somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরব ডায়েরী -৫

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভাবতেও পারিনি আমার ভিসা রিজেক্টেড হতে পারে। কন্সুলার সাহেবের সাথে দেখা করতে চাইলাম। উনি ছিলেননা বলে দেখা হলোনা। আরো দু’জন শিক্ষককে পেলাম, তাদেরকেও ভিসা দেয়া হয়নি। একজন ছিলেন পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান। উনি বাকহারা ও নিজেকে অপমানিত মনে করছিলেন। উনি কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটির নিউক্লিয়ার & এনার্জি ডিপার্টমেন্টে হেড হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগেও উনি একই ডিপার্টমেন্টে হেড হিসাবে কাজ করেছেন। আবার উনাকে বিশেষ রিকোয়েস্ট করে ডিপার্টমেন্টে যোগ দেবার জন্য রাজী করা হয়েছিল। উনি আক্ষেপের সাথে বললেন, আগেরবার উনাকে এম্বাসেডর ডেকে এনে ভিসা দিয়েছিলো ...

বাংলাদেশ হতে আমরা এবার ৯ জন কিং খালিদ ইনিভার্সিটিতে নিয়োগ পেয়েছিলাম। ৮ জনই ছিল ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের, আমিই একমাত্র বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন ব্যাকগ্রাউন্ড। তাই কারো সাথেই তেমন যোগাযোগ ছিল না। প্রসঙ্গত বলতে হয়, শাকিলা ছুটিতে দেশে চলে এসেছিল। সে সবার সাথে যোগাযোগ করল। ৯ জনের মাঝে আমি, ইশরাত আর সুরাইয়া এ্যাম্বাসিতে এপ্লাই করে ছিলাম, বাকী ৬ জন নাকে তেল দিয়ে আরাম করছিল।

এর মাঝে শাহরিয়ার নামে একজনে সাথে পরিচয় হলো, খুলনা ইউনিভার্সিটির। মাঝে মাঝেই আমাকে ফোন দিত, কি কি করতে হবে তা জানতে। যখন শুনলো আমরা কেউই ভিসা পাইনি, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না – যাবে কি, যাবে না। আমি তাকে ফোনে সাহস যোগাতাম- চলেন চেষ্টা করি, না হলে একটা সুযোগ হারাব। এক সপ্তাহ লাগলো তার সিদ্ধান্ত নিতে। একদিন সে আমার অফিসে এসে ঘুরেও গেল ... আমি কাগজপত্র ঠিক করে দিলাম।

ইশরাতের হয়েছিল আরেক সমস্যা। এ্যাম্বাসি তার কাগজপত্রই হারিয়ে ফেলেছিল ...

... পরেরদিন সকালে আমি আর শাকিলা আবার এ্যাম্বাসি গেলাম কন্সুলার সাহেবের সাথে দেখা করতে। অনেক রিকোয়েস্টের পর দেখা মিলল। আমার সাথে পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যানও ছিলেন। কন্সুলার সাহেব নতুন জয়েন করেছেন, যা বললেন তা হলো- উনার কিছু করার নাই, নতুন ম্যানেজমেন্ট, নতুন রুলস, নতুন পলিসি। একেবারে স্ট্রেইট কথা, আমি দমে গেলাম।
এবার আমার ওয়াইফ তার কিং খালিদ ইনিভার্সিটির অফিসিয়াল কার্ড দেখিয়ে কথা বললো। কন্সুলার সাহেব একটু নরম হলেন, বললেন- ওকে, ইনিভার্সিটি থেকে অফিসিয়াল কাউকে আমার সাথে কথা বলতে বলো।

এ্যাম্বাসি হতে বের হয়েই ইনিভার্সিটির রেজিস্টার সাহেবকে ফোন দিলাম। রমজান মাস... ইনিভার্সিটি ছুটি ছিল। তবে আশা ছিল এডমিনিস্ট্রেসন অফিস খোলা থাকতে পারে ... রেজিস্টার সাহেবকে গর গর করে সব বললাম, কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝলাম উনি ইংলিশ বলতে পারেননা, বুঝেনওনা। উনি “খালাস, খালাস” বলে ফোন রেখে দিল। এখন সৌদি এসে বুঝেছি- “খালাস” শব্দটা ওদের কাছে কতটা প্রিয়। কাজ হোক বা নাহোক, “খালাস” করে দিতে পারলেই তারা বাঁচে।

উপায় না দেখে আমার ডীনের সাথে কথা বললাম, SMS দিলাম, বিভিন্ন ই-মেইলে মেইল করলাম। যত প্রচেষ্টা দরকার, করলাম। মেইলে কাজ হলো, একদিন একটা রিপ্লাই পেলাম- তারা আমার ব্যাপারটা দেখবে। এভাবে কেটে গেল যন্ত্রণাময় আরো ১০টি দিন। অফিস করতাম যন্ত্রের মতো, সবাই জিঙ্গাসা করতো- কবে যাচ্ছি? হেসে হেসে বলতাম, এইতো ১৮ সেপ্ট. জয়নিং।

১০ দিন পর মেইল পেলাম, তারা এ্যাম্বাসিতে কথা বলেছে, আমাকে এ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করতে বলল। পরেরদিন সকালেই এ্যাম্বাসি গেলাম। ভাগ্যক্রমে কন্সুলার সাহেবকে পেয়ে যাই। উনি নিজে কোন প্রকার প্রশ্ন ছাড়াই আমার পাসপোর্ট রেখে পরেরদিন বিকেলে আসতে বললেন...

পরেরদিন বিকেলে অফিস হতে এ্যাম্বাসি যাই... ভিসা সহ পাসপোর্টটি হাতে পেলে বুঝতে পারি সত্যিই আমি ১৮ সেপ্ট. জয়েন করতে পারবো।

মূলত আমার যোগাযোগের কারণে বাকী সবার সমস্যাও দূর হয়ে যায়। কিন্তু আমি, ইশরাত ও শাহরিয়ার ছাড়া আর কেউ আসেনি। বাকী সবাই হবে কি, হবেনা এই চক্রে আর এপ্লাই করেনি। মূলতঃ আমাদের দেশের দূর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারনে আমরা অনেক সুযোগ হারাচ্ছি। ... এ্যাম্বাসি কেন আমাদের সাথে এমন ঝামেলা করলো, তা পরে জানতে পেরেছিলাম। এখানে আর তা শেয়ার করতে চাই না, সৌদি প্রবাসি সবাই বোধয় ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারেন, কিন্তু সেভাবে কি আমরা কাজ করছি? ... আমাদের ভাবমূর্তি কি আমরা ধরে রাখতে পারছি?


... অবশেষে ১৮ সেপ্ট. জয়েন করলাম ... সে আরেক গল্প ... (চলবে)








http://www.aimdhaka.blogspot.com
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:১৫
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×