somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটনা ও ঘটনা থেকে উৎসারিত গল্প-২: অনুধাবন

০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা: সেদিন অফিসে আমার এক দুঃসম্পর্কের চাচীর সাথে দেখা। তার ছেলে মেয়ে দুজনই প্রবাসে স্যাটেল্ড। চাচা-চাচী উভয়ই বয়োবৃদ্ধ। বৃদ্ধ বয়সে ছেলেমেয়েকে কাছে পাচ্ছেন না বলে চাচী দুঃখ প্রকাশ করলেন।
গল্প:
আমার এক চাচা মাসুদ রানা সিরিজের এতোটাই ভক্ত যে ছেলের নাম রেখেছেন রানা আর মেয়ের নাম পপি। তারা দুজনই বিদেশে থাকে। পপি আপা ইংল্যান্ডে থাকেন আর রানা ইটালী গিয়ে ফিনল্যান্ডের এক মেয়েকে বিয়ে করে এখন ওখানেই বসবাসরত। আমিও ডিভি পেয়ে আমেরিকা চলে গিয়েছিলাম। এখনো আমেরিকাতেই আছি। ঈদ উপলক্ষে দেশে আসলাম দুদিন আগে। পরিচিত সবার সাথে দেখা করছি ধীরে ধীরে। যাদের সাথে পারছি না তাদের সাথে মোবাইল যোগাযোগ। মোবাইল যোগাযোগের এক পর্যায়ে কল দিলাম সেই মাসুদ রানা ভক্ত চাচাকে। চাচার বয়স এখন অনেক। চাচীও নিশ্চয়ই বুড়িয়ে গেছেন। তাদের খোঁজ নেয়া এমনিতেই নৈতিক দায়িত্ব। তার উপর আবার রানা আমার ফ্রেন্ডের মতো ছিল। যদিও অনেক দিন কোন যোগাযোগ নেই।
হ্যালো চাচা। আমি সফিক। গত পরশু দেশে এসেছি।
কোন সফিক? আমেরিকার?
জ্বি চাচা। ঈদ করতে দেশে চলে আসলাম। আপনি কেমন আছেন চাচা?
এই আছি কোন রকম। বয়স হয়ে গেল। এটা সেটা অসুস্থতা তো সবসময় লেগেই আছে।
চাচী? চাচী ভাল আছে তো?
নারে বাবা, কোমরে ব্যাথায় বিছানা থেকে ঊঠতে পারে না। সারাক্ষণ বিছানাতেই পরে থাকে।
চাচা, রানা কি আসছে?
রানা? (কিছুক্ষণ নিরবতা) ও হ্যা, হ্যা বাবা। রানা পপি দুজনই আছে।
কি বলেন চাচা! দুজনই আছে। তবে তো আমার ভাগ্য খুবই ভাল। দুজনের সাথেই দেখা করা যাবে।
হ্যা বাবা। দেখা করতে পারবে। চাইলে এখনো কথা বলতে পারো। নে রানা। ধর। ফোনে কথা বল।
সত্যি বলতে কি রানার সাথে আমার ঘনিষ্টতা ছিল খুব। কতো দিন পরে তার সাথে কথা হচ্ছে!
হ্যালো রানা! কবে আসলি তুই?
জ্বে ভাইজান?
আরে ভাইজান ভাইজান করতেছিস কেন? আমি সফিক।
জ্বে সফিক ভাই।
কি ব্যাপার! তোর কণ্ঠও তো দেখি চেঞ্জ হয়ে গেছে! আমাকেও ভুলে গেছিস!
ও পাশে নিরবতা! কিছুক্ষণ পর চাচার কণ্ঠ।
রানা মনে হয় লজ্জা পেয়েছেরে। তুই বরং পপির সাথে কথা বল।
জ্বি অবশ্যই।
হ্যালো। ওপাশ থেকে মেয়ে কণ্ঠ।
হ্যালো, পপি আপা! তোমার বয়স তো দেখি আরো কমে গেছে। কণ্ঠ তো দেখি একদম বাচ্চাদের মতো। (সত্যি কণ্ঠ অনেক মিহি বলে মনে হচ্ছিল)
ওপাশ থেকে খিল খিল হাসি! এ হাসি তো পপি আপার না! সবাই কি চেঞ্জ হয়ে গেল! হবে হয়তোবা । দীর্ঘ পনের বছর তাদের সাথে দেখা নাই।
পপি আপা, তুমি কেমন ... লাইনটা কেটে গেল। মনে হয় চার্জ ফুরিয়ে গেছে। থাক। যাবার আগে একদিন তাদের বাসায় গিয়ে দেখা করে আসবো।
আমেরিকা যাবার কয়েকদিন আগে সেই চাচার বাসায় গেলাম। চাচা দরজা খুলে ড্রয়িং রুমে বসতে দিলেন। কি যে অবস্থা চাচার! বয়সের চাইতেও অনেক বৃদ্ধ বলে মনে হচ্ছে তাকে। ভর দেয়ার জন্য লাঠি ব্যবহার করছেন। চাচীকে ডেকে আমার আগমন সংবাদ দিলেন। চাচী পাশের রুমে শুয়েছিলেন। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না জানতে পেরে কাছে গিয়ে সালাম করলাম। জিজ্ঞেস করলাম রানা আর পপি আপাকে দেখছি না কেন? তারা কোথায়? চাচা জানালেন তারা রান্না ঘরে। বলেই রানাকে ডাকলেন। হাফ প্যান্ট পরা ছোট্ট যে ছেলেটি ভেতর থেকে বের হয়ে এলো, সে কিছুতেই রানা হতে পারে না। চাচা পরিচয় করিয়ে দিলেন, এই হচ্ছে রানা। আমার থতমত অবস্থা কাটিয়ে উঠার আগেই ফ্রক পরা একটা মেয়ে আসলে চাচা তাকে পপি বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না দেখে চাচা বুঝিয়ে বললেন, এরাই এখন আমাদের রানা, পপি। নিজ ছেলে মেয়েদের তো কাছে পাই না। তাই এই দুজনকে রানা আর পপি নামে ডেকে মনটাকে শান্তি দিতে চাই। তবু পারি না বাবা। কি যে করবো, বলো? তাদের কতো করে বললাম, আমার তো অনেক আছে। দেশে চলে আসো। না। তারা কিছুতেই আসবে না।
চাচা চাচীর কষ্ট স্বচক্ষে অনুভব করতে পেরে নিজের কথা মনে হল। আমিও তো আমেরিকা থাকি। দু-তিন দিন পর চলে যাবো। আমার বাবা-মাও কি এভাবেই আমাকে মিস করেন? তারাও কি একসময় অন্য কোন ছেলেকে সফিক নামে ডাকবেন? না, এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না।
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্যতার কলঙ্ক ইজরাইল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম তোরাহ। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদি এবং সকল একেশ্বরবাদীরা বিশ্বাস করে তোরাহ হচ্ছে প্রফেট Moses ( মুসা নবী ) এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক থেকে ভালোবাসার পথে: আমার এবং মীমের গল্প

