somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ : সিলেটের পূন্যভূমিতে তিনজন পুরাতন পাপী

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আয়োজন করে ভ্রমণে গেলে সেটা অনেকটা শিক্ষাসফরের মতো হয়ে যায়। অনেকদিন আগে থেকে প্রস্তুতির মধ্যে থাকলে এক ধরণের শিথিলতা চলে আসে। যতবার ভ্রমণ সংক্রান্ত আলোচনা হয় ততবারই এটা করা যাবেনা, ওটা করা যাবেনা টাইপ শেকলে আটকে যায় ভ্রমণটা। বিধিনিষেধের বেড়াজালে উদার মনের ভ্রমণ ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকে।
আমার কাছে ভ্রমণ মানে, ধর তক্তা মারো পেরেক টাইপ। তার মানে যে বিচার বিবেচনা থাকতে পারবেনা তা না। কিন্তু সেটা খুবই সীমিত আলোচনার ভেতরে হতে হবে।
তেমনি একটা ধর তক্তা মারো পেরেক মানে হুটহাট টাইপ ভ্রমণ হলো আমাদের সিলেট তথা লাউয়াছড়ার ভ্রমণ।
দুই ছোট ভাই সাংবাদিক লুৎফর রহমান কাকন এবং মার্চেণ্ডইজার জোবায়ের রিংকুর সাথে দিনভর আড্ডার শেষ প্রান্তে এসে কী এক বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে ঠিক করা হলো সিলেট যাবো।
কবে?
পরদিনই।
একজন রাজী হলে আরেকজন দমে যায়। আবার অন্যজন যাবার ব্যাপারে হাত মেলালে অন্যজন হাত সরিয়ে অজুহাত নিয়ে আসে। মোট কথা পাঁচবছর পর পর নির্বাচনের আগে ত্বত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান বানানো নিয়ে যতটুকু অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তার চেয়ে বেশি অনিশ্চয়তার ভেতরে থেকে একটা সময় সিদ্ধান্ত চলে আসে, আমরা যাচ্ছি।
২.
সময়ের ব্যাপারে চিরকালই আমি এত বেশি সচেতন যে সচেতনতার দিকে নজর দিতে দিতে আর সময়ের দিকে নজর দেয়া হয়ে ওঠেনা। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে আমি কিছুটা দেরি করে ফেলি। যা অনেকের কাছে অনেক বেশি দেরী মনে হয়। রাত নয়টায় আমাদের একসাথে হবার কথা থাকলেও মার্চেণ্ডাইজার রিংকু সাতটা থেকে উপস্থিত। বোঝা গেল বিদেশী বায়ারদের সাথে থাকতে থাকতে তার এই সময়জ্ঞানের উন্নতি। দুই ঘন্টা আগেই উপস্থিত।
সাংবাদিক কাকন সাড়ে নয়টার দিকে এসে ঠিক নয়টায় আসার জোরালো দাবীতে প্রকম্পিত করছিল আকাশ বাতাস, মোবাইলের নেটওয়ার্ক এবং উপস্থিত অনেকের কান।
আর এসবে যাতে কান দিতে না হয় তাই আমি উপস্থিত হলাম সোয়া এগারোটায়।
আসার পর কোথায় একটু তারা শুভেচ্ছা জানাবে তা না করে তিরস্কারের ঝড় শুরু করে দিল, আর এসে কী করবেন? এখন গিয়ে কোন লাভ নেই। বাস পাবোনা। বাদ দেন যাবোনা। যাত্রাবাড়ী পার হতেই দুই ঘন্টা লাগবে...।
আরো অনেক কথা।

আমি সকল কিছুকেই তুচ্ছ করে একগুচ্ছ আধ্যাত্মিক কথা ঝেড়ে বললাম, মিয়া আমার সাথে আসছো, চিন্তা আমার। তোমরা খালি দেখানো পথ ধরে হাটবা। এই সময়ে গিয়েও বাস পাবো। যাত্রাবাড়ির জ্যামও আমাদের আটকাতে পারবেনা।
উপরে বড় বড় কথা বললেও ভেতরে ভেতরে আত্মা শুকিয়ে আসছিল। আল্লাহকে ডাকছিলাম, আল্লাহ মানির মান তোমার হাতে। আমারে বাঁচাও।
আল্লাহ আমাকে বাঁচালো। ৪৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌছে গেলাম মালিবাগস্থ বাস কাউন্টারে।
গিয়েই আমরা বাসের দিকে মন না দিয়ে ব্যাপক মনোযোগীতার সাথে আড্ডায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।
এর মাঝখান দিয়ে কখন যে ড্রাইভার মহোদয় আমাদের বাস নিয়ে কাউন্টার ত্যাগ করল তা আমাদের অজানাই রয়ে গেল। টের পেলাম যখন ধীরে ধীরে কাউন্টার খালি হয়ে গেল।
কাকন ভীতু চেহারা নিয়ে প্রশ্ন করলো ভাই, কাহিনী কি? বাস কী চইলা গেছে নাকি?
আমি তার আশংকা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানের মতো উড়িয়ে দিয়ে বললাম, আরে না মিয়া আমি আছিনা। আমার সাথে আসছো, চিন্তা আমার। তোমরা খালি দেখানো পথ ধরে হাটবা।
তারপরও নিশ্চিন্ত হতে পারলো না রিংকু। সে উঠে গিয়ে কাউন্টারে কথা বলল। আমরা দূর থেকে তার ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া চেহারা দেখে দৌড়ে গেলাম। গিয়ে যা শুনলাম তারপর দেখলাম কাকনের চেহারাও ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আমারটা হয়েছে কিনা তা আশেপাশে কোনও আয়না না থাকায় বুঝতে পারলামনা।

গাড়ী আমাদের চোখের সামনে একদল যাত্রী নিয়ে দশ মিনিট আগে চলে গেছে। চোখে অন্ধকার দেখা সেই সময় কিছুটা আলোর সন্ধান দিলেন কাউন্টারে বসা প্রধান কর্মকর্তা। তিনি মালিবাগ থেকে আমারবাগে ফোন দিলেন। বাসটাকে একটু রাখতে।
আর আমাদের বললেন, দশ মিনিটের মধ্যে আরামবাগ চলে যান।
আমরা দৌড়ে কাউন্টার থেকে বের হয়ে আরাম করে বাসে সিলেট যাবার স্বপ্ন নিয়ে আরামবাগের পথে সিএনজিতে উঠলাম।
সিএনজিতে উঠেই নিজের আধ্যাত্মিকতা ঝাড়া শুরু করলাম, আমার সাথে যখন এসেছ...
কথা শেষ না হতেই সিএনজি চালকের গতি সূত্রে আমরা আরামবাগ এসে পড়লাম। বাস দেখেই আমাদের আত্মা নামক বায়বীয় স্থানটায় পুনরায় তরল পানি প্রবাহ শুরু হল।
(চলবে)


ছবি : ১. মাজার গেইট
২. শ্রীমঙ্গল রোড
৩. চা বাগান
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×