somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লিওপেট্রা

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লিওপেট্রা
কিছুদিন আগে পড়লাম হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের ক্লিওপেট্রা বইটির বাংলা অনুবাদ। বইটির অনুবাদক সায়েম সোলায়মান। অনুবাদক চমৎকার অনুবাদ করেছেন স্বাবলীল শব্দচয়নে।

কাহিনী সংক্ষেপঃ মিশরের প্রাচীন এক রাজবংশে জন্ম নিল একটি ছেলে সন্তান “হারমাচিস”। তার মা স্বপ্ন দেখলেন একদিন তার ছেলে মিশরের রাজা হবেন, যেমন তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন। যেদিন হারমাচিসের জন্ম হলো সেদিনই, তখনকার রাজার ঘরে জন্মনিলো এক শিশুকন্যা “ক্লিওপেট্রা”।

হারমাচিসের মা তার স্বপ্নের কথা জানিয়ে দিল হারমাচিসের বুড়ি দাইমার কাছে। এক’কান দু’কান কেরে এই কথা পৌছোগেল রাজার কানে। রাজা কথাটা শোনা মাত্রই সৈন্য পাঠালো ছেলেটাকে মারা জন্য। সৈন্যরা যখন হারমাচিসকে মারতে এলো তখন বুড়িদাইমা তার নিজের নাতিকে হারমাচিস বলে চিনিয়েদিলেন সৈন্যদের। সৈন্যরা বুড়ির নাতীর মাথা কেঁটে নিয়েগেল রাজাকে দেখাতে। এভাবেই বেঁচে গেলো হারমাচিস। রাজাও কাটা মাথা দেখে ভুলেগেলেন সব।

হারমাচিস একটুবড় হবার পর একদিন তার বাবার কাছে জানতে পারলো তার মার দেখা স্বপ্নের কথা, একদিন মিশরের রাজা হবে সে। তাই তার বাবা যেকিনা প্রধান পুরহিত, ছেলে হারমাচিসকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য হারমাচিসএর মামার নিকটে পাঠিয়ে দিলেন। পাঁচ বছর একমাস মামার কাছে থেকে নানান ধরনের শিক্ষা ও জাদুবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠে হারমাচিস। বাবার কাছে ফিরে এলে বাবা তাকে এবার দেবতাদের বিষয়ে অজানা ধ্যানসাধনার কথা বলেন। এর কিছুদিন পরেই হারমাচিস প্রধান পুরুহিত হিসেবে দিখ্যা নেন, এবং একটি গোপন মিটিংএ মিশরের বিভিন্ন পুরহিত ও প্রধান প্রধান ব্যক্তিবর্গ হারমাচিসকে মিশরের ফারাও বা রাজা হিসেবেও মননিত করেন।

ইতোমধ্যে রাজার মৃত্যুর পরে তার কন্যা ক্লিওপেট্রা মিশরের রাণী হয়ে সিংহাসনে বসে। তাই হারমাচিসের উপরে দায়ীত্ব পরে, ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করার। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় বিদ্রহ ও হত্যার মাধ্যমে হারমাচিসের রাজা হবার। রাণী ক্লিওপেট্রার খাস দাসী চারমিওন ছিলো হারমাচিসেরই চাচাতো বোন। চারমিওনের সাহায্যে হারমাচিস রাণীর নেকনজরে আসে এবং রাণীর খাস জ্যতীসি হিসেবে নিযুক্ত হয়। রাণী হারমাচিসের রূপ দেখে তাকে ভালো বেসে ফেলে, আবার হারমাচিসও নিজের কর্তব্যের কথা ভুলে যায় ক্লিওপেট্রার রূপ দেখে। ক্লিওপেট্রার ছিলো মিশরের সেরা সুন্দরী।

