somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি শিশুতোষ গল্প। খুব ছোটবেলায় 'রুশদেশের উপকথা' তে পড়েছিলাম। যারা আমার মত এখনো এসব পড়ে অথবা কার্টুন দেখে এক ধরনের ছেলেমানুষি আনন্দ পান তাদের জন্যে।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শেয়াল আর নেকড়ে।


এক ছিল বুড়ো আর এক বুড়ি। একদিন বুড়ো বুড়িকে বলল,
‘বুড়ি, ক’টা পিঠে করে দে। আমি ততক্ষনে ঘোড়া স্লেজে জুতে ফেলি। মাছ ধরতে যাবো।‘
অনেক মাছ ধরল বুড়ো। একেবারে মাছে ভরা স্লেজ। বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ দেখে এক শেয়াল; পুটলির মত গুটিয়ে রাস্তায় শুয়ে।স্লেজ থেকে নেমে বুড়ো গেল শেয়ালের কাছে, শেয়াল কিন্তু একটুও নড়ে না, মড়ার মত পড়ে রইল।
‘কপাল ভালো! বুড়িটার গরম কোটের কলার করা যাবে খাসা।‘
এই ভেবে বুড়ো শেয়াল্টাকে স্লেজে চাপাল, নিজে চলল আগে আগে।
শেয়াল দেখল এই সুযোগ। চুপি চুপি স্লেজ থেকে একটি একটি করে মাছ ছুঁড়ে ফেলতে লাগ্ল। একটার পর একটা, ফেলে আর ফেলে।
সব মাছ ফেলা হয়ে গেল। শেয়ালও সুট করে নেমে গেল।
বাড়িতে পৌঁছেই বুড়ো চিৎকার করে বুড়িকে ডাকলঃ
‘বৌ, তোর কোটের কলারের জন্য চমৎকার একটা জিনিস এনেছি!’
বুড়ি তো স্লেজের কাছে গিয়ে দেখে- কিছুই নেই, মাছ না, কলার না, একেবারে ফাঁকা। বুড়ির সেকি বকুনি!
‘ওরে আহাম্মক, ওরে মুখপোড়া, আমাকে নিয়ে রগড়!’
বুড়োর রখন খেয়াল হল, শেয়ালটা তো তাহলে মরা ছিলনা। ভারি আফসোস হল, কিন্তু কি আর করা! যা হবার সে তো হয়ে গেছে।
এদিকে শেয়াল তো তার রাস্তার সব কয়টা মাছ একসঙ্গে জড় করে ভোজে বসেছে।
এমন সময় এক নেকড়ে এসে হাজির।
‘এই যে দাদা, খেতে বসেছ দেখি, অতিথ বরণ করো!’
আমি খাচ্ছি আমার, ভাগ নেই তোমার।‘
‘দাও না একটা মাছ!’
‘নিজে ধরে খাও গে।‘
‘কিন্তু আমি যে মাছ ধরতে জানিনা!’
‘ফুঃ! আমি পারলে তুমিও নিশ্চয়ই পারবে। নদিতে চলে যাও দাদা, বরফের গরতে লেজ ঢুকিয়ে বসে বলবেঃ “এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়! এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়!” অমনি মাছও তোমার লেজ চেপে ধরবে। যত বসে থাকবে তত মাছ পাবে।‘
নেকড়ে চলল নদির পাড়ে। বরফের গর্তে লেজ ঢুকিয়ে জাঁকিয়ে বসে কেবলি বলতে থাকলঃ
‘এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়! এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়’
‘এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়! এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়’
‘এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়! এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়’

আর শেয়াল নেকড়ের চারপাশে ঘোরে আর মন্তর পড়েঃ
‘আকাশে মিটিমিটি তারা তাকিয়ে,
নেকড়ের লেজখানা দে না জমিয়ে!’
নেকড়ে শেয়াল্কে জিজ্ঞেস করলঃ
‘কি বিড়বিড় করছো, দাদা?’
‘তোমার জন্যেই করছি, লেজে অনেক মাছ উঠবে।‘
এই বলে শেয়াল আবার ধুয়ো ধরলঃ
‘আকাশে মিটিমিটি তারা তাকিয়ে,
নেকড়ের লেজখানা দে না জমিয়ে!’

