somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাই মানুষ, ফেলানী ও শিশিরঃ সাত ভাই চম্পা স্কোয়াড

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাই মানুষ, ফেলানী ও শিশিরঃ সাত ভাই চম্পা স্কোয়াড
চার ঘণ্টা কাঁটাতারের উপর ঝুলে আছে। গুলিটা লাগার সাথে সাথে তার জান চলে যায়নি। তার বাবা তার ঝুলন্ত দেহের দিকে তাকিয়ে আহাজারি করছে। তার গায়ের শাল, সেলওয়ার-কামিজ, পাশে মই, সে ঝুলে আছে, কুয়াশা-কাবিল পরিবেশ। তার জান যেতে দেরী হচ্ছে। সে তার চোখ দিয়ে জরিপ করছে সীমান্ত। নো ম্যানস ল্যান্ড-এ এক “নাই মানুষ”।বুলেট তার জান কবজ় করতে পারেনি। তার বুকে এক সমুদ্র পিয়াস। তার মুখ থেকে গোঙানির মত পানি পানি শব্দ বেরুচ্ছে। কে তাকে পানি দেবে? হন্তারক, খুনীরা দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে ভারতের তামাশার উচিৎ জবার দেবার জন্য যে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রস্ততি থাকা দরকার, সেটি বাংলাদেশে হয়ে উঠবার জন্য যা যা করা দরকার সেটি শাসকগোষ্ঠির এজেন্ডায় নাই।

বিডিআর ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সামরিক শক্তির মধ্যকার যে সকল নৈতিক ও আত্মিক শক্তি আত্মস্থকৃত অবস্থায় সৈনিকের বুকে সুরক্ষিত ছিলো, সেখানে আঘাত করা হয়েছে। এ আঘাত সইবার মত নয়। সেনাবাহিনীকে উৎপাদনশীল না বানিয়ে ব্যবসায়ী বানানো হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর আত্মশক্তি ভঙ্গুর হলে, চিড় ধরলে সার্বভৌমত্বের রাজনৈতিক অর্থ থাকে না। যে কারণে সামরিক বাহিনী ছাড়া সত্যিকারের রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না । একসময় বলা হতো,উৎপাদনবিচ্ছিন্ন স্থায়ী সশস্ত্র বাহিনীর বিলোপ সাধনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত। আমাদের গ্যারিসন কেন্দ্রিক সেনাবাহিনীকে জনগণের সেনাবাহিনীতে রূপান্তরের যে ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা সে সময় সামরিক বাহিনীর মধ্যে অনুভূত হচ্ছিল,তার রাজনৈতিক ভাষা নানাভাবে তৈরি হয়েছে। কর্ণেল তাহেরের এ সংক্রান্ত চিন্তা সবচে’ বেশী আলোড়ন তৈরি করেছিলো।

আমরা আমাদের সীমান্তে কোন দন্ডধারী লাঠিয়াল দেখতে চাই না। বন্দুকের স্বয়ংক্রিয় সক্রিয়তায়, জনগণের জান-মাল-ইজ্জত ও বাংলাদেশের সম্পদ, সম্পত্তি ও প্রকৃতির পরম বন্ধু হিসেবে এক মর্যাদাবান, মাথা-উঁচু সৈনিকের হুংকার দেখতে চাই। লাঠি থাকবে জনগণের হাতে। কূড়িগ্রাম সহ সীমান্তের অনেক অঞ্চলেই সে-ই বৃটিশ আমল থেকেই বাংলার চিরায়ত লাঠি খেলাকে কেন্দ্র করে অনেক ক্লাব গড়ে উঠেছে। অতএব, ঘোর অমানিশায় লাঠি ও লণ্ঠন হাতে বাংলার জনগণ বেরুবে, সে-ই নিয়ে চিন্তা নাই। ফেলানী আমাদের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তরুণরা সংগঠিত হচ্ছে। ফেলানীর ঘটনাটিকে “ একটি কিংবা আরেকটি” অনাকাংখিত মৃত্যু হিসেবে স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার কোন কারণ নাই।

