কবে পাবো সেই মনের মানুষের দেখা?? আদৌ কি পাবো?? নাকি থেকে যাবো মনের মানুষের থেকে বহু দূরে?? অসীম শূণ্যতার দৃষ্টিতে লালন তাকায় অথৈ পানির নদীটির দিকে। হঠাৎ ভেসে আসে তার কন্ঠে : “মিলন হবে কত দিনে?? আমার মনে মানুষেরও সনে ... “
এভাবেই সমাপ্তি হয় মনের মানুষ মুভিটির। কিন্তু লালনের ন্যায় সকল দর্শকেরই যেন অপূর্ণ থেকে যায় সেই প্রশ্নের উত্তরের জন্য। কবে পাবো মনের মানুষের দেখা?? এভাবেই সম্পূর্ণ মুভিটিতে দর্শকদের এক জীবন দর্শনের নৌকায় ভাসিয়েছেন পরিচালক গৌতম ঘোষ।
মুভিটির কাহিনীর শুরু হয় গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই শ্রী জ্যোরিন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সময়ের বিখ্যাত দার্শনিক কবি লালন ফকিরের আলাপচারিতার মাধ্যমে। জীবন দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জ্যোরিন্দ্রনাথের কৌতুহল এবং লালনের অবাক করা সব উত্তর!! এবং মুভিটি চলে এর ফাঁকে বিভিন্ন সময়ে লালনের জীবনের অতীত কাহিনীগুলির মাধ্যমে। কীভাবে লালনের সাধারণ জীবন হয়ে ওঠে এক বাউলের জীবন। কীভাবে শিমুলতলায় তিনি গড়ে তোলেন অদ্ভূত এক স্বপ্নের সমাজ। কীভাবে মানুষের প্রতিহিংসার শিকার হতে হয় তাকে। এভাবেই গড়ে ওঠে মনের মানুষের কাহিনী।
লালন ফকির এবং তার দর্শনের উপর দিয়ে কথা বলা স্পর্ধা আমার নেই। তবে মুভি হিসেবে “মনের মানুষ” কে বেশ বিরক্তিকর একটি মুভি বলবো। গৌতম ঘোষ যদিও কোন সাধারন মানের বাণিজ্যিক মুভি পরিচালক নন। তবে তার প্রত্যেকটি মুভি বেশ রোমাঞ্চকর হয়ে থাকে। এ জন্য মুভিটির উপর আমার আশার পাহাড় জমে ছিল যেটা খুব একটা পূরণ হয়নি। মুভিটিতে কোন কাহিনীর শুরু এবং সমাপ্তি নেই। শুধুমাত্র অসাধারণ কিছু দৃশ্যের পুষ্পগুচ্ছ!!
অভিনয়ের দিক দিয়ে বলবো অসাধারণ বললে কম হবে লালন ফকির চরিত্রে প্রসেনজিতের অভিনয়। এটাই প্রসেনজিতের সেরা অভিনয় নিঃসন্দেহে। যুবক লালন এবং বৃদ্ধ উভয় চরিত্রে দারুন অভিনয় করেছেন। এরপরই যার নাম নিতে হবে সে হলো কালুয়া চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী। বিশ্বমানের অভিনয় করে সকলের মন জয় করে নিয়েছে চঞ্চল। এছাড়া বেশ ভালো করেছেন কমলী চরিত্রে পাউলি দাম। সিরাজ সাই চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদের চরিত্র বেশ সংক্ষিপ্ত হলেও প্রশংসা করে শেষ করা যায় না। এছাড়া জ্যোতিরিন্দ্রনাথ চরিত্রে প্রিয়াংশু চট্টোপধ্যায় বেশ ভালো করেছেন।
মুভিটি মোট ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের। সুতরাং বেশ ধৈর্য সহকারে দেখতে হয়েছে। মোট ১৮টি গান আছে মুভিটিতে। সুতরাং মরমি লালন সংগীত যাদের খুব একটা পছন্দ নয় তাদের জন্য বেশ কষ্ট হতে পারে মুভিটি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে মুভিটি সকলের ভালো লাগার মত হয়নি। এছাড়া জীবন দর্শনের ভাবের মধ্যে মানুষের জৈবিক চাহিদার প্রয়োজনীয়তাকে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে দৃশ্যগুলিকে বেশ বেখাপ্পা বলে মনে হয়েছে ।
তবে বাংলাদেশের মানুষেরা যে কতটা মুভি পাগল এই মুভির প্রতি আগ্রহে সেটা প্রমাণিত হয়। এক কথায় মুভিটি দেখার জন্য একরকম ঝাপিয়েই পরেছে যেটি খুবই আশাবাদী একটা দিক। আশা করি এ দেশের সকল মেধাবী পরিচালকদের নজরে সেটি আসবে। সব মিলিয়ে একটু অধিক ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ মুভি।
রেটিং – ৩/৫
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার
বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন
মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি
এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)
কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শৈল্পিক চুরি
বহুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন