somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরেকবার-প্রথমাংশ

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাত-সকালে চায়ের কাপ হাতে আমার আচমকা চিৎকারে বাড়ির সবাই প্রায় চমকে উঠলেও, বড় বোনটা ছিল নির্বিকার। ওর মনোভাবের কোনো পরিবর্তন না দেখে, খানিকটা আশাহত হতে হতেও আরেকবার যত্ন সহকারে চোখ বুলিয়ে নিই খবরের পাতায়, আর ১-এর পাশে পর পর সু-শৃঙ্খলভাবে বসে থাকা গোলাকার বৃত্ত তিনটিকে পৃথিবীর বৃহৎ রসোগোল্লা ঠাউরে পুনরায় আহ্লাদিত ও আশান্বিত হলাম, আর সেই সুযোগে প্রাণ বাবাজি আমার তোয়াক্কা না করেই আশার বাতাসে পাল তুলে দিয়ে বইতে লাগল বিলাত মুখে। আগেও একটু-আধটু শুনেছিলাম বৈকি, বিদেশীরা নাকি অনেক ছাত্র-ছাত্রীকেই মাঙনা, মাঙনা পড়ায়, বৃত্তি-ফিত্তিও দেয়। এটাও বুঝি সে রকমেরই কিছু একটা, না হলে একহাজার পাউন্ড, কম কথা? ছোট ভাইটাকে ডাকলাম চিল্লি¬য়ে, বললাম, ‘দেখ দেখি ভাই, তোর আধুনিক গনকযন্ত্রে ১০০০-কে ১৩০ দিয়ে গুন করলে কতগুলো গোল্লা আসে?’

ছোট ভাই হাসল, মানে যা বুঝল বা বোঝাতে চাইল, তার তোয়াক্কা না করেই কান পেতে রইলাম, আর তড়িৎ ও যা বর্ষণ করল, তাতে নির্দ্বিধায় গেয়ে উঠলাম, ‘আমার এই দেহখানি তুলে ধরো..!’ হায় মাবুদ, এ যে মেলা টাকা, বাপের জন্মেও দেখিনি! আজতাক যা করেছি তা গুন অথবা ভাগ, তাও খাতা-কলমে। আমার বিস্ফোরিত চোখ আর খুশিতে মাখো মাখো মুখ দেখে ছোট ভাইটা আরেকবার তার প্রথম হাসিটা প্রসারিত করে খবরের কাগজের ঐ অংশে চোখ বুলিয়ে এই বলে চলে গেল, ‘যা যা, দেখ না, মার একখানা ট্রাই, যদি লাইগা যায়।’ আমি সায় দিয়ে বলি, ঠিক কথা, বলা তো আর যায় না, যদি বলে একটা অদৃশ্য নদী তো থেকেই যায়। একবার ট্রাই মারতে দোষ কোথায়? জীবনে তো অনেক ট্রাই-ই বিফল মারলাম, তবে আরেকটাতে দোষ কোথায়?

খবরের কাগজের বিঞ্জপ্তিটা ছিলো ‘গ্রিনউইচ ইউনিভার্সিটি অব ইউনাইটেড কিংডম’-এ পড়ার সুবাদে ১০০০ পাউন্ডের বৃত্তির ফাটাফাটি অফার। যারা পড়তে ইচ্ছুক সেখানে, তাদের সেমিনারে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তারিখ ও ভেন্যু, ৪ঠা জুন, চট্টগ্রাম বৃটিশ কাউন্সিল।