কারণ, এই মৃত্যু, অনন্তপুর সীমান্তে তার অনন্ত যাত্রার প্রতিটি মুহুর্ত আমাদেরকে গত চল্লিশ বছরের সকল মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়, লাশ ফেরত আনাই বিজিবি’র কাজ নয়। লাশের সামরিক সুরুতহাল, ঘটনার রাজনৈতিক মর্ম অনুধাবন ও সামরিক কর্তব্য স্থির করাও তাদের কাজ। আমাদের সেনাবাহিনী পাকিস্তানী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর তুলনায় অনেক সভ্য, অনেক মানবদরদী। আজ পর্যন্ত আমাদের সীমান্ত রক্ষীরা ভারতীয় কোন নাগরিককে হত্যা করেছে আমার জানা নাই।


কাটাতারের উপর ফেলানীর চার ঘন্টা জীবন নিয়ে এক মহাকাব্য রচিত হতে পারে। ফেলানী ইতিমধ্যেই শিশিরের সাথে সখ্যতা পাতিয়েছে। শিশির ফোঁটা কণায় কণায় তার তৃষ্ণাকাতর ঠোঁটে জীবনের সর্বশেষ আস্বাদনের কারণ হয়ে ঝরছিল। শ্রমজীবিরাই “অবৈধ” কাটাতারের বেড়া “ অবৈধভাবে” পাড়ই দেয়। ভারত কী বাংলাদেশ কোন রাষ্ট্রই তাদের ঠাঁই নাই। মনে হয় যেন তারা কোন রাষ্ট্রের নয়, তারা নো ম্যান্স ল্যান্ডের “নাই মানুষ”।

বাংলাদেশের সরকার ফেলানীদেরকে বাংলাদেশের ‘ফ্যালনা” নাগরিক মনে করে বোধ হয়। ফেলানী নামটি আমাদেরকে বাংলাদেশের কোটি কোটি সীমান্ত অধিবাসীদের সাথে এই ‘মাকুন্দা মার্কা’ বাঁজা রাষ্ট্রের সম্পর্কেরই নামপ্রতিক, ন্যামসেক। অতএব, ফেলানীর মৃত্যু নিয়ে জাগ্রত তরুণরা এই বার্তা আমাদের কাছে পাঠাচ্ছে যে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার আয়তনে –ওজনে কমে গেলেও, এখনো লেজে মুন্ডে আড়মোড়া ভাঙলে বিরাট। আমরা বাঘের মত সাহস নিয়ে দেশ পাহারা দেই। এই তরুণদের ক্ষোভের কারণ তাদের বোন ফেলানীকে ওরা জল দেয়নি। শিশির দিয়েছে। তাদের বোন ফেলানীরা দেহ কাটা হয়েছে। যারা খুন করেছে, তারাই পোস্ট মর্টেম করছে জানতে মৃত্যুর কারণ। কী আশ্চর্য মশকরা! ফেলানী ও তার পরিবারকে লাশ পেতে ত্রিশ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। চারপাশে তার ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখছে দুই দেশের অসংখ্য মানুষ।

আমাদের বোনের যে তণুমন স্বামীর সোহাগের জন্য প্রস্তুত ও পরিণত হয়ে উঠছিল, যে বিয়ের সাজনে ফেলানী আর কয়দিন পরেই তার হাড়ভাংগা পরিশ্রমের ফলে পেশী ও কোষের দৃঢ়তা সাজনে ঢাকা পড়ে ক্ষণিকের রূপসী হয়ে উঠতো, তাকে তোমারা হত্যা করেছো। তারপর চারঘন্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছো।

সে যে মই বেয়ে তার বাড়ি বাংলাদেশে না এসে অনন্তপুর যাত্রা করবে, তা সে ঘুণাক্ষরেও আগে জানত না। ছোটবেলার কুৎ কুৎ খেলার কথা, লাফ দিয়ে বাধা অতিক্রম করার সকল খেলা তার মনে পড়ছে। বস্ত্র যদি আটকে না যেতো, তা’হলেও কী ফেলানী রক্ষা পেতো। তার দিকে সই করে বন্ধুক তাক করাই ছিলো।

পনের বছেরের কিশোরী ভয়ে চিৎকার দিয়েছিলো। ভারত বাংলাদেশীদের কোন চিৎকার শুনতে চায় না। বিএসএফ গুলি করে দিলো। ফেলানী শহীদ হলেন। আমাদের বোনের বাসরস্বপন নিভে যাচ্ছে। তার চোখ চারপাশে মানুষ খুঁজছে। আস্তে আস্তে বিলীয়মান মানুষের মুখ। বুকের তৃষ্ণার কথা জেনে গেছে শিশির। ভারত-বাংলাদেশের তথাকথিত বন্ধুত্বের সার্কাস মঞ্চে ফেলানী আমাদের সমস্ত বিবেচনাবোধের প্রতি ( ন্যায় দূরে থাক) কটাক্ষ করে এ্যাক্রোবেটিক স্টাইলে ঝুলে আছে। যেন শিকারী পাখি শিকার করার পর দেখাচ্ছে যে, কত বড়ো পাখী।

এই অন্যায় আর সহ্য করা যায় না। কেউ প্রতিবাদ পর্যন্ত করল না। পরররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কেউ না। যা কিছু কথা রাষ্ট্রের তরফে কেউ কেউ বলল, তাও ভাল করে শোনা যায় না, মিন মিনে। এখন একজন ( একটি সংগঠন ) হাইকোর্টে রিট করেছে। যাদের এই ঘটনায় যে দায়িত্ব ছিলো, তা তারা কেন পালনে ব্যর্থ, সেটার কারণ তালাশ ও তলব। দেখা যাক কী হয়।

তবে ছবিগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে। এই শীতে আগুন দরকার। দাবানল হউক, জুলে উঠতে হবে সবখানে। কারণ, ভেতরে এতো আগুন, এতো জ্বালা। এই যন্ত্রণার রাজনৈতিক দাবানলে এই শীত দূর হয়ে যাক। শ্রমজীবিদের সঞ্চিত পেশীর শেষ উত্তাপ উদাম গায়ে লাগুক। বোনের জন্য সারা দেশে গড়ে উঠুক সাত ভাই চম্পা স্কোয়াড। এই স্কোয়াড খামোশ, খবরদার উচ্চারণ করবে। আজ পর্যন্ত যে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তাদের জন্য ‘ নয়া কবর’ নামে নাটক লিখবে। শহীদ মুনীর চৌধূরী আমাদেরকে প্রতিবাদের ভাষা শিখিয়ে গেছেন।

আপদে –বিপদে যে নজরুল আমাদের সদা পাশে আছেন তার পদ্য হয়ে উঠবে আমাদের প্রেরণা। আর আমাদের বীর সৈনিকেরা বার বার পড়বে রক্তাক্ত প্রান্তর। সবাই মিলে রচনা করবো নতুন এক রক্তাক্ত প্রান্তরের গল্প। ফেলানী এই রক্তাক্ত প্রান্তরে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান দেখিয়ে দিয়েছে। ভালো করে তার ঝুলন্ত অবস্থার ছবির দিকে তাকান। আপনি দেখতে পাবেন, ফেলানি “ আন্ধা বাদুড়ের” এই আমলা-কামলার রাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিতময় এক অট্টহাস্য ।

দিল্লী ও ঢাকার সম্পর্ক এখন বাংলাদেশের ভুমি ও বাজার দখল করে ভারতীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য একেবারে রসালো কূটুম্বিতায় ভরপুর। যন্তর মন্তর রোডের সাউথ ব্লকের আমলাদের খায়েশ ওখান থেকেই বাংলা শাসন করা। বিডিআর ধ্বংসের সেই সব মুহুর্তে ভারতীয় দূতাবাসের ভূমিকা দেখলেই বোঝা যায়। ভারতের পরররাষ্ট্র নীতি সমীক্ষা করে যে সব প্রভাবশালী জার্নাল সেগুলো পড়লেই বোঝা যায় ডিক চেনিদের নিউকন (নব্য রক্ষণশীল) প্রকল্পের পাশাপাশি ভারতেও ইসলামের ভেতর কাল্পনিক জঙ্গিবাদ ঢুকিয়ে আরেকটা সম্প্রসারণবাদী সামরিক ও রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার খায়েশের তাত্ত্বিক ভিত্তি কী করে ভারতীয় নীতি-নির্ধারক ও ধুতি পড়া ভোলাভালা বুদ্ধিজীবিরা তৈরি করছেন। ইতিহাসে অন্য রাষ্ট্রগুলোকে ( বাংলাদেশকে) কালি পুঁজার বলি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বাংলাদেশকে ভারতের সহ্য হয় না। একমাত্র দেশে যেখানে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। যে দেশের মানুষ অবলীলায় মাতৃভূমির জন্য জান দিতে পারে। যেখানে প্রতিটি গ্রামে আছে শহীদের ঘর ( সকল শহীদ ১৯৭১ সালের আগেকার মুক্তিসংগ্রাম, বাম আন্দোলন, তেভাগা, টংকা, নেত্রকোণার পাগলপন্থি পাগলা টিপু ও তার মা, সকল গণভ্যুত্থান ও তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সকল শহীদ)।

এটি ফেলানীর জন্য আর্তনাদের একটি রাজনৈতিক ভূমিকা। সাত ভাই চম্পা স্কোয়াড আছে, ফেলানী, বোন আমার তোমারই জন্য। সারা দেশে মাতম উঠেছে। বিপ্লবীরা আবার জেগে উঠছে। সাত ভাই চম্পা স্কোয়াডের সকল বিপ্লবীরা আজ বিনি সুতার মালার মত গ্রথিত হচ্ছে প্রতিরোধ্মুখরতায়।


বার বার আমাদেরকে রক্তাক্ত প্রান্তরে যেতে হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বশেষ এই রক্তাক্ত প্রান্তরে বাংলাদেশের মানুষ তাদের বিপুল সঙ্ঘশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বো। ফেলানী, তুমি এক নতুন রাজনীতির দিকে আমাদের মুখ ফেরালে। এই রাজনীতি ভাবে-বোধে মানুষের রাজনীতি। এবাদতে, দোয়ায় আর দিব্যজ্ঞানে এই রাজনীতি নতুন মিছিলে সব তরতাজা নতুন মুখ জড়ো করবে। ভারতের আধিপত্যের বিপরীতে এই অঞ্চলের মানুষের ( সকল জাতিগোষ্ঠির,পূর্বভারতের সকল সংগ্রামী জনগণের) মুক্তির বারতা হয়ে উঠবে। সংগ্রামের ইতিহাসের বাইরে কোন পররাষ্ট্রনীতি নাই। আমরা যতো পুর্বে যাবো, আমাদের সামরিক মানচিত্রে নতুন ফ্রন্ট খুলতে পারব। ভারত তার সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সংস্কার করছে। একটি স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড তৈরি করছে। জয়পুরে তার সদর দপ্তর হবে। মাঊণ্টেন স্ট্রাইক ফোর্স তৈরি করছে। আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য স্ট্র্যাটেজিক সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছে।