সারা রাত অমনি বসে রইল নেকড়ে। লেজও ওর বরফে জমে গেল। ভোর নাগাদ নেকড়ে ওঠার চেষ্টা করতে লাগ্ল, কিন্তু লেজ আর নড়েনা। ভাবল, ‘দ্যাখো, কত মাছই না ধরেছি- টেনে তোলাই দায়!’
এমন সময় একটি মেয়ে নদিতে এল জল নিতে। নেকড়ে দেখেই সে চিৎকার জুড়লঃ
‘নেকড়ে, নেকড়ে! কে আছ, মারবে এস!’
‘নিজে ধরে খাও গে।‘
‘কিন্তু আমি যে মাছ ধরতে জানিনা!’
‘ফুঃ! আমি পারলে তুমিও নিশ্চয়ই পারবে। নদিতে চলে যাও দাদা, বরফের গরতে লেজ ঢুকিয়ে বসে বলবেঃ “এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়! এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়!” অমনি মাছও তোমার লেজ চেপে ধরবে। যত বসে থাকবে তত মাছ পাবে।‘
নেকড়ে চলল নদির পাড়ে। বরফের গর্তে লেজ ঢুকিয়ে জাঁকিয়ে বসে কেবলি বলতে থাকলঃ
‘এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়! এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়’
‘এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়! এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়’
‘এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়! এই মাছ, চেপে ধর, একটানে উঠে পড়’

আর শেয়াল নেকড়ের চারপাশে ঘোরে আর মন্তর পড়েঃ
‘আকাশে মিটিমিটি তারা তাকিয়ে,
নেকড়ের লেজখানা দে না জমিয়ে!’
নেকড়ে শেয়াল্কে জিজ্ঞেস করলঃ
‘কি বিড়বিড় করছো, দাদা?’
‘তোমার জন্যেই করছি, লেজে অনেক মাছ উঠবে।‘
এই বলে শেয়াল আবার ধুয়ো ধরলঃ
‘আকাশে মিটিমিটি তারা তাকিয়ে,
নেকড়ের লেজখানা দে না জমিয়ে!’

সারা রাত অমনি বসে রইল নেকড়ে। লেজও ওর বরফে জমে গেল। ভোর নাগাদ নেকড়ে ওঠার চেষ্টা করতে লাগ্ল, কিন্তু লেজ আর নড়েনা। ভাবল, ‘দ্যাখো, কত মাছই না ধরেছি- টেনে তোলাই দায়!’
এমন সময় একটি মেয়ে নদিতে এল জল নিতে। নেকড়ে দেখেই সে চিৎকার জুড়লঃ
‘নেকড়ে, নেকড়ে! কে আছ, মারবে এস!’
নেকড়ে এদিকে ঘোরে, ওদিকে ঘোরে, তার লেজ কিন্তু ওঠেনা। মেয়েটি তখন বালতি ফেলে রেখে বাঁকটা হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। মার মার নেকড়েকে, নেকড়ে মার খায় আর হাঁসফাঁস করে। করতে করতে যেই তার লেজটি খসে গেল, ওমনি ভোঁ দৌড়।
মনে মনে নেকড়ে ভাবে, ‘দেখাচ্ছি দাঁড়াও শেয়াল ভায়া, এর প্রতিফল পাবে!’
শেয়াল এদিকে চুপি চুপি গিয়ে ঢুকেছিল অই মেয়েটির কুঁড়েঘরে। বারকোশে কিছু ময়দা ঠাসা ছিল। পেট পুরে তা খেয়ে, মাথায় কিছুটা মেখে শেয়াল গিয়ে আছাড় খেয়ে পড়ল রাস্তায়। পড়ে পড়ে কোঁথায়।
নেকড়ে তাকে দেখে বললঃ
‘শেয়াল ভায়া, বেশ মাছ ধরা শিখিয়েছিলে যা হোক! এই দেখ আমার সারা গায়ে কালশিটে পড়ে গেছে......’
শেয়াল বললঃ
‘আরে দাদা, তোমার লেজটা নাহয় নাই রইল, মাথাটা তো আছে! কিন্তু আমার যে মাথাটা একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এই দ্যাখো, পিটিয়ে পিটিয়ে ঘিলু বার করে দিয়েছে কেমন। হামাগুড়ি পর্যন্ত দিতে পারছি না’
নেকড়ে বললঃ
‘তাই তো দেখছি ভায়া, আহা বেচারি! আমার পিঠে চড়ো, কোথায় যাবে আমি বয়ে নিয়ে যাই।‘
শেয়াল তাই নেকড়ের পিঠে চেপে বসল। নেকড়ে তাকে বয়ে নিয়ে যায়। নেকড়ের পিঠে চেপে চলেছে শেয়াল, আর গুনগুনিয়ে গাইছেঃ
‘তাগড়া শেয়াল জাঁকিয়ে বসে
লেজ কাটাটার পিঠে!’
‘গুনগুন করে কি বলছ, ভায়া?’ নেকড়ে জিগ্যেস করল।
শেয়াল বললঃ
‘ও কিছু নয়। মন্তর পড়ছি। তোমার সব ব্যাথা সেরে যাবে।‘
এই বলে শেয়াল আবার গান ধরলঃ
‘তাগড়া শেয়াল জাঁকিয়ে বসে
লেজ কাটাটার পিঠে!’
----------------------------------------------------------------------------------
রাদুগা প্রকাশন আমার জানামতে, অনেক আগে থেকেই এই বইটি ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছে। তাই কপি পেস্ট করে দিলাম।
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×