somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যশোরের সাগরদাঁড়িতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলা

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৮৭ তম জন্মবার্ষিকী আগামী ২৫ জানুয়ারি। এ উপলক্ষ্যে কবির জন্মস্থান যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে আজ ২২ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১ ফেব্র"য়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষার কারণে এবারের মধুমেলা ২৫ জানুয়ারির পরিবর্তে ২২ জানুয়ারি থেকেই শুরু হচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, মোবাইল কোম্পানী বাংলালিংকের সহযোগিতায় ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ ২২ জানুয়ারি বিকেল ৩ টায় ৭ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
মধুজন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিদা সুলতানা জানান, মেলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আইন শৃংস্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের সার্বক্ষনিক টহল থাকবে। সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলা উপলক্ষ্যে সাগরদাঁড়িতে বসেছে যাত্রা, সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, বিচিত্রা অনুষ্ঠান,ইঞ্জিন ট্রেন, মৃত্যুকুপ ও বিসিকের কুটির শিল্পের স্টল। প্রতিদিন কবির সৃষ্টি,সাহিত্য ও জীবনীর উপর বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় অংশ গ্রহণ করবেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কবি সাহিত্যিকগণ। এ ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় মধু মঞ্চে দেশের বরেণ্য খ্যাতিমান শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।
ঐতিহ্যবাহী যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথ প্রদর্শক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। জমিদার পিতা রাজনারায়ন দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর কোল আলোকিত করে সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন। প্রাকৃতিক অপূর্ব লীলাভূমি, পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, শষ্য সম্ভারে সম্বৃদ্ধ সাগরদাঁড়ি গ্রাম আর বাড়ির পাশে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের সাথে মিলেমিশে শিশু মধুসূদন ধীরে ধীরে শৈশব থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে পরিণত যুবক হয়ে উঠেন। কপোতাক্ষ নদ আর মধুসূদনের দু'জনার মধ্যে গড়ে উঠে ভালবাসার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। মধুকবি যখন জন্ম গ্রহণ করেন সে সময়ে আজকের এই মৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদ কাকের কালো চোখের মত স্বচ্ছ জলের জোয়ার ভাটায় ছিল পূর্ণযৌবনা। নদের প্রশস্ত বুক চিরে ভেসে যেত পাল তোলা সারি সারি নৌকার বহর আর মাঝির কন্ঠে শোনা যেত হরেক রকম প্রাণ উজাড় করা ভাটিয়ালী গান। শিশু মধুসূদন এ সব অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখত আর মুগ্ধ হয়ে যেত। স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের অবিশ্রান্ত ধারায় বয়ে চলা জলকে মায়ের দুধের সাথে তুলনা করে তাই কবি সুদুর ভার্সাই নগরে বসে রচনা করলেন বিখ্যাত সনেট কবিতা 'কপোতাক্ষ নদ'। তিনি লিখলেন- 'সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে, সতত তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে'।
ছেলেবেলায় নিজ গ্রামের এক পাঠশালায় শিশু মধুসূদন তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন। কিন্তু গাঁয়ের পাঠশালায় তিনি বেশি দিন শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। পিতা রাজনারায়ন দত্ত কর্মের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে কলকাতার খিদিরপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। অতঃপর মধুসূদন পর্যায়ক্রমে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ জীবনে ভয়ংকর অর্থাভাব, ঋণগ্রস্থ ও অসুস্থতায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। এরপর সকল কিছুর মায়া ত্যাগ করে ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতার এক হাসপাতালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আশির দশকে প্রত্বতত্ত্ব অধিদপ্তর সাগরদাঁড়ি মধু কবির পৈত্রিক বসতবাড়ি ঘষামাজা করে পুরাতন জীর্ণশীর্ণ ভগ্নদশা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে রাখে। ৯৭ সালে কবির জন্মজয়ন্তী ও মধুমেলা উদ্বোধন কালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির পৈত্রিক বসতবাড়িকে মধুপল্লী হিসেবে ও সাগরদাঁড়িতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে এখানে ১টি রেঁস্তোরাসহ পর্যটন কেন্দ্র ও মধুপল্লী নির্মাণ করা হয়। তবে ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকদের মতো করে এখানে গড়ে উঠেনি বিশ্রামাগার ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। ফলে মধু ভক্ত পর্যটকরা এখানে এসে হতাশ হন। ইতিমধ্যে মধুমেলাকে সামনে রেখে মধুভক্ত ও পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কপোতাক্ষ পাড়ের তীর্থভূমি সাগরদাঁড়ি। (গ্রামের কাগজ)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×