somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

িসয়াদ বস
চিন্তাহীনভাবে বাঁধাধরা কিছু ধারণা যা সর্ব ক্ষেত্রে সঠিক নয়, যেমনঃ পুলিশ মানেই ঘুসখোর নয় রাজনীতিবিদ মানেই ব্যাবসায়ী নয় মন্ত্রী মানেই চোর নয় বিএনপি সমর্থক মানেই রাজাকারের দোসর নয় আওয়ামীলীগ মানেই ভারতের দালাল নয় হিন্দু মানেই এক পা ভারতে নয় দাড়ি টুপি মানেই জ

আপনারা খাওয়াবেন কেন্টাকি(কে এফ সি) আর উদ্বোধন করালেন মোস্তফা জামান আব্বাসীকে দিয়ে। এসব কী? কোন ঐতিহ্যকে আপনারা লালন করছেন???

১১ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

……………………"আরো আপত্তিকর কথা আছে… হট্ হট্ কর্নেল সাব্‌রে যাইবার দে…। নিশ্চয়ই কেন্টাকির বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের কর্নেল স্যান্ডর্সের কথা ভেবে এটা লিখেছেন। কিন্তু আমার কাছে পুরো ক্যাম্পেইনটাতে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারকে অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। মনে হয়েছে পুরান ঢাকাকে অপমান করা হয়েছে।"………………………………….
বিস্তারিত নিচে পড়ুন।
____________________
ঢাকার খানদানি খাবার নিয়ে তামাশা
জানুয়ারি ১০, ২০১১


খাবার নিয়ে বাঙালির বিশ্বজয়ের কাহিনী লিখতে গেলে সময় দরকার, প্রচুর সময়। সে সময় আমার হাতে আপাতত নেই, তবু সুযোগ পেলে লেখার ইচ্ছা আছে।

আমি দীর্ঘদিন ধরে বিলেতে বসে খাবার নিয়ে কারি লাইফ নামে ম্যাগাজিন সম্পাদনা করি। এই উপমহাদেশ থেকে যে খাবার ব্রিটেনে গিয়ে কয়েক যুগ ধরে ব্রিটেনের বাজার দখল করেছে সেই খাবারটিকে ‘কারি’ বলা হয়ে থাকে। দুই শত বছর আগ থেকে ব্রিটেনে এই খাবারের যাত্রা শুরু হয়। আর এখন সেটা একটি বিশাল ইন্ডাস্ট্রি, যাকে বলা হয় ‘কারি শিল্প।’ গর্বের সাথে বলতে পারি বাঙালিরা মূলত এই রন্ধন শিল্পের মূল কারিগর। কারি লাইফ সেই ‘কারি’ ব্যবসার একটি ম্যাগাজিন।

বাংলা সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় লেখক শংকর আমাকে বলেছেন খাবার নিয়ে বাঙালিদের এই ব্রিটেন জয়কে তিনি ‘পলাশীর প্রতিশোধ’ হিসাবে দেখেন। এই শিরোনামে তিনি একটি বই লেখারও উদ্যোগ নিয়েছেন। আমার এক ইংরেজ বন্ধু রসিকতা করে কথাটা অন্যরকম বলেছেন, ‘ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে গিয়েছিলো গান পাউডার বা বারুদ নিয়ে, আর তোমরা এর বদলা নিয়েছো কারি পাউডার দিয়ে!’

গত দশ বছর ধরে নানা সূত্রে ঢাকা ও কলকাতায় আমি নিয়মিত আসা-যাওয়া করি। স্বাভাবিক কারণে এখানে এলে ভালো ও নতুন নতুন খাবারের সন্ধান করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি ঢাকায় প্রচুর নতুন খাবারের দোকান হলেও ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবারের রেস্তোরাঁর খুব একটা বিকাশ ঘটেনি। উন্নতমানের বিদেশী রকমারী খাবারের অভাব নেই, কিন্তু দেশীয় খাবারের উন্নতমানের রেস্তোরাঁ চোখে পড়ার মতো নেই। কলকাতায় কিন্তু এর ব্যতিক্রম। বিস্তর বিদেশী খাবারের পাশাপাশি ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে বাঙালি খাবারও। কলকাতায় যেরকম বনেদী বাঙালি খাবার (তৎকালিন পূর্ব বাংলার) পাওয়া যায় তা কেন ঢাকায় চোখে পড়ে না ? ভজহরি মান্না, আহেলী, সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস, গোপী বাঘা, কিউপি, অহ কলকাতা ইত্যাদি রেস্তোরাঁয় বার বার যেতে ইচ্ছা করে।

