somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলো ছায়ার জল তরঙ্গ

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুল ছুটি হত ১২ টায়, আর ফেরার বাস ছিল ১ টার সময়। মাঝখানের এক ঘণ্টা পার করতাম খেলায়; সময়টা ছিল যখন পড়ি ক্লাস ওয়ান এ। ক্লাসের পড়া আর সময়ের হিসেব না করলেও এই ১ ঘণ্টার হিসেবটা থাকতো পাক্কা, একটা মুহূর্তও যেন নষ্ট না হয়। বাস আসার কিছু আগেই পুকুর পাড়ে গিয়ে একটু বসতাম জিরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু বসা কি আর হয় ঐ বয়সে? সবাই মিলে পাড়ে বসে হাত দিয়ে ঢেউ বানাতাম, আর কার ঢেউ কারটা ভেঙে দিচ্ছে এই নিয়ে তুমুল হৈ চৈ। আবার মাঝেমধ্যে একপাড়ে ঢেউ বানিয়েই দৌড় পুকুরের ধার ধরে, অন্য পাড়ে গিয়ে ধরতে হবে। কিন্তু অন্য পাড়ে পৌঁছে আর খুঁজে পেতাম না সেই ঢেউ। আর যেসব দিন সাথে কেউ থাকতো না, পাড়ে বসে তাকিয়ে থাকতাম পুকুরের জলে, আমার প্রতিবিম্ব! টোকা দিলে কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়ে তারপর আবার ধীরে ধীরে এক হত সবগুলা বিন্দু। হঠাত হঠাত দূর থেকে কোন ঢেউ এসে ঝাপসা করে দিত, আবার ধীরে ধীরে এক হত। দু একটা গাছের পাতা পড়ত আসেপাশে; একটু ঝাপসা করে দিত, ধীরে ধীরে আবার এক হত। এক অদ্ভুত ভাঙা গড়ার খেলা।

হাই স্কুলের মাঠের পাশেও একটা পুকুর ছিল। ক্রিকেট খেলার চরম ধুম তখন। কিন্তু পুকুর পাড়টা একটা আলাদা জগত। তখন পাঠ্য বই এ পুকুরের বাস্তুসংস্থান পড়তাম, আর বিকেলে পাড়ে বসে নিজের প্রতিবিম্বের বাস্তুসংস্থান দেখতাম। ঘন সবুজ জলে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে বিকেলের রোদের আলো ছায়ার খেলা, আর আমার অবয়ব এর ছায়া। আগের মতই চোখ, তবে চুলের ভাঁজটা নতুন এবং একটু আধটু দাড়ি গোঁফ উঁকি দিচ্ছে। অপর পাড়ে ইট-সুরকির স্তুপে ব্যাস্ত হাতের উঠা নামা, নতুন বিল্ডিং এর কাজ চলছে। মাঝে মাঝে সুরকি ছুটে পুকুরের জলে এসে পড়ত, আর সেই ঢেউ; বিন্দুগুলো ঝাপসা হয়ে আবার এক হয়ে যেত। ভাঙা গড়ার খেলা।

কলেজের মাঠে আর পুকুর না পেলেও কোচিং এর বাসার পাশেই লেক ছিল। একই রকমই অনেক কিছু তবে ঢেউ এর উতস ভিন্ন। কখনও আমার হাতেরই ছুড়ে দেয়া ঢিল, কখনও বা পাশের বিপণী বিতান থেকে ছুটে আসা আইসক্রিম, জুস এর প্যাকেট। মাঝে মাঝে গাছের পাতা। ছোটবড় ঢেউ আর ভাঙা গড়ার খেলা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পুকুর ছিল অনেকগুলো, অনেক অনেক ঢেউ। তখন অবয়ব খোঁজার সময় কোথায়? মাঝে মাঝে শখ করে গিয়ে সবাই মিলে হয়ত বসে আড্ডা দিতাম। পুকুরের জলে তখন আর নিজের ছায়া খোঁজে না কেউ। একদল খোঁজে সূর্যের ছায়া, একদল প্রিয়জনের, আর কেউ কেউ আকাশ এর। তবুও মাঝে মাঝে নিজের ছায়াটা খুঁজতাম, কষ্ট হলেও চোখগুলো ঠিকই খুঁজে পাওয়া যেত। খুব দ্রুত মিলিয়ে গেলেও আবার এক হত কিছু সময়ের জন্য সব বিন্দু। সেই ভাঙা গড়ার খেলা।

পথে যাওয়ার সময় প্রায়ই ফোয়ারাটা দেখি আজকাল। কপাল ভাল থাকলে কোনদিন হয়তো সচলও থাকে। জলের তীব্র স্রোত আর বেগের কাছে এখন ঢেউ হার মেনে নিয়েছে। এ স্রোতে শুধুই গতি; নেই কোন ছায়া। আমিও খুব একটা খুঁজি না, শুধু সেদিন হেটে যাচ্ছিলাম বলেই একটু থামলাম। পাথর আর লোহার অপরূপ নকশা আর খোঁদাই এর কাজ। এর ফাঁক দিয়ে নীচে একটু গভীরে তাকিয়ে আছি, এবং অবাক হয়ে দেখছি নিজেকে! হাত দিয়ে ছোঁয়ার উপায় নেই, শুধু দেখছি। হঠাত বেশ আলোড়ন তুলে জেনারেটরটা বন্ধ হয়ে গেল। অনেকগুলো ঢেউ ছায়াটা এলোমেলো করে দিয়ে আবার খুব ধীরে ধীরে এক হয়ে গেল সব বিন্দু।

অদ্ভুত সেই ভাঙা গড়ার খেলা!!


The Dream Of The Dolphin - Enigma
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৯:৩১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×