somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কালা পাহাড় ২০০০
আমি স্বপ্ন দেখি এক যুবকের, যে নরকের কীটদের বিশাল বাহিনীর সামনে যুদ্ধের ময়দানে হাজির হবে। যুদ্ধে জিতে বিজয়ী হবার জন্য নয়, শুধু ন্যায়ের পক্ষে দাড়াবার জন্যেই যুদ্ধে যাবে সেই যুবক। মহাভারতের সেই চরিত্র "সংশপ্তক" এর মত, যে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও যুদ্ধের ময়দানে হা

গরীব দেশের গরীব মানুষের কথাঃ আমরা কতটুকু গরীব?

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বলে নেই, আমার এই লেখা কোন রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। এটা নিছক কিছু গরীব মানুষের কথা। কারা গরীব, এই প্রশ্নের উত্তর মানব সমাজের শুরু থেকে অনেক জ্ঞানী-গুণী দিয়ে এসেছেন। আমরাও সবাই জানি, যাদের অনেক অভাব, তারাই অভাবী। যারা দারিদ্রের শিকার, তারাই দরিদ্র, গরীব। এখন অভাব অনেক রকম হতে পারে, কারো দুবেলা ভাতের অভাব হতে পারে, কারো ফ্রায়েড চিকেনের অভাব হতে পারে। কারো গায়ে লজ্জা ও শীত নিবারণের কাপড়ের অভাব হতে পারে, কারো আবার ফ্যাশনেবল-ট্রেন্ডি কাপড়ের অভাব হতে পারে। (আমি একজনের কথা জানি যে নটরডেম কলেজে প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন পোষাক পরে হাজির হত।) কারো মাথার উপর ছাদের অভাব থাকতে পারে, কারো নতুন বিমান-বন্দরের অভাব থাকতে পারে। (বিশ্বাস করেন, আমি বর্তমান বিরোধী দলের সাথে কোনভাবে জড়িত নই।) এই ব্যাপারে টলষ্টয়ের একটি চমতকার গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। এক ব্যক্তি অনেক জায়গা কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু তার প্রয়োজন ছিল মাত্র সাড়ে তিন হাত জমির, যেখানে তাকে কবর দেয়া হয়। (জমি কেনার ধকলে বেচারা ইন্তেকাল ফরমায়।)

কথা বলার থেকে লেখালেখি করা বেশ নিরাপদ। কারণ, আমার শিরোনামের অর্ধেক শুনেই একদল বলে বসবেন, বর্তমান সরকারের অপশাসনে মানুষের এই অবস্থা। আরেক দল বলবেন, বিগত সরকারগুলোর অপশাসনে জনগণের এই অবস্থা, এর থেকে উত্তরণে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর বুদ্ধি কম হলে বলবেন, বিরোধী দলের ষড়যন্ত্রে এই অবস্থা (যদিও বক্তার হাতেই প্রশাষনসহ সকল ক্ষমতা)।

