অনেক কাল পরে আজ হঠাৎ রুদ্রর সাথে দেখা। আমি ফুটপাথ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। ও হেটে আসছিল আমার দিকে। ওই আগে আমাকে দেখে, দেখে দাঁড়ায়। আমি আনমনে হাটছিলাম। হঠাৎ দেখি কে যেন কাঁধে হাত রাখল। আমি থমকে দাড়াই।
“আরে রুদ্র কি খবর তোর?”
কতকাল পরে দেখা? ওর সাথে শেষ দেখা কবে হয়েছিল? এক যুগ ? নাকি অল্প কিছু বছর? মনে করতে পারি না।
ওর গালে খোঁচা খোঁচা কাঁচা পাকা দাড়ি। চুলে অযত্নে জট ধরেছে। কিন্তু চোখে আর ঠোঁটে সেই বুদ্ধিদীপ্ত হাসি।
আমরা দুজন একটা লেকের পাড়ে বসি। কিছুক্ষণ কুশল বিনিময়ের কথা হয়। তারপর দুজনেই চুপ।
“তোর বউ কেমন আছে?” ও জিজ্ঞেস করে আমাকে।
“ভালো” সংক্ষিপ্ত জবাব দেই আমি।
“বাচ্চাকাচ্চা?”
“ছেলেটাকে এবার স্কুলে দিয়ে দিলাম, মেয়েটা এখনো ছোট। তোর ছানাপোনার কি খবর? ”
“আরে ধূর, আমার ছানাপোনা আসবে কোথা থেকে? আমি তো এখনো বিয়েই করিনি। ” মুখে ওর সেই সলজ্জ ড্যাম কেয়ার হাসি।
আমি অবাক হই,“এখনো বিয়ে করিস নি? কেন?”
“কি করব, ভালোবাসি যে...” অনেক বোকা বোকা লাগে ওকে কথাটা বলার সময়।
“ভালোবাসিস? কাকে?”
ও কেমন যেন লজ্জায় পড়ে যায়, “দোস্ত তুইও আমার ভালোবাসার কথা ভুলে গেলি? যার কথা বলে বলে তোর পড়ার ডিস্টার্ব করতাম...পিয়া।”
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবি, পিয়ে যেন কে ছিল? হঠাৎ করে মনে পড়ে সেই মেয়েটির কথা। রুদ্র পাগল ছিল যার জন্য। মেয়েটা প্রায়ই ক্লাস শেষে ওর হলের সামনে দিয়ে যেত। আর রুদ্র প্রতিদিন বারান্দায় দাড়িয়ে থাকত মেয়েটিকে এক নজর দেখার জন্য। কিন্তু কখনো সাহস করে কিছু বলতে পারেনি।এতকাল পরেও....এখনো রুদ্র ভুলতে পারেনি তার ভালবাসার মানুষকে?
“তুই পিয়ার জন্য বিয়ে করিস নি?” আমি কিছুটা যেন স্বাভাবিক হই,মনে পড়ে রুদ্র এমনই ছিল।
“হুম” অন্যমনস্ক ভাবে জবাব দেয় ও।
“ওকে কখনো বলতে পেরেছিলি?”
“নাহ, ওইভাবে কখনো বলিনি।”
“কেনরে দোস্ত, তুই এমন কেন? একবার বলে দেখতি ও কি বলে।”
“ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেলে নাকি ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যায় বুঝলি? আর ওকে আমার অনুভূতির কথা বললে ও যদি না করে দিত তাহলে আমার বাঁচতে অনেক কষ্ট হত। তারচেয়ে এখন ভাবি ওকে বললে হয়ত ও আমাকে ভালোবাসত। এই ভেবেই আমার চলে যাবে। তুই ওই কবিতাটা শুনিস নি-
যা পেয়েছি তা থাক, যা পাইনি তাও
তুচ্ছ বলে যা চাইনি তাই মোরে দাও।”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি, খানিক্ষন আবার দুইজন চুপচাপ।
আমি হঠাৎ উঠে দাড়াই, “যাইরে, তোর ভাবী অপেক্ষা করে আছে ।” ও কেমন জানি একটা হাসি দেয়। মনে হয় এই হাসির অর্থ, দোস্ত, তাকা আমার দিকে,দেখ আমিও কারো জন্য অপেক্ষা করছি।
ও বললো, “হ্যা যা। বেলা পড়ে এসেছে।”
বিকেল শেষে আধো আলো আধো ছায়ার মাঝে আমি হেটে চলি। পিছনে বসে থাকে রুদ্র।
ভাবি, আমি শুধু ভাবি। সত্যিই কি ভালোবাসার মানুষকে পেলে সবসময় মোহ কেটে যায়? আমার ক্ষেত্রেও কি তাই হয়েছে? আমিও তো পেয়েছি আমার ভালোবাসার মানুষকে।
আরো ভাবি, কাউকে ভালোবেসে কি এইভাবে সারাজীবন অপেক্ষা করা সম্ভব? নিজের ভবিষ্যৎ না ভেবে? তারপর হঠাৎ সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে সামনে হাঁটা ধরি।
প্রতিদিন তো এমন কত ঘটনাই ঘটে আশেপাশে। সব ভাবলে চলে?