somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১২৫ বছরে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে তাদের নিজস্ব ভূমিতে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠা। সে সময় নারায়ণগঞ্জে মাদ্রাসা, টোল থাকলেও ইংরেজি তো দূরের কথা, বাংলা শিক্ষারও কোনো স্কুল ছিল না। বলা চলে, এটিই গোটা নারায়ণগঞ্জ জেলায় বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষার প্রথম স্কুল এবং একমাত্র এন্ট্রান্স স্কুল। আর তাই এ স্কুলকে কেন্দ্র করেই প্রায় দীর্ঘ সময় পরিচালিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় কর্মকাণ্ড। মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, ফরোয়ার্ড ব্লক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্মেলন-জনসভাসহ নানা কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে এই স্কুলের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে। শিক্ষা সম্মেলন ও সাহিত্য সম্মেলনও হয়েছে। এখানে এসেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ অনেকেই।
১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন কলকাতা থেকে ঢাকায় যেতে প্রথমেই গোয়ালন্দ হয়ে স্টিমারে নারায়ণগঞ্জে আসতে হতো। গোয়ালন্দ থেকে নারায়ণগঞ্জ জলপথের দূরত্ব ১০০ মাইল। রবীন্দ্রনাথ যতবার ঢাকায় এসেছেন, এই নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়েই গিয়েছেন। ১৯২৬ সালে আগরতলা থেকে চাঁদপুর হয়ে স্টিমারে কবি নারায়ণগঞ্জে আসেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল নয়টা নাগাদ তিনি নারায়ণগঞ্জে এসে পৌঁছান। নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলের ছাত্ররা স্টিমার ঘাটে কবিকে এবং তাঁর দলের সবাইকে অভ্যর্থনা জানায়। শত শত ছাত্র এখান থেকে শোভাযাত্রাসহ কবিকে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে নিয়ে আসে। তখন স্কুল প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে কবিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশে রবীন্দ্র সংবর্ধনায় ভূঁইয়া ইকবাল কবিকে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে দেওয়া সংবর্ধনায় প্রদানকৃত মানপত্রটি হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। এ সংবর্ধনাপত্রে বলা হয়েছিল, ‘বিশ্ববরেণ্য কবিসম্রাট শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের শ্রীশ্রীচরণকমলেষু। দেব, পূর্ব্ববঙ্গের তোরণ-দ্বারে-পুণ্যসলিলা শীতলক্ষ্যার পবিত্র তীরে হে কবি! তোমাকে তোমার প্রত্যাবর্ত্তন-পথে স্বাগতম। অভিনন্দনের সুযোগ পাইয়া আমরা আপনাদিগকে কৃতার্থ মনে করিতেছি।...আমাদের এই বাংলাদেশ দেশে দেশে শুধু অন্নই বিতরণ করে না, দেশকে সুজলা-সুফলা ও শস্যশ্যামলা করিয়াই শুধু নদীর শুভ্র-রজতধারা তাহার গতিপথে অগ্রসর হয় না, তাহার কলপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানের পবিত্র আলোকধারাও লহরে লহরে দিগিদগন্তে ব্যাপ্ত করিয়া দিয়া আপনাকে মহিমান্বিত করিয়াছে, সে লুপ্তধারা ধূর্জ্জটির জটানিষ্যন্দী পবিত্রধারার ন্যায় তুমিই আবার বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেতন হইতে প্রবাহিত করিয়া সমস্ত বিশ্ববাসীকে ভারতের বাণী নূতন করিয়া প্রচার করিতেছ। নালন্দা নাই, তক্ষশীলা নাই, বিক্রম শীলা নাই! তাহাতে দুঃখ কি? তোমার বিশ্ব-ভারতী অতীত ও বর্ত্তমানকে জাগ্রত করিয়াছে। আমরা তোমার সেই আদর্শ হূদয়ে গ্রহণ করিয়া লক্ষ্য পথে চলিতে পারি, আমাদিগকে সে আশীর্ব্বাদ কর...।’ তখন অমৃতবাজার পত্রিকায় হাইস্কুলের এই সংবর্ধনা সভার সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে উল্লেখ করা হয় যে ছাত্রদের পক্ষ থেকে কামাখ্যা চরণ সেন কবিকে স্বাগত জানিয়ে এক অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন এবং অভিনন্দনের উত্তরে কবি নিজের ছাত্রজীবনের কথা উল্লেখ করেন। সংবর্ধনার উত্তরে রবীন্দ্রনাথ সেদিন বলেন, ‘লোকে চাকরি পাওয়ার জন্য নিজেকে শিক্ষিত করতে স্কুল-কলেজে পড়তে যায়। কিন্তু বর্তমানে চাকরির দরজা বন্ধ হওয়ায় শিক্ষিত লোকেরা স্বাধীন জীবিকার দিকে ঝুঁকছে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও কাজকর্মে এক পরিবর্তন এসেছে। এমন একটি সময় ছিল, যখন লোকে ভাবতেন, বক্তৃতা দিয়েই তাঁরা তাঁদের কাজ উদ্ধার করতে সক্ষম হবেন। তাঁরা পুরাতন অভ্যাসবশত এখনও ঐরূপ কাজ করে বসেন। কিন্তু বর্তমানে যুবসমাজ বাস্তব ও আসল কাজের দিকে তাকায়। বর্তমান আন্দোলনকালে যে উদ্দীপনা এসেছে, তাকে যেন তারা স্থায়ী করে। শান্তিনিকেতনে পূর্ববঙ্গের বহু ছেলে পড়ে। তাদের মধ্যে চরিত্রের দৃঢ়তা, একাগ্রতা ও শ্রদ্ধার ভাব দেখেছি। আমি পূর্ববঙ্গ ভ্রমণ করে দেখলাম, এটা একটা ভাল কর্মী সংগ্রহের স্থান। এখানকার ছেলেদের যে কাজেই লাগানো যাবে, তারা তাদের একাগ্রতা ও নিষ্ঠার দ্বারা কৃতকার্য হবেই। আমি যদি এখনও যুবক থাকতাম, তাহলে এখানে বক্তৃতা না করে হাতে-নাতে কাজে লেগে যেতাম। এখানকার উর্বরা মাটির মতই এখানকার মানুষের উদ্যম-আগ্রহও প্রবল। কিন্তু আজ আমার বয়স এবং স্বাস্থ্য দুই-ই নেই। আমার কর্মক্ষেত্র পশ্চিম বাংলার এক সীমান্তে অবস্থিত। সেখানকার মাটি উর্বরা নয় এবং মানুষও অনেকটা উদাসীন। পূর্ববঙ্গের এ অঞ্চলে উপযুক্ত পরিবেশে লোকে যদি তাদের কাজ আরম্ভ করে, তাহলে তারা অতি সহজেই সফলকাম হবে।...পূর্ববঙ্গে প্রকৃতি যেমন সৌন্দর্যে ও প্রাচুর্যে নিজেকে বিকশিত করেছে, এখানকার লোকদের মধ্যেও দেখেছি তেমন প্রাণ-প্রাচুর্য ও প্রাণের উদারতা। পূর্ববঙ্গের যুবকরা যদি তাদের এ অঞ্চলে গ্রামীণ কাজ আরম্ভ করে, তাহলে তারা নিশ্চয়ই সফলকাম হবে। উপসংহারে আমি ছাত্রদের আশীর্বাদ জানিয়ে বলব, তারা তাদের ত্যাগ ও নিষ্ঠার দ্বারা কাজ করলে শুধু বাংলাকেই নয়, সারা ভারতকেও আসল পথের সন্ধান দেবে।’
নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল ১২৫ বছরের ইতিহাস ধারণ করে চলেছে। এই দীর্ঘ সময়ে শত-সহস্র ছাত্র আলোকবর্তিকা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছেন দেশে ও দেশের বাইরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এন্ট্রান্স পরীক্ষার মেধাতালিকায় এ স্কুলের অবস্থান ছিল উল্লেখযোগ্য। আশা করতে দোষ কী, এই স্কুল থেকেই হয়তো একদিন বেরোবে আগামী দিনের কোনো এক কপালকুণ্ডলা। যিনি পথ দেখাবেন গোটা জাতি, সমাজ ও দেশকে।
রফিউর রাব্বি |
ref: Click This Link
View this link
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×