আমাদের সামরিক বাহিনী যখন ভারতীয় সীমান্তের মানচিত্রে পড়ে তা কেবল ভূগোল জ্ঞানে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। আমাদের দরকার খুবই শক্তিশালী স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড স্ট্রাকচার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রিভার ইউনিট ও পর্বত ইঊনিট ( যার নাম হতে পারে কান্তার গিরি, দুর্বার পারাপার) করা দরকার। শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সারা দেশের নদী দখল থেকে রক্ষা করতে “ রিভার ইউনিট” তৎপর থাকবে। সামরিক কমিটমেন্ট নিয়ে হাইড্রোলোজিস্ট, হাইড্রোজিওলজিস্ট, মরফোলজিস্টরা কাজ করবে। আস্তে আস্তে আমাদের সীমান্ত বেয়ে নেনে আসা নদী প্রবাহের উপর ( তিরিশ চল্লিশটা বিশাল বাধ) নিয়ে সামরিক কায়দায়, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করবে। কারণ, ওগুলো জলপারমাণবিক বোমা।

ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য আমাদের প্রকৃতি ও ভূখন্ড রক্ষা করা দরকার। এর সাথে সম্পর্কিত অনেক বিষয় সামরিক ইস্যু হয়ে উঠছে। দুধকুমার, রুপকুমার, তিস্তায় আমাদের সেনাবাহিনীর রিভার ইউনিটের উপস্থিতি দরকার। ওটা ফেলানীর এলাকা। ফেলানী তার মরণের সময় এক ফোঁটা জল পায়নি, শিশিরে ভিজিয়েছিল ঠোঁট। বাংলাদেশের মানুষও আগামী দিনে জল পাবে না।

ফেলানীকে নিয়ে ধীরে ধীরে একটা আন্দোলন দানা বাধছে। সাধারণ তরুণদের ফেলানী হত্যাকান্ড বেশ নাড়া দিয়েছে। আমি এই তরুণদের মধ্যে আগামীদিনের বাংলাদেশের চেহারাটা দেখতে পাচ্ছি। নাগরিকদের রাজনৈতিক হয়ে উঠার এই প্রক্রিয়াকে প্রথমে স্বাগত জানিয়ে রাখি। ফেলানী শহীদান। অনন্তপুর, কূড়িগ্রাম, উত্তরের ঐ জনপদে তারামন বিবি যুদ্ধ করেছিলো। সে-ই খানে, ঐ ভাব-ভাওয়াইরার দেশে নারীর বেদন যেখানে ইতিহাসের রোদন হয়ে সংগীতময়, যেখানে চিরির বন্দর আছে, যেখানে ভাঙন আছে, সে-ই খানে ফেলানী আমাদের সকলকে আজ থেকে সীমান্ত রক্ষি বানিয়ে দিয়ে গেলো, কুনঠে বাহে…… তেভাগার মাঠ থেকে উঠে আসো, আত্রাই থেকে আসো, নওগাঁ থেকে আসো। হায় হায় রব, রোদন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। রোদনে-বিলাপে এক নয়া রাজনীতির জন্ম হচ্ছে। কুনঠে বাহে… কাটা তার দিয়ে চারপাশ ঘিরে ফেলা হচ্ছে, যেন বা বেড় শিকারের প্রস্ততি। পাহাড়ের, সমতলের, চরের,বিশাল পাথার, তার মাঝখানে ঐ যে গ্রাম, একেবারে আসাম-মেঘালয়ের কাছাকাছি সীমান্তের চরবাসী, ছিটমহলের বাসিন্দারা ফেলানীর জন্য সাতভাই চম্পা স্কোয়াডে যোগ দিন। ফেলানীর রুহের ধড়পড়ানি বাংলাদেশের সংগ্রামী রাজনীতির হৃদপিন্ডে অনুভূত। আজ আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে।

