somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষমতার লোভে বিশ্বাসঘাতকতার এক বিরল উদাহরণ

২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জিয়া মানুষ ভাল ছিল কি খারাপ ছিল সেই তর্ক কখনই শেষ হবে না। জিয়া অনেক ভাল কাজ করেছে, জিয়া হয়ত: একটা গতি সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু জিয়া যে একজন বিশ্বাসঘাতক ছিল সে কথা কি অস্বীকার করা যায়? হ্যা জিয়া দেশপ্রেমিক ছিল। কিন্তু এই দেশপ্রেমিক জিয়া তার মুক্তিদাতা কর্ণেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল (ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছিল)। এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা ইতিহাসে বিরল। জিয়া দেশপ্রেমিক ছিল বলেই কি রাজাকার আজিজকে মন্ত্রী বানিয়েছিল? জিয়া দেশপ্রেমিক ছিল বলেই মার্শাল ল দিয়ে ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার লালসায় ক্ষমতা ছেড়ে না দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিল? জিয়া দেশপ্রেমিক ছিল বলেই কি সশস্ত্রবাহিনীর এত এত সদস্য কে হত্যা করেছিল? জিয়া মুজিব হত্যার ব্যাপারে কিছুই জানত বলেই কি আরেক বিশ্বাসঘাতক খুনি মোশতাক ক্ষমতা বসে জিয়াকেই সেনাবাহিনীর প্রধান বানিয়েছিল?

bdnews24.com এ কর্ণেল তাহের এর ফাঁসি সম্পর্কিত কিছু তথ্য দেয়া হল:

বাঙালি জাতির জন্য উদ্ভাসিত সূর্য উঠার আর দেরি নাই- সামরিক আদালতে গোপন বিচারে মৃত্যুদণ্ডের পর এমন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম।

১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই পত্রিকায় নিজের মৃত্যুদণ্ডের সংবাদ পড়ে পরিবারের উদ্দেশে লেখা শেষ চিঠিতে তাহের লিখেছিলেন, "বাঙালি জাতির জন্য উদ্ভাসিত সূর্যের আর কত দেরি। না, আর দেরি নাই। সূর্য উঠলো বলে।"

চিঠির শুরুতেই তাহের সামরিক আদালতে গোপন বিচারের রায়ের কথা লেখেন। এরপর তুলে ধরেন অপর সহদণ্ডপ্রাপ্তদের অনুভূতি।

একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের এই কমান্ডার লিখেন, "নীতু, মিশু ও যিশুর (তাহেরের সন্তানরা) কথা- সবার কথা মনে পড়ে। তাদের জন্য অর্থসম্পদ কিছুই আমি রেখে যাইনি, কিন্তু আমার সমগ্র জাতি রয়েছে তাদের জন্য।

"আমরা দেখেছি শত-সহস্র উলঙ্গ, মায়া ভালবাসা বঞ্চিত শিশু। তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় আমরা গড়তে চেয়েছি।"

যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা ওই চিঠিতে বলেন, "এদেশ সৃষ্টির জন্য আমি রক্ত দিয়েছি। সেই সূর্যের জন্য আমি প্রাণ দেব, যা আমার জাতিকে আলোকিত করবে, উজ্জীবিত করবে-এর চাইতে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে।

"আমাকে কেউ হত্যা করতে পারে না। আমি আমার সমগ্র জাতির মধ্যে প্রকাশিত। আমাকে হত্যা করতে হলে পুরো জাতিকে হত্যা করতে হবে। কোন শক্তি তা পারে, কেউ পারবে না।"

১৯৭৬ সালের ১৮ জুলাই পত্রিকায় নিজের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের সংবাদ সম্পর্কে চিঠিতে তাহের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিলেন, "মামলার যা বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা।"

মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর ওই মামলায় তাহেরের আইনজীবীরা তাকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করার কথা জানালে তিনি স্পষ্টভাবে এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

চিঠিতে তাহের সে কথাও লিখেছেন।

"আমি তাদেরকে (আইনজীবীদের) স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলাম রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো আবেদন করা চলবে না। এই রাষ্ট্রপতিকে আমিই রাষ্ট্রপতির আসনে বসিয়েছি, এই দেশদ্রোহীদের কাছে আমি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারি না।"

ওই মামলায় তাহেরের সঙ্গে মেজর জিয়াউদ্দিনের ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। কারাগারে বসে তিনি কবিতা লিখতেন।

চিঠির শেষে জিয়াউদ্দিনের লেখা একটি কবিতার কয়েকটি পঙক্তি উল্লেখ করেন। এটি ওই বছরের ১৫ জুলাই লেখা।

কবিতার অংশবিশেষ- "...জন্মেছি, সারা দেশটাকে কাঁপিয়ে তুলতে
কাঁপিয়ে দিলাম।

জন্মেছি, তোদের শোষণের হাত দুটো ভাঙবো বলে

ভেঙে দিলাম।

...পায়ের নীচে শোষক আর শাসকের

কবর দিলাম।

পৃথিবী অবশেষে এবারের মত বিদায় নিলাম।"

তাহেরের নঙ্গে ওই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন শেষ লেখা ওই চিঠি সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন, "১৯৭৬ সালের ২০ জুলাই কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে তাহেরের সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি (তাহের) আমাকে চিঠিটি পড়ে শুনিয়েছিলেন।"

অধ্যাপক আনোয়ার জানান, পরে ফাঁসির আগে সম্ভবত কারারক্ষীদের কারো মাধ্যমে তিনি (তাহের) চিঠিটি বাইরে পাঠাতে সক্ষম হন। এভাবেই চিঠিটি পৌঁছায় পরিবারের সদস্যদের কাছে।


অধ্যাপক আনোয়ার আরো জানান, চিঠিটির দুটি কপি লিখেছিলেন তিনি। একটি ডায়রিতে, অন্যটি কাগজে। ছয় পৃষ্ঠার কাগজে লেখা ওই চিঠিটিই বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

চিঠিটি শুরু করেন এভাবে, 'শ্রদ্ধেয় আব্বা, আম্মা, প্রিয় লুৎফা, ভাইজান, আমার ভাই বোনেরা'।

আর শেষ করেছেন, 'তোমাদের তাহের' দিয়ে।

তাহের জন্মেছিলেন ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসামের বদরপুরে। তিনি ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ কল্যাণে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর সময় তিনি ছিলেন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে। ওই বছরের ২০ জুলাই মেজর এম এ মঞ্জুর, মেজর জিয়াউদ্দিন ও ক্যাপ্টেন পাটোয়ারিকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের এবোটাবাদ থেকে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছান।

পরে ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসাবে যোগ দেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। ১৪ নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে একটি পা হারান তিনি।

স্বাধীনতার পর সক্রিয় হন জাসদের রাজনীতিতে।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলে। এরই এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেন এবং সামরিক আদালতে গোপন বিচারে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম এ তাহেরসহ ১৭ জনকে সাজা দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই ওই রায়ের পর ২১ জুলাই ভোররাতে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।


সূত্র: Click This Link

৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×