একটা পথ। হতে পারে সেটা আজিমপুর থেকে নিউমার্কেট, বনানী থেকে গুলশান, ধানমণ্ডি থেকে মানিকমিয়া এভিনিউ, টেমস নদীর তীর থেকে ডাউনিং স্ট্রিট। গজ-ফিতা দিয়ে মাপলে হয়ত সেটা হবে ২ কিলোমিটার, ১০ কিলোমিটার, ৫০০ মিটার কিছু একটা। এটা হবে দূরত্বের হিসাব। কিন্তু আসলে এই পথের দৈর্ঘ্য কত? এই পথ ধরে হাঁটলে এর দৈর্ঘ্য কত মনে হবে? একা একা উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটলে মনে হবে একরকম, পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়ালে মনে হবে আরেকরকম, বৃষ্টির দিনে হাঁটলে একরকম আবার কড়া রোদে অন্যরকম, প্রেমিকার হাত ধরে হাঁটলে ভিন্নরকম। পথ কিন্তু একটাই, কিন্তু আমাদের কাছে অবস্থার প্রেক্ষিতে এর দৈর্ঘ্য একেক সময়ে একেক রকম মনে হবে। এই গোটা দুনিয়াটাকে আমরা আমাদের মত করে দেখি, প্রতিটা মানুষ তার নিজস্ব চোখ দিয়ে একে দেখে। একেক মানুষের মন একেকভাবে এই পৃথিবীটাকে তাদের দেখায়। এভাবে ভাবলে একটি নির্দিষ্ট পথের আসলে নির্দিষ্ট কোন দৈর্ঘ্য নেই। পুরো জগতটাকে যদি আমরা একেকজন একেকভাবে দেখি তাহলে একটি পথের দৈর্ঘ্যকেও আমরা একেকজন একেকভাবে মাপব আমাদের নির্দিষ্ট অনুভূতির সাপেক্ষে।
মানুষ হিসেবে আমাকে হাঁটতে হয়। একই পথে অনেক হেঁটেছি অথবা অনেক পথে একবার মাত্র হেঁটেছি। হাঁটাময় আমাদের এই জীবনে পথ চলার সময়ে কত কিনা আমাদের মাথায় আসে। হাঁটতে হাঁটতে কত কী চিন্তা করি আমরা। কত স্বপ্নের চূড়ায় পৌঁছে যাই আবার কত চূড়া থেকে নিমিষে মর্তে নেমে আসি। আইনস্টাইনের কথা মনে হয়। আপেক্ষিকতা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন না, "এক খণ্ড উত্তপ্ত লোহা হাতে নিয়ে এক মিনিট রাখলে মনে হবে এক ঘন্টা আর প্রেমিকার হাত ধরে এক ঘন্টা বসে থাকলে মনে হবে এক মিনিট"। আসলে
আমাদের পুরো জীবনটাই এমন আপেক্ষিকতায় নিমজ্জ। এই আপেক্ষিকতা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জটিল-কঠিন কোন আপেক্ষিকতা নয়, এই আপেক্ষিকতা সহজ-সরল কিন্তু জীবনব্যাপী এক ঘটনা।
জীবনকে খুঁজে ফিরি অথবা জীবনই আমাদেরকে খোঁজে।