আর হল না বাসর ফেলানীর। কিন্তু আমরা যারা ভাইয়েরা আছি, নিজাম উদ্দিন আউলিয়া, খাজা বাবাসহ সকল দরবেশ ও আউলিয়াদের কাছে বিচার দিচ্ছি আর আবেদন শত শত ফেলানীর জান রক্ষা করো তোমরা। ভারতে ইসলাম যে স্বরূপে বিকশিত আর বাংলাদেশে তার মর্মের যে সর্বোচ্চ বিকাশ সেটা দেখে ভারতীয়রা বোধ হয় চিন্তিত। যতো বলো জঙ্গিবাদ, তা তো বাংলাদেশে দেখাতে পারবে না।

বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির একটা ঐতিহ্য আছে। জঙ্গী খোঁজার জন্য তো পাকিস্তানে যেতে হবে। আমাদের সরকারও মার্কিনীদের কাছ থেকে তালিম নিয়ে, তলে তলে ও তালে তালে ভারতের সাথে একজোট হয়ে আমাদের ইসলামী রাজনীতির ঐতিহ্যমন্ডিত এই দেশে কয়েকদিন পর পর জঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। সম্প্রতি হিলারী বাংলাদেশের সাথে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে এক সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই মনমোহন- ওবামা বৈঠকে তিন নম্বর এজেন্ডা করা হলো বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ। ভুল বোঝাবুঝি এড়িয়ে চলার জন্য ও বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য বলে রাখি, বাংলাদেশে ইসলামের রাজনৈতিক মর্মের সর্বোচ্চ বিকশত রূপ হল রবুবিয়াতের রাজনীতি। মৌলানা ভাসানীর রাজনৈতিক সিলসিলা। ইসলামী রাজনীতি মানেই জামাত কিংবা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বোঝার কোন কারণ নাই। আওয়ামী ওলামা লীগের রাজনীতিও ইসলামী রাজনীতি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি- এইভাবেও ইসলামের রাজনীতিকে ভাগ-বাটোয়ারা করেন। বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির সকল ধারার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরোধিতা করা। ইসলাম ( জামাত ছাড়া, জামাতের ইরানপন্থী বিপ্লবীরা জামাত ছেড়ে চলে গেছে, এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় গৃহদাহ, ধর্ষণসহ গণহত্যার সাথে যুক্ত) যেহেতু এমনিতেই স্বভাবগতভাবে পুঁজিতন্ত্রের বিরোধী এবং এখন আমেরিকান ও পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে নানা ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে, তাদের মতাদর্শিক ফারাক, মাজহাবের বিভিন্নতা সত্তেও এক কাতারে “ আল্লাহ হু আকবার’ আমেরিকানদের বিরূদ্ধে উচ্চারণ করছে তখন আমাদের উদারনৈতিক তথাকথিত মুক্তমনা, বাম বাম মানুষেরা বেশ ভয় পেয়ে যান। প্রতি শুক্রবারে, ইরাক যুদ্ধের সময়, মুসল্লীরা ( ইসলামী শক্তি) মিছিল বের করলে ( বামরা যে শ্লোগান তাদের ব্যানারে ব্যবহার করে) মিছিল বের করে, তখন কম্যুনিষ্ট থেকে ক্রমহ্রাসমান ( কমে কমে) এক পিক্যুলিয়ার প্রগতিশীলতার সনদধারী বামেরা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকত। ওম্মত ও উম্মার ধারণার সঙ্গ আন্তর্জাতিকতার কোন গুণগত তফাৎ আমি দেখি না। ভারতের ভয়াবহ আচরণ নিয়ে বামদের কোন কথা বলতে দেখি না। এখনকার বামরা ভঙ্গুর, পঁচা জাতীয়তাবাদী রাজনীতির লেজুড়ে পরিণত হয়েছে। ফেলানীর ঘটনায় ইসলামী শক্তিকেও মাঠে দেখা যায় না। বোধ হয় তারা খুব চাপে আছে। জান বাঁচাচ্ছে, আপাতত, জেহাদ থেকে দূরে। তবে ফেলানীর কী হবে! তা-ই তো তরুণরাই ভরসা।


অতএব, সাতভাই চম্পা স্কোয়াড।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×