somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়েটের রিইউনিয়ন।।ভাবিদের মাঝে দেখি আমি আমার বৌয়ের ছায়া এবং এক ভিনদেশি তারার গল্প.

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বুয়েটে চলছে বিয়া।খেতে চাইলে চলে আসেন।

এই পোষ্ট পড়ার আগে উপরের লিংকে একটা গুতা দেন।পটভুমি জানলে কাহিনী ভাল বুঝবেন।আজে বাজে প্রশ্নও করবেন না।

অনেক দিন ধরে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম।বড় ভাইরা আসবেন।সাথে থাকবে ভাবিরা।তাদের উচ্ছল-চঞ্চল পদচারনায় আমাদের এই নিষ্প্রান বুয়েট প্রান পাবে।আমরাও ভাবিদের সান্যিধ্যে মজার সময় কাটাবো।যারা যে সব ভাই নতুন বিয়ে করেছেন তাদের সাথে যদি শালিরা থাকেন তবে তো কথাই নেই।আমার মনে অবশ্য আরো জিনিস ছিল।ভবিষ্যতে আমার বৌ কেমন হবে ভাইয়াদের বৌদের রুপ দেখে আমি তা যাচাই করার তালে ছিলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্যাম্পাসে গেলাম।বন্ধুরা মিলে ঘুরলাম।বিভিন্ন কোম্পানির ষ্টলে গিয়ে ব্যাপক জ্ঞানি ভাব নিয়ে উলটা পালটা প্রশ্ন করে ভড়কে দিতে কি যে মজা তা না জানলে নয়।এ ক্ষেত্রে যে সব ষ্টলে সুন্দরি মেয়ে ছিল তারাই ছিল আমাদের প্রথম টার্গেট।
কুপন জমা দিয়ে দুপুরের খাবার নিলাম।খুলে খাবারের পরিমান দেখে তো অবাক এত খাবার খাবে কে?বিশাল এক প্যাকেট কাচ্চি,ডাবল খাসির মাংস।সাথে কোয়ার্টার মুর্গী।এক বোতল বোরহানি।রুমে নিয়ে বন্ধুদের সাথে ভাগ করে খেলাম।তারপর ঘুম।
ঘুম থেকে উঠলাম চারটার দিকে।রেডি হয়ে গেলাম ডাইনিং এ।সেখানে ফ্রি চা নাস্তার ব্যবস্থা আছে।গিয়ে দেখি অনেক ভাইয়া আসছে।ভাবিরাতো আছেই।চা খেতে খেতে তাদের সাথে গল্প করলাম।তারপর তাদের নিয়ে হলে ঘুরলাম।হলে মেয়েদের ঢুকা নিষেধ।কিন্তু আজকে পারমিশন ছিল।তাই ভাইয়ারা ভাবিদের নিজেদের ছাত্র জীবনের রুম গুলোতে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
মোট ১৫ জনের মত ভাইয়াদের সাথে কথা হল।তাদের মধ্যে ৫ জন ভাবী পেলাম খুবই কিঊট,৭ জন কিঊট আর বাকিদের চলনমতন রুপ।যেহেতু বেশিরভাগ ভাবিই সুন্দর তাই আমার বৌ সুন্দর হবে এই ধারনা নিয়ে রুমে চলে আসলাম।
কিছুক্ষন পরে দরজায় ঠকঠক।খুলে দেখি এক আংকেল দাঁড়িয়ে আছেন(উনিও ভাইয়া কিন্তু আংকেল বলার কারন আছে)।সাথে তার ওয়াইফ।একটা বাচ্চা ছেলে আর একজন।এই একজন দাড়িয়ে ছিল সবার পেছনে।তার ওপর দৃষ্টি পড়ল সবার পরে।আমি ছোটখাট একটা টাসকি খেলাম।এত সুন্দর মানুষ কিভাবে হয়।
উনি পরিচয় দিলেন।নাম বললেন।ইলেক্ট্রিকাল ৮৫ ব্যাচ(আমার চেয়ে ২৫ বছরের সিনিয়র)।আমার বেডটা দেখিয়ে বললেন এইবেডে আমি থাকতাম।অনেক দিন ধরে ছেলেমেয়েরা আসতে চাইছিল।তাই আজকে নিয়ে আসলাম।তারপরে খুবই বিনয়ের সাথে বললেন আমার কোন ডিষ্টার্ব হয়েছে কিনা।আমি তার ভদ্রতায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম।বিরক্ত হবার প্রশ্নই আসেনা।
রুমের অগোছালো অবস্থা,মশারি মাস খানিক আগে টানিয়ে ছিলাম আর নামানো হয়নি।এইখানে আর যত দিন আছি নামানো হবার কোন সম্ভাবনা নাই।টেবিলের ওপর বইখাতার স্তুপ।মশারি ষ্টান্ড ভরা জামাকাপড়।আন্টি এদিক সেদিক দেখলো।আমি তো লজ্জায় একশেষ।ভাইয়া বোধহয় বুঝতে পারলেন।তিনি মুচকি হাসলেন।
