somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিঃ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

০২ রা মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল ছেলেটি। পাশেই পানি আর তোয়ালে রাখা। হাত বাড়িয়ে তোয়ালেটা তুলতে যাবে তখনি একটা হাত ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল, 'আগে আমি,তুই দূর হ শালা আফ্রিকান সঙ্কর'। বন্ধুর মুখে এই কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল ওর। কিন্তু কিছু বললনা। মা কারো সাথে ঝগড়া করতে নিষেধ করেছেন। মন খারাপ নিয়েই বাসায় ফিরে এলো। হতাশ কণ্ঠে মাকে বলল,'আমি আর ফুটবল খেলতে যাবনা,মা'।
মা জিজ্ঞেস করলেন,'কেন কি হয়েছে,আবার'।
ছেলেটি জবাব দিলো-'আজ আবার এক ছেলে আমাকে আফ্রিকান বলেছে। আমি আর ওখানে যাবনা।'
মা হেসে ছেলেকে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিলেন,'বোকা ছেলে। বলেছে তো কি হয়েছে,তুই পরিশ্রম করে বড় খেলোয়াড় হ,দেখবি একদিন তোর অটোগ্রাফ নেবার জন্য ওরা মুখিয়ে থাকবে।'
ছেলেটি মাথা নিচু করেই বল্ল,'কিন্তু আমার যে আর ভালো লাগেনা,মা'।
মা বললেন,'সব ব্যাপারকে পাত্তা দিতে হয়না,বাবা। তুই তোর কাজ করে যা,একদিন দেখবি পরিশ্রমের পুরস্কার ঠিকই পাবি।'

ছেলেটির নাম উইলসন। চেহারা দেখে প্রায় বোঝা না গেলেও এটা সত্যি ,উইলসনের দাদা আফ্রিকার সিয়েরা লিওনের অধিবাসী ছিলেন।এদেশে এসে এদেশের মেয়ে বিয়ে করে থিতু হলেন। ছেলেও বিয়ে করল আরেক শ্বেতাঙ্গিনীকে। গায়ের চামড়া প্রায় সাদা হবার পরও তৃতীয় প্রজন্মে এসেও বেচারাকে বর্ণবাদী গালি হজম করতে হচ্ছে। কিন্তু ছেলেটি হাল ছাড়েনি। মায়ের স্বপ্নকে যে সত্যি করতে হবে!

কঠিন পরিশ্রম করে স্কুল টিমে জায়গা করে নিল। স্কুল টিমে একের পর এক নৈপুণ্য স্থানীয় পত্রিকাতে ছাপা হলো। কিন্তু মায়ের ইচ্ছে আরও বড়। স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে আরও বহুদূর যেতে হবে। সেই সুযোগ এলো। গ্রেনাডা স্কুল কাপ ফাইনালে স্যালফোরড বয়েজ দলকে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নৈপুণ্যে শিরোপা এনে দিলো। কদিন বাদেই উইলসনের ১৪তম জন্মদিনের শুভক্ষণ। বন্ধুদের সাথে হৈচৈ করছিল সে। হঠাৎ দুজন লোক এসে মায়ের সাথে আলাপ করছে। একজনকে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। মা ডাকতেই এগিয়ে গেল সে। মা বললেন,'উনি ফারগুসন,ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার। তোকে ওনাদের একাডেমীতে ভর্তি করাতে আগ্রহী। তুই কি বলিস?'
উইলসন যেন স্বপ্ন দেখছে। বিশ্বাস করতে গায়ে চিমতি কেটে দেখল সে। যদিও ততদিনে ম্যান সিটিতে যাওয়া আসা ছিল।তবু ভীষণ উচ্ছসিত হলো সে। ম্যান ইউনাইটেড ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। ওল্ড ট্রাফোর্ডে গিয়ে বেশ কয়েকবার খেলা দেখেছে ও। কিন্তু ক্লাবটির সেই সুদিন আর নেই। অবশ্য নতুন ম্যানেজারটি প্রথম মৌসুমেই ভালো খেল দেখিয়েছেন। সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে উইলসন মায়ের উপর ছেড়ে দিলো বিষয়টা। মা ভুল করেননি। যোগ্য লোকের হাতেই তুলে দিলেন ছেলের দায়িত্ব।

বছর তিনেক পর ১৭ তম জন্মদিনে ইউনাইটেড ফার্স্ট টিমের সাথে চুক্তি হল ছেলেটির। এর মাস তিনেক পরেই এভারটনের সাথে অভিষেক হলো ওর। সেই শুরু,তার পর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ছেলেটিকে। একের পর এক রেকর্ডের সঙ্গী ব্রিটিশ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও অধিক শিরোপাজয়ী খেলোয়াড়ে পরিণত হলো সে। ওহো ... বলা হয়নি,না?ছেলেটি ততদিনে নিজের নামের শেষ অংশটি পাল্টে ফেলেছে। মাতৃভক্ত অসম্ভব পরিশ্রমী,মেধাবী ছেলেটি উইলসন নামটি বাদ দিয়ে মায়ের নামটি জড়িয়ে নেয় প্রগাঢ় মমত্ববোধে। মায়ের নামেই সাড়া বিশ্ব চেনে তাকে। মায়ের নামটি ছিল গিগস। প্রায় চল্লিশে পা দিয়েও চমৎকার নৈপুণ্য প্রদর্শন করে চলা রায়ান গিগস ক্লাব ও দেশের হয়ে ১০০০ তম ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন। ওয়ান ক্লাব ম্যান,মিঃ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মাইলস্টোন তার ক্যারিয়ারকে আরও সমৃদ্ধ করবে নিঃসন্দেহে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৩৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×