somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাতের ভূমিকা-৬

০২ রা জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৪. ঋণগ্রস্থ কৃষকদের জমি অবমুক্তকরণঃ

বাংলাদেশের পলী এলাকায় এমন গ্রামের সংখ্যাই বেশি যেখানে বর্তমান ভূমিহীন কৃষকদের অনেকেই কয়েক বছর পূর্বেও ছিল মোটামোটি স্বচ্ছল এবং কৃষি জমির মালিক। কিন্তু পারিবারিক কোন বড় ধরনের ব্যয় নির্বাহের জন্যে ব্যাংক বা গ্রামীন মহাজনের নিকট হতে ঋণ নেয়ার ফলে তার শেষ সম্বল চাষের জমিটুকু বেহাত হয়ে গেছে। মেয়ের বিয়ে, বৌয়ের চিকিৎসা বা প্রাকৃতিক দূর্বিপাকের ফলে শস্যহানীর ক্ষতিপুরনের জন্যে শেষ সম্বল দুই বা তিন বিঘা চাষের জমি তারা বন্ধক রাখে। এসব ঋণ গ্রহীতাদের অধিকাংশই এ ঋণ আর শুধতে পারে না। ফলে তাদের জমি চলে যায় মহাজনদের হাতে। এর প্রতিবিধানের জন্যে যাকাতের অর্থ হতেই এদের সাহায্য করা যায়। যদি প্রতি ইউনিয়নে বছরে পাঁচ জনকে গড়ে ৫,০০০টাকা করে সাহায্য করা যায় তাহলে এতে বার্ষিক ব্যয় হবে ৪৪কোটি ৫১লক্ষ টাকা।


৫. দরিদ্র শিশুদের পুষ্টি সাহায্যঃ

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, শহরেও বস্তি এলাকাতে অগনিত শিশু নিদারুন পুষ্টিহীনতার শিকার। ফলে এরা যৌবনেই নানা দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেকে সারা জীবনের মতো রাতকানা, স্কার্ভি, গলগন্ড, পাইলস নানা রোগের শিকার হয়ে পড়ে। এর প্রতিবিধানের জন্যে যাদের বয়স দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের ভিটামিন "এ" ক্যাপসুল, ভিটামিন "সি" ট্যাবলেট, আয়োডিনযুক্ত লবণের প্যাকেট ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে। এজন্যে প্রাথমিক পর্যায়ে যদি প্রতি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে দুই হতে পাঁচ বছর বয়সের ১০০জন শিশুকে বাছাই করা হয় তাহলে বছরে খরচ হবে ৩৬কোটি ২৫লক্ষ টাকা।


৬. প্রসবকালীণ সহযোগিতাঃ

প্রসুতি মাতা ও ৬সপ্তাহ বয়সের মধ্যের শিশুদের মৃত্যু উন্নয়নশীল দেশে/বিশ্বে উঁচুহারে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। আমাদের গ্রমাঞ্চলে এখনও গর্ভবতী ও প্রসুতি মায়েদের যথাযথ পরিচর্যা, সেবা-যত্ন ও পুষ্টিকর খাবার যোগানোর ব্যাপারে একদিকে যেমন বিপুল অমনোযোগিতা ও অশিক্ষা বিদ্যমান অন্যদিকে সামর্থের অভাবও রয়েছে। এর ফলে গর্ভবতী মায়েদের শেষের ছয় সপ্তাহে যখন পুষ্টিকর খাবারের বেশি প্রয়োজন তখন তারা তা যেমন পায়না, প্রসবের পরেও সেই অবস্থার কোন উন্নতি ঘটেনা। যদি ঘটনাক্রমে উপর্যুপরি দ্বিতীয় বা তৃতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম হয় তাহলে প্রসূতির অনাদর ও অবহেলার সীমা থাকে না। উপরন্তু প্রসবকালে যে পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত কাপড়-চোপড়, জীবানুনাশক সামগ্রী ও ঔষধপত্র প্রয়োজন দরিদ্র পরিবারে তার খুব অভাব। এর পতিবিধান করতে পারলে গর্ভবতী ও প্রসুতি মায়ের কল্যাণ হবে, তাদের অকাল মৃত্যুর হার কমে যাবে। একই সাথে নবজাতকের মৃত্যুর হারও কমে আসবে। এজন্যে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডপ্রতি যদি ২০টি দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মাকে বেছে নেয়া হয় এবং ১,০০০টাকা করে সহযোগিতা দেয়া যায় তাহলে বছরে প্রয়োজন হবে ১০কোটি ৭লক্ষ টাকা।


