somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

বিরোধীদলীয় নেত্রী কেন তিউনিস কিংবা কায়রোর স্বপ্ন দেখছেন?

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিরোধীদলীয় নেত্রী কেন তিউনিস কিংবা কায়রোর স্বপ্ন দেখছেন?
ফকির ইলিয়াস
=======================================
গণবিস্ফোরণে উত্তাল হয়ে উঠেছে কিছু স্বৈরশাসকদের দেশ। তিউনিসিয়ার শাসক জইন আল আবেদিন বিন আলির পতন ঘটেছে। তিনি গেল ২৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিউনিসের তখত জুড়ে বসেছিলেন। তার পরিবারের বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি রাষ্ট্র ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এর পরপরই কেঁপে উঠেছে মিসর। কায়রোর রাজপথ দখল করে নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সড়কে সড়কে সহিংস মানুষ ভাঙচুর চালাচ্ছে। বেশ কিছু হতাহতের খবরও বেরিয়েছে।
মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক সে দেশের গদিতে আছেন গেল প্রায় তিন দশক ধরে। মানুষ পরিবর্তন চাইছে। বলা হচ্ছে, মিসরে উস্কানির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। তা আছে কিনা, তার সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন পরোক্ষভাবে। বলেছেন, কোনভাবেই যেন কায়রোতে প্রাণহানি না ঘটে। সেনাবাহিনী যেন মিসরীয়দের ওপর হামলে না করে। মন্ত্রিপরিষদের দ্রুত পরিবর্তনের মাধ্যমে হোসনি মোবারক তার অবস্থা অনুকূলে নেয়ার সব চেষ্টাই করছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি টিকে থাকতে পারবেন কিনা, তা শুধু সময়ের ব্যাপার।
তিউনিসিয়া এবং মিসরের বিষয়গুলোকে বেশ খোশ মেজাজেই নিয়েছেন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তার উপস্থিতি দেখলাম টিভিতে। তাকে বেশ আনন্দিত মনে হলো। খালেদা জিয়া বলেছেন, তিউনিসিয়ার মতো বাংলাদেশের বর্তমান শাসকশ্রেণীকেও পালিয়ে যেতে হতে পারে। কিংবা মিসরের মতো মানুষ বিক্ষোভমুখী হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশেও।
আমরা জানি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জামায়াত-বিএনপি জোট ২০০১-২০০৬ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। এরপর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান মহাজোট ক্ষমতায় এসেছে। বর্তমান সরকার এমন কোন স্বৈরাচারী সরকার নয় যার তুলনা তিউনিস কিংবা কায়রোর সঙ্গে করা চলে। তারপরও খালেদা জিয়ার মুখে এমন অসংলগ্ন কথা শুনে কেবল হতাশই হতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। একটি দলের প্রধান এমন খামখেয়ালি মার্কা কথাবার্তা কেন বলছেন?
এর পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণটি হচ্ছে, পৌর করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা ভালো ফলাফল করার পর খালেদা জিয়ার মনোবল কিছুটা বেড়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে নবীগঞ্জ-বাহুবল (হবিগঞ্জ-১) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হওয়ার ঘটনাও তার পালে হাওয়া লাগিয়েছে।
নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনটির এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক দেওয়ান ফরিদ গাজী। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার জন্ম মাটি এ আসনে, তার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়ার নাম এসেছিল। এসেছিল দেওয়ান ফরিদ গাজীর পুত্র দেওয়ান শাহ নেওয়াজ গাজী মিলাদের নামও। প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সুরঞ্জন দাশ। না, তাদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়া হয়নি।
