somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেলানী জীবন দিয়ে বিএনপি-জামায়াত ও সামহোয়ারইনকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে গেল।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহরুখ খান যখন ঢাকায় এলো (১০ ডিসেম্বর, ২০১০) তখন ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিয়ে বিএনপি বিচলিত হয়নি। অর্ধনগ্ন ভারতীয় তরুনীর উদ্দাম নৃত্য জামায়াতের সুদৃঢ় ঈমানী বুহ্যে আঘাত করতে পারেনি। তাই তারা নিশ্চুপ থেকেছে। হয়ত তারাও মজেছিল ভারতীয় সুন্দরীদের দেহের মাদকতায়। তবে ১০ ডিসেম্বরেও সীমান্ত দিয়ে বৈধ ও অবৈধ পথে অনেক পণ্য এসেছে বাংলাদেশে; ঠিক যেমন এসেছে ১০ ডিসেম্বরের আগে ও পরে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক তখন শোনা যায়নি। এই ডাক তীব্রভাবে আগেও শোনা যায় না কখনোই। কারণ সকলে জানে যে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের জন্যে কতটা জরুরী। তবুও পণ্য বর্জনের ডাক এখন শোনা যাচ্ছে। কারন এখন ফেলানীর লাশ পড়েছে। ফেলানীদের লাশ এপর্যন্ত অনেক পড়েছে। প্রতি বছরই পড়ছে। লাশ পড়ছে কয়েক সপ্তাহ পরপরই। অন্য সব ফেলানীর কথা সংবাদপত্রের এক কলাম রিপোর্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এবারের ফেলানী- হতভাগ্য মেয়েটি মরেছে বড় কঙ্ক্ষিত সময়ে। এমন একটা লাশই যে দরকার ছিল জামায়াত-শিবিরের জন্যে। এ লাশ জামায়াতের পূনর্জীবনের জন্যে অমৃতরূপে এসেছে।
এই ফেলানীর মৃত্যু অনেকের জন্যে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

ফেলানী লাশ যখন রাজনীতির হাতিয়ারঃ
জন্ম থেকেই বিএনপি রাজনীতির একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো ভারত বিরোধীতা। এই দলটি এক সময় জনগনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিলীন হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হবে.....’। কিন্তু এখন আর এই ধরনের নিম্নশ্রেনীর ভারতীয় জুজুর ভয় দেখিয়ে লাভ হয় না। জনগন অন্তত এটা বুঝতে পারে যে এগুলো শ্রেফ রাজনৈতিক ভাওতাবাজি। তবুও ভারত বিরোধীতা টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। এটা যে বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক পুজি! এটি ছাড়া কি আর চলে!

না, চলে না। আর চলে না বলেই ভারত বিরোধীতার ছুতো খুজছে বিএনপি। পরম বন্ধুর মতো ভারতও গত দুই বছরে নানা ইস্যু তুলে দিয়েছে বিএনপি’র কাছে। কিন্তু বিএনপি সেগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সাথে বিরোধ চরম আকার ধারন করেছে এই দুই বছরে। ছিল এশিয়ান হাইওয়ের রুট ম্যাপ ভারতের অনুকূলে নেয়ার সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিএনপি এইসব ইস্যুতে ‘ভয়েস রেইজ’ করতে পারেনি। ম্যাডামের বাড়ী এবং ম্যাডামের দুই পুত্রকে বাচানোই ছিল এই দুই বছরে বিএনপি রাজনীতির প্রধান উদ্দেশ্য। শতকরা একটি আসন লাভ করা জামায়াতের দশা ছিল আরো করুন। তারা কোনভাবেই সোজা হয়ে দাড়াতে পারছিল না। মাঝখানে বিএনপির বেহাত হয়ে যায় ম্যাডামের ১০১টাকা মূল্যের সেনানিবাসের বাড়ী। লাল দালানে যেতে হয় নিজামী, কামরুজ্জামান ও সাকাচৌধুরীকে। এই বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাড়ানোর কোন পথই খোলা ছিল না বিএনপি-জামায়াতের কাছে।

তাদের কাছে দেশ, দেশের মানুষের সুখ-দূঃখ কোন ব্যাপার না। এ দুই বছরে তারা দেশের মানুষের কোন কোন দূঃখের কথা নিয়ে ‘ভয়েস রেইজ’ করেছে? এমনকি বিএনপি নেতৃত্ব বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীদের দূঃখ-কষ্টেও তাদের পাশে এসে দাড়ায়নি। তৃণমূল নেতাকর্মী তো দুরের কথা বিপদের দিনে দলীয় সমর্থন পায়নি মির্জা আব্বাস, সাকা চৌধুরীর মতো নেতাও। বিএনপি দুই বছর ধরে ঘুরপাক খেয়েছে কেবল জিয়া পরিবারকে নিয়ে। আর এই দুই বছরে বিপর্যস্ত জামায়াত কর্মীদের পায়ের নীচে মাটি ছিল না। তাদের ছিল অস্তিত্ব সংকট। যে কোন মূল্য তারা আওয়ামী বিরোধী জনমতকে চাঙ্গা করতে চেয়েছে। কারণ সরকার বিরোধী জনমত তীব্র হলে, সরকার দূর্বল হয়ে পড়বে। এবং সেই সুযোগে তারা ঘুরে দাড়াবে। আর এরকম একটি সময়েই এলো পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টালমাটাল অবস্থা নিজেদেরকে সংগঠিত করার জন্যে জামায়াতের সামনে সূবর্ণ সুযোগ এনে দিল। কিন্তু তাদের ছাত্র সংগঠনের জন্যে প্রয়োজন ছিল একটি ইস্যু যাকে কেন্দ্র করে তারা বিএনপি’র ছদ্মবেশে/সুশীলবেশে তারা সমবেত হতে পারে। ফেলানীর মৃত্যু তাদেরকে সেই সুযোগ এনে দিয়েছে।

ব্লগার নাম নিয়ে অনেক জামায়াত কর্মী সমবেত হবার সুযোগ পেয়েছে। ফেলানীর মৃত্যু তাদের কাছে কোন বিষয় না। বিষয় না বলেই তাদের ব্যানারে প্রাধান্য পেয়েছে ‘ভারতীয় আগ্রাসনে’র কথা। অথচ ভারতীয় আগ্রাসন কোন নতুন বিষয় নয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই এটা সমানভাবে চলে এসেছে। অধিকাংশ সময়ে এসব নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের কোন মাথা ব্যাথা থাকে না। মাথা ব্যথা থাকে না বলেই তারা গত দুই বছরে এই বিষয়ে কোন কর্মসূচী দেয় নাই। কিন্তু বিএনপির ছদ্মবেশে জামায়াতের সংগঠিত হবার এই সুযোগ ছাড়েনি জামায়াত-শিবির। আর এখানে প্রত্যক্ষভাবে মদদ জুগিয়েছে সামহোয়্যারইন। এবং এই কর্মসূচীর মাধ্যমে দেশে সামহোয়্যারইন নামক রাজনৈতিক সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হলো। মানুষের করুন মৃত্যু নিয়ে রাজনীতিকদের মায়াকান্না নতুন নয়, এবার যুক্ত হলো সামহোয়ারইনও।

সামহোয়ারইনের ভন্ডামীঃ সামহোয়্যারইন কোন নির্দিষ্ট আদর্শকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত কোন সংগঠন নয়। এর সৃষ্টির পেছনে কাজ করেছে নির্ভেজাল বাণিজ্য। তাই সামহোয়্যারইন সব সময় বাতাসের অনূকুলে চলে। জনপ্রিয়/আলোচিত ইস্যুকে লাইমলাইটে আনতে চেষ্টা করে। তাদের একমাত্র লক্ষ্য প্রচার। কারণ আন্তর্জালিক মিডিয়ার বানিজ্যিক মূল্য নিহিত হিটের মধ্যে। এই বেশি বেশি হিট অর্জনের জন্যে সামহোয়্যারইন যা যা প্রয়োজন তাই করতে পারে। এরা এখন একটি রাজনৈতিক মহলকে প্রমোট করছে। পরিস্থিতির বদল হলে প্রমোট করবে অন্য কোন মহলকে। এর মধ্যে দেশাত্মবোধ, মুক্তবুদ্ধির চেতনা ইত্যাদি অনুসন্ধান বৃথা শ্রম। তবে রাজনৈতিক পল্টিবাজদের ইতিহাস খুব মধুর নয়। রাজনীতি থেকে যারা ফায়দা হাসিল করতে চায়; সময়ে তাদেরকে চড়া মূল্য দিয়েই সেটা শোধরাতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×