অনেক শুনেছি এইসব সেমিনার-ফেমিনারের কথা। আশেপাশের অনেক নর-নারীকেই যেতে দেখেছি, শুনেছি তাদের মুখেও, এমনকী অনেকের বিদেশ গমনকালে এয়ারপোর্টে ৫০ টাকায় টিকিট কেটে শুধুমাত্র হাত উঁচিতে একবার বিদায় সম্ভাষণ জানাব বলেও বসে থেকেছি ঘন্টার পর ঘন্টা। কিন্তু ভেতরের ভ্যান্তটা জানা হয়নি বা নিজ গিয়েও কখনও যোগ দিইনি তেমন কোনো সেমিনারে। মনের মধ্যে আশার পায়রা বাকুম বাকুম করতে থাকল! ধন নাই, মান নাই, যা আছে তাও এই গেলো তো, সেই গেলো হালাত, রিক্সার হাতলের অপেক্ষায় থাকা, আর এর মধ্যে যা কিছু অবশিষ্ট আছে, তা হল খান ছ’য়েক মোটা মোটা টাইপের হলদেটে কাগজ। অবশ্য বিশেষ যত্ন-আত্তি করেই সেগুলো রাখা, আর কোনোদিন যেন তাহাদের গায়ে আঁচড়টি না পড়ে, এই মহান ব্রতে প্রতি হলুদ খন্ডে ৩০টাকা দরে সেঁটে দিয়েছি প্লাস্টিক জন্মের মত। রোদ, বৃষ্টি, তেলাপোকা কিংবা উঁই, সেফটি শতভাগ। আমার বুদ্ধিটা যে সত্যিই ভালো এই চরম বিশ্বাস থেকেই সেই পদক্ষেপ নেয়া।

কিন্তু আমার আশার ভরাডুবির প্রথম দুঃসংবাদটা এলো সেই মহান বুদ্ধির ফলেই, মানে ঐ প্লাস্টিক। পরদিন কাগজে দেখলাম লিখেছে, যারা বিদেশে পড়তে যেতে ইচ্ছুক অথচ সার্টিফিকেট লেমিনেটিং করা, তাদের নাকি হাইকমিশন ভিসা দিচ্ছে না, কারণ সার্টিফিকেটের সত্যতা নাকি ঠিকমত যাচাই করা যাচ্ছে না। নকল সার্টিফিকেটে বাজার সয়লাব, কথা সত্য, তাই এই ব্যবস্থাপত্র। যদিও আমারগুলো আসল-ই, এবং আমি পড়তেও যাচ্ছি না। বাইচান্স স্টুডেন্ট ভিসা এক-আধখান পেয়েই যাই, তবে থালা-বাসনই মাজব বলে ঠিক করে রেখেছি, তারপরও বুকটা ছ্যাত করে উঠেছিল! কারণ লেমিনেটিং তো করিয়েছি পার পিস ৩০ টাকা করে, কিন্তু তুলতে নেবে ৩০০, তাও নাকী সার্টিফিকেট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এও কি প্রাণে সয়? জান স্বীকার মাগার একখন্ড হলুদ কাগজের চুল পরিমাণ ইধার-উধার হতে দেব না। শালার মরণ আর কারে কয়? ৩০ টাকার জিনিস তুলতে ৩০০, ঢোলের চেয়ে বাজনাই বেশি। মরার আগে জানলে কোন শালা করে ঐ কুকর্ম, জাহান্নামে যাক সার্টিফিকেট! মাঝে মাঝে যে বুদ্ধিতে মার খাই না তাও নয়, খাই, ভালোভাবেই খাই, তারপরও বুদ্ধি করতে ছাড়ি না।

যা হয় হোক ভেবে সাহস বাঁধলাম, কারণ হলুদ কাগজগুলো তো আর যা তা জিনিস নয়, ঐ যে আমার অন্ধেরযষ্ঠী, কারণ ওতে আমার তিন তিনখান প্রথম শ্রেণীতে পাস দেয়ার ঘোষণা করা আছে। ও না হলে প্রমাণ করব কী দিয়ে? মুখের কথা যতই সত্যি হোক না কেন, কোনো শালাই কান করবে না, মাগার যত মিথ্যাই হোক কাগজ-কলমে থাকলেই হলো, সে মিথ্যাকে ইহকালে কেহই বলিবে না যে তাহা মিথ্যা। শেষ-মেষ মনকে বুঝ দিয়ে ঠিকঠাক করে ফেললাম যাত্রা। দরকারি-অদরকারি সব কাগজ পত্তর ফটোকপি করলাম, আসল ছ’খানও সাথে নিলাম, আরও নিলাম ৩কপি টাইবান্ধা ফুলবাবু টাইপের ফটো, আর বালিশের তলায় রাতে রাখা পেনটুন-জামা পরে রেডি হলাম। বালিশের তলায় মানে একটু ভাঁজ হয়ে গিয়েছিল দু’তিন জাগায়, অনেক আগে ইস্ত্রি করা তো, ট্রাঙ্কে তোলা ছিল তাই এক্সট্রা খানকয়েক ভাঁজ মেরেছে। তাছাড়া কে আবার করবে অত লাফড়া? এই বাজারে ইস্ত্রি করা জামা-কাপড় পরার চেয়ে বিষ খাওয়াও বেশ সস্তা, তাই ঐ বুদ্ধি। বুদ্ধি থাকলে অনেক কিছুই হয় ব্রাদার।

একবার অবশ্য এ বুদ্ধি খাটাতে গিয়েও মার খেয়েছিলাম। সেবার যাব একটা ইন্টারভিউ দিতে, একখান-ই জামা, সকালে ইন্টারভিউ। ইস্ত্রি করাই ছিল, দু’তিন জায়গায় একটু ভাঁজ পড়েছিল দেখে মায়ের কথা না শুনেই বালিশের তলায় দিলাম রাতের বেলা শোবার আগে। মাঝরাত্তিরে দেখি ঘুমের মধ্যে পরীবানু এসে হাজির, কিরে কেটে বলছি, পরনে যদি একখানও সুতো থাকে মাগীর! তারপর কাঁধের কাছে আবার একখান কালো কুঁচকুচে তিল! সকালে দেখি পরীবানু আমার জামাটার হ্যাস্ত-ন্যাস্ত করে গেছে, দুইখান ভাঁজ বুদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে শ’দুয়েক ছাড়িয়ে গেছে। পরীবানুকেও মনে মনে বলিয়াছিলাম, ‘হায় আমার বানু, কেনই বা তুমি আসিলে, আর আসিলেই যদি তবে কেন এমন তরো করিলে? বানু আমার, তোমরা চিরটাকালই কি আমাদিগের সহিত এমন করিবে? (...মাগী)’!

তবে সেটা দৈব-দুঘর্টনা মাত্র, পরীবানু অমন করে না এলে বুদ্ধিতে মার খেতাম না। এবার অবশ্য তাহাদের কেউ আসেননি। আবহাওয়া বেশ খারাপ, চারিদিকে আগুন, তাই বানুদের বুদ্ধি খুলেছে, দীর্ঘ বেকারদের স্বপনে আজকাল তিনারা আসা-যাওয়া করা ছেড়ে দিয়েছেন। ‘না-কাম’, মানে অকর্ম মরদের স্বপনে আসা হলো গিয়ে আপনার গুনাহে কবীরা। সবচে বড় গুণা, মাফ-টাফ কম টাইপের আরকী।

সেমিনার বিষয়ে প্রথম প্রথম আমার মনে একটা খটকা ছিল। যখন শহরে আসি আর প্রথম ঐ জিনিসটার নাম শুনি, তখন কিছুই আঁচ করতে পারিনি। মনে মনে ধরে নিয়েছিলাম, গ্রামে থাকতে আমরা যেমন গ্র্রামের লোকজন একসাথে জড়ো হয়ে মিলাদ-মাহফিল, বিচার-আচার কিংবা শলা-পরামর্শ করতাম, ঐটিকে যদি গ্রাম্য সেমিনার মনে করি তবে এখানেও ঐ রকমেরই কিছু একটা হবে হয়ত, কেবল ফারাক পোশাক-আশাক আর মানুষে। আরও একটা ফারাক হয়ত থাকবে, আমরা করতাম খোলা আকাশের নিচে, আর এরা করে সাজানো-গোছানো সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং-এর ইয়া বড় বড় হল রুমে।

দেড়টা নাগাদ শুরু হওয়ার কথা ছিল সেমিনার, পৌনে একটাতেই বেরিয়ে পড়লাম, পাছে দেরি-টেরি যদি হয়ে যায়, যদি বলে, ‘আপনি তো দেরি করে ফেলেছেন, মানে লেট, ঢোকা যাবে না, চলে যান’, তখন বড় বেইজ্জত বেইজ্জত লাগবে। ঝুঝলেন ভাই, এ বাজারে বাইরে বের হওয়াই দায়, যেই বের হবেন আর যদি হোন আমার মতো, মানে হাভাতে অথবা অকর্মা টাইপের, অমনি হোচট খাবেন। মাঝে মাঝে মনে হয় কোনোদিন রিক্সায় চড়ব না, বলে কিনা চৌমুহিনীর ভাড়া ১৫ টাকা। বাপের জন্মেও শুনিনি! অনেক কষ্টে ১০ টাকায় রফা করে রওনা দিলাম আল্লাহ-বিসমিল্লা বলে, গরীবের আর আছে কী আল্লা ছাড়া?

আকাশ একদম চাকা-চাক ক্লিয়ার, কোথাও এতটুকু মেঘ নেই, ঝলমল করছে সূর্য্যি মামা। বর্ষা-বাদলার দিন তবুও মালুম হচ্ছিল মেঘকন্যা আজকের দিনটা অন্তত বেজার হবেন না অযথা। বেজার হলো গিয়ে আপনার মন খারাপের খাঁটি গাইয়া ভাষা, ও আমি টাংগের সিলিপ হেতু মাঝে মাঝেই হিউজভাবে ইউজ করে ফেলি। কয়লার ময়লা কি ধুলে যায়, পড়েননি ছোটকালে?

আল্লার উছিলায় ভালোই ভালোই আধাঘন্টা আগেই গিয়ে পৌঁছুলাম বৃটিশ কাউন্সিলে। গেটের কাছে যাবার আগে আরেকবার জামাখান ডাইনে-বামে গুজে দিলাম মধ্যে, আমার আবার মধ্যে মানে আপনার ঐ যে ‘ইন’ করা না কী যেন বলে সেটা আরকী, মোটেও ঠিক থাকে না। ভেতর থেকে কে যেন ঠেলে ঠুলে বের করে দেয় বারবার! খাস টাইপের চাষাদের সাথে জামা বাবাজি হরহামেশাই ওরকম আচরণ করে। লুঙ্গি পরা গতর তো, তাই বারবার গুজি, বারবার বের হয়ে আসে। বহুত কষ্টে আজ তাও রেখেছি মধ্যে, অল্প-স্বল্প যা বেরিয়েছিল তাই গুজে-টুজে দিলাম। শুনেছি বিদেশীরা খুব ফিটফাট হয়। ঝকমকে জুতো, চকমকে জামা, গা-গন্ধ করা বাসনা, সরি, মানে হলো গিয়ে খুশবু, তাই নিজেকেও খানিকটা গুছিয়ে নিলাম মধ্যে দিয়ে বালিশের তলার জামাখান টেনেটুনে। বের হবার সময় একবার মনে হয়েছিল আমিও একটু খুশবু-টুসবু মারি, কিন্তু বাড়িতে আতর ছাড়া কিছুই নেই, ঐ মেরে কি বেরুনো যায়, বলুন?

গেটের কাছে গিয়েই বুকটা ধক করে উঠল, হায় আল্লা! তাকিয়ে দেখি সমদ্বিবাহু ত্রিভুুজের মত চেকিং গেট আর আমাকে ঐ বাবাজির পেটের ভেতর দিয়েই যেতে হবে। এই গেটের একটা ভীতি কিন্তু আমার এখনও পরোপুরিই আছে। সে একখান বলার মতো ঘটনা।

বছর দু’য়েক আগে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে ঐরকম একটা গেট দিয়ে ঢুকতে গিয়েই বে-আক্কেল হয়েছিলাম ভীষণ, মান-ইজ্জত নিয়ে সে কী টানাটানি। ব্যাংকে গিয়ে দেখি সবাই ঐ রকম গেটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, আমাকেও যেতে হবে, তাই এক পা দু’পা করে যেই আমি গেট পেরিয়েছি দেখি ঐ গলিটার মাথার লালবাতি জ্বলে উঠেছে আর কেমন যেন শব্দ শুরু করেছে। আমি তো আক্কেলগুড়ুম, ভাবলাম গ্রাম থেকে এসেছি বেটা বোধ হয় টের পেয়েছে। নিশ্চয় শহরের মানুষ ছাড়া কেউ ওদিক দিয়ে যেতে পারবে না। কী কান্ড, এদিক-ওদিক বোকার মত তাকাতেই দেখি ধর ধর করে গোটা পাঁচেক সিকিউরিটিগার্ড চারপাশে এসে হাজির। পাকড়াও, বলে, ‘কি আছে আপনার কাছে, বলুন?’ আমি তো মহা বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে! ভাবছিলাম, না তাহলে গ্রামের মানুষ ভেবে ধরেনি, কিন্তু আমার কাছে আবার কী আছে? কেউ আবার চুপচাপ কিছু রেখে-টেখে দেয়নি তো পকেটে? আমি তো কিছুই আনিনি, দুইটা নেভি সিগারেট বুক পকেটে, বাম পকেটে একটা রুমাল, ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় ছোট খালা দিয়েছিল তাও বছর আটেক আগের কথা, মাঝখানে অনেকখানি ছিঁড়ে গেছে। এছাড়া পেছনের পকেটে মানিব্যাগে খান তিরিশেক টাকা আর ডানদিকের পকেটে একটা গ্যাসলাইট, গত পরশু ফুটপাত থেকে কেনা। চারটাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল, বেশ সস্তা মনে করেই নেয়া। এছাড়া আর কিছুই নেই, কী দেখাব ওদের? ঐসব কি দেখানোর জিনিস হলো, নাকি ছেঁড়া কিছু নিয়ে ব্যাংকে ঢোকা যাবে না কিংবা সিগারেট। না, না তা হবে কী করে, কিছুক্ষণ আগেই তো গাড়ী থেকে নেমে রাজপুত্তুরের মতো একজন সিগারেট টানতে টানতেই ঢুকে গেল। এ আবার কী মসিবত? হে আল্লা কোথায় নিয়ে আনলে এই চাষারে?

কালো একটা ডান্ডা মাথার দিকে গোল, নিয়ে কেউ একজন আমার শরীরের চারপাশে সবখানে ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে দেখতে লাগল, লোকজন দেখি আমার দিকে তাকিয়ে, যেন আমি চিড়িয়াখানায় আনা নতুন স্যাম্পল কিংবা বিচ রাস্তায় ধরা পড়া পকেটমার। বেইজ্জতির একশেষ! হঠাৎ দেখি আমার ডান পকেটের কাছে এসে কালো ডান্ডাটা লাল বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে! বুকের কাছে ধক করে উঠল, হায় কে কী রেখেছে এখানে? আমি তো জানি না! কার হাত থুয়ে কার পা ধরব? ব্যাংকে এসেছি আরেকজনের বেয়ারিং চেকের টাকা তুলতে, শেষে না আবার জেলে ভরে দেয়। আল্লাকে ডাকলাম বাঁচাও, তুমিই মহান, সর্বশক্তিমান, জেল খাটাদের খাতায় নাম তুলিয়ো না, মা আমার হার্টফেল করে মরবে। বারবার নিজেকে গালি দিলাম, আসার সময় কেন একবার চেক করে নিলাম না পকেট? হাট্টা-গাট্টা মতন একজন এগিয়ে এসে বলল, ‘কি আছে পকেটে, দেখান, প্লিজ ?’’

আমি আমতা আমতা করে আল্লা-রসূলের নাম নিয়ে পকেটে হাত চালিয়ে দিলাম আর বেরিয়ে এলো দুটো কয়েন আর গত পরশুর কেনা চারটাকা দামের গ্যাসলাইটার। ওরা হেসে বলল ‘যান আপনি, ধাতব পদার্থ সাথে থাকলে মেশিন ওরকম এলার্ট দেয়।’ মনে মনে বললাম, ‘রাব্বুল আলামিন বাচাইছো, দু’রাকাত নফল নামায পাওনা রইল তোমার’, কিন্তু সাথে সাথে মেজাজটাও গেল খিচড়ে! শালার মেশিন চোর-ছেঁচড় চিনো না, চেন চারটাকা দামের লাইটার! আমি কি ঐ টাইপের, খানকীর পুত, খবিসের বাচ্চা! গাও-গেরামের মানুষ চুরি-চামারি করে না, যারা করে তাদেরই তো সিগনাল না দিয়ে ছেড়ে দাও ধন, আর সাধারণ পাবলিক এলেই জ্বলে ওঠো! আচ্ছা করে গাল লাগালাম, কবে যে ঠিকঠাক চোর-চাট্টা ধরার পারফেক্ট মেশিন আবিস্কার হবে, হলে দুনিয়ার হাল হকিকত কিছুটা হলেও বদলানো যেত।

