somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫ টাকার চটপটি, ২ টাকার বস্তা আইসক্রিম

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পূর্বকথা: গত সপ্তাহে সেন্ট্রালে দাড়িয়ে ১ বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন কয়েকটা স্কুলে পড়ুয়া পিচ্চিদের কার্যকলাপ দেখে নিজের ছেলেবেলা মনে পরে যাওয়ায় এই লেখার সুত্র)


"মমিন ভাই ৫টাকার চটপটি দিয়েন" "মমিন ভাই আমাকে ১টা দিয়েন" "বস ১টা আইসক্রিম দেন" "ভাই এইদিকে এই যে মমিন ভাই"

স্কুল লাইফে টিফিন পিরিয়ডে প্রথম ২০ মিনিটের চিত্র। সপ্তাহে ৫ দিন একই চিত্র। কে কার আগে চিল্লা চিল্লি করে অর্ডার দিতে পারে। টিফিনের ঘন্টা পরার সাথে সাথে সব দড়িছাড়া দৌঁড়। ১টা ভ্যানগাড়ী করে আনা চটপটির জন্য স্কুলের সব ছেলের টিফিন পিরিয়ডের হট্টগোল। অার সব চেচাঁমেচি সহ্য করে চটপটিওয়ালা ভাইয়ের নির্বাক কাস্টমার সার্ভিস।

স্কুল লাইফে টিফিন পিরিয়ড ছিলো সবসময়ের প্রিয় মূহুর্ত। ৪র্থ পিরিয়ডে ১টা বড় ডেকচিতে আসতো টিফিন। পৃথিবীর সব থেকে অদ্ভুত স্কুল টিফিন! কখনো ডিম বনরুটি, কখনো কলা বনরুটি, কখনো দেখা যেতো সন্দেশ অথবা কালোজাম, কখনোবা সিংগারা, ভেজি পেটিস। আর মৌসুমের সময় বড় বড় আম, লিচু অথবা কমলা। ভালো করে কোনোদিন খেয়ে দেখা হতো না। হাতে নিয়ে মাত্র ঘন্টা পড়ার অপেক্ষা। যেই ঘন্টা পড়তো সব নিয়ে ছোড়াছুড়ি। কে কাকে কতো বেশী বোম্বফাইটের মতো মারতে পারে প্রতিযোগিতা। আর অাশ্চর্যজনকভাবে দেখা যেতো অধিকাংশ সময় ডিম ছোড়াছুড়িতে ক্রসফায়ারে যেই ডিম হিট হতাম সব হাফ বয়েল। হিট হয়ে নিরস্ত্র আমি(ডিম কাউকে মেরে অলরেডী শেষ) শত্রু কে চিনে রাখতাম পরেরবার ডিম মেরে দেখে নেবার হুমকি দিয়ে।

৩০ মিনিটের টিফিন পিরিয়ডে দুনিয়ার সবই করতে চাইতাম। মাঠে গিয়ে শর্টপিচ ক্রিকেট, আগে ব্যাট করার জন্য প্রত্যেকের তুমুল অাগ্রহ, পিচ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি, আবার সেই দোস্তের সাথে গলায় হাত দিয়ে দল বেঁধে হাঁটা হঠাৎ "দোস্ত চল ঝালমুড়ি খাই"

ক্লাস এইটে উঠে একটু েসয়ানা হবার চেষ্টা। ৫ জনে মিলে বেনসন খাওয়া, হঠাৎ ক্লাস থেকে উধাও, দেয়াল টপকিয়ে স্কুল পালানো, পরের দিন ক্লাসে পালানোর জন্য ১ পিরিয়ড কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা, শাস্তি পেয়ে আবার সেদিনই স্কুল পালানো। সারা বিকেল মাঠে ক্রিকেট খেলে স্কুল ছুটিতে বাসায় যাওয়া, কোনো বন্ধুকে তার লাইলীর সাথে দেখা করানোর জন্য দল বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা। কোনো স্যার অাসছে দেখলে ব্যাট বল ফেলে দৌঁড়, বাসায় গিয়ে রোদে পুরে ভুত হবার জন্যে মায়ের শাসন। এখনো এইসব মনে হয় এইতো ক'দিন আগেই তো! অথচ কেটে গেছে অনেক সময়। ভাবি আর অবাক হই, সময় কিভাবে কেটে যায়। জীবনের সেরা সময় নিঃসন্দেহে।

অলটাইম ফ্যান্টাসি ছিলো মেয়ে নিয়ে। বয়েজ স্কুল হওয়াতে দেখা যেতো কোনো মেয়ে অাসলেই সব "হিরো" ভাব। ১ ১ টার ভাব দেখলে মনে হতো স্কুলড্রেস পড়া নায়ক! মেয়ে যদি ১ বার তাকাতো "কি চেহারা! বাহ!" নিজেদের মধ্যে তর্ক লেগে যেতো এটা হইছে ঐটা হইছে শেষ অব্দি পাখি তার গতিতে গন্তব্যে অামরা তুমুল বিতর্কে ব্যস্ত।

মজার ১টা ইভেন্ট ছিলো সিঁড়িঘরের নিচে বিশাল করিডোরের পেছনে। স্কুলে অামাদের দখল করা সেল্ফ সার্ভিস নোটিশবোর্ড। অপ্রিয় স্যারকে নিয়ে কবিতা, গালি, "বিএসএল/বিএনপি দখল", "বাজপাখী স্যার" "ডেইজি ***" আরও ভয়ংকর সব ওয়াল পোস্ট! আর হেডমাস্টার স্যারের কাজ ছিলো মাসে ১ বার ঐসব লেখা পরিস্কার করতে লোক নিয়োগ। পরের দিন যথারীতি আমাদের কারুকার্য।

আহ! কি দিন ছিলো তখন! শত রকমের দুষ্টামি অার লাফ ঝাপ। আজো মনে পড়লে হাসি। মাঝে মাঝে মনে হয় মন্দ হতো না যদি এই সময়টা অাবার ফিরে পেতাম। ২ টাকা দামের ঐ বস্তা আইসক্রিমের মজাটা আজো ভুলতে পারলাম না। না পারলাম বন্ধুদের সাথে টেনিস বল দিয়ে ফুটবল খেলার আবেগ ভুলতে। কারো সাথে দেখাও হয়না। সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছে।

হঠাৎ রাস্তায় দেখা হয় কিন্তু আগের মত বলা হয়ে উঠে না "দোস্ত চল ঝালমুড়ি খাই"
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:১৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×