somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টু চিয়ার্স ফর হীরা!

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সপ্তাহ খানেক আগেই শেষ হয়েছে চাটমোহর পৌরনির্বাচন। যে নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এইচ ইসলাম হীরা বেশ বড় ব্যবধানেই বিজয়ী হয়েছেন। অভিনন্দন এইচ ইসলাম হীরা। যদিও এ অভিনন্দন অসম্পূর্ণ!
সাধারনত আমরা যখন খুব বেশী উচ্ছসিত হই, তখন বলি, হিপ-হিপ-হুররে। লক্ষ্য করুন, এখানে শব্দ আছে তিনটি- হিপ, হিপ এবং হুররে। আনন্দ প্রকাশের এইধারা অনুযায়ি, কোন আনন্দ কিম্বা সে বিষয়ে অভিনন্দন পূর্ণতা লাভ করে তিনে, যাকে বলা হয় থ্রি চিয়ার্স।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, নতুন পৌর পিতার প্রতি আমার অভিনন্দন অসম্পূর্ন কেন? পাঠক লক্ষ্যকরুন, আমি তাকে থ্রি চিয়ার্স নয় বরং টু চিয়ার্স দিয়েছি, তার দুটি বিষ্ময় এবং সাফল্যের জন্য।
ওয়ান চিয়ার- পৌর নির্বাচনে এইচ ইসলাম হীরার বিএনপির মনোনয়ন পাওয়াটা ছিলো প্রথম বিষ্ময় এবং সাফল্য। তার মতো হাইভোল্টেজ সমাজসেবক এবং লোভোল্টেজ পলিটিশিয়ানদের স¦তন্ত্র প্রার্থী
হিসাবে দাড়ানোর নজির থাকলেও বিএনপির সেক্রেটারি এবং ১২ বছরের মেয়রকে বাদ দিয়ে হীরার মনোনয়ন পাওয়াটা ছিলো বড় বিষ্ময় এবং তার বড় সাফল্য। ওয়ান চিয়ার ফর সিলেকশন।
টু চিয়ার্স- যেহেতু বিএনপির প্রার্থী ছিলেন দুজন অন্যদিকে আওয়ামীলীগের একজন। তাই হয়তো অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, আওয়ামীলীগ প্রার্থী মির্জা রেজাউল করিম দুলাল এবার ফাঁকা ফিল্ডে গোল দেবেন। নির্বাচনের আগে ও চলাকালীন সময়ে দুলাল কর্মীদের আত্মবিশ্বাস এবং জনসাধারনের ধারনা অনেকটা সেরকমই ছিলো। কিন্তু যখন ফলাফল প্রকাশ হতে শুরু করলো, যা মিলিত হয়ে বিষ্ময়ের রুপ নিলো, সবাই বুঝতে পারলো মাঠ এক সময় ফাঁকা থাকলেও শক্তিশালী অদৃশ্য এক প্রতিপক্ষ সময়মতো মাঠে ঢুকেছে, প্রফেসর মান্নানকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাহিরে পাঠিয়েছে, এবং মির্জা দুলালের থেকে বলের নিয়ন্ত্রন নিয়ে সময়মতো জালে জড়িয়েছে। কিন্তু এতো কিছুর পরও দীর্ঘ দিনের পলিটিশিয়ান এবং ফাঁকা ফিল্ড পাওয়া ক্ষমতাশীন দলের একক প্রার্থী মির্জা দুলালের বিরুদ্ধে পাওয়া হীরার এই জয়টা তার দ্বিতীয় বিষ্ময় এবং দি¦তীয় সাফল্য। টু চিয়ার্স ফর উইন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, হীরার দুটি বিষ্ময় এবং সাফল্য কিভাবে অর্জিত হয়েছে? এবং কোন সে অদৃশ্য প্রতিপক্ষ যে মির্জা দুলালের ফাঁকা ফিল্ড তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়ে বিজয়ী হয়েছে। এ মূল্যায়ন করতে গেলে বিশ্লেষন করতে হবে বিজয়ী এইচ ইসলাম হীরাকে।
প্রথমত, তিনি সমাজ সেবক হিসাবে হাইভোল্টেজের হলেও সেভাবে তার একক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠেনি। বরং তার সমাজ সেবার কৃতিত্ব তার বড় ভাই রাজার।
দি¦তীয়ত, পলিটিশিয়ান হিসাবে তিনি লো-ভোল্টেজের।
তৃতীয়ত, তার বাবার মতো সমাজ শ্রদ্ধেয়(মাষ্টার) বা অনুভূতি পাবার মতো তার কোন পরিচিতি নেই।
যেহেতু মূল্যায়নের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তিনি মাইনাস রেটেড তাই বলা যায়, এ বিজয়ের মূল চালিকা শক্তি টাকা! যে টাকায় ম্যানেজ হয়েছে ভোটারেরা, হয়েছে রাজনীতিবীদেরা, ম্যানেজ হয়েছে প্রশাসন। যা কিনা চাটমোহরে ওপেন সিক্রেট!
এ কথা সত্য, এ সিক্রেট কখনোই ওপেন হবেনা যে, এ নির্বাচনে এইচ ইসলাম হীরার প্রকৃত নির্বাচনী ব্যয় কত ছিলো? এবং ভোটার প্রতি তার কত খরচ হয়েছিলো?
কিন্তু এ সিক্রেট ওপেন করে দেয় কিছু লজ্জা।
যে লজ্জা- পৌর ভোটারদের, যারা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।
এ লজ্জা- প্রশাসনের, যাদের কাছে টাকাই প্রকৃত ক্ষমতাবান।
যে লজ্জা- বিজয়ী হিসাবে হীরার নিজের, যিনি জননেতা হিসাবে নয় বরং টাকা নির্ভর নির্বাচন করেছেন। এর ফলে তার ধারনা জন্মাবে, টাকাতেই সব সম্ভব।
যদিও টাকাতেই সবকিছু সম্ভব নয়, তবে এ ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা যেতে পারে আমাদের সামাজিক অবস্থা! বাজারে এখন মোটা চাল ৩৮-৪৫ টাকা কেজি, তেল ১০০ টাকা লিটার। দ্রব্যমূল্যের উর্ব্ধগতির এই র্দুমূল্যের বাজারে যখন চাল-তেল কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ মানুষের উপার্জন, তখন প্রচন্ড শীতে বাঁচার মতো গরম কাপড় আসবে কোত্থেকে? আর অভাবে নষ্ট হতে পারে মূল্যয়ন ক্ষমতা, বিবেকের পাশাপাশি বিক্রি হতে পারে ব্যালট। এছাড়াও পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়ে যেহেতু পাঁচ বছর পর পর হতাশই হতে হয় তখন নগদ যা আসে তাই হাত পেতে নেয়াইতো বুদ্ধিমানের কাজ! সবচেয়ে বড় কথা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকারের যে ব্যর্থতা, মনোনয়ন দেবার ক্ষেত্রে বিএনপির যে ব্যর্থতা, রাজনীতিবীদদের এ ব্যর্থতায়, শূন্যতা পূরন করবে ব্যবসায়ীরা এটাই স্বাভাবিক। তবে এই স্বাভাবিকতার মধ্যেও অস্বাভাবিকতা বা ক্ষতিকর দিক হলো- এ নির্বাচনে চাটমোহরের রাজনৈতিক খতে পঁচন ধরেছে। চাটমোহরের ভোটারেরা টাকা চিনেছে, এ কারনে ভবিষৎএ যে কোন নির্বাচনে অবশ্যম্ভাবিভাবে টাকা ছড়াতে হবে! তখন রাজনীতিবীদদের টেক্কা দিয়ে ক্ষমতায় আসবে ব্যবসায়ীরা। পদ যখন পরিনত হবে পণ্যে! তখন ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধতা-জবাবদীহিতা আসবে কি করে?
ইতিমধ্যেই আমি পৌর পিতা এইচ ইসলাম হীরাকে অসম্পূর্ন অভিনন্দন বা টু চিয়ার্স জানিয়েছি। আমার অভিনন্দন সেদিনই পূর্ণ হবে যখন তিনি জনপ্রতিনিধি হিসাবে তার দায়বদ্ধতা পূরন করবেন, পুরাপুরি স¦চ্ছ থেকে জনমানুষের জন্য কাজ করবেন এবং ব্যক্তি জীবনের দুই সন্তানের জনক থেকে চাটমোহর পৌরবাসীর যোগ্য অভিভাবকে পরিনত হবেন। সেদিনই আমার অভিনন্দনটা থ্রি চিয়ার্সে পরিনত হবে।
তবে এই মুহূর্তে আমি পৌর পিতা এইচ ইসলাম হীরাকে পরামর্শ দেবো মেয়র হিসাবে শপথ নেবার আগে তিনি যেনো রি-ফ্রেস থাকেন। মেয়র পদকে সেলিব্রেট করার জন্য তিনি যেতে পারেন লং ড্রাইভে কিম্বা নিজেকে আরো শানিত করবার জন্য ডুবে থাকতে পারেন পড়াশোনায়, এবং তার পড়ার তালিকায় থাকতে পারে আরব্য রজনীর আলেফ লায়লা ওয়া লায়লানের সর্বশেষ গল্প জাকাতুল আবদ বা ক্রীতদাসের হাসি। যেখানে পরাক্রমশালী বাদশা হারুনুর রশীদ রাতের ব্যবধানে হাবশী গোলাম তাতারিকে আমিরে পরিনত করেছিলেন এবং বাদী মেহেরজানকে বেগম বানিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছিলে একজন ক্রীতদাসের হাসি কিনতে। গল্পের শেষদিকে গোলাম তাতারি হারুনুর রশীদকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলো- “হারুনুর রশীদ টাকা থাকলে একজন গোলামকে আমির বানানো যায় বাদীকে বেগম বানানো যায় কিন্তু একজন ক্রীতদাসের হাসি কেনা যায় না”।
সতিৎ, টাকা থাকলে হয়তো ভোট কেনা যায় কিন্তু ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধতা-কৃতজ্ঞতা তৈরি হয় না। এটা তৈরি করতে হবে নিজের ভেতর থেকে। আর এ দায়বদ্ধতা-কৃতজ্ঞতা তৈরি করাই বর্তমান পৌর পিতার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। -১৯ জানুয়ারী’১১।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×