ছোট্ট পিচ্চির সাথে পরিচিত হলাম।তার নাম রাফি।আর সুন্দরিতমার নাম।ইরা।ইরাবতী নদী।দুই ভাই বোন অনেক অবাক।তাদের আব্বু এই নোংরা রুমে থাকতো!লোহার বিছানায় ঘুমাতো!তাদের যেন বিশ্বাসই হয়না।
আংকেল ইউ এস এ তে থাকেন।পি এইচ ডি করেছেন ওয়্যারলেস কমুনিকেশনে।এখন কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আছেন প্রফেসর হিসেবে।গবেষনা করছেন cognitive radio network and spectrum sharing নিয়ে।আমিও একি বিষয়ে থিসিস করছি।শুনে তিনি খুব খুসি হলেন।উতসাহ দিলেন।যে কোন ধরনের সাহায্যের প্রতিশ্রতি দিলেন।
এর ফাকে আমি লোক পাঠিয়ে নাস্তা আনলাম।নাস্তা খেতে খেতে তার সাথে কথা হল।ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা বললেন।ইরা এই বার আন্ডারগ্রাডে চান্স পেয়েছে পারদু ইউনিভার্সিটিতে।তার সাথে কথা হল।এত সুন্দর একটা মেয়ে।কিন্তু অন্যরকম।খুবই অন্যরকম।শান্ত আর লক্ষী।ইউ এস এ এর একটা মেয়ে যে রকম হট এন্ড ক্রিস্পি হবার কথা মোটেও তা নয়।তার বড় বড় চোখের দৃষ্টি আর আচার ব্যাবহারে তাকে বাংলাদেশিই মনে হয়।শুধু বাংলা ঠিকমত বলতে পারেনা।তাকে মনে হল বেহালা,হাতের স্পর্শ পেলেই করুন সুরে বেজে উঠবে।
আন্টি আমার সমন্দ্বে জিজ্ঞেস করলেন।বাবা-মা,দেশের বাড়ি ইত্যাদি প্রশ্ন করলেন।
একসময় সন্ধ্ব হল।তারা যাবার জন্যে প্রস্তুত হলেন।তাদের সাথে নিচে নামলাম।গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম।যাওয়ার সময় তিনি আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে গেলেন।তার ভিজিটীং কার্ড দিলেন,বাসার ঠিকানা দিলেন।আন্টি বার বার বললেন ইউ এস এ তে গেলে তার বাসায় যাবার কথা বললেন।আংকেল বললেন তার ইউনিভার্সিটিতে আমাকে নেবার জন্যে চেষ্টা করবেন।
যাওয়ার সময় বাগান থেকে কিছু ফুল তুলে তাদের দিলাম।ভাইয়া আমাকে একপাশে নিয়ে হাতে গুজে দিলেন।খুলে দেখি ২০০০ টাকা।এটা খুবই সাধারন ঘটনা।অহরহ ঘটে।
তারা চলে গেল।যাওয়ার আগে এক ফাকে ইরার মোবাইল নাম্বার আর ফেসবুক আইডি রেখে দিলাম।
পাস করার পরে বাইরে যাব কিনা দোটানায় ছিলাম।আজ এক নিমিষেই কেটে গেল।আমাকে বাইরে যেতেই হবে।এবং ইউএস এতেই।
ইরা তুমি থাক।আমি আসছি।
এতোদিন গল্প পড়তে পড়তে,ক্লীওপেট্রা আর হেলেনের কাহিনি জেনে তাদের দেখার শখ ছিল।সেই যুগে না জন্মানোর আক্ষেপ ছিল।এখন মনে হচ্ছে না এ জনমই ভাল।
আমি আমার ক্লিওপেট্রাকে পেয়ে গিয়েছি।

এই গানটা ইরার জন্যেঃ

আমার ভিনদেশি তারা
একা রাতেরো আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে
ঠিক সন্ধ্যা নামার আগে
তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে
মুখ লুকিয়ে কার বুকে
তোমার গল্প বল কাকে।
আমার রাতজাগা তারা
তোমার অন্য পাড়ায় বাড়ি।
আমার ভয় পাওয়া চেহারা
আমি আলোতে আনাড়ি
আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি
কিছু মিথ্যে বাহাদুরি
আমার চোখ বেধে দাও আলো
দাও শান্ত শীতল পাটি
তুমি মায়ের মতই ভাল
আমি একলাটি পথ হাটি।
………………………………………
………………………………………
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×