আজও বুকটা ঢিপ-ঢিপ করে উঠল সেই একই রকমের গেট দেখে, তাছাড়া আজও সেই লাইটারটা সাথেই আছে। কী করি বলুন, সেই অষ্টম শ্রেণীতে বিড়ি দিয়ে শুরু করে অভ্যাস এমন রপ্ত করেছি যে, সাথে লাইটার না থাকলে ভেতরে ভেতরে কে যেন খোঁচায়, আর দোকানে গিয়ে অথবা লোকের কাছে আগুন চাইতেও শরম করে, মনে হয় ওরা যেন পেছনে বলাবলি করে, ‘বাবা বিড়ি খাও আর আগুন নাই। বাতি তো জ্বালাবে কিন্তু আগে সলতে তো লাগাবে, না কী?’ যাক এসেছি যখন তখন না দেখেও যাব না, আর লাইটারও ফেলব না, যা হয় হবে। ন্যাড়া বাবাজি দুবার বেলতলা যায় না, কিন্তু আমার মতন ন্যাড়ার কোন গতি নাই না গিয়ে। আল্লা-বিল্লা করে গলিয়ে দিলাম দেহখানি। না বাবা, মেশিন শব্দ করেনি, মেশিনও তাহলে মাঝে মধ্যে দয়া পরবশ হয়। গলে গেলাম একেবারে ভেতরে। কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা ভেতরে ঢোকার গলি পেরিয়ে সামনের ঘরে। কী সব গেট, ইয়া বড় বড়, আর বেবাক কাচের !

ঢুকেই চোখ কপালে! হায় মাবুদ, এ কোন জায়গায় এলাম? সামনে ডানপাশে অভ্যার্থনা টেবিল। কারা ওরা? এ আবার কোন পদের যুবতী? চামড় তো ফর্সাই, গায়ের রোম অব্দি ফর্সা, আছে কী না মালুম হয় না, ম্যাগনিফাইং গ্লাস লাগবে পরখ করতে। আমার দেখা সেরা ফর্সা মেয়ে ছিল খা’পাড়ার জরিনা। জরিনা সত্যিই দুধে-আলাত টাইপের ফর্সা। গোটা গ্রামে সে একখান-ই পিস, কিন্তু এরা তাহলে কী? আর জরিনার গায়ে সে কী লোম! একবার পা দেখে-তো আমি আঁতকে উঠেছিলাম, আমাকেও ফেল মারিয়ে দেবে, যেন ঘনকালো অরণ্য। অথচ মাথায় পায়ের চারআনাও যদি থাকে। যে জিনিস যেখানে দরকার সেখানে না থেকে বেজাগায়।

বেশিক্ষণ তাকালাম না। একটু দাঁড়িয়ে থেকে, এক পা দুপা করে এগিয়ে গেলাম টেবিলের দিকে, আর মনে মনে ভাবছি বাংলা বলব না ইংরেজি। যদি বাংলা বলি আর আমাদের গ্রামের মেরাজের গল্পের মতন হয় তাহলে, মান-ইজ্জতের সওয়াল।

একদিন আমরা গ্রামের বন্ধুরা সবাই বসে আড্ডা মারছি, হঠাৎ মেরাজ বলে ওঠে, - ‘জানিস আল্লাই বাঁচাছ’!

আমরা সবাই অবাক হয়ে বলি, -কেন রে কী হয়িছ?

-ও কধা আর বুলিস ন্যা, বহুত ভাগ্য ভালো হলে এমুন বিপদ থাকি বাঁচে মানুষ!

আমরা আরও তাজ্জব হয়ে বলি, - কী রে কী হয়িছে বুলবি তো?

