somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদল তরুণের স্বপ্নযাত্রা শুরু

২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানে দেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছেন একদল তরুণ পেশাজীবী। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী এই তরুণ দলের গড় বয়স ৩০-এর কিছু বেশি। তাঁরা রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের কর্মকর্তা ও ভূকম্পন জরিপ দলের সদস্য। মৌলভীবাজারের রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ পরিচালনা করছেন তাঁরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জরিপের মাধ্যমে বাপেক্সের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হচ্ছে। কারণ, এ কাজের জন্য যে প্রযুক্তি ও দক্ষতা দরকার, তা আন্তর্জাতিক মানের। এর মাধ্যমে বাপেক্স স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উচ্চমান ও সামর্থ্য অর্জন করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব ক্ষেত্রের বিশেষ কোনো অর্জন দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানের আসনে বসাতে পারে, ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ এর একটি। এ দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ১০০ বছরের ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় কোম্পানির পরিচালিত ত্রিমাত্রিক জরিপ এটিই প্রথম।
এ কাজে উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ (পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো স্থান নির্ধারণের পদ্ধতি) থেকে শুরু করে সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভূগর্ভে ডিনামাইট ফাটিয়ে শব্দসংকেতের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৩২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের আট কিলোমিটার (আট হাজার মিটার) গভীরের প্রতি ইঞ্চি জায়গার তথ্য। এটি এতই নিবিড় অনুসন্ধান জরিপ, যাতে ভূগর্ভের একেকটি জায়গার তথ্য ৪৮ বার করে সংগৃহীত হবে।
এর আগে দেশে মাত্র পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে (বিবিয়ানা, ছাতক, বাঙ্গুরা, ফেনী ও সাগরবক্ষের মগনামা) ত্রিমাত্রিক জরিপ করা হয়েছে। ওই ক্ষেত্রগুলো উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির (পিএসসি) ভিত্তিতে পরিচালনা করছে বিদেশি কোম্পানি (আইওসি)। তবে এসব জরিপে ছয় হাজার মিটারের বেশি গভীরতার তথ্য সংগৃহীত হয়নি।
রশীদপুরে বাপেক্সের তরুণ দলের কাজের পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও মান সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই জরিপকাজ পরিদর্শন করে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাজ বাপেক্সকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিচ্ছে। বাপেক্সের ওই অনুসন্ধানী দল দেশের বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোর প্রকৃত মজুদের চিত্র আরও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে আনতে পারবে। এরপর দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির দরকার হবে না। বরং বিদেশি কোম্পানির হয়েও বাপেক্সই ত্রিমাত্রিক জরিপ করে দিতে পারবে।
রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, ‘ত্রিমাত্রিক জরিপ, অনুসন্ধান কূপ খনন, পুরোনো কূপের সংস্কার (ওয়ার্কওভার) প্রভৃতিসহ বাপেক্সের কাজের যে ধারা আমরা লক্ষ করছি, তাতে শিগগিরই এটি একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হতে পারবে। এর জন্য সরকারি যে সহায়তা দরকার, তা দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে পাওয়া গেছে। দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ যথাসম্ভব দ্রুততর করা হচ্ছে।’
রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্র: মৌলভীবাজার জেলার এই গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান ঢাকা থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। এটি রাষ্ট্রীয় খাতের সেই পাঁচটি পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রের একটি, যেগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে মাত্র ৪৫ লাখ পাউন্ডে কিনে রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেল অয়েলের কাছ থেকে। ক্ষেত্রটি এখন পরিচালনা করছে পেট্রোবাংলার অন্যতম প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল)।
রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৬০ সালে আবিষ্কার করে তৎকালীন পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানি। তখন ওই ক্ষেত্রে গ্যাসের মোট মজুদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ দশমিক ০০১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুদ নির্ধারণ করা হয় ১ দশমিক ৪০১ টিসিএফ। ক্ষেত্রটিতে এখন পর্যন্ত সাতটি কূপ খনন করা হয়েছে, যার পাঁচটি থেকে বর্তমানে গ্যাস তোলা হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচ কোটি (৫০ মিলিয়ন) ঘনফুট করে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস তোলা হয়েছে প্রায় ৪৭০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। উত্তোলনযোগ্য মজুদ অবশিষ্ট আছে ৯৩০ দশমিক ৫৯ বিসিএফের মতো। এই গ্যাসক্ষেত্রে আরেকটি নতুন কূপ খনন এবং পুরোনো একটি কূপ সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে।
ত্রিমাত্রিক জরিপ কেন: ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মূল উদ্দেশ্য কোনো ক্ষেত্রে গ্যাসের প্রকৃত মজুদ নির্ণয় এবং ভূগর্ভের গ্যাসসমৃদ্ধ বালু ও স্থানগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা। ত্রিমাত্রিক জরিপের ফলে একদিকে যেমন দেশে গ্যাসের প্রকৃত মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে, তেমনই গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নয়ন কূপ খননের ক্ষেত্রে কোনো কূপ গ্যাসশূন্য (ড্রাই হোল) পাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
কিন্তু প্রযুক্তির অভাব ও আর্থিক দৈনতার কারণে এর আগে রাষ্ট্রীয় কোনো গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করা যায়নি। রশীদপুরে বাপেক্সের পরিচালিত জরিপে ২৯ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ কিলোমিটার প্রস্থ ভূ-কাঠামোর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এরপর এই তরুণ দল একে একে কৈলাশটিলা, হরিপুর, বাখরাবাদ ও তিতাস এই চারটি স্থানে ত্রিমাত্রিক জরিপ চালাবে।
এই জরিপে রশীদপুর ক্ষেত্রের নতুন কী তথ্য জানার সম্ভাবনা রয়েছে, জানতে চাইলে জরিপ দলের প্রধান মেহেরুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের ভূ-কাঠামোটির অবস্থান ভূগর্ভের একটি চ্যুতির দুই পাশজুড়ে। কিন্তু শুরুতে যে জরিপ হয়েছে, তাতে এক পাশের তথ্য আছে। এখন সম্পূর্ণ কাঠামোটি জরিপের আওতায় আসায় পুরো ক্ষেত্রটির প্রকৃত মজুদ এবং ঠিক কোন জায়গায় কূপ খনন করলে গ্যাস পাওয়া নিশ্চিত হবে, তা জানা যাবে।
কীভাবে করা হয়: ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ প্রকল্পে বাপেক্সের পক্ষ থেকে নিযুক্ত পরিচালক আনোয়ারুর রহমান বলেন, কারিগরি ও ব্যবস্থাপনাগত দিক দিয়ে এই জরিপ এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। রশীদপুরে এই কর্মযজ্ঞ সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
সরেজমিন রশীদপুর পরিদর্শনের সময় বাপেক্সের জরিপ দলের কর্মকর্তারা জানান, জরিপের প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে উপগ্রহভিত্তিক ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে ডিনামাইট বিস্ফোরণ ও এর শব্দসংকেত থেকে পাওয়া তথ্য সংগ্রহের জন্য জিওফোন স্থাপনের সুনির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা; বিস্ফোরক স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে ১২ মিটার গভীর (রশীদপুর ক্ষেত্রের জন্য নির্ধারিত) গর্ত করা; সেখানে ৫০ মিটার পর পর বিস্ফোরক স্থাপন ও বিস্ফোরণ ঘটানো; ওই বিস্ফোরণের শব্দসংকেতের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ৫০ মিটার পর পর রেকর্ড করা; কম্পিউটারে সেই তথ্যের মান যাচাই; প্রয়োজনে নতুন করে কোনো স্থানের তথ্য সংগ্রহ ও পুনরায় তা যাচাই করা এবং সবশেষে ওই তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো।