আমরা গরীব দেশে বাস করি, এ ব্যাপারে কেউ অবশ্য দ্বিমত করবেন না। তবে আমরা কিন্তু চিরকাল এইরকম দরিদ্র ছিলাম না। সাত-সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপিয়ানরা সমৃদ্ধ বাংলায় এসেছিল সম্পদের লোভেই। তারপর দুশো বছর রাজস্ব (খাজনা) আয় করে, সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ করে, দেশী কুটিরশিল্প ধংস করে ইউরোপের শিল্পপণ্যের অবাধ বাজারে পরিণত করে, বাংলার জনগণের জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার কোনরকম ব্যবস্থা না নিয়ে (শাসক বণিক গোষ্ঠির কেরাণি তৈরির জন্য পরে স্কুল চালু হয়, বণিক গোষ্ঠি ও শাসকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনী তৈরি হয়, চিকিতসা পাওয়া যেত মিশনারিদের কাছে যার সাথে ধর্ম-প্রচার জড়িত) আমাদের আর্থিক ও মানসিকভাবে দরিদ্র করে দিয়ে যায়। দুশো বছর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলে একটি জাতির পঙ্গু হতে আর কিছু বাকি থাকে না। একটা উদাহরণ দেই, নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর প্রান্তরে বর্তমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর থেকে বেশি সৈন্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। অবশ্য আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুদের একজন একবার বলেছিল, বাংলাদেশ আরো কিছুদিন ব্রিটিশের অধীনে থাকলে আমরা হংকংয়ের মত হয়ে যেতাম। আরেকজন বলেছিল, ব্রিটিশরা না আসলে আমরা আফ্রিকার জংগলের জংলীদের মত থেকে যেতাম। এরা দুজনেই ইঞ্জিনিয়ার এবং খুবই মেধাবী। কিন্তু আমার বন্ধু বলে আমি এদের তখনই ছাগল-পাগল বলে গালি দিয়েছিলাম। দুশো বছরের পরাধীনতায় আমরা আমাদের ইতিহাস ভুলে গেছি। আমাদের বেশিরভাগই জানিনা, হাজার বছর আগে বৌদ্ধরা এই বাংলায় বিশ্ব-বিদ্যালয় স্থাপন করেছিল। অবশ্য ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে এদেশে লুটেরাদের আগমন থেমে নেই।

আমরা কেমন গরীব? কিছুদিন আগে পেশাগত কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। হোটেলের রেস্টুরেন্টে সাধারণত দাম বেশি রাখা হয়। তাই সকালের নাস্তার জন্য বের হয়ে একটা সাধারণ মানের রেস্টুরেন্টে ঢুকে রুটি আর ডিম ভাজি দিতে বললাম। বেশ ভিড় থাকায় টেবিলে আমার মুখোমুখি সিটটাতেও একজন এসে বসে পড়ল। সে দেখতে আমার মতই, সাধারণ পোষাকের এক যুবক। খাবারের অর্ডার দিল, রুটি আর চা। আমি ডিমভাজি দিয়ে রুটি খেতে খেতে দেখলাম সে চায়ে ভিজিয়ে রুটি খাচ্ছে। আমি কি মনে করে আশে-পাশে একটু চোখ বুলিয়ে দেখি, রেস্টুরেন্টে একমাত্র আমিই ডিমভাজি খাচ্ছি, বাকি সবাই রুটি চায়ে ভিজিয়ে খাচ্ছে। এবারতো আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম। কেনরে ভাই, সবজি, বুটের ডাল দিয়ে খেলেওতো হয়, শুধু চা দিয়ে কেন? নাকি এখানকার লোকদের ঐতিহ্য এটাই। চা দিয়ে খাওয়া, নয়তো কিপটামী করা। চা দিয়ে খাবার বদলে সবজি বা বুটের ডাল খেলেওতো শরীরে কিছু পুষ্টি পায়। কন্ডেন্সড মিল্ক নামের নন-ডেইরী পাম অয়েলের ফ্যাট দিয়ে এক চামচ চিনির চা শরীরে কতটুকু পুষ্টি দেয়? নিজেকে কেমন দোষী মনে হতে লাগল। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খেলাম, বিভিন্নজনের সাথে আলাপ করলাম। নাহ, চট্টগ্রামের মত বড় শহরে এটা কোন ঐতিহ্য নয়। শখ করে কেউ চা দিয়ে রুটি ভিজিয়ে খায় না।

এই দারিদ্র দূর করার কি কোন উপায় নেই? একবার নটরডেম কলেজের নিমাই স্যার ক্লাসে বলেছিলেন, পৃথিবীর সম্পদের ৮০ ভাগ আছে পৃথিবীর ২০ ভাগ মানুষের কাছে। আর বাকি ২০ ভাগ সম্পদ আছে বাকি ৮০ ভাগ মানুষের কাছে। যদি কোনভাবে সকল সম্পদ সকলের মাঝে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া যায়, তবুও একটা নির্দিষ্ট সময় পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে – ৮০ ভাগ সম্পদ ২০ ভাগ মানুষের কাছে। তাহলে স্রষ্টার কাছে দারিদ্র দূরীকরণের জন্য প্রার্থণা করে লাভ নেই। বরং স্রষ্টা যেন আমাকে এরপর থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্টুরেন্টে ফার্মের মুরগীর মত মেয়েদের দেখতে দেখতে ফ্রাইড ফার্মের মুরগী খাবার তওফিক দান করেন, সেই দোয়া করি। আজকালতো আমাদের দেশে এগুলোর কোনটারই অভাব নেই।

