নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মোহতাসিম বিল্লাহকে সংগঠনের এক এহসার সদস্যসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এহসার সদস্যের নাম আল-আমিন (২০)। গত বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে সিরাজগঞ্জের সলেঙ্গা এলাকার আলোকদিয়া গ্রাম থেকে র‌্যাব গোয়েন্দারা তাদের গ্রেপ্তার করেন। বিল্লাহ জেএমবির আমির মওলানা সাইদুর রহমানের শ্যালক।

তাদের কাছ থেকে জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংবলিত বিপুল পরিমাণ সাংগঠনিক বই, সিডি, লিফলেট, বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি ও ব্যবহারের ওপর বইপত্র এবং প্রশিক্ষণ পরিকল্পনার নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে গ্রেপ্তারকৃত জেএমবি সদস্যদের হাজির করা হয়।

এ সময় র‌্যাব মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, র‌্যাবসহ দেশের অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও চলমান অভিযানের কারণে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের দলীয় কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

তিনি বলেন, জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা চাকরি ও কাজের সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় বিভিন্ন জনবহুল স্থান ও ব্যস্ততম শহর এলাকাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ নিচ্ছে। এসব জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে ছদ্মবেশে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার

রাতে সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গার আলোকদিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। ওই বাড়িতে জেএমবির সদস্যরা অবস্থান করছিল। তাদের কাছ থেকে জিহাদি বই, সিডি, জেএমবির নিজস্ব নকশাসহ বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়। মোহতাসিম বিল্লাহ জেএমবির আমির মওলানা সাইদুর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী কামরুন্নাহার হিমুর ছোট ভাই। তিনি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

২০০৯ সালে বিল্লাহর হাতে জেএমবির আরেক সদস্য খুন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে কামরুন্নাহার হিমুকে র‌্যাব-৩ গ্রেপ্তার করে। ২০১০ সালে রাজধানীর শনির আখড়ায় পুলিশের হাতে জেএমবির আমির মওলানা সাইদুর রহমান ধরা পড়েন। তার পিতার নাম আব্দুস সামাদ লাহিড়ী। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার শওগুন গ্রামে বিল্লাহর বাড়ি। অপরদিকে আল-আমিনের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার কামারিয়া গ্রামে।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোহতাসিম বিল্লাহ জেএমবির আমির মওলানা সাইদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও জেএমবির বর্তমান কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক বলে স্বীকার করেন। এছাড়া তিনি জেএমবির এহসার পর্যায়ের নেতা বলেও জানায়।

বিল্লাহ জেএমবির কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক হিসেবে নিয়মিত সমর্থকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আসছিল এবং দলের আয়-ব্যয়ের হিসাবও রাখতো বলে র‌্যাব জানায়। এছাড়া আটক অপর এহসার সদস্য আল-আমীন জেএমবি সদস্য মোহতাসিম বিল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে জানা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় আল-আমিন নূর মোহাম্মদের মাধ্যমে জেএমবিতে দাওয়াত পায় এবং জেএমবিতে অন্তর্ভুক্ত হয় বলে স্বীকার করেছে।

যেসব নথি উদ্ধার

মোহতাসিম বিল-াহর কাছ থেকে দলের সাংগঠনিক ও জেএমবির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংবলিত সিডি এবং নথি পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে জেএমবির প্রাথমিক সাংগঠনিক কাঠামো, সাধারণ জনগণকে উদ্বুুদ্ধকরণ এবং প্রচারণামূলক বিভিন্ন ভিডিওচিত্র; জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড মৃত সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রতি জনগণের আস্থা ও মতামত সংবলিত পুরোনো রেকর্ড; বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণের ভিডিওচিত্র; বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরকে বিশে-ষণ করে জনগণকে জিহাদি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে উস্কানি ও প্রচারণামূলক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভিডিওচিত্র; বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, প্রচারের মাধ্যম ও জেএমবিতে যোগদানের জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ভিডিওচিত্র; বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত আল-কায়েদার কার্যক্রম এবং ওসামা বিন লাদেনের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য সংবলিত ভিডিওচিত্র; ইরাক যুদ্ধের নৃশংসতা ও আফগানিস্তান যুদ্ধের বিভিন্ন কার্যক্রম ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে জিহাদি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার আহ্বান সংবলিত যুদ্ধের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র এবং প্রয়োজনীয় সফ্্টওয়্যার ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর ভিডিও সিডি।

এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরির নিয়ম সংক্রান্ত পুস্তক, সংগঠনের প্রশিক্ষণ ও পরিচালনা করার নীতিমালা, গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত নথিপত্র, জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ক বিভিন্ন লিফলেট, আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সচিত্র লিফলেট, সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা, প্রশিক্ষণ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব সংক্রান্ত নোটবুক এবং বিভিন্ন ধরনের সাংগঠনিক বই ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে।