somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএসএফের নিষ্ঠুরতা এবং আরেকজন ফেলানী

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিএসএফের নিষ্টুরতা এবং আরেকটি কান্ডজ্ঞানহীন হত্যাকান্ডের মাধ্যমে মারা গেল আরেকজন বাংলাদেশী। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের বানারভিটা গ্রামের দিনমজুর নুরুল ইসলামের মেয়ে ফেলানীকে (১৫) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা গুলি করে হত্যা করেছে। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। নুরুল দিনমজুরি করে সংসার চালান। সংসারে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। তাঁরা সবাই ভারতের দিল্লিতে ইটভাটায় কাজ করেন। কাজ করে কিছু টাকা জমা হওয়ার পর ফেলানীকে বিয়ে দিতে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসছিলেন। গতকাল রাতে ফেলানীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলো না নুরুলের ।

দেশে ফিরতে বুধবার বিকেলে দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গের চৌধুরীহাট সীমান্তে আসেন নুরুল ও ফেলানী। সীমানা পার হতে দালালের সহায়তা নেন তাঁরা। বুধবার রাত থেকে অনেকবার চেষ্টা করেও সীমানা পার হতে পারেননি।, নুরুল ও ফেলানী ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সীমানা পার হওয়ার চেষ্টা করেন। নুরুল প্রথমে মই বেয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে আসেন। ফেলানী মইতে উঠলে তার কাপড়চোপড় কাঁটাতারে আটকে যায়। এ সময় সে ভয়ে চিৎকার শুরু করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএসএফের বুলেট তার বুক ঝাঁজরা করে দেয়।।মৃত্যুর পরও দীর্ঘ সময় ফেলানীর লাশ সীমান্তের কাঁটাতারের সঙ্গে ঝুলতে থাকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সীমান্তের মানুষ। বেলা সাড়ে ১১টায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ সরিয়ে নেয় বিএসএফ।
গতকাল নাগেশ্বরীর বানারভিটা গ্রামে নিহত ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা নুরুল ইসলাম মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায়।

সীমান্তবাসী ও বিডিআর সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের ৩ ও ৪ সাব পিলারের কাছ দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের টহল দল অতর্কিত গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই ফেলানীর মৃত্যু হয়।

বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান গতকাল বিবিসিকে বলেছেন, ‘বিএসএফ মাঠপর্যায়ের নিয়মনীতি (গ্রাউন্ড রুল) বারবার ভঙ্গ করছে। গ্রাউন্ড রুলে এ জাতীয় অনুপ্রবেশের ঘটনায় কোনো অবস্থায় গুলি ছোড়া যাবে না। কিন্তু বিএসএফকে কীভাবে বোঝানো যায়, আমি জানি না। এর আগে যতবার বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, তারা সব সময় বলেছে, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। বছর খানেক আগে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়, এরপর আর গুলির ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু ওই দিনই গুলি ছুড়েছে বিএসএফ। তারপরও বারবার গুলি ছুড়েছে।’ নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করছে, এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত বিএসএফের সদস্যদের বিচার হওয়া উচিত। তাদের এ মনোভাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান বলেন, বিচার করা হলে বিএসএফ গুলি করার আগে অন্তত চিন্তা করবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, কেবল গত বছর ৭৪ জন বেসামরিক নাগরিক বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিদিনই বিএসএফের হাতে মারা পড়ছে এক বা একাধিক বাংলাদেশী। বাংলাদেশ সরকার,পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং বিডিআর একাধিকবার ভারত ও বিএসএফের সাথে বৈঠক করেও এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি বিচার তো দূরের কথা। অসচেতনতাবশত প্রতিনিয়তই অনেক বাংলাদেশী নাগরিক সীমান্তের কাছাকাছি চলে যায় বা অবৈধভাবে সীমানা পার হতে চায়। শুধু বাংলাদেশীরাই যে এমন কান্ড ঘটায় তা না । প্রতিনিয়তই ভারতীয় গরু,শাড়ি,মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে । কখনো কখনো তারা ধরা পড়ছে , কখনো পড়ছে না । কিন্তু কখনোই বিডিআর বা বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাদের মারা পড়ার কাহিনী শোনা যায় না বা ঘটে না । বাংলাদেশ সরকার ভারতের সাথে সম্প্রতি একটি বড় ধরণের চুক্তি করে আসলো। পুরো চুক্তির কথা এখনো আমরা জানি না । বাংলাদেশ সরকারের অতীত এবং বর্তমান দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণেই এ সমস্যার সমাধান করা যায়নি।আর কতো ফেলানী অসহায় এবং নির্বিচারে মারা গেলে বাংলাদেশ সরকার কঠোর হবে বিএসএফের এমন মনোভাবের প্রতি। শুধু কী বিএসএফেরই দোষ এতে? আমার তো তা মনে হয় না। ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থন না থাকলেও পরোক্ষ সমর্থন যে আছে তা বলার আর দরকার নেই। ভারত সরকারের বাংলাদেশের প্রতি এমন নিষ্ঠুর এবং মালিকসূচক মনোভাব বাংলাদেশের জনগণকে ভারতবিদ্বেষী হতে বাধ্য করছে। ভারতের সাথে সরকার নানা রকম সমর্থনযোগ্য এবং অসমর্থনযোগ্য চুক্তি করে বেড়াচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকদের সীমান্তে হত্যা করার ব্যাপারটা নিয়ে এখনো জোরালোভাবে কিছু করছে না দেখে আমিসহ বাংলাদেশের অনেক সাধারন নাগরিক হতাশ। বিশেষ করে তারা যারা এই সরকারের প্রতি অনেক আশা রেখে তাদের নির্বাচিনে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা এনে দিয়েছিল। হতাশ সেই সীমান্তবাসীরা যারা নির্ঘুম রাত কাটায় সীমান্তে। আতঙ্কিত সেই সীমান্তবাসী বাবা যার প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ে ঘরে ।কখন বিএসএফ ঘরে ঢুকে যায়। হ্যা পাঠক , অবস্থা এখন তাই। বিএসএফ দিনে দুপুরে সীমান্তে প্রবেশ করে পুকুর থেকে মাছ মেরে যায়। হা করে তাকিয়ে দেখে পুকুরের মালিক, হা করে তাকিয়ে দেখে গ্রামবাসী। হা করে তাকিয়ে দেখা ছাড়া তাদের কীইবা করার আছে। তাদের নিরাপত্তা কে দিবে? তাদের নিরাপত্তা দেবার কথা কাদের? কোন সরকার কী পারছে রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করতে? সীমান্তবাসীর আতঙ্ক এখন আমার চোখে, আমার অন্তরে ! বাংলাদেশের সমস্ত নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা চাই ।








৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×