somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্দেহ

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেদিন অফিসে আমার কলিগ হাসান ভাই আমাকে একটি কাহিনী শোনালেন। যার সংক্ষেপ হল উনার চাচাতো ভাই তার বউকে ডিভোর্স করেছে কারণ তার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিল। এখন হাসান ভাই যেটা চাচ্ছেন তা হল উনি উনার চাচাতো ভাইয়ের বউকে বিয়ে করবেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনার চাচাতো ভাইয়ের বউ যদি সত্যিই অপরাধী হয়ে থাকে আর পাত্রী রাজি কিনা তাও তো একটা ব্যাপার। আবার আপনাদের পরিবারেও এ নিয়ে মনমালিন্য হতে পারে। জবাবে হাসান ভাই আমাকে যে চমকপ্রদ উত্তরটি দিলেন তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বললেন,উনার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে নাকি উনারই অবৈধ সম্পর্ক চলে আসছিল। আমি তখন বললাম, আপনার চাচাতো ভাইয়ের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করলে উনি যে আবারো পরকীয়ায় জড়াবেন না তার কী নিশ্চয়তা আছে? উনি তখন আমার ডেস্ক থেকে উঠে উনার ডেস্কে বসে অফিসের কাজ কর্ম সব ফেলে গভীর চিন্তায় ডুব দিলেন। ছোটবেলা থেকেই আমি প্রতিনিয়তই পরকীয়া সম্পর্কের কথা শুনে আসছি। কখনো কখনো দেখারও ‘সৌভাগ্য’ হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু নারীদের দোষ দেয়া হয়। কখনো চিন্তা করা হয় না নারীটির স্বামীর কি এই ক্ষেত্রে কোন দোষ আছে বা যার সাথে পরকীয়া করছে সেই লোকের কোন প্রলোভন কিংবা হুমকির ভয়ে সে এই রকম করছে কিনা। সমাজে নারীকে অনেক পুরুষই পণ্য ভেবে ব্যবহার করে, ব্যবহার করার সামগ্রী ভাবে। নারীর প্রয়োজনীয়তা তারা মানলেও স্বীকারে অপারগ। এইসব দার্শনিক ধরণের কথা ভাবতে ভাবতে আমি অফিস শেষে বাসায় ফিরে দেখি আমার স্ত্রী বাসায় নেই । কী ব্যাপার রাত নয়টা বাসায় নেই আবার আমার ছেলেটাকে রেখে গেছে? বাসায় আমাদের চারজনের বাস। আমি,আমার স্ত্রী,আমাদের ছেলে আর কাজের মেয়েটা। কাজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার তোমার আপা কই? ও বলল-বাইরে যাওয়ার সময় আমারে কয় নাই । আমি ওকে মোবাইলে ফোন করলাম রিসিভ করছে না। কই গেল,আমাকে না বলে কোথাও যায় না। ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম,বাবা তোমার মা কয়টার সময় বেরিয়েছে? ছেলে জানাল দেড়-দুই ঘন্টা তো হবেই। আমি রেগে মেগে টং হয়ে বসে টিভি দেখতে লাগলাম। কাজের মেয়ে এসে চা দিয়ে গেল। রাগের চোটে তাও খেলাম না । আমার স্ত্রী আসল রাত দশটার পর। জিজ্ঞেস করলাম কোথায় গেয়েছিলে? বলল বাবুর জন্য জামা কিনতে গিয়েছিলাম। আমি ওর সাথে কোন ব্যাগই দেখলাম না। আমি জিজ্ঞেস করলাম ব্যাগ কই? ও বলল কোন জামাই পছন্দ হয়নি তাই কিনেনি। আমার সাথে সাথে মনে পড়ল হাসান ভাইয়ের বলা ঘটনাটি। আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল। তবে কি তাহলে আমার স্ত্রীও.....। আমি আর কিছু না ভেবেই ছেলের সামনেই ওর মাকে চড় মেরে বসলাম। চেঁচাতে লাগলাম-এতো দেরী করে কার সাথে শুয়ে এসেছ এখন আমাকে মিথ্যা বলছ। যেন আমি কিছুই বুঝিনা,বেশ্যা কোথাকার। আমার স্ত্রীকে আমি কখনোই মারিনি। ও যেন আকাশ থেকে পড়েছে এমন চেহারা করে রাখল। বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করল না। আমি বালিশ নিয়ে ছেলের রুমে এসে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগলাম। কাজের মেয়েকে বললাম গরম পানি করে দিতে। আমি রাতের অপকর্ম সকালে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে চাইলাম। ভাবতে লাগলাম-শেষ পর্যন্ত আমার বউও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ল। কার সাথে ছিল এতোটা সময়? আমি ভাবতে লাগলাম। অফিসে গিয়ে কাজেও মনোযোগ দিতে পারলাম না। হাসান ভাইকে দেখে আমার ঘৃণায় বমি আসতে লাগল। খিস্তি দিতে লাগলাম মনে মনে-শালার লুইচ্চা,আরেকজনের বউরে ভাগায় নেস,মাদারচোত কোথাকার। বাসায় ফিরলাম বেশ রাত করে,ইচ্ছে করেই বাইরে খেয়ে নিলাম। ওই বেশ্যা মাগিটার হাতে কিছু খাওয়ার ইচ্ছাই নাই আমার। আজকেই ঘর থেকে বের করে দিব। বাসায় পা দিতে কোলাহল। এতো মানুষ আসল কোথা থেকে চিন্তা করে বের করতে পারলাম না। আমার মা,বাবা,বড় ভাই, তার পরিবার,পাশের বাসার ভাই,ভাবিসহ পুরো এপার্টমেন্টের মানুষজনে গিজগিজ করছে আমার ফ্ল্যাট। কিছু হয়নি তো? একটা আশঙ্কা নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই চিৎকার- হ্যাপি বার্থডে টু ইউ! আমি স্তম্ভিত হয়ে পড়লাম। আমার যে আজকে জন্মদিন তা মনেই ছিল না। ব্যাপারটা কী? এতো আয়োজন কে করল? দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে আমার স্ত্রী লুনা,হাতে সুন্দর একটা ফুলের তোড়া। আমার জন্য নাকি? বুঝতেছি না কিছুই। কালকে রাতের ঘটনার পর ওর তো এমনভাবে সাজার কথা না। লুনার পড়নে এই বছর ম্যারেজ ডে তে আমার কিনে দেয়া জামদানি। মুখটা মলিন হয়ে আছে,গত রাতের ঝরের রেশ এখনো কাটেনি মনে হয়। আমি মুখে একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে ওর কাছে যেতেই পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি আমাকে আস্তে করে বলল- ভাই একটু শুনে যান। আমি একটু সাইডে যেতেই তিনি আমাকে বললেন -গতরাতে লুনা আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এই সব কিনতে গিয়েছিল, কেকের অর্ডার দিয়ে আমার জন্য উপহার কিনতে গিয়েই ওর দেরী হয়েছিল। আমি বিষন্ন মুখে এইসব শুনলাম। লুনার কাছে যাওয়া মাত্রই প্যাকেট থেকে একটা দামী সিল্কের পাঞ্জাবি বের করে দিয়ে বলল-এটা তোমার জন্য,পছন্দ হয়েছে?

১৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×