somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামাযে কয়েকটি ভুল

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যে সমস্ত নামাযে আস্তে কেরাত পড়া হয়, সে সকল নামাযে অনেককে দেখা যায়, মুখ-ঠোঁট না নেড়ে মনে মনে সূরা কেরাত পড়েন। হয়তো তারা এই ভুল ধারণা করে আছেন যে, আস্তে আস্তে কেরাত পড়া মানে মনে মনে পড়া।

এটি ঠিক নয়। কারণ যে সকল নামাযে কেরাত আস্তে পড়তে বলা হয়েছে, তার অর্থ হল, নিচু স্বরে তিলাওয়াত করা। আর এতো খুবই সহজ কথা যে, মনে মনে পড়া কোনোক্রমেই নিচু স্বরে পড়া নয়।

ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদি থেকেও বোঝা যায় যে, আস্তে কেরাত পড়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হল এমনভাবে পড়া, যেন সে নিজে শুনতে পায়। আর সর্বনিম্ন এতটুকু তো অবশ্যই জরুরি যে, সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করা হবে এবং ঠোঁট-জিহবার নড়াচড়া দেখা যাবে। একটি হাদীসে আছে যে, যোহর ও আসর নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরআন পড়তেন, তখন কোনো কোনো আয়াত সাহাবায়ে কেরামও কখনো কখনো শুনতে পেতেন। হযরত আবু মামার বলেন, আমরা হযরত খাববাব রা.কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যোহর ও আসর নামাযে কুরআন পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারা কীভাবে বুঝতেন? তিনি বললেন, ‘বিজতিরাবি লিহয়াতিহী’-তাঁর দাঁড়ি মোবারক নড়াচড়া দ্বারা। (সহীহ বুখারী-ফাতহুল বারী ২/২৮৪-২৮৭)

অতএব কেরাত পড়ার সময় জিহবা ও ঠোঁট ব্যবহার করে মাখরাজ থেকে সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু মনে মনে পড়ার দ্বারা কেরাত আদায় হবে না।

তাকবীরে তাহরীমা মনে মনে বলা

এটি আরেকটি ভুল। ইমামের পিছনে নামায পড়ার সময় এই ভুলটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে বাঁধাকেই অনেকে যথেষ্ট মনে করে। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে, নামাযের শুরুতে তিনটি কাজ করতে হয়। প্রথমে মনে মনে কোন নামায পড়ছি-এর সংকল্প করতে হবে। এর নাম নিয়ত, যা নামায সহীহ হওয়ার জন্য জরুরি। উল্লেখ্য, মনে মনে সংকল্প করে নিলেই নিয়ত হয়ে যাবে, মুখে উচ্চারণ করতে হবে না।

দ্বিতীয় কাজটি হল, তাকবীরে তাহরীমা। অর্থাৎ স্পষ্ট উচ্চারণে ‘আল্লাহু আকবার’ বলা। যেহেতু এই তাকবীরের মাধ্যমে নামায বহির্ভূত সকল কাজ হারাম হয়ে যায় তাই একে ‘তাকবীরে তাহরীমা’ বলে। এই তাকবীর বলা ফরয। যা স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণ করতে হবে।

তৃতীয় কাজ হল, কান পর্যন্ত দুই হাত উঠিয়ে ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরে নাভির নিচে বাঁধা। এই কাজটি সুন্নত।

প্রচলিত পরিভাষায় ‘নামাযের নিয়ত বাঁধা’ এই তিন আমলের সমষ্টিকেই বোঝায়।

এখন কেউ যদি শুধু হাত উঠিয়ে তা বেঁধে নিল কিন্তু আল্লাহু আকবার বলল না বা মনে মনে বলল তাহলে নামাযের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিবটিই আদায় হয়নি। ফলে তার নামায আদায় হবে না।

অতএব এখানেও তাকবীর স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণ করা অপরিহার্য। শুধু মনে মনে বলা যথেষ্ট নয়।



আমীন মনে মনে বলা

এটিও আরেকটি ভুল। নিয়ম হল, জামাতে নামায পড়ার সময় ইমাম সূরা ফাতিহা সমাপ্ত করার পর মুকতাদী ‘আমীন’ বলবে। আমীন আস্তে বলা ও জোরে বলা দুটোই শরীয়তের দলীল দ্বারা প্রমাণিত। যদিও অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল আস্তে বলাই ছিল, তাই অনেক ফকীহ আস্তে বলাকেই উত্তম বলেছেন। কিন্তু এর অর্থ কোনোভাবেই মনে মনে বলা নয়। ‘আস্তে বলা’ কিংবা ‘অনুচ্চস্বরে’ বলা আর মনে মনে বলা এক কথা নয়।

আমীন বলার ফযীলতপূর্ণ সুন্নতটি আদায় করার সময়ও তা স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণ করা উচিত।

উদাহরণস্বরূপ এই তিনটি আমলের কথা বলা হল, অন্যথায় তাকবীর, তাসবীহ, তাশাহহুদ ও দুআর ক্ষেত্রেও একই ধরনের ভুল পরিলক্ষিত হয়। অথচ এই আমলগুলিও মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে আদায় করতে হয়।

অতএব উদাসীনতা বা অবহেলার কারণে হোক কিংবা না-জানার কারণে, সর্বাবস্থায় উল্লেখিত সকল ক্ষেত্রে মনে মনে বলার ভুল পদ্ধতি সংশোধনযোগ্য

আল কাওসার
http://alkawsar.com/article/347
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×