somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাযাবর সময় ২

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পরের দিন হোটেল থেকে একটা ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে ব্যংককের কয়েকটা জায়গা দেখবার জন্য বেরোলাম। ট্যুর গাইড আমাদের সকাল ৬।৩০ টায় পিক করল। দেখলাম মাইক্রোবাসে আমাদের পেছনে যারা বসেছেন উনারা কলকাতার বাংগালী। আলাপ হলো উনাদের সাথে। কথা হলো চলতে চলতে। ট্যুর গাইড বললেন ব্যংককের আসল নাম পৃথিবীর সব চাইতে লম্বা রাজধানির নাম। উনি তখন নাম টার ইতিহাস ও নাম টা বললেন। নাম টা বলতে উনার পুরা ৭০ সেকেন্ড লেগেছে। দুঃখিত এত বড় নাম মনে রাখবার মত মাথা আমার নেই :(। তবে ফেব্রুয়ারিতে ব্যংকক যাবো ভেবেছি তখন নামটা লিখে আনব। :)


প্রথমে গেলাম আমারা ফ্লোটিং মার্কেটে। একটা নদীর পাড় থেকে ডিংগিতে উঠলাম দুই জোড়া করে।


ডিংগি বেয়ে চলল দুপাশে ঘর বাড়ি আর অফিস আদালতের মাঝ দিয়ে।


পানির পাশে বাড়ি গুলো চমৎকার সব ফুলের গাছে সাজানো।


ছোট ছোট সিড়ি উঠে গেছে বাড়ি গুলোতে উঠবার জন্য। এমনটা না হলেও কিছুটা এরকম দেখেছি কেম্বডিয়ায়। আমার কেম্বডিয়ার গল্প গুলো তে নিশ্চই দেখেছেন আপনারাও।


আর শুধু বাড়ি ঘর ও অফিসই নয় চমৎকার রেস্ট্ুরেন্ট সাজানো পানির পাশে!!!


ফ্লটিং মার্কেটে পৌছেই সে কি এক রং এর বাহারের মধ্যে পরলাম মনে হলো। চারি দিকে রং এর ছড়াছড়ি।




নানান রং এর জিনিস নিয়ে নানান রং এর নৌকো গুলো নানান রং এর কাপড় পরা মানুষ গুলো কে নিয়ে কি সে জীবনের ব্যস্ততা। ব্যস্ত জীবন যে এত রঙ্গিন হতে পারে!!!


কেউ হ্যাটের নৌকা নিয়ে চলেছে, কেউ ফুলের সাজি সাজিয়ে চলেছে আবার কেউ দিয়েছে নানান রং এর হাতে বানানো ব্যগের দোকান।

কেউবা বিক্রি করছে নানান রং এর খাবার। নদির দুপাশে হরেক রকমের সস্তা রংগিন পণ্যে ভড়া।




সাধারন কর্ম ব্যস্ত জীবন যে এত রংএ এরা ধরে রেখেছে, সাজিয়েছে। কে বলে এই মানুষ গুলো গরীব। এরা বড় লোক এদের মনের সৌন্দর্যে!!


এত এত রং বেরং এর খাবার দেখে আমাদের খিদে না পেয়ে যায় কি করে ;)। ক্লিফ আর আমি ভেজি রোল আর সেই রংগিন শুগার ও নাড়কেল দেয়া ক্রিসপি জিনিস গুলো খেলাম। কিযেন ওগুলোর নাম জানি না। ওরা ইংলিশ খুব ভাল বলতে পারে না তাই "ওটা খাবো" বলা ছারা আর পয়সা দেয়া ছারা কোন কথপোকথনের সুযোগ হয়নি :)। তবে খাবার গুলো সত্যিই মজা।


এক জায়গাতে দেখি এক ডিমের খোসা ঝুলছে সামনে পেছনে মাথা নিয়ে।


রং এখানেও লেগেছে ;) গড নোজ কি এই জিনিস :-/


এর মাঝে আবার এক লোক সাপের খেলা দেখাচ্ছে। আস্ত দুই লম্বা সাপ এর ঘাড়ে ওর ঘাড়ে চাপিয়ে। কি যন্ত্রনা X( সাপ আমি একদম পছন্দ করিনা। মানুষ জনও পাগল!! সাপ শুধু ঘাড়ে নেয় না আবার চুমুও খায়। কি জঘন্য গা ঘিনঘিনে ব্যপাররে বাবা X((X((


এর পরে গেলাম উড কার্ভিং এর কারখানায়। কি চমৎকার কাঠের উপর কারুকাজ করছেন শিল্পিরা।


কাঠে উপর খোদাই করে বানানো পেইনটিং।


অসাধারন কাজ। মজার মজার ডিজাইনের সব টেবিল চেয়ার বানানো।


বিশাল বিশাল হাতি। এদের হাতি প্রিয়তা আছে বুঝলাম ;)




নানান ভাবে বানানো বুদ্ধা মাথা। চমৎকার হাতের কাজ!!


ঝোলানো ল্যাম্প বানানো নারকেলের খোল দিয়ে!!


