somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু নয় প্রভু ...

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফ্রিকার গহীন অরণ্য অথবা দক্ষিন আমেরিকার আমাজন জঙ্গলে ফেলানী নামের কোন পাখি আছে কিনা জানা নেই। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের চোখে ফেলানী ছিল একটা পাখি। ১৫ বছর বয়সী এই কিশোরীকে স্নাইপার কায়দায় হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ৪ ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তটা দুরের মহাদেশ আফ্রিকার কোন দেশের সাথে নয়, বরং প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে। এবং এখানেই সমাহিত হয় গায়ে গতরে খেটে খাওয়া বাংলাদেশি নাগরিক নুরুল ইসলাম নুরু মিয়ার বেচে থাকার স্বপ্ন। ভাগ্যের সন্ধানে নুরু মিয়া পাড়ি জমিয়েছিল আধুনা বিশ্বের উদীয়মান শক্তি ভারতের দিল্লিতে। সাথে ছিল মেয়ে ফেলানী ও ছেলে। আদম পাচারকারীদের খপ্পরে পরে নুরু মিয়াকে কাজ নিতে হয় দিল্লির কোন এক ইটের ভাটায়। ফেলানীর বিয়ে ঠিক হওয়ায় স্বপরিবারে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় নুরু মিয়া। আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারে মই বেয়ে বাংলাদেশে প্রথম প্রবেশ করে সে। একই কায়দায় প্রবেশ করতে গিয়ে ফেলানীর কাপড় আটকে যায় কাঁটাতারে। ভয়ে চীৎকার করে উঠে সে। এবং সাথে সাথে গর্জে উঠে ভারতীয় বন্দুক। একটা গুলিই যথেষ্ট ছিল এই কিশোরীর জন্য। বেড়ার উপর ঝুলে পরে তার মৃতদেহ। চার ঘন্টা পর বিএসএফ এসে নিয়ে যায় লাশ। শুধু ফেলানীর লাশই নয় সাথে নিখোঁজ হয় তার ভাই। একই দিন পশ্চিমবংগের মুর্শিবাদ জেলার মোহনগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয় আরও তিন বাংলাদেশি।

খুব শীঘ্র বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ফেব্রুয়ারীতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি সাংস্কৃতি তুলে ধরার জন্যে ভাড়া করা হয়েছে বলিউডের মেগাস্টারদের। কদিন আগে রুশ পতিতাদের অর্ধনগ্ন শরীর দেখিয়ে দেশ মাতিয়ে গেলেন কথিত কিং শাহরুখ খান, এবং সাথে নিয়ে গেলেন বেশকিছু নগদনারায়ন। ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে এই ভারতীয়রাই ছিল আমাদের প্রকৃত বন্ধু। কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়, যুদ্ধের ট্রেনিং, অস্ত্র সরবরাহ সহ রক্ত পর্যন্ত দিয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়ে। জাতি হিসাবে আমরা অকৃতজ্ঞ নই, দায়বদ্ধতা শোধও মিশে আছে আমাদের রক্তে। গেল ৩৯ বছর ধরে আমরা ৭১’এর দেনা শোধ করছি। শোধের অংকটার কোন সঠিক সংখ্যা আমাদের জানা নেই, ইতিহাসেও লেখা হয়নি এর বিবরণ। শুধু জেনে এসেছি আমরা ঋণী এবং এ ঋণ শোধ করতে হবে যতদিন বেঁচে থাকবো। শিল্প, বানিজ্য, কৃষিকাজ, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, সাংস্কৃতি, এমনকি আমাদের কাঁচাবাজার পর্যন্ত খুলে দিয়েও শোধ হচ্ছে না ৭১’এর দেনা। নদীর পানি, বন্দরের ক্রেন, জলপথ, নদীপথ, রেলপথ, আকাশপথ সহ ফেলানীদের লাশ পর্যন্ত দিতে হচ্ছে দেনা শোধের মূল্য হিসাবে। আমরা হাসি মুখে দিচ্ছি কিন্তু ওরা কোন মুখে গ্রহন করছে তার কোন ইশারা আমাদের দেয়া হচ্ছে না। স্বভাবতই আমরা বিভ্রান্ত। সে বিভ্রান্তি দূর করতেই বোধহয় মনমোহন সিং আসছেন সরকারী সফরে।
_____________*********____________________

