সংবাদটিতে লক্ষ করুন, মতুর্জাকে উদ্ধার করতে যেয়ে কে আহত হয়েছেন???? এটিএন নিউজের এর প্রতিবেদক আরাফাত সিদ্দিকি??? (নিউজটির প্রথম প্যারায়)। নাকি এটিএন বাংলার প্রতিবেদক আরাফাত হোসেন???? ( নিউজের দ্বিতীয় প্যারা ও শেষ প্যারা ) যদি দুই জনই আহত হয়ে থাকেন তাহলে সর্বমোট আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় জন। কোনটা সত্য???
প্রথম আলোর দুজনসহ পাঁচ সাংবাদিক আহত
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০১-০২-২০১১
‘ওরাই পুলিশ নিয়ে এসেছে। ওদেরকেও পিটা।’ কেউ একজন এ কথা বলার পরই শ খানেক লোক ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক গোলাম মর্তুজা ও ফটো সাংবাদিক সাজিদ হোসেনের ওপর। সাজিদ জনতার রোষ থেকে বের হতে পারলেও ক্ষুব্ধ লোকজন এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে মর্তুজাকে। তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হন এটিএন নিউজের প্রতিবেদক আরাফাত সিদ্দিকিও।
গতকাল সোমবার মুন্সিগঞ্জে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার গোলাম মর্তুজাকে রাজধানীর ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করা হয়। আরাফাত হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন।
আডিয়ল বিল রক্ষা কমিটির পূর্বঘোষিত কর্মসূচির খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গতকাল পায়ে রাবার বুলেট লাগে নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রধান ফটো সাংবাদিক শফি উদ্দিনের। তিনি কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের সময় আহত হয়েছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের ক্যামেরাম্যান সোহেল আরমানও।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক সাজিদ জানান, ‘সকাল থেকেই আমরা হাষাঢ়ার দায়িত্ব পালন করছিলাম। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের জলকামানবাহী একটি গাড়ি শ্রীনগর থেকে জনতার ধাওয়া খেয়ে হাষাঢ়ার দিকে আসছিল। কিন্তু সেখানেও শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিল। জলকামান থেকে পানি ছুড়ে পুলিশ লোকজনকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়ে চলে যায়। এ সময় সেখানে থাকা সাংবাদিকের ওপর হামলে পড়ে লোকজন। মারমুখী জনতা মর্তুজার মোটরসাইকেলটি (হিরো হোন্ডা স্পেল্ডার প্লাস ঢাকা মেট্রো-হ-৩৫-১৭৬৪) ঘিরে ধরে। তারা ধাক্কা মেরে মোটরসাইকেলটি ফেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং মর্তুজাকে মারতে থাকে। বেদম প্রহারের সময় মর্তুজার সঙ্গে থাকা ব্যাগের সব জিনিস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। ওই ব্যাগে একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ও প্রয়োজনীয় কাগজ ছিল। সেগুলোও খোয়া গেছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘আমি তাদের বলি, ভাই আমি সাংবাদিক। সরকারের লোক নই। আপনাদের খবর সংগ্রহ করতে এসেছি। কিন্তু কেউ শোনেনি। বাঁশ-গজারির লাঠি ও রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। সবাই আমার মাথায় আঘাত করছিল। কিন্তু মাথায় হেলমেট থাকায় আমি বেঁচে যাচ্ছিলাম। এ সময় কয়েকজন হেলমেট ধরে টানাটানিও করে। কেউ একজন বলে ওঠে—ওই ওর হেলমেট খোল। হেলমেট খুলে মাথায় বাড়ি দে। আমি সর্বশক্তি দিয়ে হেলমেট আঁকড়ে ধরে রাখি। একপর্যায়ে হেলমেটটি ভেঙে যায়।’
মর্তুজা বলেন, ‘কোনোভাবে মাথা রক্ষা পেলেও শরীরের কোনো জায়গা বাকি নেই, যেখানে লাঠির আঘাত লাগেনি। আঘাতের পর আঘাতের একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। বাঁচার আকুতি থেকে কোনো রকমে উঠে এক বৃদ্ধকে জড়িয়ে ধরি। লোকজন ওই বৃদ্ধসহ আমাকে মারতে থাকে। একপর্যায়ে বৃদ্ধও জীবন বাঁচাতে নিজেকে তাঁর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেন।’ তিনি বলেন, ‘তখন আর কী করা! নিজেকে নিয়তির ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় কী? একপর্যায়ে দূর থেকে কয়েকজন যুবক দৌড়ে আসে এবং জনতাকে সরিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। তারা আমাকে এক বাড়িতে নিয়ে শুশ্রূষাও করে।’
সঙ্গী সাংবাদিকেরা জানান, তখনো এলাকা থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। উত্তেজনা কমলে একপর্যায়ে স্থানীয় কয়েকজন লোক একটি অটোরিকশায় তুলে শ্রীনগর পার করে কেরানীগঞ্জে পাঠিয়ে দেন মর্তুজাকে। সেখান থেকে তাঁকে এনে রাজধানীর ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক কামরুজ্জামান জানান, মর্তুজার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে। সুস্থ হতে সময় লাগবে। আপাতত পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হবে।
মর্তুজা বলেন, ‘আমি কয়েকজনের হাতে রামদা দেখেছি। কিন্তু ভাগ্য ভালো কেউ কোপ দেয়নি। এটাই সান্ত্বনা।’
মর্তুজাকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন এটিএন বাংলার প্রতিবেদক আরাফাত হোসেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আরাফাত জানান, তাঁর মাথার বিভিন্ন স্থান কেটে গেছে।