somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিবার্য গিরিপথ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‍‍!

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈমানের দাবী করার পর একজন মানুষ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। নবী ও তাঁর সাহাবাদের ভয়াল পরীক্ষার অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। পৃথিবীতে যে-ই ঈমানের দাবি তুলবে তাকে অবশ্যই পরীক্ষা করা হবে । সভ্যতার উষালগ্ন থেকে শয়তান ও সত্যপন্থীদের মধ্যে এক তীব্র রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে। অন্তিম সময় পর্যন্ত এই যুদ্ধ নিরন্তর চলতে থাকবে। চিরন্তন হক-বাতিলের এ যুদ্ধে হক পন্থীদের উপর ভেঙে পড়েছে বিপদের পাহাড়। সঙ্কটের এ পাহাড় অপেক্ষা করছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতিটি সত্যপন্থীর জন্য।ব্যাপারটি কোরআন ও সুন্নাহ গভীরভাবে অধ্যায়ন করলে আরো সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। ঠিক কীভাবে কখন আমাদের ঈমানের পরীক্ষার স্তরগুলো অতিক্রম করতে হবে, তা আমাদের (যারা রাসূলের উম্মাত হওয়ার দাবিদার তাদের) জানা দরকার।

প্রথমে নবী স. এর জীবনের দিকে ফিরে যাই । নবী স. একজন উচ্চ সম্ভ্রান্ত লোক ছিলেন। সবাই তাঁকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে চলত। কিন্তু যেদিন তিঁনি ঈমানের ঘোষণা দিলেন সেদিন থেকেই তাঁর আশে পাশের মানুষগুলোকে অন্যরকম মনে হতে লাগল।এক এক করে তিঁনি হারাতে লাগলেন সম্পদ, শ্রদ্ধা ও মানুষের সহযোগিতা। পেশায় ছিলেন একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ি। মিথ্যুক আর ভণ্ডদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার পর তাকে এড়িয়ে চলতে লাগল সবাই। ফলে ব্যবসা হারাতে হল তাঁকে। জীবনে নেমে আসল চরম অর্থনৈতিক মন্দা। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে(স.) কে না খেয়েও থাকতে হয়েছে। তিন তিনটি বছর মক্কার কাফেররা মুহাম্মদ স. এর পরিবারের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। এ কঠিন সময়টিতে নবি স. গাছের পাতা খেয়ে খিদে মিটিয়েছেন। খিদের যন্ত্রণায় পেটে পাথর বেধে রাখতেন হত নবী স. কে। এক পর্যায়ে মক্কার কাফেরদের নজিরবিহীন অত্যাচার এড়িয়ে সত্যের বাণী প্রচার অব্যহত রাখার ইচ্ছায় তিঁনি তায়েফে গমন করেন । তায়েফের অধিবাসিরা নবীকে অপমান করে তাঁর পেছনে লেলিয়ে দেয় দৃষ্কৃতিকারীদের । তারা নবী স. কে পাথর ছুঁড়ে ক্ষতবিক্ষত করে। মক্কায় তিঁনি যখন নামায পড়তেন তার মাথায় উটের নারিভুরি ঢেলে দেয়া হত। তার অনুসারীদের জ্বলন্ত কয়লার উপর শুইয়ে রেখে তাদের পিঠ থেকে চর্বি ঝলসে দেয়া হত। নির্যাতন ও অত্যাচারের এমন হাজারো নজির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সীরাত গ্রন্থগুলোর পাতায় পাতায়। নিপীড়নের এমনসব পদ্ধতি বাছাই করা হত, যা পাশবিক, নৃশংস ও মানবাধিকার বিবর্জিত। এত সব কিছুর পরও কাফেরদের জেদ মেটত না। তারা নবী ও তাঁর সাহাবীদের তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়। তাঁদের সহায় সম্পদ লুট করে। নবি স. এর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনরাও তাঁর বিরুদ্ধে ভয়াল ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। রাসূল স. এর জন্য তা ছিল একটি দুঃসহ ক্রান্তিকাল। এতকালের পরিচিত মুখগুলো যখন নিষ্ঠুর শত্রুতায় মেতে ওঠে তখন সত্যি এক নির্মম ও অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গেল নবী স. ও তাঁর সাথিরা মদীনায় হিজরত করেন। তবে জগতের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী সেখানেও সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্ব থেমে থাকেনি। শুরু হয় একের পর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। বদর, উহুদ, খন্দক, মুতা, খাইবার, হুনাইন, ও আরো অনেক ছোট বড় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নবি ও সাহাবাদের ভীষণভাবে প্রকম্পিত করে। এবার আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। পুরো আরব ভূখণ্ডে মুহাম্মদ স. এর একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। অশান্ত ও বিপদসঙ্কুল আরব হয়ে ওঠে শান্ত ও নিরাপদ।

