somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজা

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজা
-তায়েব মিল্লাত
শিশুকালেই রাজার সঙ্গে আমাদের পরিচয়। কিশোরকালেও আমাদের কাছে তার আবেদন হারিয়ে যায়নি। তখন একটা রাজা মিলত চার আনায়। আট আনায় দুটো কিংবা টাকায় চারটি কিনতে পারতাম ঈদের দিনে। কারন সেই দিনটিতে বখশিসে ভর্তি থাকতো আমাদের জেব। আর মসজিদের পাশে আমাদের থেকে বড়রা নিকের ছোলাবুটের দোকানের পাশাপাশি রাজা, চকলেট, প্যাকেট আচারেরও দোকান দিতো গুটিকয়েক। খাবারের পেছনে না ছুটে রাজায় রাজায় ভরে থাকতো আমাদের জেব। জোড়া ঠোট তার মুখে পুরে বাতাসে বাতাসে ভরিয়ে তুলতাম রাজার দেহ, আবার মুখ খুলে সব বাতাস বের করে মিইয়ে দিতাম। একটা না একটা সময় ‘ফটাস’ করে ফেটে যেতো রাজা। তারপর তার টুকরো অংশ চুষে চুষে খানিক ফুলিয়ে অন্যের মাথায় শব্দ করে ফাটিয়ে আমরা বেশ মজা পেতাম। রাজাকে আমরা এভাবেই চিনতাম। তার আরেকটা পরিচয় ছিল আমাদের কাছে, বিমানে যারা চড়ে তারা নাকি প্রস্রাব করে রাজায়। এই কথা বলে বড়রা আমাদের রাজা কিনতে বারণ করতো। সেই বারণ কোনো কাজে আসতো না। রাজার সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠতা বরং বাড়তেই থাকে।
তারপর আমরা প্রাথমিক থেকে কনিষ্ঠ হয়ে জ্যেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে উঠি। রাজার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ততোদিনে টিভি বিজ্ঞাপনের কল্যাণে খানিক পরিচয় পাই প্যানথারের। ধোঁয়াশা থাকলেও এর উপযোগের গোপন গন্ধটা খানিক টের পেতে শুরু করি। নিষিদ্ধ আকর্ষণের দুষণ ছড়াতে থাকে আমাদের মাঝে। বাজারে এলাকার এক বড়ভাইয়ের মুদি দোকানে মেলে পরিচয়ের সুযোগ। সেই ভাই দোকান রেখে একটু বাইরে গেলে ক্যাশবাক্সের এক খোপে প্যানথারের বাক্সটি নাড়তে থাকি। তারপর সাহস করে খুলি এবং আগ্রহ মিলিয়ে যায়; এতে আর বিশেষ কী আছে, এতো রাজার মতোই। সেই থেকে আর প্যানথার আমাদের টানে না। আমরা বরং জীববিজ্ঞান বইয়ে ঝুকে পড়ি কিংবা তাগড়া ছেলেগুলো দেহজ আর লেবেনচুষ মার্কাগুলো দেহহীন প্রনয়ে বুঁদ হই। জ্যেষ্ঠ পীঠে পাঠ শেষে আমরা ছড়াতে থাকি। অভিবাসী, ব্যবসায়ী, চাকুরে, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিষয়ী, বিবাগী, উচুশিতি, নীচু শিতি, বিবাহিত, অবিবাহিত, বাবা, মা ইত্যাদি নানা ট্যাগ লাগে আমাদের মাঝে। সহপাঠী মেয়েগুলো মহিলা হতে থাকলে রাজার কথা প্রায় ভুলেই যাই আমরা। আমাদের দুই কী তিন উত্তরজš§ শেষে রাজাও তার রাজত্ব হারায়; ছোটদের ঠোঁটে উঠে চুইংগাম, কোমল পানীয়, চিপস প্রভৃতি।

