somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজীবন অবিবাহিত থাকার সংস্কার

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামপূর্ব সকল ধর্মে উল্লিখিত-প্রশংসিত হয়েছে সর্বোচ্চ উৎকর্ষ প্রাপ্তির মাধ্যম হিসেবে। নারীর প্রতি লোকজ-মিথ-আশ্রিত দৃষ্টির কারণেই কৌমার্যবৃত্তি স্তুতি পেয়েছে সকল ধর্মে। নারী নিকৃষ্ট, সকল পাপ-অনিষ্টের মূলৎ এ ধারণা থেকেই নারীর সংস্পর্শে-আসা পুরুষ সমাজের দৃষ্টিতে পরিগণিত হয়েছে অধঃপতিত জীব হিসেবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পাপিয়সী নারীর বাহুলগ্নতায় নিজেকে আনেনি কখনো সে পরিণত হয়েছে ইর্ষণীয় পবিত্র ব্যক্তিতে। এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকার ভাষায়-
Celibacy has existed in some form or another through out man’s religious history and has appeared in virtually all the major religious tradition of the world (৩/১০৪০)
কৌমার্যবৃত্তি মানবজাতির ধর্মব্রাত্যের ইতিহাসের বিস্তৃতিতে অস্তিত্ববান থেকেছে কোনো-না-কোনো আকৃতিতে। বিশ্বের সেরা ধর্মগুলোর আচারেই তা প্রকাশ পেয়েছে প্রায়োগিকভাবে।
কৌমার্য-প্রথার মূল উদ্দেশ্য, ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের চারপাশে পবিত্রতার মহিমান্বিত প্রাচীর নির্মাণ করা। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ আধ্যাত্মিকভাবে। সে যদি আরোপিত হয় নারীতে তবে তা হবে পরমুখাপেক্ষিতার এক গর্হিত আলামত। তাই প্রাচীন ধর্মগুলোয় আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের জন্য নারীর সঙ্গে দাম্পত্যসম্পর্ক কায়েম করা ছিল নিন্দনীয়। কেননা তাদের ধারণা মতে কৌমার্যবৃত্তির কঠিন বলয়ে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া ব্যতীত আধ্যাত্বের বিশুদ্ধতম অনুশীলন সম্ভব নয়। পরবর্তীতে তাই ধর্মাশ্রিত যে সাহিত্য সৃষ্টি হয় তাতে আধ্যাত্মে উৎকর্ষ সাধনের পথ হিসেবে কৌমার্যবৃত্তি প্রবল প্রতাপে প্রতিষ্ঠা পায়। সে হিসেবে যারা আধ্যাত্ম ও চারিত্রিক উৎকর্ষের শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করতে চায় তাদের উচিত নারীসংসর্গ পুরোমাত্রায় বর্জন করে কৌমার্যবৃত্তির কঠিন শাসনে নিজেকে সঁপে দেয়া। পূর্ববিবাহিত হয়ে থাকলে স্ত্রী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া।
কামকর্ম ধর্মের সবচেয়ে বড় শত্রু বলে খ্যাতি পেয়েছে। নারীর ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ অর্জনের উপায় হিসেবে ধরা হত কুমারিত্বের নিগড়ে জীবন কাটিয়ে দেয়া। প্রাচীন রোমানধর্মে দার্শনিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ববর্গের পবিত্রতম প্রতিচ্ছবি এমন ছিল যে, তারা চিরকুমার হিসেবেই জীবনযাপন করবেন। মনে করা হত এধরনের মানুষই আদর্শ আধ্যাত্মিক শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। জৈনধর্মে নারীকে চেয়ে-দেখা থেকেও বিরত থাকার বিধান রয়েছে। কৌমার্যবাদের এই অনুশীলন বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মেও সমানভাবে পাওয়া যায়। (দ্রঃ এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা (১৯৮৪) খন্ড ১৬, পৃষ্ঠা ৫৯৯)
ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স.) মানবতিহাসের দীর্ঘ পরম্পরায় একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি নারীর অস্পৃশ্য ও পাপসর্বস্ব হওয়ার আদিম ধারণার বিপক্ষে গ্রহণ করেছেন দ্রোহী অবস্থান। কৌমার্যবৃত্তি এমন কোনো পূণ্যব্রত নয় যা পবিত্রতার শিখরে ওঠাতে পারে কোন ব্যক্তিকে। বরং স্ত্রী-সন্তানের মাঝে জীবনযাপন করেও যে কঠিনভাবে নিজেকে ধরে রাখতে পারে স্রষ্টার সীমানায় সেই হলো উত্তম পবিত্রতম পুরুষ এ ধারনাই প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর কথা ও কর্মের মাধ্যমে। তিনি যে কেবল নিজেই বিয়ে করে নারীর সংস্পর্শে গিয়েছেন তা নয়, সাথীদেরকেও বার বার তাগিদ-উৎসাহ দিয়েছেন দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। নারী-সংলগ্নতা সম্পর্কে আদিম ধ্যান-ধারণা ও অমূলক কল্পনা ধসিয়ে দেয়ার উদ্দেশে তিনি সুস্পষ্ট উচ্চারণে বলেছেন, ‘হুব্বিবা ইলাইয়ান্নিসা নারীকে আমার জন্য করা হয়েছে প্রেমময়’। আজ এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে আদিম প্রথাগত ধারায় নারী-সংলগ্নতাকে এতোই দোষণীয় গণ্য করা হতো যে এভাবে বিপরীত প্রান্তিকতায় অবস্থান নিয়ে কথা না বললে এ বিষয়ে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা অসম্ভব ছিলো।
আধুনিক যুগের বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার নিরীক্ষিত ফলাফলের কন্ঠেও উচ্চারিত হয়েছে কৌমার্যবৃত্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সুর। ইসলামের অবস্থানই মানবপ্রকৃতির প্রকরণ-উপকরণের প্রেক্ষাপটে বাস্তবসিদ্ধ, বিজ্ঞানময়। বৈজ্ঞানিক সাধনা-নিরীক্ষার অভিধানে যে সত্যতত্ত্ব প্রবল প্রতাপে স্বর্ণাক্ষরে খচিত হয়েছে তা হল, মানুষের যৌন-প্রত্যঙ্গ নয় কেবল যৌনক্রিয়া চরিতার্থের এক শরীরী অংশ। এর ভূমিকা বরং বিস্তৃত আরো বহু বিভিন্ন জীবনসংলগ্ন ক্ষেত্রে। মানুষের আঙ্গিক,বুদ্ধিবৃত্তিক,আত্মিক কার্যক্রম প্রখরতা দেয় যৌনপ্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা। এ কারণেই কোনো নপুংষুক কোনো বড় দার্শনিক অথবা বৈজ্ঞানিক হতে পারে নি। এমনকি হতে পারেনি এ ধরনের ব্যক্তি বড় কোনো অপরাধীও। যৌনপ্রত্যঙ্গের ভূমিকা মনুষ্যকর্মতৎপরতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ববহ। এ ক্ষেত্রে Dr. Alexis Carrel এর বক্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য-
The sexual glands have other functions than that of impelling man to the gesture which, in primitive life, perpetuated the race. They also intensify all physiological, mental, and spiritual activities. No eunuch has ever become a great philosopher, a great scientist, or even a great criminal. Testicles and ovaries possess functions of overwhelming importance.
অতীতে ধর্মনিমগ্ন জীবনের আওতায় দোষের ব্যাপার মনে করা হত নারীপুরুষের বৈবাহিক বাহুলগ্নতা। ইসলাম এর বিপরীতে পছন্দের বিষয় হিসেবে গণ্য করেছে নারীর সঙ্গে বৈবাহিক সংস্পর্শতা। আধুনিক বিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার অকাট্য ফলাফল প্রমাণ করেছে যে, আদিম ধারণা ছিল প্রকৃতিবিরুদ্ধ। পক্ষান্তরে, এক্ষেত্রে ইসলামের ধারণাই হল প্রকৃতি-সমর্থিত।
সে হিসেবে শেষনবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর বিবাহ করে সংসার পাতা ছিল পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত। প্রকৃতির দাবিতে শতভাগ বিশুদ্ধ একটি পদক্ষেপ।
রাসূলুল্লাহ সা. যৌবনের উষালগ্নেই প্রবেশ করেছেন দাম্পত্যজীবনে। নারীকে করেছেন সংগী। নবুওতপ্রাপ্তির পরও যাপন করেছেন ভরপুর বৈবাহিক জীবন। এবং প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন নারী নয় কোনো অষ্পৃশ্যপ্রাণী যার সাহচর্য কলঙ্কিত করে পূর্ণতাপ্রাপ্তির পথ। তিনি সংসার পেতেছেন, সন্তানের পিতা হয়েছেন এবং জোরালভাবে প্রমাণ করেছেন পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ শ্রেষ্ঠত্ব।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×