somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈদেশে আ্মি- ডায়েরী না, কিন্তু ওইরকমই কিছু একটা... (part 3)

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২১ বছর +, যৎসামান্য অছলীল আছে...

১ম পর্ব: Click This Link
২য় পর্ব: Click This Link

‘Thank You’ এর উত্তর ‘welcome’ না হয়ে ‘yup!!’ হইলো কবে থিক্কা? কিসুই বুঝলামনা। এইখানে মানুষ কথায় কথায় ‘থ্যাংকু’ কয়, উঠতে বসতে খালি কয়, ‘উপ্‌স! সরি!’, আর আমি থ্যাংকু কইলে কয় ‘ইয়াপ!’ কাহিনী কি? রাস্তা দিয়া হাইটা যাইতেসি; চিনিনা, জানিনা- এক লোক আইসা হুদাহুদি আমারে কয়, ‘hey man! How are you doing?’ আমি একটু অবাক হইলেও, হাসি দিয়া উত্তর দেয়া শুরু করলাম, ‘you know, I am new in this country. Today, I went to my department for the first time; the day was exhausting, but exciting none the less. By the way, do you live here?’ কইয়া দেখি, সেই লোক ততক্ষণে আমারে পার হইয়া ১কি.মি. দূরে চইলা গেসে! আমি অবাক! আরে বেটা, যদি উত্তর শুনার ইচ্ছা না থাকে, তয় জিগাস কেন? আরেক দিন, আমার এক দোস্তরে সক্কালবেলায় আইসা কইলাম ‘what’s up?’ হে আমারে উল্টা জিগায়, ‘sup??’!!!! ‘sup’ যে ‘what’s up’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ, সেইটা জানতাম, কিন্তু, আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়া উল্টা আমারে ‘sup’ জিগায় কেন? কিসুই বুঝলাম না। মাথার তার সব গিট্টু পাকায় যাইতেসে।

শেষে আর থাকতে না পাইরা ওই দোস্তরে পাকড়াও করলাম। জিগাইলাম, “কাউরে যদি ‘হোয়াট্‌স আপ’ কই, হে উত্তর না দিয়া বেয়াদবের মত উল্টা জিগায় কেন?” আবার আমারে যদি ‘হোয়াট্‌স আপ’ জিগায়, আমি উত্তর দেওয়ার আগেই সে হাইটা চইলা যায়!’ সে হাসতে হাসতে কইল, “কাউরে যদি তুমি ‘হোয়াট্‌স আপ’, ‘হাউ আর ইউ’, বা ‘হাই’ এইসব কও, তাইলে কোন উত্তর প্রত্যাশা কইরো না। তোমারে কেউ কইলেও তোমার উত্তর দেওয়ার দরকার নাই। আর উত্তর দিলেও সেই উত্তর হইবো ‘হোয়াট্‌স আপ’, ‘হাউ আর ইউ’, ‘হাই’, ‘নট মাচ!’ এই টাইপের কিছু”। কি বুঝলাম জানিনা। কিন্তু, ‘নট মাচ’ আর ‘ইউ টু’ কথা দুইটা মুখস্ত কইরা লইসি। এখন কেউ যদি কয় ‘হোয়াট্‌স আপ’,- আমার উত্তর হইল ‘নট মাচ!’। আর কেউ যদি কয় ‘হ্যাভ আ গুড ডে/নাইট’ কিংবা ‘বেস্ট অফ লাক’, আমার উত্তর হইল ‘ইউ টু!’। এখন এই দুইটা ডায়লগ সব জায়গায় ছাড়ি- বাসে, ডিপার্টমেন্টে, রাস্তায়, রেস্টুরেন্টে, দোকানে।

একদিন ল্যাবে আমার ছাত্র-ছাত্রীদের কইলাম ‘alright, guys! Now please take out your worksheets and have good look at them. You’ll see that…’ ... কি কাহিনী? সব ছাত্রীগুলা বেয়াদবের মত হো হো কইরা হাসতেসে! এইবার অবশ্য বুইঝা ফালাইসি যে কি হইসে। তাড়াতাড়ি কইলাম, ‘did I pronounce ‘sheet’ wrong? Sorry about that!’ দেখি, হাসি আর থামেইনা! কি বিপদ!

বাংলাদেশে থাকতে তো অনেক ‘F**k’ কইসি। এইখানে এই কথা কইলে আর রক্ষা নাই। খুব সাবধানে মুখ সামলাইয়া চলন লাগে। তারপরেও একদিন ভুল হইয়া গেল। ল্যাবের একটা যন্ত্রের ব্যবহার দেখাইতেসিলাম। অর্ধেক কাজ শেষ কইরাই ভুলে কম্পিউটারের প্রোগ্রামটা বন্ধ কইরা দিসি। ধুর! পুরাটা আবার নতুন কইরা করন লাগবো! মেজাজ খারাপ, চান্দি গরম। ক্লাসের মইধ্যে কইয়া ফালাইলাম ‘ফফফফা..’... ‘ক’-টা আর উচ্চারণ করিনাই। তার আগেই ব্রেক দিসি। আমার ছাত্ররা শুইনাও না শুনার ভান করল। কিন্তু, ছাত্রীরা আবার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাইতেসে। কি আর করা! ‘সরি’ কইয়া আবার পড়ানো শুরু করলাম।

