সাভারে ভবন ধস নিয়ে বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য ‘বিকৃত’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ মন্ত্রী।
Published : 11 May 2013, 03:59 PM
মন্ত্রী বলেছেন, সরকার প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করবে।
শনিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন “এপির প্রতিবেদনে আমাকে উদ্বৃত করে বলা হয়েছে, ‘সাভারের ঘটনা তেমন বড় কিছু নয়’। নয়াদিল্লিতে আমি এ ধরনের কোনো মন্তব্য করিনি। কোথা থেকে তারা এটা পেয়েছে আমার কাছে তা বোধগম্য নয়। অসম্ভব আমি এ মন্তব্য করিনি।”
ঢাকায় বসে যে প্রতিবেদক ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন তাদের ‘শাস্তি হওয়া উচিৎ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দৃশ্যত ক্ষুব্ধ বর্ষীয়ান এই মন্ত্রী বলেন, “এটা পাগলামি। চরম আপত্তিকর। এপি মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রিপোটাররা মিথ্যা কথা লিখেছে।”
২ থেকে ৫ মে ভারতের নয়াদিল্লিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪৬তম বার্ষিক সভায় যোগ দেয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের প্রতিনিধিদল ওই সভায় যোগ দেয়।
মুহিত বলেন, “৩ মে নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে আমি সাভার ভবন ধস সম্বন্ধে বলি যে, এটা হিউজ ট্র্যাজেডি। আমি অকুস্থানে গিয়ে দেখেছি যে, কতবড় সর্বনাশ হয়েছে।
“আমি আরও দেখেছি যে, দুর্যোগে মানুষ কি রকম মানবতা ও ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে কি ব্যাপক উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে।”
“এ রকম দুর্ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে এবং তাতে আমদানিকারকরা অন্য বাজারে যেতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি না যে, এতে ‘সিরিয়াস অসুবিধা হবে।”
“আমি আরও বলি যে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তা হয়েছে মাত্র ত্রিশ বছরে। বাংলাদেশ এই শিল্পে ভালো করেছে এবং এই খাতের উন্নতি দেশে নানা ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারও দৃঢ়তার সঙ্গে শ্রমিক সুযোগ-সুবিধা সংরক্ষণে ও প্রসারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমদানিকারকারা তাতে স্বস্তি পাবে।”
“সরকার সবগুলো কারখানা জরিপ করার উদ্যোগ নিয়েছে। পোশাক শিল্প সমিতি ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে অতি দ্রুত অসুবিধা শুধরানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
“তাই আমার মনে হয়, তাতে বাজার সংকোচনের সম্ভাবনা কম এবং চূড়ান্ত বিচারে এতে পোশাক রপ্তানিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। সাময়িক কিছু অসুবিধা হতে পারে হয়তো।
“ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে আমি আরও বলি যে, তিরিশ বছরে বাংলাদেশ কারখানার নিরাপত্তা বিধানে ও শ্রমিক সুবিধা সংরক্ষণে যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছে। অন্যত্র যে কাজে শত বা তদুর্ধব বছর লেগেছে আমরা তা তিন দশকে সম্ভব করে তুলেছি। নিশ্চয় আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী মহল তার মূল্য দেবে।
“দুর্ঘটনাটি অবশ্যই মর্মান্তিক। আমাদের অনেক শ্রমিক মারা গেছেন। আমরা সবাই এতে শোকাহত। রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হয়েছে। আহতও হয়েছেন অনেকে।”
সংবাদ সম্মেলনে দিল্লি সফরের অন্যান্য বিষয়েও কথা বলেন মুহিত।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “সফরকালে ভারতের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দুদফা বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য দেয়া ভারতের ঋণের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলে ভারতের অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছে। প্রায় ৮০ কোটি ডলারের নানা প্রকল্প বা চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। সম্পাদনের পথেও আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরবরাহ ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
“২০ কোটি ডলারের অনুদানের ১০ কোটি ডলার বাংলাদেশ পেয়েছে। সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অতীতের তুলনায় অনেক কমে আসছে। আগামীতে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন আরও কমবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “ভারতের অর্থমন্ত্রী আগরতলার সম্ভাব্য খাদ্যঘাটতি মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে আশুগঞ্জ দিয়ে খাদ্যপণ্য সরবরাহের জন্য সম্মতির বিষয় তুলে ধরেন। আমরা বলেছি রাস্তাঘাট, রেল সংযোগ ও নদী সংযোগ ততটা উন্নত নয় বলে ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই আমরা যোগাযোগ উন্নয়ণে জোর দিচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে মুহিত আরা বলেন, “দিল্লি সফরে আমাদের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তি, ছিটমহল হস্তান্তর, সীমান্ত নির্ধারণ, বাণিজ্যে নন ট্যারিফ বিধি নিষেধ, ভিসা জটিলতার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। ভারতের মন্ত্রী বলেছেন, এসব বিষয়ে ভারতের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই।”