somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন আছি সৌদি আরবে –একুশ পর্ব

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নামাজ ও মসজিদ
এখানে হঠাৎ করেই মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।রাস্তায় যোহরের নামাজের আজান শুনে গাড়ী থেকে নেমে মসজিদে ঢুললাম।প্রথা অনুযায়ী চার রাকাত জামাত শেষ হতেই ঈমাম সাহেব বললেন আছরের জামাতও এখন পড়ে নিন কারন বাইরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে।আমরা উনার নির্দেশ অনুযায়ী সুন্নতে না গিয়ে আছরের জামাতও পড়ে ফেললাম।নামাজ শেষে ভাবলাম আমাদের দেশে কতই না ঝড় বৃষ্টি হয় কখনোতো এই বোনাসটা আমরা নেইনি!
গাড়ীতে উঠেই ঠিক করলাম সৌদি আরবের এই সালাহ বা নামাজ নিয়ে একটা লেখা হতে পারে।

আমি যখন প্রথম এদেশে এলাম নামাজের ভিন্ন কায়দা কানুন আমাকে অবাক করতো।মনে হতো আমাদের দেশের হুজুররা আমাদেরকে ঠিক মতো নামাজ শিখায়নি।যদিও বলতে দ্বিধা নেই আমি তখন নিয়মিত নামাজী ছিলামনা,কিন্তু নামাজ শিখেছিলাম একদম মাদ্রাসায় গিয়ে।এই নিয়ে আব্বাকে অনেক চিঠি লিখেছি এবং তিনিও অনেক ব্যাপারে জানতে চেয়ে চিঠি লিখতেন। পরে জেনেছিলাম দেশে আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেবের সঙ্গে আব্বাও আমার কথাগুলো শেয়ার করতেন।

এখানে বেশীর ভাগ আরবীয়ান মুছল্লীরা নামাজের নফল/ছুন্নত রাকাতগুলি পড়েননা।এছাড়া নামাজে সুরাহ ফাতিহার শেষে “আমিন” শব্দটা ঈমামের সঙ্গেই সবাই উচ্চস্বরে পড়েন আর নামাজ শেষে ঈমামের সঙ্গে সঙ্গে মুছল্লীরা সালাম না ফিরিয়ে উনার ছালাম শেষ হলেই,সবাই ছালাম ফেরান।আবার নামাজ শেষে দোয়া পড়ানোর বালাই নেই,আপন মনে দোয়া দরুদ পড়ে যে যার রাস্তায় বেড়িয়ে যান।

আমার অফিস টাইমটা এমন ছিল যে তিন ওয়াক্ত নামাজ আমাকে অফিস সংলগ্ন মসজিদেই পড়তে হতো।এখানে প্রতিটা মসজিদেই ইমাম এবং মুয়াজ্জিন হিসেবে সৌদি নাগরীকরা চাকুরী পান।কিন্তু ৯০% মসজিদেই মুয়াজ্জিন বাংলাদেশী আর ৭০% ঈমাম ইয়ামেনী,ইন্ডিয়ান ও বাংলাদেশী।আমি এখানে সাতটি সরকারী নুতন মসজিদ বানিয়েছি। তাই অনেক ব্যাপারই আমার জানা হয়ে গিয়েছে।এখানে বেশী বেতনে নিয়োগ পেয়েই সৌদি ঈমাম সাহেব নিজ থেকে কম বেতনের লোক রেখে তার কাজটি করিয়ে নেন।অবশ্য তিনিও মাঝে মধ্যে এসে নামাজ পড়ান।

একদিন অফিস থেকে নামাজের জন্য দুজন মিশরী কলিগের সঙ্গে বেরুলাম কিন্তু তারা আমাকে কাছের মসজিদ যেতে না দিয়ে দুরেরটাতে নিয়ে গেল।জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপার কি দূরে যাচ্ছো কেন? তারা বললেন ঈমাম হিন্দি(বাংলাদেশী) অর্থ না বুজে নামাজ পড়ান,তাই বেশী সোয়াবের জন্য সেখানে যাচ্ছে!কথা শুনে আমি হতবাক!!

আগেই বলেছি আমি বেশ কয়েকটা মসজিদ বানিয়েছি।একদিন মসজিদের ছাদ ঢালাইয়ের সময় আজান হয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী আজানের ধ্বনি কানে শুনা মাত্র সকল প্রকার কাজ বন্ধ করে দেয়া।কিন্তু আমার কাজটা এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে চালিয়ে যেতেই হবে।তাই আমার অমুসলিম শ্রমিক ও রেডিমিক্সের ফিলিপিনো অপারেটরকে কাজ চালিয়ে যেতে বলে আমি নামাজ পড়তে পাশের অস্থায়ী মসজিদে ঢুকে পড়লাম।নামাজ শেষে বেড়িয়ে আসতেই ফিলিপিনোরা আমাকে ঘিড়ে ধরলো। তারা জানতো আমার সঙ্গে ইসলামিক ম্যাজিস্ট্রেটের(মতুয়া) বেশ সখ্যতা আছে, তাই আমার কথায় নামাজের সময় কাজ করতে রাজি হয়েছিল।কিন্তু কিছুক্ষন আগে নাকি মতুয়া এসে আমার লোকসহ ওদের সকলেরই আকামা নিয়ে গিয়েছে এবং তাদের অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলে গিয়েছে।আমি জানি এই ধরনের অপরাধের শাস্তি দোররা মারা বা হাজতবাস অথবা আর্থিক জরিমানা হতে পারে কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছিলনা আল্লাহ্‌র ঘড় বানাতে গিয়েও একই শাস্তি আমাদের হতে পারে।
আমি যথাশীঘ্রি তাদের অফিসে অফিসে চলে গেলাম।চীফের নিকট গিয়ে বিস্তারীত বললাম।মনে হলো ইনি আগেই জেনে গিয়েছিল তবুও না জানার ভান করে আমাকে কিছু উপদেশ দিলেন এবং সবগুলো আকামা ফিরিয়ে দিলেন কিন্তু সেই রেডিমিক্স কোম্পানীকে আর্থিক জরিমানা করেছিল।
কাতিফ জামে মসজিদ
আল-কাতিফ নামে শিয়াদের এলাকাতে আমরা জামে মসজিদের কাজ পেলাম।মাটি কাটা শুরু হতেই অনেকেই এসে জিজ্ঞেস করতো এখানে কি হবে?আমি গর্ব করে বলতাম জামে মসজিদ কিন্তু লক্ষ্য করতাম এই কথা শুনে মুখ বেকিয়ে তারা চলে যেত।তারপর খোজ নিয়ে জানলাম ৯৫%লোক এখানে শিয়া ,তারা চায়না এখানে সুন্নীদের কোন মসজিদ হোক।মজার ব্যাপার মাঝে মধ্যে আমি ভুল করে শিয়াদের মসজিদে নামাজ পরতে ঢুকে পড়তাম।তবে তাদের নামাজের স্টাইল দেখেই ছিটকে বেড়িয়ে আসতাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১২
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×