আপনি যদি সত্যিকার অর্থে নবীর একজন উম্মত হ্ওয়ার দাবি করেন, আপনাকে অবশ্যই এ ধরণের অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। আপনার ব্যবসা বাণিজ্যের নিদারূণ ক্ষতি হবে। আপনাকে অপমান করা হবে। আপনার ঘনিষ্ঠজনেরা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবে। আপনার উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হবে। আপনাকে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হতে পারে। আপনাকে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করা হবে। আপনার সামনে উপস্থিত হবে বদর, উহুদ, খন্দক. খাইবার ও হুনাইন। আবু জাহেল, শাইবা ,উতবা ,উমাইয়া, মুগিরা,আবু লাহাবদের মত মতলবাজ বেনিয়াদের সাথে আপনার সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠবে । ষড়যন্ত্রকারী কুআইনুকা, নজির ও কুরাইযার ইহুদীদের সামনাসামনি হতে হবে আপনাকে। এ পথে আপনি উমর, আলি, ওসমান, তালহা, যুবায়ের, আবু বকর সিদ্দিক, বিলালদের মত অসাধারণ মানুষদেরও সাথি হিসেবে পাবেন। আবু জাহেল, শাইবা, উতবারা আপনার পায়ের নিচে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ রেখে দিতে চাইবে। কাব ইবনে আশরাফ, আসমা বিনতে মারওয়ানের মত অশ্লীল কবি সাহিত্যিকদের সাথেও মুকাবিলা হবে আপনার। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মত ভয়ংকর মুনাফিক আপনার পথে বাগড়া দিতে চাইবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শয়তান ও মানবতার শত্রুরা আপনার হাতে নিদারুণভাবে পরাস্ত হবে।

যে কেউ-ই ঈমানের পথে পা বাড়িয়েছে তাকেই এ অনিবার্য গিরিপথগুলো অতিক্রম করতে হয়েছে। একজন সত্যপন্থীকে অবশ্যই এ পথের বিপদজনক চড়াই উৎরাইগুলো পেরুতে হবে। এ পথে কোন নিস্তার নেই। কারোও বাহবা নেই। এ পথে ম্যারি এন পিটার্স, রিচার্ড বাউচার, খালেদা বা হাসিনাদের প্রশংসা নেই। এ বিপদসঙ্কুল পথে মন মোহন সিঙেরা আপনার মাথায় হাত বুলাবে না। এখানে কোন প্রতারক আপনাকে তার বিশ্বস্ত মন্ত্রীও বানাবে না। বিজয়ের আগ পর্যন্ত এর পুরোটাই কণ্টকাকীর্ণ পথ।


____________________________________

اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ يُّتۡرَكُوۡۤا اَنۡ يَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَهُمۡ لَا يُفۡتَنُوۡنَ

লোকেরা কি মনে করে রেখেছে, “আমরা ঈমান এনেছি” কেবলমাত্র একথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক। আনকাবুত: ২-৩

--------------------------------------

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ]

"তোমরা কি মনে করেছো তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো তোমরা সে অবস্থার সম্মুখীন হওনি, যে অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী (ঈমানদার) গণ ? তারা সম্মুখীন হয়েছিল নির্মমতা ও দুঃখ- ক্লেশের এবং তাদেরকে অস্থির করে তোলা হয়েছিল ৷ এমনকি রসূল ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে ? (তখনই তাদেরকে সুখবর দেয়া হয়েছিল এই মর্মে যে) জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই। " আল বাকারাহঃ ২১৪


---------------------------------------

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ ]

" তোমরা কি মনে করে নিয়েছো, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো আল্লাহ দেখেনইনি যে, তোমাদের মধ্য থেকে কে জিহাদে প্রাণ উৎসর্গকারী এবং কে সবরকারী ?" আল ইমরানঃ ১৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×