somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেলানীদের ভাগ্যে কি চিরকালই এমন হবে? মুখ খুললেন কাদের সিদ্দিকী

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত-বাংলাদেশ কুড়িগ্রাম সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর গুলিবিদ্ধ ফেলানীর দেহ পাঁচ ঘণ্টা ঝুলেছিল। সেই গুলিবিদ্ধ দেহে প্রাণ ছিল কি ছিল না কেউ তার খোঁজ করেনি। সভ্যতা, মানবতা, ন্যায়-নীতি সব সেখানে মুখ লুকিয়ে ছিল। বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয়, ফেলানীদের বোধহয় এভাবেই জীবন দিতে হয়। এখন পর্যন্ত ফেলানীরা কোনো প্রতিকার পায়নি, আর কবে পাবে তা ভবিতব্যই জানে। মহান ভারত মানবের দেশ, দানবের নয়। পৌরাণিক যুগে শূর-অসুরের, দেব-দানবের লড়াইয়ের অনেক উপাখ্যানে এমন চরম নিষ্ঠুরতার স্বাক্ষর পাওয়া যায়। কিন্তু হিন্দু শাস্ত্রে সদা সর্বদা অসুরের নয়, শূরের জয়জয়কার দেখা যায়। সে মহাভারতের কুরুক্ষেত্রেই হোক, আর সীতা হরণে লঙ্কাপতি রাবনই হোক। কোথাও কোনো দানবের জয় হয়নি। সর্বত্রই মানবের আর মানবতার জয়জয়কার। কিন্তু হায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ইদানীং একি দেখি! ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী দিনের পর দিন নিষিদ্ধ পাখি শিকারের মতো সীমান্তে নিরীহ মানুষকে গুলি করে মারছে। কোনো প্রতিকার নেই। কেন এই নিষ্ঠুরতা? এ দিয়ে তারা কি অর্জন বা বুঝাতে চায়? এটা কি ভারতের জাতীয় অনুভূতি? নাকি সীমান্তরক্ষী বিএসএফ'র উচ্ছৃক্সখলতা? এসব জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়ার সময় মনে হয় এখন এসে গেছে। যেসব জায়গায় নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে দিনের পর দিন সভ্যতা মানবতাকে হত্যা করা হচ্ছে সেখানে হাজার বছর ধরে জনমানবের বাস। জায়গাগুলো কখনো বিরানভূমি ছিল না। মাঝে সুলতানি আমল গেছে, মুঘল গেছে, হিন্দু-বৌদ্ধের শাসন এসেছে এবং তা শেষও হয়েছে। নবাবী আমল শেষে ইংরেজ এসেছে। শেষকালে কলমের এক আঁচড় টেনে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপাড়ে চলে গেছে। আর আমরা সেই ব্রিটিশের দুষ্কর্মের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি প্রতিনিয়ত। যে যাই বলুক, আমরা বহু বছর এক দেশের এক সমাজের ও এক ভাবধারার মানুষ ছিলাম। ব্রিটিশরা আমাদের ভারত-পাকিস্তান দুই রাষ্ট্রে বিভক্ত করেছিল। আমরা আবার এক সাগর রক্ত ঢেলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পরিণত করেছি। পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে ভারতের বাইরের বা ভারত থেকে দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে সীমান্ত স্থাপন করতে পারিনি। এটা করা সম্ভবও নয়। তাই প্রতিবেশী দেশ হিসাবে আমাদের পাশাপাশিই থাকতে হবে চিরকাল। কিন্তু বন্ধুপ্রতিম বিশাল দেশের এ কি অদ্ভুত আচরণ! দুই রাষ্ট্রের প্রধানদের এত মাখামাখি, তাদের মধ্যে এত সৌহার্দ্য আর ফেলানীদের গুলি করে কাঁটাতারের সীমান্ত বেড়ার ওপর পাঁচ ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখেন_ তার দেহে প্রাণটি আছে কি নেই, থাকলে তা কতটুকু আছে_ একটু খবর নেন না। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত শত্রুসেনা ধরা পড়লেও তো এমন অমানবিক আচরণ করা হয় না। তবে কেন আমাদের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে? কার কোন অপরাধের শাস্তি আমাদের ফেলানীরা পাচ্ছে? আমার মন আজ ভীষণ ভারাক্রান্ত, বিক্ষুব্ধ। স্বাভাবিক নিরাসক্ত বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা অনেকটা হারিয়ে ফেলছি। আজ এত বছর পর মনের গভীরে অনেক কিছু উঁকি-ঝুঁকি মারছে। পাকিস্তানিরা '৪৭-এর পর থেকে আমাদের ভারতের যে দানবীয় মূর্তি দেখাতে চেয়েছে, আজ কি তাই স্বরূপে আবির্ভূত হচ্ছে? তা না হলে এমন হবে কেন? ভারত তো আমাদের চিরশত্রু রাষ্ট্র নয়। ভারত তো আমাদের বন্ধুপ্রতিম সুপ্রতিবেশী। আর পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমরা হাজার হাজার বছর ধরে একত্রে বসবাস করছি। সেখানে এখনও অনেকের বসতঘর বাংলাদেশে তো পাকের ঘর ভারতে। আবার অনেকের বসতঘর ভারতে তো পাকের ঘর বা বৈঠকখানা বাংলাদেশে। অনেকের নিজের বাড়ি বাংলাদেশে হলেও শ্বশুরবাড়ি ভারতে। সীমান্তে এমন শত শত পরিবার আমি স্বচক্ষে দেখেছি। বাংলাদেশ-ভারতের চার সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তে ভারতের দিকে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে তেল-নুন, চাল-ডাল, কাপড়-চোপড়, ওষুধ কিছুই পাওয়া যায় না। আবার ওরকম বাংলাদেশেও অনেক জায়গা আছে সেখানে চাল-ডাল, পিয়াজ-মরিচ, আদা-রসুন কিছু নেই। সব আসে ভারত থেকে। এটাই তাদের সীমান্ত জীবন। এতে অত আক্রোশ কেন? আক্রোশের কারণ কি? জঙ্গিবাদের উত্থানে ভারত কি খুবই শঙ্কিত? জঙ্গিবাদের মোকাবিলায় ভারত মানসিক, শারীরিক, নৈতিক মনবলে কি এতই দুর্বল যে, তাদের সীমান্তে কাঁটাতাদের বেড়া দিতে হবে? শুধু বেড়া নয়, সেই কাঁটাতারের ওপর গুলি করে নারী হত্যা করতে হবে? ভারতের প্রাণ শতকোটি ভারতবাসীকে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি অমর্যাদা ও জুলুম ব্রক্ষ্মা-বিষ্ণু-মহিশুর কেউ সহ্য করে না। বেদ-বেদান্তে তার শত শত প্রমাণ রয়েছে, পাকিস্তান তো তার সর্বাধুনিক প্রমাণ। ওরা যদি নারী নির্যাতন না করত, হত্যা, ধ্বংস না করত তাহলে ওদের এমন নির্মম পরাজয় বরণ করতে হত না। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস যদি আলোচনা করা হয় তাহলে ভারতের স্থান হবে সবার উপরে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারত ধাত্রীর ভূমিকা পালন করেছে। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মিত্র বাহিনী গঠন করে ঢাকা দখলের অভিযানে প্রায় ১৪-১৫ হাজার ভারতীয় সৈন্য জীবন দিয়েছে। ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা ও অন্যান্য রাজ্যে প্রায় এক কোটি শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে। যে কলকাতা শহরে বাসস্থানের অভাবে সন্তান পিতাকে এক রাত থাকার জায়গা দিতে পারে না, সেখানে হাজার হাজার পরিবার বাংলাদেশের শরণার্থীদের নয় মাস বুকে আগলে রেখেছে। স্বাধীনতার পরও তারা নানা ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার চেষ্টা করেছে। তারপরও আজকের এ আচরণ কেন? প্রশ্নগুলো বেশ কিছুদিন থেকে আমাকে বড় বেশি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ বলে দুটি ধারার সৃষ্টি হতে চলেছে। যদিও পৃথিবীর কোনো স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার পক্ষ আর বিপক্ষ বলে কেউ থাকে না। সবাই থাকে আইনের অধীন, স্বাধীন দেশের সুনাগরিক। কিন্তু আমার দেশে ব্যতিক্রম। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও কেউ পক্ষ কেউ বিপক্ষ। ভারতের ক্ষেত্রেও তেমনি। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। কিয়ামতের আগে আমরা আমাদের সীমান্ত ভারতের পাশ থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিতে পারব না। তবুও এক দল ভারতবিরোধী, আরেকদল ভারতপন্থি। ভারতবিরোধীরাও আবার ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করে। ঘুম থেকে উঠে ভারতীয় ব্লেড দিয়ে সেভ করে ভারতীয় টুথব্রাশ-টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে, ভারতীয় সাবান দিয়ে গোসল করে, ভারতীয় কাপড়ের শার্ট-প্যান্ট, সুট-কোট পরে, ভারতীয় আটার রুটি খেয়ে সকাল থেকেই ভারত বিরোধিতা শুরু করে। অসুখ হলে যাবে ভারতে, ব্যবসা করতে যাবে ভারতে, কাশ্মীরে বেশ কিছু বছর ধরে গোলমাল থাকায় বাংলাদেশের ভ্রমণকারীরা ওদিকে না গেলেও আজমীর, তাজমহল, ব্যবসা আর চিকিৎসা_ এই হচ্ছে ভারত গমনের প্রধান উৎস। ইদানীং সীমান্তে শুধু ফেলানীদের গুলি করে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর ফেলে রাখা হয় না, ভারতে যাওয়ার ভিসার ক্ষেত্রেও অনেকটা সেরকমই করা হয়। ভিসার জন্য এ ধরনের নিদারুণ ভোগান্তি এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, তারপর কয়েকজনকে ভিসা দিয়ে বাকিদের ফিরিয়ে দেওয়া, অসুস্থ মানুষ, বয়সী মানুষ, সম্মানিত মানুষ যারা লাইনে দাঁড়াতে পারেন না তাদের হয়ে অন্য কেউ যদি লাইনে দাঁড়ায় তাদের টাউট-বাটপার বলা এ যেন কেমন একটা অসহিষ্ণুতা সবকিছু গ্রাস করতে চলেছে। আমার গ্রামের এক রোগী দশ-বারো বছর আগে কলকাতায় কিডনি রোগের চিকিৎসা করে বেশ সুস্থ ছিল। ইদানীং আবার অসুস্থ হওয়ায় সে তার পুরনো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য ভিসার দরখাস্ত করে। একই পিতার ওরসজাত, একই মায়ের পেটের দুই সন্তান ভিসা চেয়েছে। মুমূর্ষু রোগীকে দিয়েছে কিন্তু তার আপন ভাইকে ভিসা দেয়নি। এ এক মহা তুঘলকি কারবার! এখনই এর অবসান হওয়া উচিত। সিমেন্টের গাঁথুনি জমে গেলে তা ভেঙে ফেলা যেমন কষ্ট, এসব অব্যবস্থাপনা একবার দৃঢ় ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে তা আবার অপসারণ করতে বড় বেশি বেগ পেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতকে দেখেছি। জেনারেল মানেকশ', লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাসহ ভারতীয় অনেক সেনানায়কদের দেখেছি। যুদ্ধের সময় ভারতে পাড়ি জমাতে না পারলেও স্বাধীনতার পরপরই প্রথম কলকাতায় গিয়েছিলাম। তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শ্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায়। আমাদের অভাবনীয় সম্মান দেখিয়েছিলেন। সর্বশ্রী প্রিয়রঞ্জন দাস মুন্সী, সুব্রত মুখার্জি, সোমেন মিত্র, অশোক সেন, অজিত পাজা, সোমনাথ চ্যাটার্জি, জ্যোতি বসু, শান্তিময় রায় ও শ্রীমতী ফুলরেনু গুহ এমনি অসংখ্য রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক সর্বশ্রী অন্নদা শংকর রায়, মনোজ বসু, প্রবোধ কুমার সান্যাল, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাথ্যায়, হেমন্ত মুখার্জি, সন্ধ্যা মুখার্জি, শ্যামল মিত্র, ভুপেন হাজারিকা, সত্যজিৎ রায়, উৎপল দত্ত, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, উত্তম কুমার, শ্রীমতী সুচিত্রা সেন, শ্রীমতী শোভা সেন, সাংবাদিক অভীক সরকার ও তার বাবা বরুণ সেন গুপ্ত, সুখরঞ্জন দাস গুপ্ত, অমিতাভ চৌধুরী, অমিতাভ গুপ্ত ও দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায়সহ আরও অনেকের সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাৎ ও পরিচয় হয়েছে। তাদের অসাধারণ আতিথেয়তা আমাকে দারুণ অভিভূত করেছে। '৭৩-এর মাঝামাঝি দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ব্যক্তিগত পত্র দিয়ে আমাকে দিলি্লতে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই পত্র নিয়ে ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় যৌথ আলোচনা হয়েছিল। সে সময় মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী লোকসভার সদস্য যৌথ সভায় বলেছিলেন, 'বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। তারা খাদ্য সংকটে ভুগবে এটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। তারা একবেলা খেলে আমরা একবেলা খাব। তারা না খেয়ে থাকলে আমরা না খেয়ে থাকব। আমরা খাব তারা খাবে না এটা বরদাশত করা যায় না।' সেদিন ভারতের সেই যৌথ সভায় একজনও বিরোধিতা করার ছিল না, সবাই সমর্থন করেছিলেন। ভারতে সে বছর চরম খাদ্য ঘাটতি থাকার পরও বাংলাদেশের জন্য তিন লাখ টন খাদ্য বরাদ্দ করেছিলেন। সেই ভারত সীমান্তে একটি নিরীহ নারীর ওপর আজ গুলি চালায়_ কি অদ্ভুত ব্যাপার! এখনকার সময়ের সবচাইতে আলোচিত ও আলোড়িত ঘটনা ভারতের বাবরী মসজিদ ও রাম জন্মভূমি। ভগবান রামচন্দ্র রাজা দশরথের পুত্র এটা সর্বজনবিদিত এবং সবার জানা কথা। তিনি কোনো মন্দিরে নয়, রাজা দশরথের রাজ প্রাসাদে জন্মেছিলেন। ঋষি বাল্মীকির রামায়নে এর বিশদ বিবরণ আছে। তারপরও কেন ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের জন্ম নিয়ে অহেতুক এ বিরোধের সৃষ্টি তা বুঝতে খুব বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে না। স্বচ্ছ পানিতে মাছ ধরা যায় না। মাছ ধরতে পানি ঘোলা করতে হয়। তাই জাতিতে জাতিতে, মানুষে মানুষে বিরোধ জিইয়ে রেখে এটা যে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের এক অপচেষ্টা তা অনেকেই বুঝে। যদিও কেউ কেউ না বুঝার ভান করে। উপায় কি! সময়ের তাগিদে মাঝেমধ্যে এমন করতে হয় তাই তারা করেন। শ্রী রামচন্দ্র পিতার নির্দেশে সীতাকে নিয়ে বার বছর বনবাসে ছিলেন। সে সময় অযোধ্যার সেই জীর্ণ মন্দিরে থাকলেও থাকতে পারেন। কিন্তু কোনোক্রমেই রাম জন্মভূমি বলে তাকে অযোধ্যার মন্দিরে দ্বিতীয়বার জন্ম নেওয়ানো যাবে না। যেদিন উগ্রপন্থীরা বাবরী মসজিদ ধ্বংস করে সেদিন আমি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে ছিলাম। চরম উত্তেজনার মাঝেও বর্ধমান থেকে কলকাতা গেছি, কলকাতা থেকে দিলি্ল। শুধু অযোধ্যার অবস্থা দেখার জন্য উত্তর প্রদেশের আগ্রা, মথুরার সেই বাবরী মসজিদ রাম জন্মভূমির এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছি। কখনো কোনো শঙ্কাবোধ করিনি। কিন্তু বর্তমানে কি কারণে এ ধরনের অসহিষ্ণুতা যে সীমান্তে গেলেই একজন অসহায় নারীকে জীবন দিতে হয়? ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের রক্তে রঞ্জিত আমাদের স্বাধীনতা। দুই দেশের সৌহার্দ্যের এক পরম দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল অর্ধ শতাব্দী আগে। যে দেশ আমাদের ভূমিষ্ঠকালে প্রসূতির ভূমিকা পালন করেছে কি কারণে তারা আজ এই দানবীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ? পরম বিশ্বাস কি করে এমন অবিশ্বাসে রূপ নিতে চলেছে? সারা দুনিয়ায় এখন জাতিসংঘ অনুমোদিত দুশ'র উপর স্বাধীন সার্বভৌম দেশ_ তার ক'টিতে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া আছে? কিন্তু আমাদের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া, এটা কি আমাদের প্রতি মানবিক না অমানবিক আচরণ? প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান না অসম্মান? আস্থা না অনাস্থা প্রকাশ? আমাদের চারপাশে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে প্রকারান্তরে কি কারাগারের উঁচু প্রাচীরের পরিবর্তে কাঁটাতারের প্রাচীর সৃষ্টি করছে? কথাগুলো কখনো আমি ভাবিনি। কিন্তু মনের অজান্তেই কেন যেন কথাগুলো বেরিয়ে আসছে, কিছুতেই আর ফেরাতে পারছি না। স্বাধীনতার পরপর বিএসএফ'র ডিজি ও ডিডিজি ছিলেন যথাক্রমে গোলক মজুমদার ও অশ্বিনী কুমার। ৫-৬ বছর তারা ওই পদে ছিলেন। তখন কিন্তু সীমান্তে কাউকে গুলি করে এভাবে হত্যা করা হয়নি। আমি '৭৫-এ কংগ্রেস সরকার দেখেছি, '৭৭-এ জনতা পার্টির সরকার, তারপর আবার কংগ্রেস, তারপর বিজেপি। কোনো সরকারের আমলেই সীমান্তে এরকম অসহিষ্ণুতা দেখিনি। এইতো ৪-৫ মাস আগে ঢাকার পিলখানায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সর্বোচ্চ বৈঠক হয়েছে। তিন-চার দিন বৈঠক শেষে দেশে ফিরে বিএসএফপ্রধান বিবিসিকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তা ভারতের কোনো সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সর্বোচ্চ পদাধিকারীর মুখে শোনার কথা নয়। সীমান্তে তার গুলি না করে উপায় নেই, দুষ্কৃতকারীরা বর্ডার ক্রস করলে তাকে গুলি করতেই হবে। সেই গুলিতে নাকি শুধু বাংলাদেশের নাগরিক নিহত হয় না, অনেক ভারতীয়ও নিহত হয়। বিএসএফপ্রধানের কথায় ধরে নিতে হবে সীমান্তে বসবাসকারীদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। তাদের কোনো মানবাধিকার নেই। তাদের ক্ষেত্রে সংবিধান প্রযোজ্য নয়। তারা সভ্য সমাজের বাইরে। কি আজব যুক্তি! একজন তামাক চুরি করে সীমান্ত পার হতে গেলে তাকে গুলি খেয়ে মরতে হবে, একজন গরু চোরের শাস্তি গুলি। একজন নিরীহ মানুষ তেল-নুন কিনে সীমান্ত পার হতে গেলেও তার শাস্তি গুলি। সব অপরাধের তো এক শাস্তি সারা দুনিয়ার কোথাও নেই। অপরাধের গুরুত্ব বিচার না করেই মহাত্মা গান্ধীর দেশ, আচারিয়া বিনবাভাবের দেশ, সর্বোদয় নেতা জয় প্রকাশ নারায়ণের দেশ, পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, নেতাজি সুভাস বোস, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস সর্বোপরি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর মহান দেশের বর্তমানে একি চরম দুর্গতি। যারা এক সময় কোটি মানুষকে আশ্রয় দিল, নিজেরা না খেয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখল_ আজকে তারাই গুলি করে মারছে! এর