৭. বিধবা/বিকলাঙ্গের কল্যাণঃ

বাংলাদেশে বিধবা এবং নানাভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়া পরিবার প্রধানদের পরিবারের দূর্দশার সীমা-পরিসীমা নাই। ভিক্ষুকদের মতই এদের জীবন-যাপন অথবা ভিক্ষাবৃত্তিই এদের একমাত্র সম্বল। এদের এই অসহায় অবস্থা দূর করার জন্য প্রাথমিকভাবে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরকর্পোরেশনের অধিনস্থ ওয়ার্ডের প্রতিটি হতে কমপক্ষে ২০জন করে বিধবা-বিকলাঙ্গ পরিবার বেছে নেয়া হয়, আর এদের প্রত্যেককে বছরে যদি ১,০০০টাকা করে সাহায্য করা যায় তাহলে বার্ষিক ১৭০কোটি ৮৪লক্ষ টাকার প্রয়োজন হবে।


৮. মুসাফিরদের সাহায্যঃ

নিঃস্ব মুসাফিরের জন্যেও আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। কারন এ হলো খোদায়ী বিধান। দেশের শহরগুলির মসজিদতো বটেই, থানা পর্যায়ের মসজিদেও প্রায়ই নামাজ শেষে দেখা যায় দু'একজন মুসাফির দাঁড়িয়ে যায় যার সব সম্বল শেষ। চিকিৎসা করতে এসে বাড়ি ফেরার মত টাকা নেই, কাজের খোঁজে এসে কাজ না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে খালি পকেটে অথবা দূর্বৃত্তের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়া গেছে। এদের বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করা আমাদের শরয়ী দায়িত্ব। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান মসজিদগুলোর মধ্যে যদি ৭৮০টি মসজিদকে বাছাই করে নিয়ে মাসে যদি প্রত্যেক মসজিদের মুসাফিরদের জন্যে গড়ে ২,০০০টাকা হারে ব্যয় করা যায় তাহলে প্রয়োজন হবে ১কোটি ৮৭লক্ষ টাকা।


৯. ইয়াতীমদের প্রতিপালনঃ

বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে অনেক ইয়াতীম বর্তমান। তাছাড়া শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় কতযে শিশু-কিশোর ইয়াতীম ও নিস্ব হয়েছে তার সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। এদের অন্য-বস্ত্র-বাসস্থান ও শিক্ষার জন্যে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা খুবই উপযুক্ত পদক্ষেপ হতে পারে। এজন্যে নতুন ইয়াতীমখানা তৈরী ও ইয়াতীমদের ভরণ পোষন, সঠিক তত্ত্বাবধান এবং সাধারণ শিক্ষা সহ বৃত্তিমূলক প্রশিনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি ১০০জন ইয়াতীমের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্যে বার্ষিক ন্যুনতম সার্বিক ব্যয় ১২লক্ষ টাকা ধরা হয় তবে এরকম ৫০টি ইয়াতীমখানার জন্যে বছরে ব্যয় হবে ৬কোটি টাকা।


১০. স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারঃ

দেশের পল্লী এলাকাতো বটেই, শহরতলীতেও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাব প্রকট। হাজার হাজার পরিবারের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থসম্মত সৌচাগার বানাবার আর্থিক সামর্থ নাই। সেজন্যেই যেখানে সেখানে প্রসাব-পায়খানার কদর্য ও স্বাস্থ্যবিধি বহির্ভূত অভ্যাস আরও বেশি প্রসার লাভ করে চলছে। ফলে সহজেই পানি দূষিত হচ্ছে, সংক্রামক ব্যাধি বিস্তার লাভ করছে, নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। উপরন্তু গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের পক্ষে ইজ্জত-আবরু বজায় রেখে প্রাকৃতিক এই প্রয়োজন পুরন করা খুবই দূরহ। এর প্রতিবিধানের উদ্দেশ্যে দরিদ্র পরিবার সমূহের জন্যে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরী। এজন্য প্রয়োজন একটা প্যানসহ স্লাব ও সিমেন্টের দুই বা তিনটা রিং। এজন্য সর্বোচ্চ খরচ পড়বে ৩৫০টাকা। যদি প্রতি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে বছরে ৫০টি করে পরিবারকে এই সুবিধা দেওয়া যায় তাহলে প্রয়োজন হবে ৮কোটি ৮১লক্ষ টাকা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×