somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরিয়ে দাও সে অরণ্য লও হে নগর!

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এমনিতেই যানজট-টানজটসহ নানা জট-ঘটের কারণে ঢাকায় আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। মন সারাক্ষণ পালাই পালাই করে। কাজ-অকাজের ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝেই গানের মতো স্লোগান দেই চিৎকার করে- ফিরিয়ে দাও সে অরণ্য লও হে নগর!
খুব কাছের বন্ধুদের বলি, নগর অসংখ্য নাগরিককে নপুংশক করেছে। অনেক অনেক নেই-এর মধ্যে অনেকের জীবনে যৌবনও নেই। অনেক অনেক নর-নারী যুবক-যুবতী ইচ্ছে থাকাসত্ত্বেও প্রাণ খুলে ভালোও বাসতে পারছে না। তারা সবাই একা একা কবুতরের খোপে খোপে জীবনের- যৌবনের অপচয় করছে। সঙ্গ চাইলেও সঙ্গ পাচ্ছে না। সঙ্গী চাইলেও কেউ সঙ্গী পাচ্ছে না। সঙ্গী জোটানোর নাগরিক ভঙ্গীও অনেকের জানা নেই। তাই অবদমনের এক কোষ্ঠকাঠিন্য-সময় পার করছে লক্ষ-কোটি মানুষ। যদি তারা নাগরিক না হয়ে আরণ্যক হতো, যদি তারা বনে থাকতো, তাহলে বর্তমান ‘ঢাকার’ চেয়ে তারা অনেক ‘খোলা’ থাকতো! অন্তôত জৈবিক জীবনে তারা এমন দৈন্যতার শিকার হতো না- এমন ভয়ংকর নিঃস্ব থাকতো না! আরণ্যক জীবনে কারও খাবার জুটুক আর না জুটুক নিশ্চয়ই সঙ্গী জুটতো! তারা যুগল-সঙ্গী বা জুটি হয়েই ছুটতো খাবারের সন্ধানে- জীবনের সন্ধানে- যৌবনের সন্ধানে! এবং যেহেতু বন, সেহেতু উদি্‌ভদবৈচিত্র্যে ভরপুর, এবং তারা কোনো না কোনোভাবে নির্বিষ নিরাপদ প্রাকৃতিক খাবার পেতো এবং তাদের দিন চলে যেতো!
মাস দুয়েক আগে বিচারপতি গোলাম মোহাম্মদ রাব্বানী’র ‘ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়’ শিরোনামের একটি কলাম পড়েছিলাম প্রথম আলো’য়। ওরকম ভাবনায় কত কত দিন ধরে আমিও ভাবিত ছিলাম! ভাবতাম, পুরো দেশটাকে স্রেফ একটা বাগান বানাবো! এ নিয়ে ব্যক্তিগত ও বন্ধুসভাগত কত কল্পনা আর পরিকল্পনা! স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম, স্রেফ শাক-সবজি ফল-ফুল-মূল লাগিয়ে, মাছ-গাছ বেচে বাংলাদেশ ইচ্ছে করলেই নিজের পায়ে নিজে খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে! তখন আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক-এর গোষ্ঠী কিলিয়ে বিশ্ববুকে বুক মিলিয়ে স্রেফ ভালোবাসা বিলিয়ে সসম্মানে বেঁচে থাকতে পারে!
ভাবতাম, পৃথিবীবাসী হবে বাংলাদেশ নামের সুবিশাল বাগানবাড়ির পবিত্র অতিথি। তারা আমাদেও বাড়িতে বেড়াতে আসবে। ঘুরে ঘুরে দেখবে সুজলা-সুফলা-শস্য শ্যামলা সোনার বাংলা- আমাদের পার্থিব স্বর্গভূমি। যে-ই বাংলাদেশ ঘুরে যাবে, সে-ই ভূস্বর্গের অভিজ্ঞতা পাবে।
জালের মতো ঘিরে থাকা নদীগুলোকে পুনর্জীবিত করা হবে। নৌপথ তখন অন্যতম প্রধানতম পথ। নৌপথগুলোতে চলবে সড়কপথের চেয়েও আকর্ষণীয় নানারকম গতিসম্পন্ন নানারকমের জলযান।
নাগরিকদের পরিবেশ সচেতনতা এবং সরকারি নানামুখি উদ্যোগের কারণে নদীগুলো হবে পুরোপুরি দূষণমুক্ত। সরকারি মহাপরিকল্পনার নখদর্পণে থাকবে ৫৬ হাজার বর্গমাইল ভূমি। জল ও স্থলের সর্বোচ্চ সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার তখন নিশ্চিত করা হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অতিথিরা পাবে নির্মল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। খাবে নির্বিষ নিরাপদ প্রাকৃতিক খাবার। এবং চাইলেই নিয়ে যেতে পারবে- এদেশে উৎপাদিত নানারকম পণ্যসামগ্রী।
দেশজুড়ে পরিকল্পিতভাবে দেশি ফলের বিশাল বিশাল বাগান করা হবে। যে ফল যে অঞ্চলে ভালো ফলে সে ফল সে অঞ্চলেই বিশাল এলাকাজুড়ে ফলানো হবে। উৎপাদিত ফলের নানারকম ব্যবহার এবং বিপণন হবে। ফলকেন্দ্রিক বিশাল বিশাল শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। জুস-জেম-জেলির মতো ফলজ খাদ্য উপকরণের পাশাপাশি মানবদেহের বিভিন্ন প্রয়োজনকে মাথায় রেখে নতুন নতুন খাদ্যসামগ্রি তৈরি করা হবে। বিদেশি অতিথিরা খেয়ে যাবে এবং নিয়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা এসব আমদানি করবে।
ফলের বাগানের পাশাপাশি দেশজুড়েই থাকবে ফুলের বাগান। ফুল তখন নাগরিকদের কাছেও তুলনামূলক অনেক বেশি মর্যাদা পাবে। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই বিপুল বেড়ে যাবে ফুলের বহুমুখি ব্যবহার। ফুল থেকে তৈরি হবে সুগন্ধী, তেল, জেল এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। বহির্বিশ্বে বছর বছর বেড়ে যাবে ফুল আমদানি। দুর্লভ ওষুধিগাছ ও মশলার বিশাল বিশাল বাগান থাকবে। সেখানেই গড়ে উঠবে ভেষজ চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ তখন এক নিরাপদ নিশ্চিন্ত পণ্যের দেশের প্রতীক। গোটা বিশ্ব তখন বাংলাদেশের ফল-ফুল, ফল-ফুলজাত খাদ্যসামগ্রি, ওষুধপত্র, মশলাপাতির জন্য উন্মুখ হবে। উন্নত-অনুন্নত বিশ্বের যে কেউ মানসিক স্বস্তিô পেতে চাইলেই ছুটে আসবে বাংলাদেশে। আজকের ইউরোপ আমেরিকা তখন হৃৎগৌরব; নির্মম অসভ্য সভ্যতার কংকালমাত্র!


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×