somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরেকবার-শেষাংশ

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরেকবার-প্রথমাংশ

মনে মনে বললাম, সবুজ নয়, বরং এ জাতীয় জিনিস দেখলে চোখের জ্যেতি বাড়ে, মনে শান্তি (অশান্তিও বটে) নেমে আসে, আর হার্টের অসুখ হবার সম্ভাবনা কমতে কমতে একেবারে শূন্যে নেমে যায়। অবশ্য কতিপয় লোকের বেড়েও যেতে পারে, সেটা ভিন্ন কথা। উনারা আশেপাশের খালি চেয়ারগুলোতে বসে কেবল যে চেয়ারগুলোকেই ধন্য করলেন তা নয়, সাথে সাথে বৃটিশ কাউন্সিলকে, আর এ অধম ও তার চক্ষুদ্বয়কেও। এমন সব মুহূর্তে আমার কেন জানি নিজেকে হতভাগা হতভাগা টাইপের মনে হয়। নিদানপক্ষে যদি একটা চেয়ারও হতাম তবে কী এত ঝক্কি ঝামেলা সইতে হত? উপরন্তু এরকম ধন্যতা, আহা, কেন হলো না এমন? কেন একটা চেয়ারও হলাম না ঐ বৃটিশ কাউন্সিলের?

রমণীদিগের দিকে আমি আবার চোখ তুলে মানে সরাসরি তাকাতে পারি না, তারপর যদি হয় এমন পদের, তবে মিইয়ে যেতে থাকি ভেতরে ভেতরে, ফলে চোখ তুলতে সংকীর্ণতা বোধ হয়। কেন জানি মনে হয়, ওদের দিকে আমার তাকানো মোটেও উচিত নয়, আমি তাকালেই ওদের গা ময়লা হবে, সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে, আর ছুঁয়ে দেবার কথা, আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজবিল্লাহ! ও আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।

তাই বলে আবার ভাববেন না একদম তাকাই না, দেখি না। সুযোগ যদি পেয়েই যায় তবে হাত ছাড়াও করি না। তবে তাকালে আগে পায়ের দিকেই তাকাই, প্রথমে দেখি পা। আহা, এমন একেকটা পা, কোন জিনিস দিয়ে যে তৈরী তা কেবল উপরওয়ালাই জানেন! তবে মাটি মেড না কিরে কেটে বলতে পারি। বারবার দেখতে ইচ্ছে করে, মনে হয় খাই, গোটাই মুখের মধ্যে পুরে দিই! নিদানপক্ষে না পারলে একটু চেটে-চুটে দিই জিভ দিয়ে। এ কিন্তু আমার মনের গোপন ইচ্ছে, বাস্ট করবেন না পিলিজ, মায়ের কানে গেলে মুখও দেখবেন না, বলবে, ‘মেয়েদের পা চাটবি, কুত্তা নাকি?’ কী করি বলুন, দেখে ওরকমেরই একটা ভাব আসে মনে। মানুষ চলাফেরা করলে তো পায়ে ময়লা লাগবেই, কিন্তু যান তো, ওদের পা স্ক্যান করেও যদি এক ফোঁটা ময়লা বের করতে পারেন তো আমার নামে কুত্তা পালবেন। এতটুকু ময়লা নেই, সাদা ধবধবে, যেন দু’টো পবিত্র কিছু সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মনে মনে বলি, ‘ফেলো না, ফেলো না সখি ওই পা জমিনে, ফ্যালো যদি ফ্যালো সখি আমার পরানে’। আমার কবিতা, মাঝে মাঝে দু’চার লাইন লেখার বদ স্বভাব আছে। না, না, কবি-টবি নই, গরীবের ঘোড়া রোগ আরকী।

খাঁ-পাড়ার জরিনার পা-ও দেখেছি, পোড়া আলুর মতন রঙ, আঙুলগুলো বেটে বেটে, ফাঁকে ফাঁকে আবার পাকই, মানে চামড়া পচা রোগ। এতকিছুর পর সুন্দর করে গোড়ালির চারপাশে ফাঁটা, সেগুলোও কালো কালো, মানে ময়লা ঢুকে আছে। এমন পা চাটা তো দূরের কথা, মনে হলেও গা-টা ঘিন মেরে ওঠে! আর ওদের পা, আহা, সাতজনম তাক আমি ঐ স্যাম্পল মাথায় করে ঘুরতেও রাজি, কোনো কষ্টই হবে না।

এই যে আমার বাম পাশে যিনি বসে আছেন তিনার পা-ও ঠিক ঐ পদের, আর পরেও আছেন এমন টাইট প্যান্ট যে, ভেতরের মাংস ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে, আর তাকে ঠিকঠাক চেপেচুপে রাখতে জান বেরিয়ে যাচ্ছে প্যান্ট বাবাজির। সাথে আবার পরেছেন তারচেয়েও টাইট গেঞ্জি। পা থেকে সারা শরীরের দিকে তাকালে চোখ আটকে আটকে যাচ্ছে, সুপার-গ্লু টাইপের দৃশ্য, চোখ এমন আটকে যাচ্ছিল যে চাইলেও পারছিলাম না সরাতে। শুভদৃষ্টি হয়ে গেলে মনে যে ভাব আসে সেরকম একটা ভাব বয়ে যাচ্ছিল সমস্ত শরীরে। তাই বলে একনাগাড়েও গিলছিলাম না, পাছে কোন ফাঁকে কে দেখে ফেলে, আর কেলেংকারি হয়ে যাক আরকী। নিজে চুপ করে এইসব দেখুন, কোনো শরম নেই, কিন্তু যেই বুঝেছেন আপনার এই চুপচাপ দর্শন আরেকজনও দেখছেন, মানে আপনারই সমগোত্রীয় কেউ, তখন মনে হয় ধরণী দ্বিধা হও আমি প্রবেশিব।

তাছাড়া একবার বেইজ্জতও হয়েছিলাম। সে ঘটনা মনে করে নিজেকে আর বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চাই না, কেবল জেনে রাখুন পা দেখার অপরাধে, মানে একটু বেশি দেখার হেতু, এ জাতীয় পায়ের কোনো অধিকারিণী আমার গাল পছন্দ করে বসেন। পরে ভেবেছিলাম এত সুন্দর পায়ের অধিকারিণী হয়েও কীভাবে উনি তা পারলেন? আসলে হুমায়ুন আহমেদ ঠিক-ই বলেন, ‘মেয়েরা সব পারে, সব।’ পারে বইকি, আমার চেয়ে বড় সাক্ষ্য কে দেবে আর?

পায়ের কথা মনে হলেই আমার একটা গল্পের কথা মনে পড়ে যায়। লেখক, গল্প, কোনোটারই নাম আজ আর মনে নেই, কেবল এটুকু মনে আছে, নায়ক বাবাজি নায়িকার পায়ের প্রেমে পড়ে যায়। সে এক ভীষণ প্রেম! নায়িকার পা ছাড়া আর কিছুই দেখে না, কেবল পা আর পা। পা নিয়েও যে এতসুন্দর গল্প লেখা যায় সেদিন বুঝেছিলাম। আসলে রমণী যদি সুন্দর হয়, তবে তার যে কোনো অঙ্গ নিয়েই অনায়াসে লেখা যায় পাতার পর পাতা, কারণ যিনি বানিয়েছেন তিনি তেমন জিনিস বহুল পরিমাণেই দিয়েছেন তাদের, তবে সেগুলো আমার কাছে পোশাকের আড়ালে থাকলেই ভালো লাগে, বাইরে নয়। একবার, সেই ছোটবেলা দেখেছিলাম পোশাকহীন এক দৃশ্য, আজও মনে হলে গা ঘিন ঘিন করে ওঠে! তো সেই নায়ক বাবাজির আবার ছিল আমার মতো অবস্থা, মানে হাভাতে টাইপ আরকী। অনেক কষ্টে সে যেদিন তার প্রেমিকার পায়ের জন্য একজোড়া সুদৃশ্য নুপূর বানিয়ে নিয়ে যায়, সেদিন কোনো দুঘর্টনায় নায়িকার দুই পা-ই পুড়ে যায়। আহা, কী ট্রাজেডি বলুন?

পা ভালো লাগে বলে যে আমি কেবল পায়েই আটকে থাকি, মোটেও নয়। বিশেষ করে কোনো সুন্দর রমণী একটু-আধটু বেসামাল হলেই আমি পুরোদমে সামাল হয়ে উঠি। এই যে রমণীটির পা দেখছি, যা তিনি মনের আনন্দে নাচাচ্ছেন, সাথে উরুর নধরগুলো, কোমরও কিছু কিছু, আর সমস্ত শরীরসহ বিশেষ অংশও মৃদু-মন্দ, আর উনি বেসামাল হয়ে গল্প করে চলেছেন, ফলতঃ আমি তখন আর পায়ে না থেকে সামাল হয়ে একটু একটু করে উপরে উঠতে থাকলাম। অবশ্য উনারা যে বে-খেয়ালে বেসমাল হয়েছেন আমি মানতে নারাজ। সজ্ঞানে, বেশ সামলে-সুমলে, ভেবে-চিন্তেই মাঝে মাঝে আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি-কল্পে তিনারা বেসামাল হয়ে পড়েন। তিনারা চান আমরা বাস্তবিক সামাল হই, যেহেতু তারা বেসামাল হয়েছেন, জেনে শুনে, নতুবা অমন পোশাক পরা কেন?

রাস্তায় যান, আর এখনকার উঠতি যুবতীদের ভালো করে খেয়াল করুন, একশটির নিরানব্বটিই ওড়না পরেছে ঠিক-ই কিন্তু বুক বের করা পুরোদমে, আর ওড়নাটা গলা বেয়ে ঝুলে আছে দু’পাশে। কয়েকজন তো আরেকটু বেশি বেসামাল হয়ে ব্রেসিয়ার অব্দি দেখাতে কসুর করেন না। এই যদি হয় ওড়নার ব্যবহার, বুক না ঢেকে পেছনে ঝোলানো, তবে থাক না, কেন আর বাড়তি খরচা, আমরাও সামাল হই, দৃষ্টিশক্তি বাড়–ক। আর যদি বলেন সুন্দর লাগা, আরাম, মানি না। ওর চেয়েও সুন্দর, আরামপ্রদ পোশাক অনেক আছে, যেগুলো পরলে উনাদের আর বেসামাল হতে হবে না, বরং আমাদের মতো জনেরা সামলে যাবেন নিজে নিজেই।

আজকালকার রমণীগণ কেন যে বোঝেন না সাজ-গোজ সবাইকেই মানায় না, মানায় না উগ্র পোশাক, বরং অতি সাধারণ পোষাকেই তারা হয়ে উঠেন আরও মোহনীয়, আকর্ষণীয় ও ঈর্ষণীয়। তাদের উগ্র পোষাক বড়জোর সুতীব্র কাম জাগাতে পারে, কিন্তু কখনই পারে না বিমুগ্ধ নয়নের স্নিগ্ধতা, পবিত্রতা তুলে আনতে, যা কেবল সাদা-মাটা পোষাকের আভাতেই চমৎকারভাবে প্রতীয়মান হতে পারে। বস্তুত, সত্যিকার সুন্দরীদের কোনো সাজেরই প্রয়োজন হয় না, বরং সাজলেই তারা নিজেদের আরও কুৎসিত করে ফেলেন, নিজে নিজেই। এক্ষণে যদি আপনারা আমায় লম্পট টাইপের ভেবে থাকেন তো অন্যায়, ঘোরতর অন্যায়। লম্পট বলুন তো রহিমকে বলুন, যে একটু-আধটু ভীড়-ভাড় পেলেই হস্তকর্ম করে বসেন রমণীদের নিতম্বে অথবা বক্ষে, আর মনের সুখে কেলিকেলি টাইপ হেসে দাঁত বের করে থাকে আমারই সামনে। কী করি, পেটাব, বলে বসবে, ‘শালা শহিদও তো কাল মেরেছে, যা ওকেও পেটা গিয়ে।’ ক’জনকে আমি একা পেটাব, ওদেরও তো দু’খান হাত আছে, নয় কি?

