somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নির্যাতন

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত ২৪ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোর চিঠিপত্র বিভাগে "স্কুলে ভর্তির আগেই..." শিরোনামের লেখাটি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়ি। স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রশ্ন বুঝতে না পারায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে কর্তব্যরত শিক্ষিকা চড় মেরেছেন! ঐ লেখাটি আমার চোখ এড়িয়ে গেলেও পরদিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর আমার মা আমাকে লেখাটি পড়তে দেন এবং বলেন যে ছোটবেলায় আমার ক্ষেত্রেও প্রায় এ ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। লেখাটি পড়েই সিদ্ধান্ত নিই যে এ বিষয়ে দু'টো কথা লিখব।

আমাদের দেশে কমবেশি সব শিশুই বিদয়ালয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার। পড়া না পারা, শ্রেণীকক্ষে কথা বলা, হাসাহাসি বা দুষ্টুমী করার জন্য শিক্ষক প্রায়ই শিশুদের প্রহার করে থাকেন। এখন দেখা যাচ্ছে বিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই ভর্তি পরীক্ষার দিনই শিশু শিক্ষক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার! আমাদের সমাজ কোন পথ চলছে তবে? শিক্ষণবিজ্ঞান বিশেষত শিশু-শিক্ষণবিজ্ঞানে (Pedagogy) যে কথাটি অতি গুরুত্বের সাথে বলা হয়েছে সেটি হল শিশু-শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজনীয়তার কথা। শিশু যদি শ্রেণীকক্ষে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে তাহলে সে শিখবে কী করে? আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হল "শিক্ষার্থীর জন্যেই শিক্ষা"। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকল নাগরিককে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। এটা সকল শিশুর অধিকার। শিক্ষার্থী যদি পড়া বুঝতে বা শিক্ষকের সামনে তা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের দায়িত্ব শিক্ষার্থীকে তা বোধগম্য করানো ও যাচাই করা যে শিক্ষার্থী তা আসলেই বুঝেছে কিনা। তার এই দায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন কোন গ্রহণযোগ্য পন্থা বা কৌশল হতে পারে না। শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক আধুনিক শিক্ষণবিজ্ঞানের নানা কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। শিশুকে আনন্দঘন পরিবেশে অনেক কিছুই শিখিয়ে দিতে পারেন। গল্পের ছলে বা অভিনয়ের মাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীকে এমন অনেক বিষয় শিখিতে দিতে পারেন যা লেকচার নিয়মে শেখালে শিশুর বুঝতে ও মনে রাখতে অনেক কষ্ট হবে। শিক্ষক নিজের অদক্ষতাকে ঢাকতেই শিক্ষার্থীর উপর হামলা করেন এ কথা স্পষ্ট। অল্পবয়সী শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে অনেক হৈ চৈ করে থাকে। একজন সুশিক্ষিত ও দক্ষ শিক্ষক অবশ্যই জানেন কিভাবে তা কৌশলে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ক্লাসে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বলেছিলেন, "শিশুরা ক্লাসে হৈ চৈ দৌড়া-দৌড়ি করবে না তো কি আমি দৌড়া-দৌড়ি করব?" কী চমৎকার একটি কথা তিনি বলেছিলেন। আরও বলেছিলেন, শিশুরা দৌড়াদৌড়ি বা হৈ-হুল্লোড় করে তার শক্তি ক্ষয় করার জন্য। এটি একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া। শিশুর শরীরে খাদ্য থেকে আগত শক্তি খরচ হওয়ার সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি উপায় হল তার চাঞ্চল্য। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এ অভ্যাস পরিবর্তিত হয়। শিশুর স্বাভাবিক গতিকে অন্যায়ভাবে ব্যাহত করাটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তাদের সনাতন মানসিকতা ও শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনার অদক্ষতার কারণে শিশুদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের আশ্রয় নেন। অনেক শিক্ষকের ক্ষেত্রে এটি বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থ করার নিকৃষ্ট পন্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পারিবারিক অশান্তির বহিঃপ্রকাশও শিশু নির্যাতনের মাধ্যমে প্রকাশ করেন অনেক শিক্ষক।

এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে প্রয়োজন শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা যার মাধ্যমে তাদের মানসিকতা উন্নততর হবে। উন্নত এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী ও বিবেকবান ব্যক্তি যেন শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হতে পারেন সেজন্য শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকতে হবে। শুধু বিষয়জ্ঞান আর সাধারণ জ্ঞানের ওপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করলে শিক্ষকতার গুণাবলী সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এর পাশাপাশি অভিভাবক পর্যায়ে সচেতনতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদের "সন্তান আমার, পিটিয়ে মানুষ করবেন শিক্ষক"- এ ভ্রান্ত ধারণা ও মানসিকতার অবসান ঘটাতে হবে। সর্বোপরি, স্কুল শিক্ষকদের নিম্ন বেতন-ভাতা ও সামাজিক মর্যাদার সংকট দূর করতে না পারলে উন্নত মানসিকতার তরুণ-তরুণীরা শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করবে না এবং এ ধরণের বহু সমস্যায় শিক্ষাব্যবস্থা ও শ্রেণীকক্ষ জিম্মি হয়ে থাকবে।

আরও প্রকাশিত হয়েছে ব্লগারে আমার ব্লগে sleepinclassroom.blogspot.com
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৩১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×