দুই.
খুলেই বলি, যখন রাজার প্রকৃত পরিচয় পাই তখন থেকে রাজা তো বটেই তার প্রজাতির সবার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলি। তাদের শত্র“প ঠিকই ফুঁসতে থাকে ভেতরে এবং শয়নে, শৌচাগারে, বিছানা, পাশবালিশে তারা মিইয়ে যেতে থাকে। অতপর রাজারই এক অভিজাত প্রজাতির প্রয়োজন পড়ে। তারই সঙ্গে সঙ্গম চলে দিন, মাস, বছর। মনুষ্যপ্রজাতি ঠিক সময়ের অপোয় তার ভেতরে ঠাই নেয় বর্জাগার, নর্দমা কিংবা নদীতে। তার পরিক্রমণে ছায়াসঙ্গীর মতো লেগে থাকি। পাড়ার রাস্তা, রমনা পার্ক, সোহরাওয়াদী উদ্যান, ইংলিশ রোড, মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে ছায়া হই তার।
একদা আমিও থাকি ছায়ার সঙ্গে। তাই মহাখালীতে ছায়া থামলে আমিও থামি। ফুটপাতের নীচ দিয়ে চলা নর্দমার জাম ছাড়ানো হয়েছে। সেখান থেকে সদ্য উঠানো রাজাদের স্তুপ ম্যানহোলের ঢাকনাটার পাশে, তখনও পানি ঝরছে। চোখ কচলাই কাদা, বর্জ্যরে বদলে এগুলো কেন? থলে হাতড়াই ক্যামেরাটা নেই। পাশের ভবনের দিকে চাই, একটা আবাসিক হোটেল। সিঁড়ির প্রথম ধাপে দাঁড়ানো এক লোক ডাকেন, মামা লাগবোনি, নতুন মাল আছে। রাজারা এখানে মনুষ্যপ্রজাতি নয়, রোগশোকের বিরুদ্ধে লড়ছে। তাই ঢাকা ওয়াসা, ডিসিসি জলের অবাধ নিষ্কাশনে হিমশিম। তারা কী রাজাদের কাছেই শিখে নিয়েছে অনাহুত মানুষের মতোই কিভাবে আটকে রাখতে হয় বৃষ্টি, মুত্র আর ব্যবহƒত পানি। ব্যবহƒত রাজারা কিন্তু খাল আর নদী ভরাটেও কাজে আসতে পারে, তাই যারা প্লটের নামে পানি বেচছেন, পানি কিনছেন তারা মহাখালী আসতে পারেন। আমিও মাঝেমাঝে মহাখালীতে ছায়ার সঙ্গী, আমাদের আরেক সঙ্গী ছোট্ট একখানা ডিজিটাল ক্যামেরা।

তিন.
পক্ক হওয়ার পর শুনেছি নাগরিক জীবনে একটা সময় রাজার জয়জয়কার ছিল। এর সূত্র ধরেই বয়সে জ্যেষ্ঠ এমন এক বন্ধু বলেছেন, তখন নাকি রেডিওতে একটা বিজ্ঞাপন দিতো, ও রাজা, রাজা...। তারা এর মাজেজা না বুজে এবং ময়মুরুব্বির ধার না ধেরে জোরকণ্ঠেই এর সুর ধরতেন। বিজ্ঞাপনের মতোই তখন জনপ্রিয় ছিলো রাজার ব্যবহার। তখনকার সমরশাসক নাকি এসব বিষয়ে ভালো জানেন। উনি অবসরে গেলে, আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোর উচিত এসব ব্যবহারে উনার অভিজ্ঞতার বয়ান শোনা। বিদেশে তো সাবেক দেশপতিরা বয়ান করেই ভালোই কামান। আমাদের সাবেক পতির অবশ্য বয়ান-কামাইয়ের দরকার পড়বে না। অভিজ্ঞতার ভান্ডার বেশি বলেই আমাদের মতো অজ্ঞদের জন্যে উনার বয়ান ভীষণ জরুরি। আর রাজা ব্যবহার যদি উনার কাছে বিস্বাদ ঠেকে থাকে, তবে দেশে মায়ের সংখ্যা আরও বেশি থাকার কথা।
বহুজাত ব্যবসায়ীদের কল্যানে এখন রাজা প্রজাতির আরও উন্নত সংস্করণ রয়েছে। কাঁচা হাতে পড়লে এটাও তেমন কাজে আসে না। তাই প্রেমিকারা মাঝেমাঝে গর্ভশঙ্কায় দিন কাটান। পাকা হাতও মাঝেমাঝে ভুল করে বলে উইলিক্স প্রধান জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এখন জেলে। শঙ্কা আসলে কাদের, বিশ্বমোড়লদের না সুইডেনের দুই নারীর? নারীর এক-আধটু শঙ্কা থাকলে ফুটো রাজাদের ব্যবহারে সুইডেনের আইনে পুরুষরা ধর্ষক বনে যান। সুইডেন আর বাংলাদেশ যোজন যোজন দূর; এসব কথা আজ থাক, কারও কারও প্রেমিকা মা হওয়ার জন্যে দিন গুনছে, তারা রাজাদের ঠিক মানতে পারছে না।
তায়েব মিল্লাত
১০ ডিসেম্বর ২০১০
মিরপুর, ঢাকা
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×