কিংবা জিসানকে বলুন, যে আরেক ধাপ এগিয়ে। গেলবার ঈদ মার্কেটে, প্রচন্ড ভীড়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিল আস্ত আলপিন কোনো এক ভয়ানক টাইপের সুন্দরী রমণীর নিতম্বে, আবার এসে আমাকেই শুনিয়েছিল গর্ব সহকারে, ‘দিয়ে এলাম পুরোটাই, শালী কখন থেকে দোলাচ্ছে, সোজা করে হাঁটতে জানো না সোহাগী? এবার দোলাও যত্ত পারো!’ সে এক ভীষণ লজ্জাকর পরিস্থিতি! মার্কেটের এত লোকের মধ্যে মেয়েটির নিতম্বে লাল রক্ত, তার উপর সাদা ড্রেস। সেদিনের পর থেকে এ যাবৎ ওর সাথে কথা বলিনি, মুখও দেখিনি, সে ইচ্ছেও নেই বাকি জীবনে। নিচে নামো, তাই বলে এতো? মা-বোন তো সবারই আছে, তাই বলে এ কোন বর্বরতা?

না, আমি ওসব কোনদিনই করিনি, আমার দ্বারা এহেন নীচকর্ম কোনোদিনই সম্ভব নয়। আমি দর্শক, দেখি কেবল। ভালো জিনিস কে না দেখে বলুন? তাই বলে লম্পট বলতে পারেন না? এই যে পা নাচানেওয়ালীর সামনের জন খিলখিল করে হেসে উঠল, আমি কী তার দাঁতে আটকে থাকলাম না বেশ কিছুক্ষণ? অমন শুভ্র দাঁতে জনাব কেউ যদি আমার কলিজাখানাও কেটে টুকরো টুকরো করতে চায়, রাজি সানন্দে। অমন দাঁত দেখলেও মন ভরে যায়, হাসির কথা না হয় বাদই দিলাম, কেননা তার ইফেক্ট কল্পনা করাও অসাধ্য। এ তো আর খা-পাড়ার জরিনার দাঁত নয়, যে হাসলেই হলদে হলদে দাঁত বেরিয়ে পড়বে, আর গা টা ঘিন ঘিন করে উঠবে হলুদের আভায়!

সবার হাতে হাতে বই, আমার হাত খালি, ভাবলাম, না পড়ি, দুটো অন্তত এনে ধরে রাখি হাতে, নতুবা বেকুব বেকুব আর খারাপ দেখায়। ওমা বই নিতে গিয়ে আরেক হ্যাপা! সব ইংরেজি বই আর কী কী নাম সব একেকটার। অনেক বেছে বেছে জেন অস্টেন-এর একটা কবিতার বই নিয়ে বসলাম। শুরুতেই দেখি লেখিকা পরিচিতি। কী যে ছাই সব লিখেছে, উনি মূলত গল্পকার, স্যাটায়ার, ইরোনি, হিউমার এসব শব্দ, বাপরে বাপ! আপনারা তো এরই মধ্যে দেখেছেন আমার ইংরেজির পাওয়ার। এ জাতীয় ইংরেজি আমার ধাতে কুলোয় না, দু’চারখান দাঁত যা আছে তাও যাবে। আমার দৌড় আপেল, বল, আই এ্যাম গোয়িং, ইটিং, স্লিপিং ঐ পর্যন্তই। রেখে দিলাম ভয়ে।

এরই মাঝে একজন লোক এসে বলে গেল, ‘আপনারা কে কে এসেছেন সেমিনারের জন্য?’ যাক বাংলাতেই বলেছে, না হলে বুঝতেই পারতাম না হয়ত, পা আর দাঁতের ইফেক্ট একটু বেশি হয়েছিল। আমি প্রেজেন্ট দেয়ার মত হাত তুললাম, দেখি আর কেউ তোলেনি আমি ছাড়া, বেকুবি কাজ-কারবার! তাড়াতাড়ি নামিয়ে নিয়ে হাঁটা দিলাম দেখিয়ে দেয়া হলরুমের দিকে, যেখানে মিলাদ-মাহফিল, না মানে সেমিনার হবে।
গিয়েই দেখি সেখানেও বসে আছেন আরেক রমণী। সুন্দরী না হলেও সুন্দরীই মালুম হল। আমাকে জিঞ্জেস করল সেমিনারে কী না? আমি মাথা ঝুকিয়ে এগিয়ে গেলে বসতে বলল তার সামনের চেয়ারে। বসলাম বাধ্যানুগতের মত। বিশ্বাস করুন, রমণী যখন কথা শুরু করল কানে যেন গরম লাভা পড়তে লাগল। চেহারা দেখে মনে করেছিলাম বাঙালি, কারণ আমাদের মার্কাটা খুব বেশি করে চেনা যায় কী না, কিন্তু এ কী, এ যে বাংলার ব-ও জানে না, তাও আবার একটু থেমে থুমে, সোজাসাপ্টা বললে, দু’একটা শব্দ হলেও ধরতে পারতাম, কিন্তু যে স্পীড আর স্টাইলড প্রোনাউনসিয়েশনে ইংরেজি শুরু করেছে, তাতে আমার বাপ-দাদার আমলেও কেউ যে আছে বা ছিল তা বোঝার, বিশ্বাস হয় না! মাগো মা ডেকে বুঝে যাবার ভান করতে লাগলাম, আর মাথাটা নাড়িয়ে যেতে থাকলাম সবই বুঝছি ভাবে। একটা বই এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘হুইচ ওয়ান ইউ ওয়ান্টেড টু স্টাডি’, মানে কোন বিষয়? মনে মনে বললাম, কোন শালা পড়তে এসেছে, মাজব তো থালা, চাই ভিসা, আর যদি সে উছিলায় লেগে যায় হাজার পাউন্ড। কিন্তু কিছু তো বলতেই হবে, তাই খুঁজে খুঁজে দেখালাম কম্পিউটার সাইন্স।

উনি বইটির আরেকটি পাতা দেখিয়ে আমায় পড়তে দিলেন, কী বিপদ বলুন তো? ও টাইপের ইংরেজি আমার সাধ্যে কুলোবে না। বিএসসি পাস করেছি টুকে, বিদ্যে এগোয়নি তেমন, তারপরও পড়ার ভান করে কিছুক্ষণ ওপর থেকে নিচে চোখ বুলিয়ে অনেক কষ্টে গোটা চারেক শব্দ জোড়া দিয়ে বললাম, ‘টিউশন অ্যান্ড অ্যডিমিশন ফি?’

- ইট উইল কষ্ট অ্যারাউন্ড এইট থাউজেন্ড পাউন্ড। এমোঙ্গ দেম ইউ হ্যাভ টু ডাউনপেমেন্ট দু থাউজেন্ড পাউন্ড অ্যাজ অ্যাডমিশন ফি, অ্যান্ড ওয়ান থাউজেন্ড স্টাইপেন্ড উইল বি ডিডাকটেড ফ্রম দি টোটাল কস্ট। সো ইট কামস আফটার ডিডাকসন অব স্টাইপেন্ড সেভেন থাউজেন্ড পাউন্ড অল টুগেদার।

না, এবার বুঝেছি, ভালো করেই বুঝেছি। টাকা পয়সার কথা আমি বেশ ভালই বুঝি, তা সে যে ভাষাতেই বলুক, আর তা যদি হয় দেবার, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। শোনার সাথেই সাথেই মনে হল কাছে-পিঠে কোথাও বাজ পড়ল। ছোট ভাইটা পাশে থাকলে বলতাম, ‘ভাই একটু ক্যালকুলেটরে চাপ-চুপ মেরে দেখ না কত আসে?’ একহাজার পাউন্ডের হিসাব করতে পারিনি মুখে মুখে, আর সাত হাজার পাউন্ড! মাথাটা ঝিম মেরে গেল, মনে হল পড়ে যেতে পারি! একহাজার দেবে ঠিকি, মানে কথা ঠিক আছে, কিন্তু আমাকেও দিতে হবে আরও সাত। সাত দাও এক নাও, বড় সোজা হিসেব। টাকা গাছের ফল পেয়েছ, চাইলেই মিলবে? হালিমের কথা মনে পড়ে গেল, ‘অত লালি আধ সের না’, তা তো নয়-ই, এক সের কিংবা বেশিই হবে।