রাতে অফিসিয়াল কাজ ছিল। তাই সকালে দেরী করে উঠে গাড়ি কল করলাম। গাড়ি কাছাকাছি আসলে ড্রাইভারকে মিস কল দিতে বললাম। হোটেল থেকে নেমে ডানে-বামে ২ দিগন্তে গাড়ির কোন চিহ্ন দেখলাম না। মাঝ-বয়সী এক লোক পত্রিকা নিয়ে যাচ্ছিল। একটা পত্রিকা দিতে বললে লোকটা অনভিজ্ঞ হাতে মাটিতে পত্রিকা বিছিয়ে আমার কাংখিত পত্রিকাটি খুঁজে দিল। বুঝলাম, এই পেশায় নতুন। ১০ টাকার নোট দিয়ে ২ টাকা ফেরত দিতে বললে লোকটা চিটাগাংয়ের আঞ্চলিক ভাষায় কি বলল না বুঝলেও বললাম, কেন, ২ টাকা ফেরত দেন। এরপর শার্ট-প্যান্ট পরা ফর্সামতন মাঝবয়সী লোকটা আমার পা ছুঁয়ে সালাম করে যা বলল, তা চিটাগাংয়ের আঞ্চলিক ভাষা না বুঝলেও ঠিকই বুঝলাম, সে দুপুর পর্যন্ত কিছুই খায়নি। আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া একটা লোক অবাক হয়ে তাকাতে গিয়েও চোখ ফিরিয়ে হেঁটে চলে গেল। আশে-পাশের লোকজন না দেখার ভান করল। আমি উনার চোখের দিকে তাকাবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম। সব এই ব্যাটা ড্রাইভারের দোষ, হোটেলের সামনে এসে মিসকল না দিলেও একটু কাছে এসে দিতে পারত। হোটেলটাও ভুয়া, সকালে রুমে পত্রিকা দেয়না। আচ্ছা এই ২ টাকায়তো উনার খাবারের কোন ব্যবস্থাই হবেনা। কয়টা পত্রিকা বিক্রি করলে এক বেলার খাবার যোগাড় হবে?

আমি জানি, অনেকেই ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছেন, আমার দেখা এই চিত্র প্রকৃত চিত্র নয়। আমি আশা করি, আমিও যদি তাদের মত হতে পারতাম - শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসা থেকে বের হয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিস। বিনোদনের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং সেন্টার ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্টুরেন্ট। আসলেই আমাদের হয়ত অনেক টাকা। নয়ত আগামী ২০-৩০ বছরের জন্য পর্যাপ্ত বিমানবন্দর থাকার পরেও আমরা নতুন বিমানবন্দর তৈরি করতে চাইব কেন। আরবের শেখরা এমন করে, আমরা মনে হয় তাদের অনুকরণে এরকম করতে চাই। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য অনেক অতিপ্রয়োজনীয় কাজ (পর্যাপ্ত বিদ্যুত উৎপাদন-সঞ্চালন-সরবরাহ, সচল ন্যাশনাল হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, রেল উন্নয়ন) শুরু করতে পারিনি লোনের টাকা যোগাড়ে দেরীর জন্য।

আমি গরীব হতে চাইনা। অনেক ছোটবেলায় গুণী অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদকে বিটিভিতে একটা নাটকে গরীবের অভিনয় করতে দেখেছিলাম। সে ক্রুদ্ধ হয়ে ডায়ালগ দিয়েছিল, “এত শখ কেন মা***, তোর বাপে কি টাকার বস্তা রাইখা গেছে?” হে খোদা! আমাদের দারিদ্র থেকে দূরে রাখুন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×