১৪ সদস্যের তরুণ বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তার দলটি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করলেও প্রতিটি উপাদানের জন্য রয়েছে আলাদা কর্মী দল। রশীদপুরে এই কর্মী দলের সদস্যসংখ্যা এক হাজার ২৪২ জন। অবশ্য মূল প্রকল্প প্রস্তাবে এই সংখ্যা নির্ধারিত ছিল প্রায় দুই হাজার ৩০০ জন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে লোকবল কমানো হয়েছে। এতে কর্মীদের সবাইকে অনেক বেশি সময় কাজ করতে হচ্ছে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুমতি: ত্রিমাত্রিক জরিপের প্রথম ধাপ পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান নির্ণয় করা। এর জন্য এবং পরে তথ্য সংগ্রহের জন্য ক্ষেত্রটির কোথায় কোথায় বিস্ফোরক ও জিওফোন বসাতে হবে, তা নির্ধারণের জন্য উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু জাতিসংঘের অনুমোদন নিয়ে এই পদ্ধতি পৃথিবীব্যাপী তৈরি করে রেখেছে মার্কিন সেনাবাহিনী। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই তারা পৃথিবীর যেকোনো লক্ষ্যে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। বাংলাদেশেও এ রকম ৪০টি পয়েন্ট রয়েছে, যেখানে ‘রিয়াল টাইম কিনেমেটিকস (আরটিকে)’ নামক যন্ত্র স্থাপন করে পৃথিবীর অবস্থান সাপেক্ষে যেকোনো স্থান নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়।
তবে এসব পয়েন্ট ব্যবহার করার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীর অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। তারা অনুমোদন দিলেই শুধু উপগ্রহ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য আরটিকেতে আসবে। পরে ওই তথ্য ব্যবহার করে স্থান নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মার্কিন সেনাবাহিনী এই অনুমোদন দেয়। তবে শর্তও দিয়ে দেয় যে এই পদ্ধতি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
কাজ শুরু হয় গত বছর: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক জরিপের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। ২০১০ সালে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদন, সংশোধন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণসহায়তা গ্রহণ প্রভৃতি কারণে এই কাজ শুরু হয় গত বছরের মে মাসে। কিন্তু বর্ষাকাল হওয়ায় মাঠপর্যায়ে এই কাজের উপযুক্ত সময় সেটি ছিল না। তার পরও ৫৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তখনই জরিপ সম্পন্ন করা হয়। এরপর বিরতি শেষে গত বছরের ৫ অক্টোবর পুনরায় কাজ শুরু হয়।
শুরুতে উপগ্রহভিত্তিক ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার করে রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এর পাশাপাশি চলতে থাকে বিস্ফোরক আমদানি ও সংরক্ষণের জায়গা (পিট ম্যাগাজিন) তৈরির কাজ। এরপর ক্ষেত্রটির মাঠপর্যায়ে পাশাপাশি চলতে থাকে সার্ভে অর্থাৎ কোথায় কোথায় গর্ত করে বিস্ফোরক বসানো হবে, কোথায়ই বা বসানো হবে জিওফোন।
সার্ভে অনুযায়ী প্রতিটি পয়েন্টে ১২ মিটার গভীর করে প্রতিদিন প্রায় ২০০ গর্ত করে ‘ড্রিলিং টিম’। ওই গর্তে বিস্ফোরক স্থাপন করে ‘লোডিং টিম’। এলাকাভেদে আধা কেজি থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়। ‘শ্যুটিং টিম’ বিস্ফোরক স্থাপন ঠিকমতো হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়ে বেতারের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ‘রেকর্ডিং ওয়াগন’-এর সঙ্গে।
এই রেকর্ডিং ওয়াগনটি স্থাপন করা হয় জরিপ এলাকার ঠিক মধ্যস্থানে। জরিপের কাজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে এই ওয়াগনের অবস্থানও বদলায়। সেখানে সর্বাধুনিক সফটওয়্যার-সমৃদ্ধ কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন দুজন তরুণ বিশেষজ্ঞ। তাঁরা রেডিও সংকেতের মাধ্যমে নির্দেশ দিলে শ্যুটিং টিম একেকটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটায়। একেকটি বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে ভূগর্ভের আট কিলোমিটার গভীরে এবং চারপাশের নির্দিষ্ট এলাকায়। একেকটি বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গ মোট এক হাজার ৪৪০টি চ্যানেলের মাধ্যমে তথ্যসংকেত পৌঁছে দেয় জিওফোন বা রিসিভিং পয়েন্টে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি রেকর্ডিং ওয়াগনে বসে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেখানে তথ্য সন্নিবেশিত হয়। এই তথ্য পাঠানো হয় বেইজ ক্যাম্প-১-এ। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসজ্জিত ওই ক্যাম্পে রাতভর চলে তথ্যের মান যাচাই। তাতে কোনো তথ্যের মান খারাপ দেখা গেলে সেখানে আবার পরদিন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নতুন করে তথ্য নেওয়া হয়। আর সব ঠিক থাকলে ওই তথ্য ঢাকার বিশ্লেষণ কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়।
সাড়ে ২৮ মানবমাসের পরামর্শক: পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রের মোট এক হাজার ২৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানোর জন্য মোট বরাদ্দ রয়েছে ১৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া আরও ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফরাসি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে, যারা পাঁচটি ক্ষেত্রের জন্য মোট সাড়ে ২৮ মানবমাস (একজন মানুষের সাড়ে ২৮ মাস কাজ করার সমান) কাজ করে দেবে। সিজিজি ভেরিতাস নামক ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ বাংলাদেশে থাকেন না। কোনো করিগরি বিষয়ে সন্দেহ বা অস্পষ্টতা দেখা দিলেই শুধু তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হয়।
আইওসি ছেড়ে বাপেক্সে: এই জরিপ দলের ‘পার্টি চিফ’ মেহেরুল হোসেন ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর বিদেশি কোম্পানিতে (আইওসি) কাজ শুরু করেন এবং আইওসিদের পরিচালিত চারটি ত্রিমাত্রিক জরিপে অংশ নেন। অনেকে যেখানে দেশীয় কোম্পানি ছেড়ে আইওসির চাকরি নেন, সেখানে তিনি আইওসির চাকরি ছেড়ে দেশীয় কোম্পানিতে এলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর চাকরি করার পর আমার বাবা বললেন, বিদেশি কোম্পানির জন্য অনেক কাজ করেছ। এখন দেশের জন্য কিছু করো। তাই বাপেক্সে চাকরি নিয়েছি।’
মেহেরুল বলেন, তিনি মনে করেন, তাঁর বাবার প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি আনার জন্য কাজ করতে হবে তাঁদের প্রজন্মকে। মেহেরুলের বাবা মো. আবু বকর হাওলাদার ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বরিশালের কামারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।
মেহেরুলের নেতৃত্বাধীন জরিপ দলের সদস্যরা বলেন, তাঁদের স্বপ্ন হচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দেশকে স্বয়ম্ভর করে তোলা। শুধু স্থলভাগে নয়, তাঁরা সমুদ্রবক্ষেও ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানোর স্বপ্ন দেখেন।
এরপর কৈলাশটিলা: রশীদপুরে জরিপের কাজ শেষ পর্যায়ে। সেখানে মোট ১৮ হাজার ৮১৬টির মধ্যে সাড়ে ১৮ হাজারেরও বেশি ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটানো হয়ে গেছে। ২১ হাজার ৭৮০টির মধ্যে সাড়ে ২১ হাজারের বেশি জিওফোন পয়েন্টে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করাও শেষ। এরপর জরিপ শুরু হবে সিলেটের কৈলাশটিলা ক্ষেত্রে। চলতি শুকনো মৌসুমের মধ্যেই যাতে কৈলাশটিলার জরিপও শেষ করা যায়, সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি চলছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×