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ২:৩৭

## প্রথম অধ্যায়: অনলাইন থেকে অফলাইনে

ফেসবুকের পাতায় একটি সাধারণ দিন। আমি তখন নিউইয়র্কের ব্যস্ত শহরে বসে থাকি, চারপাশে মানুষের কোলাহল আর কাজের চাপ। হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি পোস্টে কমেন্ট করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে প্রায় প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্হান থেকে সমস্যার সৃষ্টি করেন।

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩০ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮



শেখ সাহেব পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসে ৩য় দিন ( ১/১২/১৯৭২) দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদটা তাজউদ্দিন সাহেব থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন; ৯ মাস জেলের পর, উনার দরকার ছিলো কিছুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্যারিয়ার কথন: ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং এবং সর্তকতা।

লিখেছেন জাদিদ, ৩০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৪

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং, পেশা হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্মানজনক সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ায় অনেকেই এই পেশায় যুক্ত হয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ মনটা কেমন যেন অনেক কিছু চিন্তা করছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



সকালের মৃদু আলোয় মোড়ানো একটি মনোরম দৃশ্য ধরা পড়েছে এই ছবিতে। এটি একটি খোলা জায়গা, যেখানে সবুজের সমারোহ এবং প্রকৃতির ছোঁয়া স্পষ্ট। ছবির বাম দিকে গাছের সারি এবং ডান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×