যা হোক, নতুন বছরে ঢাকায় নেমে হঠাৎ কাগজে খাবার নিয়ে বিশাল বিজ্ঞাপন দেখে আমার আগ্রহ বেড়ে গেলো। বুঝতে পারছিলাম না ঢাকার কোন ব্যবসায়ী হঠাৎ পুরানো ঢাকার খানদানি খাবারে নতুন স্বাদ নিয়ে আসছেন। পাঠকবৃন্দ হয়তো বছরের শুরু থেকে ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারের তৃতীয় পাতায় কয়েকদিন ধরে এই ‘টিজার এড’ (বিজ্ঞাপনের ভাষায়) দেখেছেন। আমি শুরু থেকে এই বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহ নিয়ে আশায় বুক বেঁধে আছি, এবার বুঝি এই ভোজন রসিকের আশা পূরণ হবে। বহুকাল বিদেশে থেকে ঢাকাই খাবারে আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক! আমার আবার সব ধরনের খাবারই পছন্দ। সত্যি বলতে গেলে দেশ বিদেশে বিভিন্ন দেশীয় খাবার প্রমোট করে বেরানোর কাজটা অনেক দিন ধরে করছি। ব্রিটিশ-বাংলাদেশী শেফদের নিয়ে প্রতি বছর ঢাকা, কলকাতা, নিউইয়র্ক, মাদ্রিদ, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে খাদ্য উৎসব করি। তাই খাবার যেখানে আমি সেখানে!

শেষ পর্যন্ত ডেইলি স্টারে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই ধাঁধার সমাধান হলো, আসলে পুরানো ঢাকার খানদানি খাবার নয়, খানদানি খাবারকে হটাবার জন্যই লক্ষ্মীবাজারে পৌঁছে গেছে আমেরিকান ফার্স্ট ফুড কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন (কেএফসি)। ম্যাকডোনাল্ডস, কেন্টাকি, বার্গার কিং, পিৎজা হাট সারা বিশ্বে যেমন নন্দিত, তেমনি নিন্দিতও নানা কারণে। সমালোচকরা বলেন, এসব ফার্স্ট ফুড খেয়ে সারা বিশ্বে নারী পুরুষ, কিশোর-কিশোরীরা অস্বাভাবিকভাবে মোটা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বিশাল লবি কাজ করছে। আমি অবশ্য সেই লবির কেউ নই এবং অস্বীকার করবো না মাঝে মাঝে আমাকেও এই খাবার খেতে হয়।

দু’টা কারণে লক্ষ্মীবাজারে কেন্টাকির প্রবেশ নিয়ে আমার আপত্তি আছে। প্রথমত যেভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে এটার প্রবেশ ঘটেছে, তাতে আমার মতো খাবার প্রেমিক লোককে প্রতারণা করা হয়েছে। ‘ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারে আসছে নতুন স্বাদ…’ কথাটা কি ঠিক হলো? এই বলে কেন্টাকি চাপিয়ে দেয়া হবে কেন? আরো আপত্তিকর কথা আছে… হট্ হট্ কর্নেল সাব্‌রে যাইবার দে…। নিশ্চয়ই কেন্টাকির বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের কর্নেল স্যান্ডর্সের কথা ভেবে এটা লিখেছেন। কিন্তু আমার কাছে পুরো ক্যাম্পেইনটাতে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারকে অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। মনে হয়েছে পুরান ঢাকাকে অপমান করা হয়েছে। আগেই বলেছি, আমি কেন্টাকির বিরুদ্ধ লবির লোক নই। আমি যেমন বিশ্বায়নের পক্ষে, তেমনি ঢালাওভাবে মাল্টিন্যাশনালকে পথ করে দেয়ারও বিপক্ষে।

