somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাইঘাটের বাঘ খেওড়ের মজার কাহিনী

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অসংখ্য ছোট বড় নদী বিধৌত অপূর্ব শোভায় শোভিত প্রাচীন জনপদটির নাম কানাইঘাট। সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৫১.২ কিলোমিটার (৩২ মাইল) দূরে উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে কানাইঘাটে আসতে হলে সিলেট-তামাবিল রোড অথবা,জকিগজ্ঞ রোডে কানাইঘাট উপজেলা সদরে আসা যায়। কানাইঘাট বাজার ঘেঁষে প্রবাহিত সুরমা নদীর দু'পারেই দু'টি বাস ষ্টেশন আছে। সীমান্তকে ঘিরে রেখেছে খাসিয়া জৈয়ন্তিয়া পাহাড়। এর পাদদেশে অবস্থিত অসংখ্য টিলা,মণিপুরী টিলা,মিকিরপাড়া,লুহাজুড়ি সহ অসংখ্য টিলার অবস্থান এ উপজেলায়। আবার এসব টিলার মধ্য দিয়ে অসংখ্য নদী বা ছড়া পাহাড় থেকে নেমে এসেছে। এর মধ্যে লোভা,নুনগাং,কালিজুড়ি,আপাং,সুরই,সিংগাইর,নাপিতখাল অন্যতম, এগুলি দিয়ে খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে অতীতে অসংখ্য বানর,শুকর,হাতি,বাঘ ইত্যাদি প্রাণী এখানকার লোকালয়ে নেমে আসত। এখনো শরৎ হেমন্তকালে বাঘ নামে। প্রতি বছর ২/১ টি বাঘ আটক করা হয়। স্থানীয় ভাষায় এ বাঘ আটক করাকে বলা হয় "বাঘ খেওড়"। নিচে বাঘ খেওড়ের কয়েকটি মজার ঘটনা তুলে ধরা হলোঃ-
বাঘ আসে কোথা থেকে:
কানাইঘাটের পাহাড়গুলোতে প্রতিবছর যে বাঘগুলো আসে তা পাশ্ববর্তী ভারতের উঁচু উঁচু পাহাড় থেকে এসব লোকালয়ে নেমে আসে। সাধারণত খাবারের সন্ধানে,দলছুট হয়ে বাঘগুলো এসব লোকালয়ে আসে। স্থানীয় পাহাড়ী এলাকার লোকদের বক্তব্য প্রায় রাত্রে এসব বাঘের গর্জন ও শোনা যায়। গত বছরের শেষের দিকে এখানে বিরল প্রজাতির দুটি কালো বাঘ নামলে ১ টি বাঘকে আটক করতে সম হয় এলাকাবাসী,যে বাঘটি প্রশাসনের সহযোগিতায় চিটাগাং সাফারি পার্কে নেওয়ার পথে মারা যায়।
যে ভাবে বাঘকে আটক করা হয়:
মূলাগুল,বড়বন্দ,সুরইঘাট,কালিনগর,নিহালপুর,লীপ্রসাদ ইত্যাদি পাহাড়ী এলাকার গ্রামগুলোতে বাঘ নামলে লোকজন সুকৌশলে বাঘের অবস্থানের বন,টিলা, ঘিরে জাল দিয়ে বাঘকে আটক করে। সীমান্তবর্তী এসব গ্রামে বাঘ নামলে প্রথমে গরু,ছাগল,মহিষ ও ভেড়ার উপর আক্রমন করে এতে এলাকার লোকজন নিশ্চিত হন যে পাহাড় থেকে লোকালয়ে বাঘ নেমে এসেছে। তখন শুরু হয় বাঘ আটকের প্রস্তুতি। লোকালয়ে বাঘের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর পাহাড়ী এলাকার মসজিদগুলোতে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক করে সকল মহল্লা থেকে পাট দিয়ে তৈরী বিশেষ আকৃতির অনেকগুলো জাল সংগ্রহ করা হয়। তারপর বাঘের অবস্থানরত পাহাড়ী টিলার তিনদিক জাল দিয়ে ঘেরাও করে একদিক খোলা রাখা হয়। এবার সকল এলাকার লোকজন ডাক,ঢোল পিটিয়ে ,তবলা, বাশি বাজিয়ে লাটি,ছটা ও নানান ধরনের অস্ত্র নিয়ে বাঘকে জালের ভিতর ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে খেওড়ের খোলা মুখটি ছোট করতে থাকে আর এ সময়ে জনতা নানা ধরনের গান ও হৈ হুল্লোড় করে থাকে এক সময় খেওড়ের পরিধি টিলার পাদদেশে ছোট হয়ে আসে বৃত্তাকার রূপে। চারদিকে পাটের জাল দিয়ে ঘেরাও করা বৃত্তাকার এ স্থানটিতে জমে উঠে বাঘ খেওড়ের মেলা। দূর দূরান্ত থেকে ছোট,বড়,আবাল,বৃদ্ধ,বণিতা আসতে থাকে একনজর বাঘটি দেখার জন্য।
বাঘ আটকের পরের ঘটনা:
এক সময় বাঘ আটকের পর বাঘ খেওড় কমিটির নিধর্ারীত নিয়ম নীতির আওতায় মেলা শেষ হওয়ার পর বাঘ মারার জন্য মঞ্চ তৈরী করা হত এবং নির্ধারীত ব্যাক্তিরা মঞ্চে উঠে পর পর কয়েকটি গুলি করে বাঘকে হত্যা করতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকারের বন্য আইনে বন্য পশু হত্যা করা বে-আইনী বিধায় আটক বাঘকে সাধারণত এখন আর মারা হয়না। আটকের পর প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয় এবং আটক বাঘকে কোন পার্কে হস্তান্তর করা হয়।
যে ভাবে মেলা বসে বাঘ দেখার জন্য:
কানাইঘাটে বাঘ আটক হয়েছে এ খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে হাজার,হাজার লোক বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঘ দেখতে এসে ভীড় জমায়। পাহাড়ী গ্রামের লোকজন আনন্দ করে মেলা বসায়। কোন কোন সময় ৭/৮ দিন এ মেলা চলে। স্থানীয় লোকজন এ আনন্দ মেলাকে "বাঘ খেওড়ের মেলা" বলে। মেলায় বিভিন্ন ধরনের দোকান বসে,এতে পাহাড়ী এলাকার নানা জাতের ফল ফলাদি ছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।
বাঘ খেওড় কমিটি:
বাঘকে আটক করার জন্য রয়েছে বিভিন্ন গ্রামের গন্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে গঠিত "বাঘ খেওড় কমিটি"। বাঘ আটক করা থেকে শুরু করে বাঘ মারা পর্যন্ত বা বাঘকে ধরে সংশ্লিষ্ট সরকারী বনবিভাগের হাতে অথবা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত সকল সিন্ধান্ত এই বাঘ খেওড় কমিটিই নিয়ে থাকে । যথাসম্ভব বণ বিভাগের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রতি ১ বছর পর পর এ কমিটি বাঘ খেওড়ের আরেকটি মজার ব্যাপার হল খেওড়ের পর কোন গ্রামের অংশ দিয়ে জাল ছিড়ে যদি বাঘ বেরিয়ে যায় তাহলে খেওড় কমিটির নিয়ম অনুযায়ী ঐ এলাকার লোকজনকে মোটা অংকের জরিমানা করা হয়।

লেখকঃ- সাংবাদিক ও শিাথর্ী, সদস্যঃ কানাইঘাট প্রেস কাব
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×