হারমাচিস আর রাণী ক্লিওপেট্রা ভালোবেসে ফেলে একে-অপরকে। কিন্তু হারমাচিসকে সকলেই বারবার মনে করিয়ে দিতে থাকে তার কর্তব্যের কথা। একদিন হারমাচিস ও চারমিওন মিলে ঠিককরে রাণীকে ছুরিমেরে হত্যা করবে হারমাচিস। সেই মোতাবেক হারমাচিস যায় রাণীর কক্ষে, কিন্তু চারমিওনের বিশ্বাস ঘাতকতাকার কারণে ধরা পরে যায় হারমাচিস। তারপর শুরু হয় তার নতুন আরেক উপলব্ধি।

শেষপর্যন্ত হারমাচিস কি পেরে ছিলো ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করতে......
রাজা হয়েছিলো হারমাচিস........
চারমিওন কেন বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলো........

এগুলির উত্তর বলে দিলে পড়ার মজাই নষ্ট হয়ে যাবে। সময় করে পড়ে ফেলেন।

ক্লিওপেট্রা বইটি থেকে কিছু উক্তি এখানে উল্লেখ করছি, যা আমার ভালো লেগেছে।
১/ নারীর জিভ ছাড়া পৃথিবীর আর সব কিছুকেই বোধহয় বেঁধে রাখা সম্ভব।
২/ কেবলমাত্র বোকা আর মূর্খরাই গোপন কথা বলে দেয়। জ্ঞানী আর সাহসীরা চুপ থাকে, উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করে।
৩/ সৌন্দর্যের দংশনে বিষধর সাপে কাটা মৃত মানুষের মতো স্থির হয়ে গেলাম আমি।
৪/ ফলের পোকার মতো কাজ করতে হবে আমাদের। যে পোকা ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে ফলকে, কিন্তু বাইরে থেকে বুঝা যায়না ব্যাপারটা।
৫/ কোনো মেয়ে যদি তোমাকে ভালো না বাসে বা অন্ততপক্ষে পছন্দ না করে, তাহলে ওকে বিশ্বাস কোরো না। ওদের মতিগতির কোনো ঠিক নেই-ওদের আবেগ সমুদ্রের ঝড়ের মতো। কখন আসে, কখন যায়, টের পাওয়া যায় না।
৬/ তাড়াহুড়ো কতরে গিয়ে ভুল লোককে বেছে নেবেন না দয়া করে।
৭/ নর-নারীর ভালোবাসার ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। ওই আবেগ শুরু হয় পাহাড়ের বুকে জন্ম নেওয়া ঝরনার মতো-ছোট্ট একটা জলধারা, যাকে গুরুত্বই দেয় না কেউ। আর শেষ হয় বিরাট কেনে নদীর মোহনায়, অথবা হয়তো কারও ক্ষেত্রে সমুদ্রে। সাঁতার না জানলে ডুবে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না প্রেমিকের।
৮/ আমার মতে ভালোবাসা হচ্ছে আশার সমাধি, বিশ্বাসের ধ্বংসস্তূপ।
৯/ যতদিন আঘান না আসে, ততদিন প্রেম খুবই মধুর।
১০/ সুখ কি, তা না জেনেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
১১/ সময়ের চেয় বড় চিকৎসক আর নে্ই। মনের ঘা, শরীরের ঘা দুটোই একসময় শুকিয়ে দেয় সে।
১২/ যতটুকু পাই, ঠিক ততটুকুই চাই; আবার যতটুকু চাই, ঠিক ততটুকুই পাই।
১৩/ ভাগ্যকে দোষ দিয়ে আমরা পাপীরা নিজেদেরকে হালকা করতে চাই। অথচ একই পাপ আরেকজন করলে ওকে অপবাদ দিতে, সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে বাধে না আমাদের। ভাগ্যে লেখা ছিলো- বলে ক্ষমা করে দেই না লোকটাকে।
১৪/ পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত আবেগের নাম প্রেম এবং একমাত্র কোকারাই সেই আবেগে আক্রান্ত হয়।
১৫/ অকাজে বীরত্ব অপচয় করার চেয়ে আর বড় অপচয় নেই এই পৃথিবীতে।

সমস্ত প্রকার ভুল ও ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এখন, ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:০৬
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×