-আরে জানিস তো আমি শালার ইংরেজিডা একদম বুলতে পারি না। ভাবি দেখনু আল্লা আমাক যদি ইংল্যান্ডে জনম দিতক, তাহিলে কী হতক অবস্থাডা একবার ভাবি দেখ। ইংরেজি বুলতে না পারার ক্যানে আমাক সবাই মিলি মারিই তাড়া দিতক। বুলতক ইংরেজি জানে না, শালাক মারি তাড়া দে! যাক বাবা বাঁচা গেছ, এ জাগাত জন্মাছুন, না হলে হেরা তাড়া দিলে যাতুক কতি? কী বাচাডাই বাচিছি, তুরাই বুল?

শুনে তো আমাদের হো হো হাসি! এখানেও ভাবছি বৃটিশ কাউন্সিলে এসেছি, আর যদি ইংরেজি বলতে না পারি তাহলে যদি বের করে দেয়? আর বলবই বা কি, জানলে না।

একটু বুদ্ধি খাটালাম, চালাকি করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে কেবল বললাম, ‘এক্সকিউমি!’ আহা কী নয়ন গো, কলিজা চাওয়ামাত্র ফালা ফালা করে আট ফালা করে দিল মাইরি! আমি তারপর খালি বললাম, ‘গ্রীনউইচ ইউনিভার্সিটি সেমিনার?’

জানতাম কাজ হবে, রমণী আমার মুখ খুলেছে। একটু আলতো হাসি হেসে স্বর্গীয় শুভ্র দাঁত বের করে অতীব সরল ইংরেজিতে যাহা বলল তাতে যথাযথ না বুঝলেও এটুকু বুঝলাম, এখনও দেরি আছে সেমিনারের, আমি সানন্দে গিয়ে বসতে পারি লাইব্রেরি রুমে। একটা থ্যাংক ইউ কী আই মেরে হাঁটা দিলাম সামনে পানে, মানে বইঘরে।

তাজ্জবের যেন শেষ নেই! এখানে এসেও সেই একই হালাত, মনে মনে ভাবলাম এ আবার কোন জায়গা? একেক জায়গায় একেক চমক! এরকম জায়গায় আগে কখনও ঢুকেছি বলে মনে করতে পারলাম না। তবে এরকম টাইপের অবাক হয়েছিলাম আরেকবার, এখনও মনে আছে। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে ঢুকেছিলাম। ঢুকে এত বেশি বিস্মিত হয়েছিলাম যে, মনে হয়েছিল আমি নির্ঘাৎ স্বর্গের কোনো অংশে প্রবেশ করেছি। একটা আলাদা গন্ধ ছড়িয়ে ছিল পুরো লাইব্রেরীর বিশাল হল জুড়ে। না, খালি বইয়ের গন্ধ না, জ্ঞানেরও গন্ধ, যেগুলো অক্ষরের আকারে অত-শত বইয়ের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। জ্ঞানের গন্ধের আলাদা একটা জাত আছে, নাকে এলেই বুঝি।

আজ আরেকবার হলাম। ডানে বই, বামে বই, বই আর বই। এরকম জায়গায় এলে মনটাও বই বই হয়ে যায়। ঢুকতেই একপাশে ফুল ফুল বাবু টাইপের কিছু যুবক দেখি কানে মোটা মোটা গোল টাইপের কালো কী যেন লাগিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসে আছে। কোনো শব্দ নেই তারপরও মনযোগ সহকারে তাকিয়ে টিভি দেখছে। আর একটু আগিয়ে দেখি আরও কিছু ফুল বাবুরা দেয়ালে টাঙানো বড় বড় বাঁধানো ছবির মতন কাচ, যা একটা পায়ার ওপর রাখা, তার মধ্যে কী যেন দেখছে। প্রথমে তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছিলাম, এ আবার কোন জিনিস? পরে বুঝেছিলাম ওগুলো কম্পিউটারের টিভি। তাছাড়া হবই বা না কেন? আমি যে ধরনের কম্পিউটার টিভি দেখেছি সেগুলো মোটেও ওরকম নয়। ওগুলো ছিল বড় বড় আর পেছনের দিকে লম্বাটে। এ জাতীয় জিনিস আমার গ্রামের বাড়িতে ছিল আমার ঘরে, মক্কা শরীফের ছবি, ভালো করে মোটা কাঁচে বাধানো। প্রথমে তো আমি তাই মনে করেছিলাম, পরে বুদ্ধি খাটিয়ে বুঝেছিলাম যে, ওগুলো আসলে কম্পিউটারের আধুনিক টিভি।

আর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে কতগুলো ছেলে দেখি ঐ টিভির সামনে বসে থাকা ছেলেদের মত কানে একই রকমের জিনিস লাগিয়ে হাতে একটা সুইচ ধরে সামনে রাখা ক্যাসেট প্লে¬য়ারে একবার ঢুকাচ্ছে আর বের করছে, তারপর চুপচাপ খাতায় কী যেন টুকছে। সে এক কান্ড বটে, দেখতেও ভালো লাগছিল। অনেকক্ষণ দেখার পর বুঝলাম ওরা কিছু একটা শুনে লিখে নিচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছিল আমিও একবার কানে লাগিয়ে দেখি কী শুনছে ওরা, কিন্তু বের করে দেবার ভয়ে সাহস করতে পারলাম না, কারণ আমার মাথায় তখনও আছে এক হাজার পাউন্ড, যদি লাইগা যায়। এদিক-ওদিক তাকালাম, কত্ত ছেলে-মেয়ে, গোটা রুম ভর্তি মানুষ তবুও টু শব্দটি নেই কোথাও। মসজিদেও এত নিঃশব্দতা থাকে না। মনে মনে ভাবছি দাঁড়িয়ে থাকব নাকি বসব, কিন্তু কোথায় বসি? যদি ভুল-ভাল জাগায় বসে পড়ি তো না আবার কোন কেলেংকারি ঘটে রুম ভর্তি মানুষের মধ্যে।

সেও একবার করেছিলাম বটে, বসতে গিয়ে ফাঁকা চেয়ার দেখে ম্যানেজারের চেয়ারেই বসে পড়েছিলাম। সে বড় বেইজ্জতির কথা, না বলাই ভালো। যাক তারপরেও সাহস নিয়ে, যা হয় হোক ভেবে বসে পড়লাম একটা খালি চেয়ার দেখে। কিছুক্ষণ পর দেখি পটাপট খানকয়েক অতিশয় যৌবনবতী যুবতী এসে গেল আমার আশে-পাশে। না, না, আমার সাথে গল্প বা আলাপ করার জন্য নয়, বরং ওদের কোনো কাজে। কী উপমা, কী তুলনা দেব বলুন, আমি কেবল জরিনাকেই দেখেছি। জরিনার তুলনা দিলেও দিতে পারি, কিন্তু এদের, আমার কম্মো নয়, ঠিক যেনবা এইমাত্র স্বর্গে উৎপাদন শেষে এখানে নামিয়ে দিয়ে গেল কেউ। আমি দেখলাম, সবাইকেই এক এক করে। কেবল যে দেখলাম তা না, বরং একবার আমায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চিড়িয়াখানায়, সেই ছোটবেলায়, সেখানে গিয়ে হাতি দেখে আমি এত অভিভূত হয়েছিলাম যে আর কোনো প্রাণীই দেখিনি, কেবল হাতি আর হাতি, যেন এ জনমে হাতি দেখে আর সাধ মিটবে না। টিভি-সিনেমাতে অনেক হাতি দেখেছি, তাই বলে চোখের সামনে ইয়া বড় হাতি, সে এক আলাদা বিস্ময়, অনুভূতি, ভাষায় প্রকাশ না করার মতো ভালোলাগা। ঠিক সেরকম টাইপের করে গিলতে থাকলাম আঁড় চোখে, চোখ ফাটিয়ে, পরম সুখে। অনেকটা ছোটবেলায় গ্রামে হাটবারে হাট থেকে আনা সন্দেশ যেভাবে চুরি করে পরম সুখে লুকিয়ে লুকিয়ে, কাউকে না দেখিয়ে মতন খেতাম, সেভাবেই।


ক্রমশঃ.....
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×