কলেজ থেকে ফেরার পথে হঠাৎ বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টি। রিকশাওয়ালা আমার দিকে পর্দা এগিয়ে দেয়। আমি রিকশা থেকে নেমে পড়ি। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। সে তো জানে না আমার মনে এখন কি আনন্দ! ব্যাগ ভিজে যাচ্ছে। বই খাতা গুলো নষ্ট হবে, হোক। আজকের এই মুহূর্তটা তাড়িয়ে তারিয়ে উপভোগ করবো। আসলে এই যে সময়টা আমি উপভোগ করছি, এর জন্য কি কোনো অর্থেও প্রয়োজন আছে! না নেই। জীবনকে উপভোগ করতে তো খুব বেশি অর্থেও দরকার নেই। জীবনে শুধুমাত্র একটু সচ্ছল ভাবে চলা- এর চেয়ে বেশি কিছু আমি আর চাইনা।
বাবা রিটায়ার্ড, মা বিছানায়, বোন বিবাহযোগ্যা আর আমি বেকার। চাকরির সন্ধানে পথে পথে হাটছি। হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটা শুরু হয়। নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার আগেই অনেকটা ভিজে গেলাম। ধুর ছাই! অসুখ হলে এখন ডাক্তারের টাকা পাবো কোথায়! এমন পানসে টানাটানির জীবন আর ভালো লাগছেনা। বন্ধুরা সবাই যার যার গতি করে ফেলেছে। দিন দিন বাড়ছে তাদের শান-শওকত। আমার সামনে দিয়ে গাড়ি হাকিয়ে যায়। আর আমি কিনা এখনও পায়ে হাঁটার রাস্তায়। নাহ, জীবনে টাকাই সব। টাকা ছাড়া জীবনকে উপভোগ করা সম্ভব নয়।
বউ ছেলে- মেয়ে নিয়ে যাচ্ছি থাইল্যান্ড। ছুটি কাটাতে। দেশে কিছু আছে নাকি! যেখানেই যাই পিপিলিকার মতো পিলপিল। মানুষে মানুষে গিজ গিজ। উফ, অসহ্য। পুরো থাইল্যান্ড ঘুরে আসবো। আমার বউ বলিউডি নায়িকাদেরও হার মানায়। টাকার কল্যানেই এমন বউ কপালে জুটেছে। ভাবছি টাকার একটা বিছানা বানাবো। আমার সেই বোনটি স্বামী সংসার নিয়ে স্থায়ী হয়েছে আমেরিকায়। দেশের বাড়িতে বাবা মাকে একটা প্রাসাদ বানিয়ে দিয়েছি। ছেলেকে হাত খরচ দেই মাসে দশ লক্ষ টাকা। জীবনের সকল সুখের উপকরণ আমি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি। ছি, আগে আমি কি ভাবতাম! দুটো ডাল ভাতেই জীবন কেটে যাবে। অর্থের পিছনে ছুটে, তা প্রাপ্তিতে যে তৃপ্তি- এটাও তো আরেকজনের সাথে টক্কর দিয়ে, আরেকজনের অধিকার হরণ করে, মানুষজনকে ঠকিয়ে, প্রতারণা করে অর্জন করতে হয়। জীবন তো একটাই। অর্থ দিয়েই বশে এনে একে উপভোগ করতে হয়।
এখন বয়স হয়েছে। ব্যবসা পাতি ছেলেকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এ পর্যায়ে এসে কেন জানি জীবনটাকে অর্থহীন মনে হয়। কি লাভ সারা জীবন এই টাকার পিছনে ছুটে! বিত্ত বৈভব এখন গলার কাঁটা মনে হচ্ছে। গাড়িতে এখন আর চড়ি না। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতেই বেশি ভালো লাগে। বিকেলে পার্কে হাঁটতে বেরিয়েছি। হঠাৎ বৃষ্টি। গাছের নিচে এসে দাঁড়াই। কি অপার্থিব এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে! জীবনে পুনরায় এবং চ’ড়ান্ত উপলব্ধি হলো মানুষের আসলে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই। সবকিছুই একটা মোহ। যার পিছনে মানুষ অযথা দৌঁড়াচ্ছে। কাগজে কলমে যে অর্থের মালিক আমি সেটা আসলে আমার নয়। সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই সচ্ছলভাবে দিনযাপন করতে পারবে। শুধু শুধু কিছু মানুষের প্রাপ্য আমি লুণ্ঠন করেছি।
tanim zubair
All rights reserved
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫৪