somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভলকানোর সৌন্দর্য!

০২ রা জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইশশ্ আমাদের যদি একটা মরুভূমি থাকত! তারপর যদি শীতকালে বরফ পড়তো! আবার যদি হাওয়াইয়ের মতো কোনো দ্বীপ থাকতো! যদি একটা সুন্দর আগ্নেয়গিরি থাকতো! এই দাঁড়ান দাঁড়ান। সবগুলোই বুঝলাম কিন্তু এই শেষেরটা বুঝলাম না। আগ্ন্য়েগিরি সুন্দর! আরে আগ্ন্য়েগিরিও যে কত সুন্দর আর উপকারী হতে পারে তারই বর্ণনা শুনুন এবার।

ভলকানো মানে আগ্নেয়গিরি। পৃথিবীতে কিছু পাহাড় আছে যা থেকে উত্তপ্ত গলিত পাথর, ছাই, আর গ্যাস বের হয়। সেই গলিত পাথর, ছাইগুলোর তাপমাত্রা এতোটাই বেশি থাকে যে ওগুলো টকটকে আগুনের মতোই হয়ে থাকে। সেই আগুন বের করা পাহাড়গুলোকেই বলা হয় আগ্নেয়গিরি।

রোমান পৌরাণিক কাহিনীর আগুনের দেবতার নাম ভালকান (Vulcan), আর তাই বাংলায় যা আগ্নেয়গিরি তা আবার ইংরেজিতে ভলকানো (Volcano)। পৃথিবীর ভেতরের দিকে যে গ্যাসগুলো জমা হয়, সেগুলো আবার অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত চাপের ফলে পৃথিবীর ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। আর বের হওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসে ভেতরে জমে থাকা গলিত লাভা (Lava)। লাভাটা আবার কি? ওই যে মাটির নিচে গলিত যেসব পাথর, ছাই থাকে সেগুলোকে বলে ম্যাগমা (Magma)। সেই ম্যাগমাই যখন মাটির ভেতর থেকে বাইরে খোলা বাতাসে আসে, তখন তার নাম হয়ে যায় লাভা।


এ পর্যন্ত দুনিয়াজুড়ে প্রায় ১৫১০ টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আবিষ্কৃত হয়েছে। যার মধ্যে ৮০ টি বা তার বেশি আবার সমুদ্রের নিচে। পৃথিবীতে প্রতি দশ জনের এক জন বাস করে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির আওতায়। যদিও এটা বিপজ্জনক, তার পরেও মানুষ আগ্নেয়গিরির কাছেই থাকে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন, গত ৫০০ বছরে কমপক্ষে ২,০০,০০০ লোক মৃত্যুবরণ করেছে এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে। অথচ তারপরেও মানুষ আগ্নেয়গিরির কাছে থাকতে চায় কেন? কারণ আগ্নেয়গিরির ঢালে থাকে, উন্নত এবং উর্বর মাটি, যাতে ফসল ভালো খুব হয়।

আগ্নেয়গিরিগুলোকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়, সক্রিয়, সুপ্ত এবং বিলুপ্ত। সক্রিয় আগ্নেয়গিরি প্রায়ই অগ্ন্যুৎপাত করে এবং যে কোনো সময় করতে পারে। সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হলো যে আগ্নেয়গিরিটা বেশ আগে অগ্ন্যুৎপাত করেছে আবার যে কোনো সময় করতে পারে। আর বিলুপ্ত আগ্নেয়গিরি হলো যেটা অনেক, অনেকদিন আগে অগ্ন্যুৎপাত করেছে তাই আর করার কোনো সম্ভাবনাও নেই। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচে বড় সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হলো মাওনা লোয়া (Mouna Loa)। হাওয়াই ভাষায় মাওনা লোয়া মানে হলো লম্বা পর্বত। এটি প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপে। মাওনা লোয়া ৪,১৭০ মিটার লম্বা। বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, এটি মাউন্ট এভারেস্ট এর চেয়েও বড়। অবশ্য তা সমুদ্রের নিচের এই পর্বতের গোড়া থেকে চূড়া পর্যন্তের হিসেবে।

পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলো নিয়ে একটা মজার জিনিস আছে, তা হলো- অগ্নিবলয় (Ring of Fire)। প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিগুলোকেই বলে অগ্নিবলয় (Ring of Fire)। কারণ হচ্ছে- প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশে এই আগ্নেয়গিরিগুলো বৃত্তের মতোই ঘিরে আছে। একারণেই একেই বলে অগ্নিবলয়।আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার অগ্ন্যুৎপাত তো ভয়ানক ব্যাপার। কিন্তু তারপরেও অসংখ্য পর্যটক সেখানে বেড়াতে যায়।

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর। ছাই, কাদা, গলিত পাথরের স্রোত তো আছেই। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের গ্যাসের নিঃসরণও আছে। যেমন ধরো কার্বন-ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড আরও অনেক ধরণের গ্যাস। এই গ্যাসগুলো যখন বায়ুমন্ডলে জমা হতে থাকে। এদের সাথে বায়ুমন্ডলের মেঘের পানি যুক্ত হয়ে এসিড তৈরী করে। আর এ কারণেই তো এসিড বৃষ্টি হয়। ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী এসব গ্যাস আর আগ্নেয়গিরির ছাই।

আচ্ছা সবতো অপকারের কথা শুনছি উপকারটা কোথায়? অগ্ন্যুৎপাতের সময় যে ছাইটা বের হয় সেটায় কিন্তু অনেক ধরণের খনিজ পদার্থ থাকে। যখন সেগুলো মাটির সাথে মিশে যায়, মাটির গুণগত মান অনেক বেড়ে যায়। সেই মাটিতে ফসলের উৎপাদনও হয় অনেক ভালো।
আর সৌন্দর্য? আগ্নেয়গিরি ভয়ংকর হলেও সুন্দর। একটা পাহাড়, দেখতে খুবই শান্ত। কেনো যে সেটা হঠাৎ করেই এতোসব কান্ড করে বসে! তাই দেখতেই বুঝি মানুষ ছুটে চলে সেই ভয়ংকরের কাছে। পর্যটকদের কাছেও তাই এসব আগ্নেয়গিরির মূল্য অনেক। অনেক টাকা খরচ করেই তারা ছুটে আসে এই চিরন্তন ভয়ংকর সুন্দরের কাছে।





৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×