কষ্টে-সৃষ্টে কোনোমতে শেষ ইংরেজি থ্যাংক ইউ কী ভি বলে চলে এলাম। বাইরে এসে দেখি, ওমা বৃষ্টি শুরু, বিশ্বাস হচ্ছিল না! এই না চকচকে আকাশ দেখে গেলাম, তার মানে বাজ হয়ত পড়েছিল। তখনও ভাবছিলাম আট হাজার পাউন্ড, এক হাজার ডিসকাউন্ট, বাদ-সাদ দিয়ে সাত হাজার। সাত হাজারে বাংলাদেশি কত টাকা? একপাউন্ড সমান কম করে হলেও এই বাজারে ১৩০ টাকা। তাহলে সাত হাজার পাউন্ড সমান? না পরিনি। একদিকে হিসেব মেলাতে না পারা, তার উপর আবার হঠাৎ বৃষ্টি। ভিজতে ভিজতেই উঠে গেলাম দু’নম্বর বাসে। বাসে উঠেই গা টা গুলিয়ে উঠল!

একটানা রোদের পর হঠাৎ বৃষ্টি হলে এক ধরনের ভ্যাপসা গরম লাগে, বড় অস্বস্তিকর এ গরম, সহ্য হয় না। তখনও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল একহাজার বনাম সাত হাজার পাউন্ড। হঠাৎ দেখি বাসের মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয়েছে ফ্যান চালানো নিয়ে। সে কী চিল্লা-চিল্লি! ‘অই এ ফ্যান ছাড়, অই এক নম্বরটা চালা, ফ্যান নষ্ট, তাইলে সবগুলা বন্ধ কর, টাকা নেবার বেলা তো কম নেস না, চালা বলছি!’ পাশে যে লোকটা বসেছিল তার ভেজা জামা আমার গায়ের সাথে ঠেকে সে আরেক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! না পারি বলতে সরে বসতে, না পারি নিজে সরে বসতে, জায়গা কম লাগালাগি হবেই হবে। বাম পাশের লোকাটা এত জোরে জোরে চিল্লিয়ে কথা কাটাকাটি করছে হেলপারের সাথে যে, কানের পর্দা এই ফাটে তো সেই ফাটে!

বৃষ্টিতে সপসপে হয়ে ভিজে সামনের দিকে দু’জন মোট-সোটা থলথলে টাইপের রমণী উঠেছেন, সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, একজন পিছন ফিরে আরেকজন একটু ক্রস হয়ে। নিতম্ব ও বুকে ভেজা কাপড় সেঁটে বসে আকার খুব স্পষ্ট করে তুলেছে! সবার চোখ গিয়ে আটকে আছে ভেজা বুক আর নিতম্বে, গিলছে গোগ্রাসে! চোখটা নামিয়ে নিলাম, ভেতরটা কেমন জানি গুমরে উঠল! পেছনের এক লোক সামনের একজন বয়স্ক লোককে তুমি করেই বলে ফেলল, ‘এ্যাই, জানালাটা একটু টেনে দাও না, বাতাস আসবে।’

মেজাজটা এবার খিচড়ে গেল, গাল বরাবর একটা লাগাব বলে পেছন ঘুরতেই কারও মুখের পচা দুর্গন্ধ নাকে এসে লাগতেই বমি চলে এলো গলার কাছে, কেবল উগলে দিতে যা বাকি! গরম, চিল্লা-চিল্লি, গায়ের সাথে সেটে থাকা অন্যের ভেজা জামা, নারীর ভেজা শরীরের দিকে লালায়িত দৃষ্টি, মুখের দুর্গন্ধ ক্রমে বাড়তে বাড়তে এমন এক নারকীয় পরিস্থিতি তৈরী করে ফেলল যে, সবাইকে ফেঁড়ে-ফুঁড়ে নেমে পড়লাম বৃষ্টিতে বিচ রাস্তায়। কোথা থেকে খুব শীতল বাতাস এসে গায়ে লেগে সমস্ত শরীর, মন-প্রাণ জুড়িয়ে দিল! নিমিষেই ভুলে গেলাম এক-সাতের হিসেব, ভেজা জামা, রমণীর শরীর, লালায়িত দৃষ্টি, হানাহানি, ঝগড়া, মুখের দুর্গন্ধ, কেবল একটা প্রশান্ত ভাব ও অদ্ভুত রকমের ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকলাম, আর আনমনে নিজেকে বললাম, ‘আরেকবার ট্রাই করা যাক, কেমন?’


অরণ্য
ঢাকা, বাংলাদেশ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×