কাঠের সিংহাসন :)!! এমন শত শত কাঠের কাজে পুরো কারখানা ভড়া।


সবই দেখবার মতন সুন্দর।


গেলাম হাতি বাগানে ;) হাতির পিঠ চড়তে। ঢাকা থাকতে প্রায়ই চিড়িয়াখানা যেতাম হাতির পিঠ চড়তে। মন খারাপ হলে হাতির পিঠে গিয়ে ঘন্টা খানেক চড়ে আসতাম ;)। তা হাতির পিঠে চড়বার অভিঙ্গতা থাকলেও হাতি ফ্রিক দেশে এসে হাতির পিঠে না উঠে কি করে যাই ;)


হাতির পিঠে ৪৫ মিনিট কাটিয়ে এলাম ওখানে :)

এখান থেকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো সাপের মিউজিয়ামে। আমার সবচাইতে অপছন্দের যায়গা। :( X((


যেখানে যেখানে সাপ যেন কিলবিলিয়ে আছে বা ফনা তুলে তাকিয়ে আছে পাথড় চোখে। আহ্ আমার গা ঘিনঘিনিয়ে উঠে।


সেখানে আবার সাপের খেলা দেখতে হলো। মন উসখুশ করে বের হয়ে আসবার জন্য। কিন্তু লজ্জায় পারিনা বলতে আমার মনে কি পরিমান ভয়!! :(


মনে হয় এই বুঝি আমার পায়ের নিচে একটা সাপ চাপা পরল বা গায়ের উপর ঝপাং করে পড়ল। এক ঘন্টার ঐ মহা ডেন্জারাস সাপের খেলা আমার দেখতে হলো দলের চাপে পড়ে। চোখ আর মনের উপর কি নির্যাতন রে বাবা!!




হায়রে সাপ দেখেও কত কিছু শিখলাম:P!! সাপের পিনাসও দেখিয়ে ছারল আমাদের। কি যন্ত্রনা X((:P। তবে জীবনে বলতে পারব সাপ শুধু দেখিনি নেংটু সাপের পিনাসও দেখেছি ;):PB-) একটা সাপের তাও একটা নয় দু'দুটো পিনাস ;)


এরা শুধু হাতি আর সাপ ফ্রিক নয় কুমিড়েও এদের যথেস্ট আগ্রহ দেখলাম :( আমি অস্ট্রেলিয়াতে কুমিড়ের মাংস যদিও মজা করে খেয়েছি তবে কুমিড় জিনিসটা আমার দেখতে অত ভাল লাগে না। :(

এর পরে গেলাম জেমস্টোনের কারখানায়। খনি থেকে আনা আস্ত জেমস্টোন থেকে শুরু করে কত রকমের মুল্যবান পাথড়ে ভড়া!! এমরেলড, ডায়মন্ড, এমেথিস্ট, রুবি....আরো কতো। কাট আনকাট সব আছে ওখানে। নানান রনকমে পাথড়ের গহনা। আর সস্তাও বটে বাইরের চাইতে। সব চাইতে মজা লাগল খনি থেকে তুলে আনা আস্ত পাথড়ের আনকাট দলা দেখতে। ছবি তোলা নিষেধ বলে কোন ছবি ওখানে তুলতে পারলাম না।

সেদিন ফিরে সন্ধ্যায় ব্যংককের বিক্ষাত নাইট মার্কেট প্যাডপং মার্কেটে গেলাম। হায়রে এমন কোন ব্রান্ড নেই যার ফেইক ওখানে পাওয়া যায়না:(। আর ফেইকটা দেখে বোঝার কোন উপার নেই যে ওটা অরিজিনাল নয়। স্পেশালী লেডিস হ্যান্ড ব্যাগ। প্রাডা ব্যাগের লেদারের কোয়ালিটি আর মেকিং অরিজিনাল প্রাডার চাইতেও যেন ভাল। আর সস্তা তো বলাই বাহুল্য। আর শুধু কি প্রাডা হাহ্ - জিমি চু, মিউ মিউ, গুচি, শ্যানেল কি নেই ;) । সব ব্রান্ডের ঘড়ির ফেইক ওখানে পাওয়া যায়। তবে আমার সন্দেহ আছে কতদিন সেই ফেইক ঘড়ি চলবে ;)। আছে জেমস্টোনের জুয়েলারি, জুতা। কেউ ভবিষ্যতে ব্যংকক গেলে প্যাডপং মার্কেটে যেতে ভুলবেন না।

নেইল আর্টে দোকান গুলো সস্তায় ম্যনিকিওর প্যাডিকিওর করছে। আমিও আমার ম্যনিকিওর প্যায়ডিকিওর করিয়ে নিলাম। আর থাই বডি ম্যাসাজের তো তুলনাই নেই। সেটা একবার ট্রায় করতে কেউ ভুলবেন না।

পরের দিন সিংগাপুরে ফিরে এলাম আমরা। সে রাতটা হোটেলেই কাটালাম গৃহহীনের মতন মনে হলো নিজেদের। পরের দিন নিপার সাথে লাঞ আর আমাদর পুরোনো বাড়ি হ্যন্ডওভার করে দিন কাটল। আর তার পরের দিন সকালের ফ্লাইটে ব্রিসবেন চলে আসা।

আমার এই থাই ট্যুরের লেখা ও ছবি যারা থাইল্যান্ড যান নাই তাদের জন্যই বেশি । চেষ্টা - কিছুটা হলেও যদি আমার সাথে আপনাদের ব্যংকক ঘুড়িয়ে আনতে পারি :) । ভাল থাকবেন সবাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:৩০
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×