এ উপনির্বাচন যখন হয় তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেন সফরে ছিলেন। লন্ডনেই তিনি বলেছেন, হবিগঞ্জ-১ আসনে পরাজয়ের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আমার মতে, আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে ধস নামার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগের একলা চল নীতি। কারণ আওয়ামী লীগ মহাজোটের নামে নির্বাচন করে যৌথভাবে ক্ষমতায় এলেও তাদের একক আসন সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ থাকায় তারা মহাজোটের প্রয়োজনীয়তা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে হবিগঞ্জ-১ আসনের কথাই বলা যায়। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল মুনিম চৌধুরী প্রায় ২০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মুশফিক হেরেছেন মাত্র দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে। এ উপনির্বাচন কিংবা পৌর মেয়র নির্বাচন জানান দিয়ে গেছে, মহাজোটের ঐক্য এখনো কতটা অপরিহার্য।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোটের ঐক্য নিয়ে বারবার উষ্মা প্রকাশ করছেন। তার উষ্মা প্রকাশের কিছু যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে। মনে রাখা দরকার আওয়ামী লীগের সিনিয়র, প্রভাবশালী নেতাদের অনেকের আসনেই পৌর মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চরম ভরাডুবি হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলায় একটিতেও তারা জিততে পারেননি। অথচ এ অঞ্চলের সিনিয়র নেতা চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। প্রায় একই অবস্থা হয়েছে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং কর্মঠ মন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর এলাকায়ও। এর নেপথ্য কারণ খোঁজা খুবই জরুরি।
আড়িয়ল বিলে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ ইস্যুটির প্রকাশ্য বিরোধিতা শুরু করেছেন খালেদা জিয়া। তার ভাষায়, 'ঢাকা বিমানবন্দরকেই আরও মানসম্মত করা যায়। নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের প্রয়োজন কী? তবে বিশেষ কোন ব্যক্তির নামে স্থাপনা নির্মাণ বাংলার মানুষ মেনে নেবে না।'
আমরা দেখেছি ইতোমধ্যে আড়িয়ল বিল অঞ্চলের মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এ ইস্যুকে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে নেয় কিনা তা সরকারের বিবেচনায় আনা দরকার জরুরি ভিত্তিতে। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যু যখন রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান পাচ্ছে তখন যেনতেন যে কোন ইস্যুতেই সরকারের চেইন অফ কমান্ডের ওপর আঘাত হানতে বিরোধীপক্ষ তৎপর হতেই পারে।
বিএনপি নেত্রী ঢাকায় বসে কেন তিউনিস কিংবা কায়রোর স্বপ্ন দেখছেন তার আরও কারণ আছে। আর সেগুলো হচ্ছে_ যে কোনভাবে এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে না পারলে তার পুত্রদ্বয় তারেক এবং কোকোর দেশে ফেরার পথ সুগম হবে না। তাছাড়া সেনানিবাসের বাড়ি হারানোর বেদনা কিংবা ঢাকা বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন বিষয়গুলোও তাকে বারবার দংশন করছে।
বাংলাদেশের মানুষের মনে আছে খালেদা জিয়া কীভাবে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন করে দেশের মানুষকে বোকা বানিয়েছিলেন। নিজেই সেই স্বৈরাচারী মনোভাবের কথা ভুলে গিয়ে এখন তিনি গণতান্ত্রিক সরকারকেই নসিহত শোনাছেন! বলা দরকার, চরম জঙ্গিবাদীদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা না করলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সংসদীয় আসন ত্রিশের কোটায় নেমে আসত না। বিএনপি মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং কট্টর জঙ্গিবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে এ প্রজন্মের মনে যে ভীতি সঞ্চার করেছে, তা সহজে ভুলে যাওয়ার নয়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগেরও ক্ষমতা পেয়ে খুব বেশি আহলাদিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ দুই বছর শেষ হয়েছে। বাকি তিন বছরে দলে এবং সরকারে শৃঙ্খলার শীর্ষতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে জনগণ ভিন্ন চিন্তা করতে বাধ্য হবে। আর সেই আলোকে মন্ত্রিপরিষদে অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন এবং মহাজোট নেতাদের আরও কাজ করার সুযোগ দেয়া খুবই দরকারি বিষয়। মনে রাখতে হবে, পাবলিক সেন্টিমেন্ট কোনভাবেই যেন সরকারের বিপক্ষে না যায়। কারণ জনগণের জন্যই সরকার ও তার শাখা-প্রশাখা।
নিউইয়র্ক , ২ ফেব্রুয়ারি ২০১১
---------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ / ঢাকা/ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ শুক্রবার প্রকাশিত

ছবি- জার ইস্টার
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×