আশির দশকের কথা। স্থান বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শহর লেলিনগ্রাদ (আধুনা সেন্ট পিটার্সবার্গ)। শহরের কোন একটা ছাত্রাবাসে বাস করছে কজন বাংলাদেশি। লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের নিয়মিত রান্না করতে হয় খরচ বাঁচানোর তাগিদে। সমস্যাটার শুরু কোথায় তার সঠিক দিন তারিখ ওদের জানা ছিলনা। জানার উপায়ও ছিলনা। কিন্তু প্রায়ই ঘটতে থাকল ঘটনাটা। ভোজবাজির মত রান্নাঘর হতে নিখোঁজ হতে থাকে পাকানো মাছ মাংসের হাড়ি। ৭০টা দেশের ছাত্রছাত্রীদের আবাস আন্তর্জাতিক মানের এই হোস্টেলে। রান্না করা তরকারী চুরি এখানে অকল্পনীয়, অস্বাভাবিক। কিন্তু তাই ঘটতে থাকল নিয়মিত বিরতিতে। অবশেষে হদিস পাওয়া গেল চোরের। এর জন্যে অবশ্য ফাঁদ পাততে হল। ফাঁদে যাকে আটকানো হল সে আর কেউ নয় ভারতের হরেন্দ্র সিং। নিজকে সবজিখোর হিসাবে দাবি করলেও আসলে সে ছিল খাদক। পয়সা বাঁচানোর অস্ত্র হিসাবে সবজিকে ব্যবহার করলেও গোপনে চুরি করত রান্না করা মাছ মাংসের হাড়ি। এভাবেই সে পয়সা বাঁচাত এবং বছর শেষে বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে চলে যেত জন্মভূমি ভারতে। এই হরেন্দ্র এবং তার স্বদেশিদের আরও একটা অভ্যাস ছিল, বাংলাদেশ নামক দেশটার জন্ম কে ভারতীয়দের দয়ার ফসল বলে হাসি তামাশা করতে ভালবাসত। শুধু হরেন্দ্র নয় ১০০ কোটি ভারতীয়দের মাঝে এমন একজনকে খুঁজে পাওয়া মুস্কিল হবে যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতাকে সহজ সরল অংকে স্বীকার করে। ভারতীয়দের কাছে ৭১এর যুদ্ধ পাকিস্তানীদের সাথে দ্বিপক্ষীয় যুদ্ধ, নিজেদের শৌর্য বীর্য প্রদর্শনীর যুদ্ধ। এখানে বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গা হয়না।

************************************************

ভারতীয় সাতকন্যার কোল ঘেষে আমাদের বাস। সাতকন্যার ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতির জরায়ুতে এক সময় জন্ম নিয়েছিল তাদের স্বাধীনতার চেতনা। মানচিত্রে বাংলাদেশের উত্থান হয়ত বদলে দিয়েছে এদের আর্থ-সামাজিক চেহারা। প্রতিবছর শুধু চিকিৎসা খাতেই বাংলাদেশিদের পকেট হতে সাতকন্যাদের আয় হয় কোটি কোটি টাকা। সরকারী বাণিজ্যে হিমালয় সমান অসমতার পাশাপাশি চোরাই পথে বাংলাদেশের সাথে চলে হাজার হাজার কোটি টাকার বানিজ্য। চাল, ডাল, তেল, লবন, সাবান, মসলা,শাড়ি, বাড়ি, গয়না, কন্ডম সহ বাংলাদেশ আপদমস্তক ডুবে আছে সাতকন্যার যৌতুকে। বানিজ্য ঘাটতির এই মহাসমুদ্রে সীমান্ত এলাকার কিছু খেটে খাওয়া বাংলদেশি ভাগ্যের সন্ধানে নামতে বাধ্য হয় গরু চোরাচালানি ব্যবসায়। আর তাতেই বাধ সাধে নব্য বিশ্বশক্তির শক্তিধর সীমান্তরক্ষী দল। বিশ্ব সমাজে ভারতের পরিচয় উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে হলেও প্রতিবেশি হিসাবে ভারতীয়রা উপরে বর্ণিত হরেন্দ্র চরিত্রের এক ইঞ্চি উর্ধ্বে উঠতেও পারেনি। আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক বিভাজন জাতি হিসাবে আমাদের সবজি বানিয়ে ফেলেছে। এমন একটা অবস্থান হতে ভারতীয় অন্যায় অনাচারের প্রতিবাদ করা হবে হিমালয়ের গোড়ায় মাথা ঠুকানোর মত। এমনটা করতে চাইলে ভারতীয় শিক্ষা হতে পারে আমাদের জন্যে উপযুক্ত দীক্ষা। আর তা হল অর্থনৈতিক মুক্তি। যতদিন এ মুক্তি অর্জিত না হচ্ছে ৭১'এর দায়দেনা শোধের নামে ভারতীয় এবং তাদের স্থানীয় দালালরা দেশকে খুড়ে খাবলে খেতে থাকবে।

ভারতীয় চাল, ডাল, তেল, লবন, সাবান ব্যবহার করে, তাদের সিনেমা আর টিভি সিরিয়ালে সর্বক্ষণ ডুবে থেকে আর তাদের ভাষা শয়নকক্ষে চর্চা করে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তাদেরই উপস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করা হবে স্রেফ আত্মপ্রতারণা। মুখে বন্ধু বললেও ওরা আসলে আমাদের প্রভু। প্রভুদের মনোরঞ্জনের জন্যে শুধু ক্রিকেট উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কেন দু'একজন ফেলানী উৎসর্গ করার জন্যও একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সরকার। আর সরকার নির্বাচিত হয়েছে আমাদেরই ভোটে।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ ভোর ৫:৩৩
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরাধের সেকাল ও একাল

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

সেকাল
--------------------------------------------------------
স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হেনরি বেভারিজ ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য৷বেভারিজ ১৮৭০ সালের মার্চ হতে ১৮৭১ সালের মার্চ এবং ১৮৭১ সালের জুন থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×