প্রথম প্রথম ক্লাসে পড়াইতে গিয়া আমি আমার মত কথা কইতে থাকতাম। মনে সন্দেহ, যে শব্দগুলার উচ্চারণ ঠিকমত করতেসি কিনা! ওদের চেহারা দেইখা বুঝা যাইতো, যে আমি পড়াইতেসি, না কোন সার্কাস দেখাইতেসি- সেই ব্যাপারে ওরা ব্যপক কনফিউজ্‌ড। একদিন একটা ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে কয়েকজন সিনিয়র টিএ (টিচার্‌স এসিস্টেন্ট) আমাদেরকে অনেক পরামর্শ দিল। ওদের কথা হইল, ‘তুমি কখনো হীনমন্যতায় ভুগবা না। এইটা ওদের সৌভাগ্য, যে এতদূর থেকে এসে তুমি ওদের ভাষায় ওদেরকে ফিজিক্স পড়াইতেস। ওদেরকে এইটা বুঝতে দাও। ওদেরকে বল যে তোমার মাতৃভাষা ইংরেজী না; তুমি ইংরেজী শিখতেস। তোমার ইংরেজি সঠিক নাও হইতে পারে। যদি কখনো কোথাও ভুল হয়, তাইলে যেন ধরায় দেয়। আর এইটা ভুলবানা, যে তুমি যতটা কনফিউজ্‌ড, ওরা তার থেকে বেশি কনফিউজ্‌ড। ভার্সিটিতে ওদের প্রথম সেমিস্টার। প্রথম ওরা কোন বিদেশী লোকের ক্লাস করতেসে। ওরা তোমাকে প্রশ্ন করতেও ভয় পাবে। কাজেই, এইখানে তুমি boss! তোমার কাজ হইলো ওদের ভয় ভাঙানো, ওদের কাছে যাওয়া। ওদের বন্ধু হওয়া। ওদেরকে বুঝতে দাও, যে তুমিও মানুষ। আর তুমি প্রফেসর না; তুমি ওদের সাহায্যকারী’। এই পরামর্শগুলা সব মাথা পেতে নিসি আর যতটা সম্ভব পালন করার চেষ্টা করসি। ফলাফলটা কি হইলো, তা বুঝানোর জন্য আমি সরাসরি আমার সেমিস্টারের শেষ ক্লাসে চইলা যাই।– আমি আমার ক্লাসের প্রথম এক ঘন্টার দায়িত্ব দিসিলাম ‘জিম’ নামে এক টিএ কে। (এই জিম প্রথম পার্টের ওই জিম না। এই জিম ফিজিক্সের ছাত্র।) তো যাই হোক, এক ঘন্টা পরে আমি ক্লাসে আসলাম। সাথে সাথে সব পোলাপাইন এক সাথে ‘Sarker!!! Where have you been?? Are you alright? I missed you!!!’ ইত্যাদি চিল্লাপাল্লা লাগায় দিল। জিম তো পুরা অবাক! আমি মোটেও অবাক হইনাই, কারণ, পুরা সেমিস্টারে আমি আমার ছাত্রদের একটা কাছে চলে গেসিলাম, যে ওরা আমাকে ওদেরই একজন মনে করত। পুরা ল্যাব ক্লাস আমার গল্প আর হাসি ঠাট্টা করতে করতে পার করতাম। খুব মজা করতাম। শেষ ক্লাসে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করসে, যে আমি পরের সেমিস্টারে কোন কোর্সের টিএ হব। আর যদি ওদের কোর্সেরই টিএ থাকি, তাইলে আমার ল্যাব কোন কোন দিন হবে। আমি ওদেরকে হতাশ করে দিয়েই জানাইসি, যে এই ব্যাপারে আমার কোন হাত নাই। এই সিদ্ধান্ত অফিস নিবে। একজন ছাত্র শেষ দিন আমাক বলল, যে আমি নাকি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ টিএ। শুইনা তো আমার চক্ষে পানি চইলা আসার মত অবস্থা!

এর পরে এই সিরিজের আর কোন পর্ব আসবে কিনা জানিনা। আমি এইখানে অনেক মজা করতেসি। মনের মধ্যে একটা চাপা দুঃখ আছে, যে আমি দেশ থেকে এত দূরে। বাবা-মা-ভাই কে মিস করি। কার্জন হলকে মিস করি। সব বন্ধুদেরকে মিস করি। কিন্তু, এইখানে অনেক বন্ধু পাইসি। একটা ব্যাপক কনফিডেন্স আসছে নিজের মধ্যে, যে আমি যে কোন জায়গায় গিয়ে টিকতে পারব। আরেকটা ব্যাপারে কনফিডেন্স আসছে এই লেখাটা লিখতে গিয়ে। সেইটা হইলো, যে আমিও লিখতে পারি। আমার বন্ধু মহলে কিছু বিখ্যাত ব্লগার আছে। তাদের মত সেলিব্রিটি হইতে না পারলেও, আমার লেখা দিয়ে ২/১ জন মানুষকে একটু আনন্দ দিতে পারব আশা করি। ব্লগ লেখা কোনদিন বন্ধ করবনা ইনশাল্লাহ। সামু জিন্দাবাদ! ব্লগ লিখা জিন্দাবাদ!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৪৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×