তিউনিসিয়ার তরুণ চিকিৎসক ও আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড লায়লার ওযালে প্রথম দেখেছিলাম শ্লোগানটি- 'তিউনিসিয়া ফার্স্ট'। তারপর আরও কয়েকজনের ফেসবুক দেয়ালে। স্লোগানটিতে বলা হয়েছে, তিউনিসিয়া-
১. প্রথম আরব দেশ হিসেবে ১৮৪৮ সালে দাসপ্রথা বিলোপ করেছিল।
২. প্রথম আরব দেশ হিসেবে ১৮৬১ সালে সংবিধান প্রণয়ন করেছিল।
৩. প্রথম আরব দেশ হিসেবে ১৯৫৬ সালে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করেছিল।
৪. প্রথম আরব দেশ হিসেবে ১৯৭৩ সালে গর্ভপাতের অধিকার আইনসিদ্ধ করেছিল।
৫. প্রথম আরব দেশ হিসেবে কোনও বিদেশী শক্তির সহায়তা ছাড়াই তার একনায়ককে লাথি মেরে বের করে দিল।
কেবল স্লোগান ছড়ানো নয়, ২৩ বছর ধরে 'প্রতিটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী' প্রেসিডেন্টকে যে গণআন্দোলনের মুখে দেশ থেকে সপরিবারে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলো তার পেছনেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে ফেসবুকসহ অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম। 'সাইবার যুদ্ধ' কীভাবে রাজপথের আন্দোলনে চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছিল সে ব্যাপারে বিবিসি অনলাইন একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এটা ঠিক যে, শ্রমিক ইউনিয়ন ও প্রথাগত রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো কিছুটা ভূমিকা রেখেছে; কিন্তু ইন্টারনেটভিত্তিক নতুন প্রজন্মই ওই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। রাজপথে যারা মিছিল-সমাবেশ, বিক্ষোভ করেছে, সরকারি বাহিনী তাদের ধরপাকড় করেছে, নির্যাতন চালিয়েছে, এমনকি হত্যাও করেছে। কিন্তু যারা ঘরে বা বাইরে কোনো এক কোণে ছোট্ট ল্যাপটপটি নিয়ে দিনরাত ধরে আন্দোলনের ছবি, ভিডিও ফুটেজ, লিফলেট, স্লোগান, ইশতেহার, নির্দেশনা বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছে, তাদের রুখবে কীভাবে?
লায়লা নিজেও ওই দলে ছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেয়ার পর, ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশী চালানোর পর, তিনি এক আত্নীয়ের বাসায় বসে অনলাইনে তৎপর ছিলেন। বিনয়ের সঙ্গে বলি, অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগভিত্তিক সেসব তৎপরতার সঙ্গে প্রকাশ্য রাজপথের রাজনৈতিক আন্দোলনের যোগসূত্র কতটা জোরালো হয়ে উঠতে পারে, বিনয়ের সঙ্গে বলি- আমিও তার নগন্য দর্শক।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, তিউনিসিয়ান তরুণদের পাশাপাশি বিদেশ, বিশেষ করে তিউনিসিয়ার এক সময়ের ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্স ও অন্যান্য আরব দেশ থেকেও অনলাইন একটিভিস্টরা যোগ দিয়েছিল সাইবার যুদ্ধে। ইংরেজি, আরবি, ফরাসিসহ তিউনিসিয়ার নানা আঞ্চলিক ভাষাতেও মুহূর্তের মধ্যে সরকারবিরোধী অডিও-ভিডিও এবং লেখা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। যার পরিণতি 'দীর্ঘ স্থিতিশীল' তিউনিস সরকারের পতন।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও তার সরকারের ব্যাপারে তিউনিসিয়ার ভেতরে-বাইরে সমালোচনা থাকলেও তাদের এত তাড়াতাড়ি পতনের কথা বোধহয় কেউ ভাবেনি। কিন্তু আধুনিক গোকুলে যে কী বিস্তার লাভ করছিল, তা তাদের ধারণাতেই ছিল না। বুঝে বা না বুঝে হোক, গণঅভ্যুত্থানের আগের দিন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোও বোধহয় তিউনিসিয়ার পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেনি। যে কারণে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর যখন রাজধানী তিউনিসে কিছু তরুণ বিক্ষোভ শুরু করে, সংবাদমাধ্যম তার দিকে সামান্যই মনোযোগ দিয়েছে। যারা দিয়েছে, তারাও এটাকে আখ্যা দিয়েছে 'চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন' হিসেবে। কিন্তু নিছক কর্মসংস্থান তো নয়ই, ব্যক্তি একনায়কের বিদায়ও যে বিক্ষোভকারীদের মূল লক্ষ্য নয় তা বোঝা গেছে পরাক্রমশালী প্রেসিডেন্টের করুণ পলায়নের পর।
সাইবার যুদ্ধে তিউনিসিয়ান তরুণদের বিজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ তাদের সংখ্যা। এক কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে ৩৪ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ১৮ শতাংশের বেশি নাগরিক ফেসবুকের সদস্য। বলা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকেও তিউনিসিয়া আরব বিশ্বে প্রথম।
সন্দেহ নেই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর আগেও বিশ্বের নানা দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু তার জের ধরে সরকার পতনের ঘটনাও বোধহয় তিউনিসিয়াতেই প্রথম ঘটল।
সেদিক থেকেও, হ্যাঁ, তিউনিসিয়াই ফার্স্ট।
আলোচিত ব্লগ
অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি
অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?
যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।
ছবি - সংগৃহীত।
ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি
শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?
ছবি সূত্র: গুগল
বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন
বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন