল্যাবে দুইজন এপ্রোন পরা লোক এসেছিলো, ওরা সিরিঞ্জে করে লম্বা সুই দিয়ে আমি ব্রেইনটার ভিতরে কি যেন ঢুকিয়ে দেয়। ওহহহহহহহহ......অসহ্য যন্ত্রনা। কিন্তু আমি চিতকার করতে পারি না। আমার মুখ, কন্ঠ নালী নেই। আমার চোখের পানি এই কাচের জারের বায়ো-ক্যামিকেলের সাথে মিশে লবনাক্ত হয়ে যায়।
ওরা প্রতিদিন এই ল্যাবে আসে আর আমাকে ওরা প্রতিদিন দেখে। আর দেখে দেখে উল্লাসিত হয়, খুশী হয়, কেন যেন ওদের মুখে বিজয়ের হাসি। ওরা কি বিষয়ে যেন সাফল্য পেতে যাচ্ছে। কাচের জারের ওপার থেকে ওরা আমাকে বারে বারে দেখে।

আমার অনেক স্মৃতি আছে। আমার বাবা-মা, ভাই, আমার প্রিয় স্ত্রী সবার সাথে কতো কতো আনন্দ, হাসি, বেদনার স্মৃতি। কতো কতো খুশীর.......। আমি একটি ভালো চাকুরী করতাম, আমার একটি সুখের সংসার ছিলো। অভাবের সংসারে আমিই ছিলাম একমাত্র আয়ের সম্বল। আমিই ছিলাম পরিবারের বড় ছেলে। পরিশ্রম করে যে আয় করতাম সেটা দিয়েই হাসি মুখে আমার পরিবার চলতো। ছোট ভাইয়ের অনেক অনেক আবদার পুরন করতাম.........।

আমার পরিবারের ওরা এখন কোথায়, কোথায়? বারে বারে প্রশ্ন জাগে ওরা কোথায়, আমি এখানে কেন? আমি কিভাবে এখানে আসলাম? কি ভাবে আমি দেহ ছাড়া এই জারে বন্দী হলাম? আমি কোনো উত্তর পাই না......ভেবেই চলি শুধু। জানি না এই দুঃসহ জীবনের শেষ হবে কবে।

আমার শেষ স্মৃতি যেটা মনে পড়ে, আমি একদিন রাস্তা পাড় হচ্ছিলাম। হঠাত রঙ সাইড থেকে একটি গাড়ী প্রচন্ড গতিতে আমার উপরে উঠে যায়। এর পরে আর কিছু মনে নেই। শেষ বারের মতন যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি রাস্তার উপরে অনেক অনেক মানুষ। আমি রাস্তার উপরে চিত হয়ে পড়ে ছিলাম। আমার মুখ দিয়ে গল গল করে রুক্ত বের হচ্ছিলো। রাস্তার মানুষ জন আমাকে পানি খাওয়াচ্ছিলো। এর পরে আমার কিছুই মনে নেই।...... আমার কান্না পাচ্ছে। কিন্তু আমি কাদতে পারি না..........।

দিনের পর দিন এই ভাবে পাড় হয়ে যাচ্ছে, সময় পাড় হয়ে যায়, জানি না কতো বছর পাড় হয়েছে আমি এই কাচের জারে বন্দি। ওরা সারা দিন এই ল্যাবে কাজ করে, আবার রাত হলে চলে যায়। রাতের অন্ধকারে ঢেকে যায় এই রুম। রাতের অন্ধকারে এই ল্যাবে আমিই একমাত্র জীবিত সত্তা।

একদিন অবাক করে দেখলাম ওরা এই রুমের মধ্যে একটা কৃত্তিম কংকাল নিয়ে আসলো। তবে এটা প্রাকৃতিক মানুষের হাড় মনে হচ্ছে না। সম্ভবত পোর্সেলিন, গলিত জমাট ক্যালসিয়াম, আর ফসফরাসের তৈরি কংকাল। তবে একেবারে অরিজিনাল কংকালের মতন মনে হচ্ছে। ওরা বহুদিন ধরেই কৃত্তিম টিস্যু নিয়ে কাজ করছিলো। এই কংকালের সাথে ওরা কৃত্তিম টিস্যুকে সংযোজনের প্রকিয়া শুরু করলো। সম্ভবত প্রানিজ আমিষ থেকেই ওদের টিস্যু গবেষনা চলছে। প্রতিদিন ওরা অনেক অনেক পরিশ্রম করে, কাজ শেষ হলে ওই কৃত্তিম দেহটাকে আবার একটি বৃহত কাচের জারের ভিতরে রেখে যায়। ওই কাচের জারটি ফ্রীজের মতন। তবে জমাটবাধা বরফের মতন নয়। সকাল হলেই আবারো ল্যাবে ওরা আসে, ওই কৃত্তিম দেহটা নিয়ে ওদের কাজ শুরু হয়।

কাজের ফাকে ফাকে এসে ওরা আমার দিকে তাকায়। আমার যত্ন নেয়। ওরা নিজেদের ভিতরে ওনেক কথা বলে, কিন্তু আমি শুনতে পাই না। শুধু অনুভব করতে পারি, বুঝতে পারি। তবে ওদের ইশারা ইঙ্গিতে মনে হচ্ছিলো আমাকে তারা ওই কৃত্তিম দেহের সাথে প্রতিস্থাপন করবে।

বাকি অংশ পরে দিবো......... :) :)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:১৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×