somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলে যায় রঙিন দিন

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য আব্বু বিভিন্ন স্কুল ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করলেন। বাসার আশেপাশের স্কুলগুলোই মূলত ঘুরলেন। আব্বু যে জিনিসটা বারবার আম্মুকে বললেন তাহলো, শেষ পযর্ন্ত প্রতিটা স্কুলই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি লালন করে। তারপরও মন্দের ভালো বেছে নিতে হয় যেরকম বড়রা নির্বাচনের সময় বুঝে নেয়। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন অজুহাতে কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের পকেট হাতড়ে বেড়ায়। আমি প্লেতে পড়ি অথচ এই আমাকেই স্কুলের শিক্ষিকাদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য তারা নিজেরাই আম্মুকে নসিহত করেন। আমাদের নৈতিকতার লেভেল এত নিচে নেমেছে যে ভাবলে অবাক লাগে বৈকি! এই বিষয়গুলো আম্মু আব্বুর সাথে আলোচনা করে। আমি এখনও বুঝিনা। সেই মনে হয় ভালো।

খুব সকালেই ঘুম থেকে জেগে স্কুলের জন্য রেডি হতে হয়। সাতটা বাজলেই আম্মুর হাঁক, এশা ওঠো, ওঠো। আড়মোড়া ভেঙ্গেও আবার পাশ ফিরে শুয়ে থাকি। তখন আম্মু কোলে করে সোজা বাথরুমে নিয়ে যায়। এই শীতের দিনে কি এত তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়া যায়? তার উপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে দাঁতব্রাশ, হাত-মুখ ধোয়া খুব কষ্টকর:((। খুব কম দিনই আছে যে প্রাতকৃত্যাদি সারার সময় আমি কাঁদিনি। তখন আম্মুর আদর মিশ্রিত বকা শুনতে হয়- এত বড় মেয়ে হলো এখনও কান্না করে:)। নাস্তা খাবার সময়ও একই ঝামেলা। এটা খাব না, ওটা খাব। খাবারের প্রতি আমার এমনিতেই অনীহা। দুধ আর সেদ্ধ ডিমটাই আমাকে জোর করে খাওয়ায়। (আপনাদেরকে কিন্তু আপনাদের আম্মু তাই করেছে, ভুলে গেছেন মনে হয়। আমি হয়তো একসময় ভুলে যাব। সব মায়েরাই মনে হয় এভাবে আমাদের আদর করেন।) স্কুলে অবশ্য টিফিন নিয়ে যাই। সেটা ম্যাডামরা খাইয়ে দেন।

স্কুলে আমার বন্ধু বলতে তাইফা। ওকে ছাড়া আমি আর কারও সাথে বসিনা। একদিন ও স্কুলে আসেনি, আমার সেকি কান্না!! মানিকজোড় বলতে পারেনB-)। তাইফার আম্মু আমাকে খুব আদর করে। কিন্তু আমি ওনাকে খুব ভয় পাই। ওনি স্থুলদেহীB-) তাই ওনাকে আমার ভয় লাগে। একই কারণে কয়েকজন ম্যাডামকেও আমার ভয় লাগে। স্কুলে যাবার আগে আমার প্রধান শর্তই ছিল যে আমাকে চিকন ম্যাডাম দিতে হবে। আব্বু যেদিন প্রথম স্কুল দেখে এসে বললেন যে, এশা তোমার স্কুল দেখেছি। সাথে সাথে আমি বলেছিলাম যে ম্যাডাম কিরকম? আব্বু বলেছিল মোটকা। তখন আমার কী কান্না! পরে চিকন ম্যাডামের কথা বলে আশ্বস্ত করলে কান্না থামাই। এই নিয়ে বাসায় কী হাসাহাসি!

বিকেলে ঘুম থেকে জেগেই কার্টুন নেটওয়ার্কের স্ক্রীণ না খুললে আমার চলেই না। "টম এন্ড জেরি" খুব প্রিয় আর মিস্টার বিনতো আছেই। কম্পিউটার গেমসে এখনও এত সিদ্ধহস্ত হতে পারিনি। তবে অভ্যাস আছে বলা যায়। কম্পিউটারে আম্মু গান আর আবৃত্তি শুনে। আম্মু মনে হয় কবিতা প্রেমী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্যামেলিয়া কবিতাটি আমি শুনে শুনে কিছুটা শিখে ফেলেছি। বলবো? শুনবেন? বলি তাহলে-

নাম তার কমলা। দেখেছি তার খাতার উপরে লেখা। সে চলেছিল ট্রামে। তার ভাইকে নিয়ে কলেজের রাস্তায়। আমি ছিলাম পিছনের বেঞ্চিতে। মুখের একপাশে নিটোল রেখা দেখা যায়। আর পারি না। B-)

সারাদিন আব্বুর কথা আমার খুব মনে পড়ে। বারবার আম্মুকে বলি, আব্বু কখন আসবে? আব্বুকে আমি খুব মিস করি। আম্মু বলে আমি নাকি বাপ ন্যাওটা। আব্বু বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। আব্বুর মুড তখন কিছুটা অফ থাকে। ক্লান্তির জন্য কি না কে জানে। আব্বুর প্রতি আমার খুব মায়া হয়। চোখ ফেটে জল আসে। আব্বু আমাকে যখন জড়িয়ে ধরে তখন আমার কী যে ভালো লাগে!!

আম্মু বলে এখন আমার নাকি খুব মজার দিন কাটছে। আচ্ছা, আপনাদেরও কি এরকম মজার দিন কেটেছে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো আপনারা কি বলেন- দিনগুলি মোর সোনার খাচায় রইলনারে....

নোটঃ আজ আম্মুর সহযোগিতা একটু বেশিই ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১০
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহর সাহায্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪০



দুই মেয়ের পরীক্ষা বিধায় আমার স্ত্রীকে লক্ষ্মীপুর রেখে আসতে গিয়েছিলাম। বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে আমার স্ত্রী যাবে না বলে বেঁকে বসলো। বাধ্য হয়ে চাঁদপুর রুটে যাত্রা ঠিক করলাম। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডয়েজ ভেলে'র প্রকাশিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি বেশ উদ্বেগজনক

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বাহিনী থেকে প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ডে যুক্ত সৈনিকদের ইউ.এন. এর পিস কিপিং মিশনে পাঠানোর বিষয়ে ইউ.এন. এর কর্মকর্তাগণ বেশ উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে ডয়েচ ভেলে ক'দিন আগেই একটি প্রামাণ্যচিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুলের চিন্তার কাবা প্রাচ্য নাকি পাশ্চাত্য?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:০৫


কাজী নজরুলের বড় বিপত্তি তিনি, না গোঁড়া ধর্মীয় লোকের কবি আর অতিমাত্রায় বামের কবি, না হোদাই প্রগতিশীলের কবি। তিনি সরাসরি মধ্যপন্থীর। অনেককেই দেখি নজরুলের কিছু কথা উল্লেখ করে বলেন কাফের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×