আমি ব্রিটেনের উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, ব্রিটিশ অথরিটি আমেরিকার লেজুরবৃত্তি করলেও সব শহরে এবং বিশেষত ঐতিহ্যবাহী এলাকাগুলোতে এরকম কেন্টাকি, ম্যাকডোনাল্ডসদের অনুমোদন দেয়নি। এর মূল কারণ তারা হাই স্ট্রিটগুলোর ক্যারেক্টার বদল করতে নারাজ। পুরানো ঢাকায় কেন্টাকি না গেলে কি হতো না?

আগেই বলেছি, ব্যবসার বিপক্ষে আমি নই। ট্রান্সকম গ্রুপ অনেক ভালো ভালো ব্যবসা করছে, অনেক ভালো ভালো কথা বলেও তাদের প্রচার মাধ্যমগুলো। পরিবেশ, নদী ভরাট, অবৈধ দালান কোঠার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। শুনেছি তাদের অবস্থান দেশের ঐহিত্য রক্ষায়। ট্রান্সকম ফুড যিনি পরিচালনা করনে, তিনি আমার একজন প্রিয় বক্তিত্ব। আক্কু চৌধুরী এই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। আরেকটি বিশাল কাজ তিনি করেছেন যার জন্য একজন বাঙালি হিসাবে আমি আজীবন তার ও তার সহকর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ। সেটা হলো তিনি ও তার সহযোগিরা মিলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই জাদুঘরের আটজন ট্রাস্টিকে যদি সরকার কোনদিন স্বাধীনতা পদক দেয় আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো। উপযুক্ত কাজের উপযুক্ত সম্মান দেয়া উচিত।

কিন্তু এটা কী ? যে আক্কু চৌধুরী দেশের জন্য লড়াই করেছেন এখন তারই প্রতিষ্ঠান বলছে পাকিস্তানী কায়দায় ‘কর্নেল সাব্‌রে যাইবার দে..।’ আক্কু ভাই মনে রাখবেন, আমাদের ঢাকার ঐতিহ্যকে হটিয়ে এই কর্নেল সাবের আগমন শুভ হবে না। এটা খাল কেটে কুমির আনার সমান। দেশীয় খাবারের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী স্থান হলো পুরানো ঢাকা। গুলশান, বনানী, বাড়িধারা, উত্তরা, ধানমণ্ডি ইত্যাদি অভিজাত এলাকার অনেক কিছুই পুরান ঢাকাকে স্পর্শ করেনি। আপনাদের কেন্টাকি না খাইলে পুরান ঢাকাবাসী বাঁচবে না?

আরো যেটা ব্যথিত করেছে, আপনারা খাওয়াবেন কেন্টাকি আর উদ্বোধন করালেন মোস্তফা জামান আব্বাসীকে দিয়ে। এসব কী? কোন ঐতিহ্যকে আপনারা লালন করছেন?

তবে হ্যাঁ, ফল উল্টাও হতে পারে। ইতালিতে ম্যাকডোনাল্ডস ভালো করছে না। কারণ, সে দেশের মানুষ খাবারের ব্যাপারে তাদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। এসব মাথায় রেখেই ম্যাকডোনাল্ডস খুব সাবধানে এগুচ্ছে। ব্যবসার প্রসার করতে গিয়ে তারা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চায় বলে খুব স্পর্শকাতর এলাকাগুলো বর্জন করছে। আপনাদেরও আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

সৈয়দ বেলাল আহমেদ : লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক, কারি লাইফ ম্যাগাজিন-এর সম্পাদক।
(bdnews24.com হতে সংগৃহিত)

৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×