কি কোনো প্রতিকার হবে না? যে যত শক্তিশালীই হোক, ন্যায় ও সত্যের কাছে সব সমান। ভারতের শুভ শক্তির স্থলে যদি অশুভ শক্তির উত্থান ঘটে তাহলে তার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। যার ভূরি ভূরি প্রমাণ বেদ-বেদান্তে রয়েছে। দুষ্টের দমন-শিষ্টের পালনে মানবরূপ ধারণ করে শ্রীকৃষ্ণের আভির্ভাব হয়েছিল সে তো সব ভারতবাসীরই জানা। ইসলামেও আছে নমরুদ-ফেরাউনরা যতই শক্তিশালী হয়েছে কিন্তু তাদের ধ্বংসের হাত থেকে কেউ ফেরাতে পারেনি। আমি কোনো অভিসম্পাত করছি না, বড় দুঃখে ভারতকে সাবধান করছি। এক সময় আমি ভারতে নির্বাসিত ছিলাম। অনেক রাজনীতিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও কথা হয়েছে, মতবিনিময় হয়েছে। বাংলাদেশকে গ্রাস করতে হবে, পদানত করতে হবে এমন মনোভাব তেমন কারও মধ্যেই দেখিনি। সর্বোদয় নেতা শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণ, বিজেপি প্রধান শ্রী লালকৃষ্ণ আদভানী এমনকি যে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে হারিয়ে ভারতে এক নব যুগের সৃষ্টি করেছিলেন সেই রাজ নারায়ণসহ সর্বশ্রী চরণ সিং, হরিজন নেতা জগজীবন রাম. জর্জ ফার্নান্ডেজ, বিজু পট্টনায়েক, ভিপি সিং, নরসিমা রাও, অটল বিহারী বাজপেয়ী, এদিকে জ্যোতি বসু, নম্রুদ্রিপাদ কারও মধ্যেই বাংলাদেশকে পদানত করার মনোভাব খুঁজে পাইনি। ষোল বছর নির্বাসিত জীবনে কোনো নেতা বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ কোনোদিন বলেনি, এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। বরং দুই চারবার বিনীতভাবে পরামর্শ চেয়েছেন তাদের কি করা উচিত। আমি কোনো মতেই বুঝতে পারি না ফেলানীর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় পাঁচ ঘণ্টা ঝুলে থাকে_ অথচ বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিবাদ করেনি কেন? কোথায় আমাদের দুর্বলতা? সরকার কার কাছে দাসখত দিয়েছে? এমনতো হওয়ার কথা নয়। বাঙালির রক্তে, চিন্তা-চেতনায় কখনো কোনোদিন পরাভব মানেনি। তাহলে এমন কেন হলো? আমরা পাঠানের বিরুদ্ধে মুঘলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, ইংরেজকে হারিয়েছি। তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, হাজী শরিয়ত উল্লাহ কৃষক আন্দোলন, মাস্টার দা সূর্য সেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল_ এসবই তো আমাদের পরাভব না মানা শৌর্যবীর্যের প্রমাণ। আর '৭১-এ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে আমরা আমাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে বিশ্ব রেকর্ড করেছিলাম তা কেন এভাবে আমরা ভূলুণ্ঠিত করছি? আমাদের চরিত্রে এমন নতজানু স্বভাব তো কোনোদিন ছিল না। ইদানীং আমরা এটা পেলাম কোথা থেকে? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাসখত মুক্ত হয়ে জাতিগতভাবে আমরা শাশ্বত বাঙালি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারব ততই মঙ্গল। একবার সময় বয়ে গেলে তা আর সহজে ফিরে পাওয়া যায় না। তাই বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেদের আত্মমর্যাদা রক্ষায় সবাইকে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে।
সুত্র
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×