somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখবর সুখবর সুখবর টিপাইমুখের পর এবার সুবনশিরি বাঁধ

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিপাইমুখের পর এবার সুবনশিরি বাঁধ। বাংলাদেশের জন্য নতুন মরণফাঁদ। সিলেট সংলগ্ন ভারতের আসাম রাজ্যের সুবনশিরি নদীতে এই বাঁধ নির্মিত হচ্ছে জলবিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য। বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে খোদ ভারতের পানি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং সমাজকর্মীরা বলেছেন, ‘টিপাইমুখ ও সুবনশিরিসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নির্মীয়মাণ বৃহত্ নদী বাঁধ প্রকল্পগুলো বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও বাংলাদেশের জন্য হিরোশিমা-নাগাসাকি ধ্বংসকারী আণবিক বোমার সমান এক জলবোমা।’

আসাম ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গত মাসের শেষ সপ্তাহে ভারতের ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার করপোরেশন (এনএইচপিসি) সুবনশিরি প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করেছে। এতে বলা হয়, ‘এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় এখনও নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।’
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আসাম-অরুণাচল সীমান্তে ২০১১-১২ সালের মধ্যে এই বাঁধ নির্মাণ করার কথা। এখানে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হবে। প্রকল্পব্যয় আগের ৬ হাজার ২৮৫ কোটি রুপি থেকে ৮ হাজার ১৫৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। প্রসঙ্গত এই বাঁধ নির্মাণের জন্য ২০০৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর নদীশাসন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড বিক্ষোভের কারণে আসাম রাজ্য সরকার সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করছে না।

জানা গেছে, এ প্রকল্পের কুফল তুলে ধরে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘আরণ্যক’ গত ডিসেম্বরে গৌহাটিতে ‘উত্তর-পূর্ব জলবিবাদ, সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় ভারতের পানি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং সমাজকর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দু’দিনব্যাপী এ আলোচনা সভায় সব বিশেষজ্ঞই স্পষ্ট ভাষায় বলেন, সুবনশিরি জলবিদ্যুত্ প্রকল্প ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সর্বনাশ ঘটাবে আর টিপাইমুখ গোটা বরাক উপত্যকাকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।’ আলোচনায় ড. পার্থজ্যোতি দাস, কে জে জয়, অধ্যাপক এসি ভাগবতী, ড. চন্দন মোহন্ত, অধ্যাপক দুলালচন্দ্র গোস্বামী, অধ্যাপক এস জনকরাজন, বাস্তুকার নীরজ ভাগলিকর, রবীন্দ্রনাথ, গিরীন চেতিয়া, ড. নিম্মি কুরিয়ান, অজিত পাটোয়ারী, ড. সিদ্ধার্থ কুমার, ড. আর কে রঞ্জন, রাজু নেপচা, শ্যামল দত্ত, ড. সঞ্জিতা বড়ুয়া, ড. ননী গোপাল মোহন্তসহ বহু বিজ্ঞানী ও পরিবেশকর্মী বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মিজোরাম এবং মেঘালয়ে ছোট-বড় জলবিদ্যুত্ প্রকল্প নির্মাণের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য দ্রুত বদলে যাচ্ছে এবং আঞ্চলিক জলবায়ুর লক্ষণীয় পরিবর্তন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, এসব প্রকল্প একদিকে যেমন বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস করছে, তেমনি জনবসতি বিন্যাস বদলে দিচ্ছে ও উষ্ণায়ন ঘটাচ্ছে। ছোট-বড় অসংখ্য জলাধার, বন ও কৃষিজমির সঙ্কোচন ঘটাচ্ছে। বনাঞ্চল সঙ্কুচিত হওয়ায় বন্য জন্তু-জানোয়ার, কীটপতঙ্গ ও সরীসৃপের জন্য এসব প্রকল্প হুমকি হয়ে উঠেছে।

বৃহত্ জলবিদ্যুত্ প্রকল্প নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সব বক্তাই এসব প্রকল্প স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ভূমিকম্পপ্রবণ এ এলাকায় সুবনশিরি ও টিপাইমুখের মতো যেসব প্রকল্প নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে, তার সোজা অর্থ হলো এসব প্রকল্প হাতে নিয়ে বিশাল ভাটি অঞ্চল বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা আর বাংলাদেশের মাথার ওপর কয়েক ডজন হিরোশিমা-নাগাসাকি ধ্বংসকারী বোমার সমান জলবোমা তৈরি করে রাখা হচ্ছে। অন্য বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো না ঘটানো মানুষের ইচ্ছাধীন হলেও এসব জলবোমা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। সামান্য মাত্রার ভূমিকম্প বা ভূমিধসের ফলে এসব বাঁধ মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। আর তখন চোখের পলকে ভাটি আসাম-বাংলাদেশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

তারা জানান, একেকটি প্রকল্প নির্মাণের জন্য লাখ লাখ ব্যাগ সিমেন্ট প্রয়োজন হবে। এসব সিমেন্ট তৈরির জন্য নষ্ট হবে পাহাড়। লাখ লাখ লরি পাথরের জন্য একইভাবে পাহাড় কাটা হবে। বাঁধ নির্মাণের সময়ও পাহাড় কাটা হবে। একদিকে বিশাল জলাধার শত শত বর্গমাইল এলাকা পানিতে ডুবিয়ে নষ্ট করবে; অন্যদিকে পাথর-সিমেন্ট আর মাটি সরবরাহের জন্য নষ্ট হবে পাহাড়। এসব বাঁধ নির্মাণকালেই ভাটি এলাকার খাল-বিল, নদী-নালা, কৃষিজমি বালু আর পাথরে ভরে যাবে। কৃষিজমি নষ্ট হবে। খাল-বিলে পানি থাকবে না। জনবিন্যাস, জনবসতির অবস্থান বদলে যাবে। বক্তারা এসব বিস্তৃত ব্যাখ্যা করে আসাম রাজ্যের উভয় উপত্যকাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে কোনোভাবে টিপাইমুখ, সুবনশিরিসহ সব বৃহত্ নদীবাঁধ প্রকল্প প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।

জানা গেছে, আসাম-অরুণাচলের সর্বস্তরের মানুষ এ প্রকল্প বন্ধের দাবি জানালেও বাঁধ নির্মাণে বদ্ধপরিকর দিল্লি। ভারতের সেন্ট্রাল ইলেকট্রিক অথরিটি আসাম সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। দিল্লি তাতে কর্ণপাত করেনি। ঢাকা থেকে একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দলও দিল্লি সফরে যায়। বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞানী ও পানি বিশেষজ্ঞদের মতামতের কোনো গুরুত্ব না দিয়ে এই প্রতিনিধিরা প্রমোদ ভ্রমণ শেষ করে দেশে ফিরে আসেন এবং ভারতের পক্ষে রিপোর্ট দেন।

আমার দেশ
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×